আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবার, আকাশ চলেছে স্কুলের পথে। পাঁচ মিনিটের স্বল্প পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলের গেটের সামনে পৌঁছাল। আকাশকে দেখে তার কয়েকটা বন্ধু দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল। পলাশ আকাশকে বলল,এই জানিস আমাদের স্কুলের পাশের দোতলা বিল্ডিং-এ নতুন ভাড়া টিয়া এসেছে। একটা সুন্দর মেয়েও আছে। কি বলব দোস্ত একবারে ডানা কাটা পরী। তুই নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবি না যে,কত সুন্দর। পলাশের মুখে মেয়েটির প্রশংসা শুনে আকাশের টনক নড়ে গেল। আকাশ বলে, চল দেখ যাক তোদের কথা কতটুক সত্য। যদি প্রশংসার তুলনায় দেখতে খারাপ হয় তাহলে মনে করব---------!! কি মনে করবি পলাশ বলে? তা পরে দেখা যাবে। এবার আকাশের আর এক বন্ধু সুজন বলে উঠে,কিরে তোরা কি এখানেই বক বক করবি না যাবি।
আকাশ ও পলাশ একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তারা নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র। তাদের স্কুলের পিছনে পুলিশ স্টেশন। আর পুলিশ কর্মকর্তাদের কোয়াটার গুলো স্কুলের বিল্ডিং এর পাশাপাশি।
ক্লাস রুমে ঢুকেই তারা জানালার পাশে চলে এল,এদিক ওদিক দেখে কিন্তু কিছুই চোখে পড়ে না। কয়েক মিনিট কেটে গেল হঠাৎ আকাশের চোখের দৃস্টিতে একটি মেয়ে ধরা দিল। আকাশ মেয়েটি কে দেখে হতবাক!!!কিছু ক্ষন একপালকে তাকিয়ে থেকে বলে,পলাশ তুই কি এই মেয়ের কথা আমাকে বলছিলি? তুই ঠিক ধরেছিস;আমি এর কথায় বলছিলাম। আকাশ বলে দোস্ত এত সুন্দর মেয়ে আমার এই ১৬ বছরের জীবনে দেখি নাই। হরিণীর মত টানা টানা চোখ,রেশমি কালো চুল,গোলাপের কলির মত কমল ঠোঁট। পলাশ তুই মেয়েটির নাম ঠিকানা কিছু জানিস?কোথা থেকে এল ডানা কাটা পরী? আকাশ জিজ্ঞাসা করে।
শুধু জানি সে নাকি এ.এস.আই এর মেয়ে। ওর বাব নতুন এসেছে।
আকাশ:ও তাই বল।
ওদের কথা বলার মাঝে হঠাৎ ক্লাসের ঘণ্টা বাজল। সবাই চুপ। নিজ নিজ স্থানে সবাই বসে পড়ল। ক্লাস রুমে মহুর্তের মধ্যে স্যার উপস্থিত হলেন। স্যার একেরপর এক নাম ডাকছেন। আকাশের মন শুধু ওপাশের বিল্ডিং এর মেয়েটির কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।আকাশ জানালার দিকে তাকিয়ে আছে,এদিকে স্যার তার নাম ডাকছে তার খেয়াল নেই। স্যার বলছে আকাশ এই আকাশ।
আকাশের এখনও অন্য মনস্ক ।
এবার স্যার ধমক দিয়ে বলে এই আকাশ,তুমি কি ভাবছ? আমি তোমার নাম ঢাকছি আর তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছ কি ভাবছ ???
আকাশ এতখনে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল এবং বলল জী স্যার মানে মানে ।
স্যার: কি সব মানে মানে করছ তুমি? তোমার শরীর কি খারাপ লাগছে?
না স্যার আমার কিছুই হয়নি। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ স্যার।
স্যার বলল ঠিক আছে বস তুমি।
জী স্যার।
আকাশ এবার বসল কিন্তু সে মেয়েটির কথা ক্ষণিকের জন্যেও ভুলতে পারছে না। তার মনে মেয়েটির ছবিই কেবল বারবার ভেসে উঠছে। ইতি মধ্যে স্যারের নাম ডাকা শেষ।এবার একে একে পড়া জিজ্ঞেস করছে। এবার আকাশের পালা পড়া বলার কিন্তু স্যার লক্ষ্য করল আকাশ এখনো আনমনে হয়ে বসে আছে।ও যেন কি ভাবছে,আমার কাছে প্রকাশ করছে না। স্যার যেটা সন্দেহ করেছে তা সত্যিই। আকাশ এখনো কল্পনার রাজ্যে ওতপ্রোত ভাবে মিশে গেছে। স্যার আবার বলল এই আকাশ তোমার কি হয়েছে খুলে বলত। কই নাতো স্যার আমার কিছু হয়নি,আজ আমার একটু মন খারাপ তো তাই।
ও আচ্ছা বস।
সেই সাথে ১ম ঘণ্টা শেষ হওয়ায় বেল বেজে উঠল। এভাবে একের পর এক ক্লাস শেষ হয়ে টিফিনের বেল বাজল। আজ বৃহস্পতিবার তাই আজকে হাফ স্কুল। টিফিনের পর আর কোন ক্লাস
হবেনা। আর যে ক্লাস না হয়ে ছুটি হবে তাই আকাশের মন খারাপ হয়ে গেল। অবশেষে আকাশ তার বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরল। খাওয়ার পর্ব শেষ করে বিছানায় শুয়ে আবার সেই মেয়েটির কথা ভাবছে। ভাবতে ভাবতে সে কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বের হল। সে প্রথমে ভাবল স্কুল মাঠ থেকে ঔ বিল্ডিং এর দিকে নজর রাখা যাবে।
যেমনটি ভাবল আকাশ তেমনটি করল। স্কুল মাঠে গেল।কিছু
সময় ঘোরা ঘুরি করার পর দেখা মিলল সেই রাজকুমারীর। এক সাথে তিনটি মেয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে
আছে। আকাশ এক পলকে তার দিকে তাকিয়ে আছে,কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির চোখ পড়ে আকাশের চোখে। আকাশকে এভাবে বেহায়ার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েগুলোর মাঝে গুঞ্জন শুরু হল।
এই দ্যাখ ছেলেটা কি বেয়াদব, বেলজ্জার মত দেখে আছে আমাদের দিকে। যেন কোনদিন মেয়ে দ্যাখে নি। মেয়েগুলো চলে গেল,আকাশ এবার কল্পনার রাজ্য হতে বের হয়ে আসল।
মহুর্তে পলাশ হাজির হল। কিরে আকাশ তুই এই মাঠে? তোকে তো কখনো এখানে দেখিনি?
আকাশ:না এমনি দাঁড়িয়ে আছি, ওদের খেলা দেখছি। এবার দুজন গল্পে মেতে গেল। সূর্য ডুবে এল মেয়েটি আর এল না ।
পলাশ চল মার্কেটে যায়?
ঠিক আছে চল। তারা মাঠ হতে বের হয়ে মার্কেটের দিকে চলল। মার্কেটে আরো কয়েক জন বন্ধু যোগ হল তাদেও সাথে ।
সুজন: কিরে তোরা কোথয় ছিলি?
পলাশ বলে আমারা স্কুল মাঠে ছিলাম। ছয় বন্ধু আড্ডা শুরু করল...
ঘড়িতে এখন বাজছে প্রায় ৮ টা ১৫ মিনিট। এবার সবাই নিজ নিজ বাড়ির দিকে
এগোতে লাগল। আকাশ আর পলাশ এক সাথে আসছে। কারণ তাদের বাড়ি এক পাড়ায়। আকাশের বাড়ি পাড়ার এক কর্ণারে আর পলাশের বাড়ি অপর কর্ণারে।
আকাশ তার নিজ বাড়িতে ঢুকে গেল আর পলাশ গেল তার বাড়ির দিকে। বাড়িতে আকাশ প্রথমে সার্ট প্যান্ট খুলে ভালভাবে হাত পা মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসল। আকাশ পড়ছে, হঠাৎ করে সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেল তার। আকাশ আনমনে হয়ে শুধুই ভাবছে। হঠাৎ আকাশের ঘরে তার মা প্রবেশ করল। জাহানারা বেগম ঘরে ঢুকে লক্ষ করল তার ছেলে কি ভাবছে!আকাশ ?
অমনি আকাশ হুড়মুড়য়ে উঠে বলল কে কে?
ওমা তুমি কখন এলে। এতো এখুনি, তুই কি চিন্তা করছিস?
চিন্তা! আমি আবার কি চিন্তা করব বল? আমিতো পড়ছিলাম।
আচ্ছা পড়। পড়া শেষে খেতে আসিস। জাহানারা বেগম চলে যায়।
পরের দিন শুক্রবার স্কুল বন্ধ। আকাশ নানান চিন্তা করার পর ঠিক করল সে স্কুল মাঠে যাবে। কাল যেখান থেকে মেয়েটি কে দেখেছে,আজও দেখবে।
সকাল ৯টা আকাশ বের হল। পথে আজ পলাশকে সাথে নিল। এভাবে বেশ
কিছুদিন আকাশ মেয়েটিকে সকাল বিকেল দেখে আসছে। ইতি মধ্যে মেয়েটিও বুঝে গেছে, ছেলেটি এক মাত্র তার জন্য দুবেলা আসে।
আকাশ ভাবে কিভাবে মেয়েটি কে তার মনের কথা বলবে। সে আজ অবধি কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি। তাও আবার সে এ.এস.আই -এর মেয়ে। অবশেষে আকাশ চিঠি লিখতে বসল।
হে মোর প্রিয়তমা,
প্রথমে আমার একগুচ্ছ রজনীগন্ধার শুভেচ্ছা রইল।আশা করি ভাল আছো। বিশ্বাস কর তোমাকে প্রথম দেখাই আমি ভালবেসে ফেলেছি। তুমি কবির ভাষায় বনলতা সেনের সমতুল্য।তোমার ঔ নেশা ভরা চোখে তাকালে আমি স্বপ্নের সাগরে হাবুডুবু খাই। তোমার ঠোঁট কমল গোলাপের পাপড়ির মত স্নিগ্ধ। তোমার রেশমীকালো চুল যেন আকাশে উড়ে বেড়ানো মেঘের মত দোল দেয়। সব মিলিয়ে তুমি যে এত সুন্দর তা আমি বর্ণনা দিয়ে শেষ করতে পারব না। আর তোমার এই সুন্দরের পূজারী শুধু আমি। তুমি কি জাদু করেছ? পড়তে, ঘুমাতে, জাগতে শুধু তোমাকেই ভাবি। জানি না তুমি আমার ভালবাসার মূল্য দিবে কি না, আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবে না। তোমার উত্তর টা জানাতে ভুলনা। তোমাকে আমি বাইরে কখনো পাই যে, সব কথা সরাসরি বলব। তাই চিঠি লিখলাম আর তোমাদের স্টাফের ছেলে রাজুর হাতে চিঠি পাঠালাম। বাকি কথা
সরাসরি হবে। ভালো থেকো।
ইতি
তোমার পূজারী
আকাশ
রাতে চিঠি লেখা শেষ কওে আকাশ ঘুমিয়ে যাই। সকালে নাস্তা করেই স্কুল মাঠে চলে আসে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আকাশ রাজুর দেখা পেল।
রাজু তুমি এই চিঠিটা নিয়ে দোতলায় যাবে। যে নতুন আপু এসেছে তাকে এটা দিবে আর বলবে ঔ যে,গাছের নিজে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইয়া চিঠিটা দিল। আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছেন। রাজু কথা মত কাজ করল, কিন্তু নাম জেনে আসতে ভুলে গেছে। ইতিমধ্যে বিপদ এসে পড়ল আকাশের মাথায়। চিঠি দিতে নিচতলার এক ছেলে দেখে ছিল,সে মেয়েটির মাকে বলে দিয়েছে।
আকাশ পরদিন মাঠে আসে। মাঠে এসে বসতেই মেয়েটির বাবা তাকে ডেকে পাঠাই এবং তাকে প্রশ্ন করে। আকাশ সব দোষ স্বীকার করে।
এতে আকাশ মেয়েটির সামনে তার বাবার কাছে উপহার স্বরূপ দুটি চড় পেয়েছে।
এর পর আকাশ সেখানে যাইনি। এভাবে কেটে গেল এক মাস। হঠাৎ এক দিন বাজার যাওয়ার পথে মেয়েটির সাথে দেখা। আকাশ পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল, ঐ সময় মেয়েটি ডাকল,,এই যে শুনুন... দেখুন সেদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। আমার নাম আশা। আমি প্রাইভেট পড়তে এসেছি,সময় নেই কাল কথা হবে। কাল আপনি আমাদের বাসার পিছনে যে আম বাগান আছে সেখানে বিকাল ৫ টাই চলে আসবেন। এই বলে আশা চলে যায়।
পরদিন ঠিক সময়ে আকাশ হাজির। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আশা এল। এই একটু দেরি করে ফেললাম। বুঝোতো মেয়েদের কি সমস্যা। রাগ করো না, কেমন আছো?
আকাশ: এখন ভালো। তুমি?
আমিও।
আশা: আকাশ তোমার চিঠির উত্তর টা তুমি যা যাও তাই। আমিও এই কয়দিনে তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।
তবে ভয় হয় আকাশ, যদি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতে হয়। আমি কি ভাবে বাঁচব।
আকাশ: তুমি এ মাত্র এলে আর চলে যাওয়ার কথা বলছ? ওসব পরে ভাবা যাবে।
আশা: এই দেখছ আমাদের নামের শেষের অক্ষর এক। আজ থেকে আমার
প্রাণ, নি:শ্বাস সব তোমার প্রাণের সাথে মিশে এক হয়ে গেল। প্রতি দিন তারা স্কুল,প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে দেখা করে। এভাবে কেটে যাই ১বছর।
প্রায় ৫দিন হতে আশার সাথে আকাশের দেখা নেই। এদিকে হটাৎ আশার বাবা বদলি হয়ে চলে গেছে। আকাশ এসবের কিছু জানে না। ৬ষ্ঠ দিন আকাশ স্কুল মাঠে যাই। যাওয়া মাত্র রাজু এসে তাকে একটা চিঠি দিয়ে বলে আপু আপনাকে দিতে বলেছে। ছোট্ট একটা চিঠি।
আকাশ,
আমারা চলে যাচ্ছি। সময় নেই দেখা করার। জানি না আর দেখা হবে কি না? ভালো থেকো আমাকে ক্ষমা কর। মন দিয়ে পড়াশুনা করবা,আমার কথা ভাববে না। তুমি আমাকে ভুলনা, অনেক ভালবাসি তোমাকে।
ইতি
তোমার প্রাণ
আশা
চিঠি পড়া শেষে আকাশ চোখ মুছলো। আকাশ আবার তার পুরনো জীবনে ফিরে গেল। কিন্তু
সে আশাকে ভুলতে পারেনি। আজও পথে পথে আশাকে খুঁজে তার পিপাসী দুচোখ...
২১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪