আমার মা

মা (মে ২০১১)

স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ
  • ৯২
  • 0
  • ৪৪

আমি খুব চিন্তায় পরে গেছি, ভয় এ ঘামছিও একটু একটুl কি করে যে ঘরে ঢুকব ঠিক বুঝতে পারছি নাl আজ বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেছেl মা এর কাছে আজ নির্ঘাত পিটুনি খেতে হবেl আমি আস্তে আস্তে পেয়ারা গাছটার গড়ায় গিয়ে দাঁড়ালামl এখান থেকে আমাদের রান্নাঘরের একটা অংস বেশ স্পষ্ট দেখা যায়l মা খুব ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গিতে কাজ করছে তারমানে হলো বাসায় কোনো মেহমান এসেছেl আমার অজান্তেই আমার মুখ দিয়ে একটা সস্তির নিশ্বাস বেরিয়ে এলোl সব দোষ হলো ওই আসিস টারl ওর বুদ্ধিতেই আজ "চোর-পুলিশ খেলার" নতুন জায়গা দেখতে গিয়েছিলামl আমি আর মিলি প্রথমে যেতে চাইনিl তাই শুনে ফাজিল টা বলে কিনা মেয়েরা সব ভিতুর ডিম, ওদের দিয়ে কোনো কাজ হয়নাl ওর কথা শুনেই মেজাজ টা বেশ চরে গেলl মিলির হাত ধরে টান দিয়ে বললাম চল যাইl জায়গাটা সুন্দর হলেও বেশ দুরে l ঐখান থেকে ফিরতেই রাত হয়ে গেল l
ঘরে ঢুকলামl ঢুকেই মনটা খুশিতে নেচে উঠলোl দেখি বড়মামা এসেছেl আমাকে সর্বপ্রকার আদর আস্কারা দেবার জন্য কিছু মানুষ ছিল তারমধ্যে বড়মামা অন্যতমl
বড়মামা বললেন : কি রে বেটি কোথায় ছিলি? তোর মা তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলl
আমি বললাম কোথাও না বড়মামাl একটু খেলতে গিয়েছিলামl তুমি কখন এসেছ? কেমন আছ? মামী কেমন আছে?
এইতো একটু আগে আসলামl তোর মামী ভালই আছেl তোর জন্য পিঠা বানিয়ে পাঠিয়েছেl
এইসময় রাগে গজগজ করতে করতে মা ঘরে ঢুকলোl আমাকে দেখেই চোখ কটমট করে তাকালোl আমি বেশি পাত্তা দিলাম নাl আমার এখন বড়মামা আছে সুতরাং কোনো চিন্তা নেইl মা গজগজ করতে লাগলো " এত বড় ধারী মেয়ে ছেলেদের সাথে ডাং ডাং করে ঘুরে বেড়ায়, কোনো লজ্জা- সরম নেই, রাত-বিরেতে ঘরে ফিরে, জুটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলা দরকারl
রাগে দুঃখে বিরক্তিতে আমার চোখে পানি আসার যোগারl মামা মা কে ধমক লাগান " চুপ করত তুই, বাচ্চা একটা মেয়েকে এভাবে ধমকাচ্ছিস কেন?
ও বাচ্চা মেয়ে? ওর সমান বয়সে আমার বিয়ে হয়ে গেছিলো আর তুমি বলছ ও বাচ্চা?
তোমার যুগ আর আমার যুগ এক নয়, আমি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেই আর দৌড়ে আমার ঘরে চলে যাইl
আমি সবে শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়েছিl আমার মনে এখন অনেকরকম স্বপ্ন, অনেকরকম অনুভূতিl আমার 'টম সয়ার' হয়ে যেতে ইচ্ছে করে অথবা তিন গোয়েন্দার কিশোরl আমি, মিলি, আসিস, রতন আর মানিক মিলে একটা দল করেছিl দলের নাম দিয়েছি 'গুপ্ত সংঘ' l আমরা কোনো একদিন সবাই মিলে বাসা থেকে পালিয়ে যাবl সবাই এখন টাকা জমাচ্ছিl আমার পরার বই পড়তে বেশি ভালো লাগে না, সারাদিন গল্পের বই পড়তে ইচ্ছে করেl মা আমার বই পরা একদম পছন্দ করে নাl বলে নাটক নভেল বাদ দিয়ে পরার বই পর অথবা হাদিস কোরান পরl গল্পের বই এর সাথে হাদিস- কোরান এর কি সম্পর্ক আমি ঠিক বুঝতে পারি নাl আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে চলে যাইl তখন মা আমাকে ঠিক এ বুঝবে, ঠিক এ কানবে আমার জন্যl কিন্তু বাবার জন্য পারিনাl বাবা আমাকে অনেক ভালবাসে, অনেক আদর করেl মা এর উপর রাগে অভিমানে আমার চোখে পানি চলে আসেl
রাতে মা খেতে ডাকে, আমি যাই নাl মা বলল: মেয়েমানুষের এত রাগ ভালো নাl বাবা এসে আমাকে কোলে করে খাবার টেবিল এ নিয়ে যায়l এত বড় ধারী মেয়েকে এত আহ্লাদ দিও না তো মা বাবা কে বলেl মেয়েমানুষকে অনেক সক্ত হতে হয়, এত নরম হলে চলে নাl
আমাকে মেয়েমানুষ বলবা না, আমার অসহ্য লাগে, আমি প্রতিবাদ করিl
মেয়েমানুষ কে মেয়েমানুষ বলব না তো কি বলব? মা অবাক হয়l
আমি রাগে দুঃখে কিছু বলতে পারিনাl মা কেন আমাকে একটুও বুঝতে পারেনা? বাবা বলে থামত, সারাদিন মেয়েটাকে বকাবকি কর আমার আর ভাল্লাগেনাl
মা চুপ করে কিন্তু রাগে গজগজ করতে থাকেl আমার মনে হয় আমার মা দিন দিন কেন এত খারাপ হয়ে যাচ্ছে? সবার মাই কি তাই হয়? আগে তো মা এমন ছিল নাl এভাবেই আমাদের সম্পর্ক আগায়l দিন যায় রাত আসেl আমার কল্পনার ভুবন আস্তে আস্তে চোট হতে থাকেl মা আমাকে এখন আর বাইরে গিয়ে খেলতে দেয় নাl আসিস, ইমন, মানিক ওদের সাথে কেমন জানি একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছেl ওরাও হয়ত বুঝতে পেরেছে তাই ওরাও আর আগ বাড়িয়ে কথা বলে নাl মানুষের অনুভূতি বন্ধুরাই আগে বুঝতে পারেl মা বলে ছেলেরা কখনো মেয়েদের বন্ধু হয়না, মেয়েদের বন্ধু শুধু মেয়েরাই হয়l মা এর অদ্ভুত যুক্তি শুনে চুপ করে থাকি, কিছু বলার নেই জানিl আমার বান্ধবীরাও কেও আর আগের মত নেই, ওদের আড্ডার মূল ব্যস্ত এখন "ছেলেমানুষ"l শুধু আমি ই কেন যে ওদের মত হতে পারছি না জানিনাl দিন দিন আমি একা হয়ে যাচ্ছিl আমার সঙ্গী শুধু আমি আর আমার বইl আমার কিছুটা উন্নতি হয়েছেl আমি তিন গোয়েন্দা ছেড়ে এখন হুমায়ুন, সুনীল, সমরেশ পরি কিন্তু এখনো মা কে লুকিয়েl
আজ মা বাসায় নেইl অঙ্ক করছি, বাসার কাজের মেয়েটা দুপুরে খেয়ে ঘুম দিয়েছে, এই সময় আমার অংক করতে কেন জানি ভালো লাগে, দুরে একটা কোকিল ডাকছে, অলস দুপুরl এই সময় কি কারো কথা মনে পরে? কোনো এক অদৃশ্যও মানুষের কথা?
এমন সময় কলিং বেল বাজলো, খুলে দেখি আমার বড় খালার ছেলে "অর্ক ভাই" এসেছেl অর্ক ভাই এম,এ পাস বেকার, চাকরি খুঁজছেl মাঝে মাঝেই আমাদের বাসায় চলে আসে আড্ডা দিতেl আমার চেয়ে মা এর সাথেই বেশি কথা বলেl
স্লামালিকুম ভাই, কেমন আছ তুমি? খালা কেমন আছে? জানতে চাই আমি
আমরা ভালোl তদের কি খবর? খালা কৈ? আমি বললাম মা তো খালামনির বাসায় গেছে, বড় খালাও নাকি যাবে, তুমি জানো না ?
না তো, আসবে কখন? আমি বললাম জানিনাl
আচ্ছা ঠিক আছে, আমাকে এক গ্লাস পানি দে তোl আমি পানি আনলামl পানি খেয়ে গ্লাস হাতে দেবার সময় ভাই বলল, নিতু শোনl
আমি বললাম, কি?
তুই না তোর এই দুইটার খুব যত্ন নিবি, বলে আমার বুকে হাত দিলl
মুহূর্তে মনে হলো পুরো দুনিয়াটা আমার চোখের সামনে ঘুরে গেল l আমি কি বলব বা কি করব কিছু বুঝতে পারছিলাম নাl শুধু হাত দুটো ছাড়িয়ে আমি দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম l
আমার মনে হলো আমার চোখের সামনে থেকে সুন্দর পৃথিবীর ছবিটা কেও টেনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললl আমার পরিচিত সব পুরুষমানুষের চেহারার মুখোস খুলে গেলl ওই লোকটা কখন চলে গেছে আমি জানিনাl
কি রে? দরজা খোলা কেন? বলতে বলতে মা ঘরে ঢুকলোl তারপর আমাকে দেখেই আঁতকে উঠে বলল কি হয়েছে তোর?
আমি মা এর কোলে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলামl যখন জ্ঞান ফিরল তখন অনেক পরিচিত মুখ দেখলাম, তারমধ্যে মা এর অস্রুবিকৃত মুখটাও নজরে পড়লl আমি মা এর কোলে আবার চোখ বুজলামl মা কি বুঝলো কে জানে, সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিগ্যেস করলো 'কি হয়েছে মা তোমার? '
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম নাl হু হু করে কেঁদে দিলামl কাঁদতে কাঁদতেই মা কে সব খুলে বললামl রাগে মা এর মুখ টা কঠিন হয়ে গেলl মা বলল এই কারণেই আমি তোকে কারো সাথে মিশতে দিতাম না, আমি তোকে শক্ত করে গড়তে চাইছিলাম, গল্পের বই পড়লে তুই কল্পনা বিলাসী হবি তাই বই পড়তে দিতে চাইতাম না, বাস্তব অনেক কঠিন রে মাl বাস্তব আর গল্প এক জিনিস নাl আমি জানি একদিন তুই নিজেই নিজেকে সামলাতে পারবি, নিজের ভালো মন্দ বুঝতে পারবি,সেই দিনটি পর্যন্ত আমি তোকে সামলে রাখতে চেয়েছিলামl তোর বাবার সাথে আমার বিয়ের পর পর আমিও এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলাম তোর বাবার বন্ধুর দ্বারাl তোর বাবা সবকিছু জানার পরেও কোনো প্রতিবাদ করেনি শুধু মান সম্মান এর ভয় এl আমি চাইনি যা আমার সাথে হয়েছে তা আমার মেয়ের সাথে হোকl
মা বলল তুই আমার সাথে এখুনি চল বলে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল, আমরা বড় খালার বাসায় গেলামl অর্ক ভাই টিভি দেখছিল, আমাদের দেখেই তার মুখ চাই এর মত সাদা হয়ে গেলl
মা বলল নিতু ওকে গিয়ে একটা চর মারl আমিও আর দেরী করলাম নাl চর খেয়েও ও মাথা নিচু করে থাকলো, পাসের ঘর থকে বড় খালা ছুটে এসে বলল কি হয়েছে?
মা বলল তোমার ছেলে কে জিজ্ঞেস করl
মা আর আমি ওই বাসা থেকে বের হয়ে আসলামl আমার এখন অনেক ভালো লাগছিলl মা বলল চল নিতু একটু রিক্সা তে ঘুরে বেড়াইl আমার মনে হলো আমি মা কে চিনতে কতই না ভুল করেছিl আমার গর্ব হলো এইজন্য যে আমি এমন মা এর সন্তানl
মা বলল কোনো অন্যায় কে মাথা পেতে নিবি না, প্রতিবাদ করবিl আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসলোl সেদিন থেকে মা আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে গেলl
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর ।।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
কুমার বিশ্বজিৎ এত কঠিন কথা সহজে বলা। মানুষের মুখ চেনার চেয়ে মন চেনা জুরুরী। অনেক ভালো।
স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ nahid osonkho dhonnobad......রাজীব আপনার কমেন্ট পেয়ে সত্যি ভালো লাগলো....আমি তো ভেবেছিলাম আমি আর লিখব না অন্তত গল্প কবিতাতে তো না....যাই হোক ভালো থাকবেন...এই সংখায় আপনার গল্প পাব আসা করি
Rajib Ferdous এই গল্পটা ভাববার মত, এই গল্পটি ভাবাবার মত, এই গল্পটি তর্ক করবার মত, এই গল্পটি কিছু কঠিন কথা সহজভাবে বলে ফেলবার মত, এই আমাদের অনেকদিনের অপ্রাপ্তিকে পাইয়ে দেয়ার মত।
খন্দকার নাহিদ হোসেন আপনি ভাল লিখেছেন। যাক ভাল লাগলো এ ধরনের বিষয় নিয়ে একটা লেখা পেলাম বলে কারণ আমরা শুধু পাশ কাটাতে চাই।
স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ শিহাবুর এবং তুষার কে সুভকামনার জন্য ধন্যবাদ
তুষার চক্রবর্তী সুন্দর লিখেছেন, আরো ভাল লেখুন এই কামনা করি
এস. এম. শিহাবুর রহমান ভালো লেগেছে, তবে বানান গুলোর দিকে পারলে আরেকটু নজর দিবেন...

০১ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪