‘জয় বাংলা’ একটি চিৎকার ও একটি মৃত্যু

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

নাঈম আহমেদ
  • ১০
  • ৬১
আমি তখন ক্লাস নাইনে। দুষ্টুমিটা বেড়ে গেল বেঢপ রকমে। স্কুল পালানোর ব্যাপারটাও ইতিমধ্যে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। স্কুলের বিরক্তিকর ক্লাস গুলোর চেয়ে শহর দাপিয়ে বেড়ানোটা মোটেও মন্দ নয়। ওটাকেই মনে হতো স্বাধীনতা। স্কুল যখন পালাতাম কোথাও না কোথাও তো আমাকে যেতে হবে।বেশির ভাগ যেতাম টাউন হল, সার্কিট হাউজ কিংবা মুসলিম ইন্সটিটিউট এর লাইব্রেরিতে। লাইব্রেরিতেই কাটিয়েছি সবচেয়ে বেশি সময়। বই পড়তাম যত খুঁজতাম তার বেশি। হঠাৎ একদিন মনে হল!সোজা গিয়ে উঠলাম ক্যান্টনমেন্টের,বিজয় গাঁথা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। তখন তিনটা। সূর্য একা একা পূর্ণ প্রতাপে উত্তাপ দিচ্ছে। তবে কিছুটা হেলে পরেছে পশ্চিমের দিকে। অবাক লাগল স্বাধীনতার জন্যই বোধহয় সূর্যের এতো ত্যাজ। ময়মনসিংহে তখনও এসির (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) প্রচলন অতটা হয়ে উঠে নি। রোদ থেকে হঠাৎ এসির নিরা বেগ ঠাণ্ডা বাতাসে গেলে অভিযোজনের একটা অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিত। গায়ের চামড়া যেত ফেঁটে। যা হোক এই বৈরী পরিবেশেও দেখতে লাগলাম একাত্তরের বিভিন্ন নিদর্শন। অস্ত্র নিরীহ মানুষের খুলি, ভাঙ্গা কঙ্কাল আর ফটোগ্রাফি।পৈশাচিকটার তাণ্ডবে ক্ষত বিক্ষত মানুষ, নারীর সতীত্ব নষ্টের লম্পট। না আর এগুচ্ছোই না। এসবের ফটোগ্রাফি তাই আর দেখলাম না পাছে আর কিছু দেখতে না পারি,
মানুষের স্বাধীনতা বোধ সে দিন থেকে শুরু হয়েছে যে দিন থেকে সে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করতে শুরু করেছে। একই কারণে বাংলাদেশ ও এক দিন স্বাধীনতা নামক বড় প্রশ্নবোধক চিহ্নটির মুখো মুখি দাড়ার।যুদ্ধ করল, ছিনিয়ে আনল বিজয়।
সকল শান্তি চুক্তি যেখানে ব্যর্থ হয় যুদ্ধই সেখানে শান্তি এনে দিতে পারে। বাঙ্গালী তাই যুদ্ধ করল এক অসম শক্তির সেনাবাহিনীর সাথে। যে কোন একটি দেশকে পঙ্গু কে দেবার দুইটি উত্তম প্রথা আছে। প্রথমত ।ঐ দেশের নারী জাতিকে লাঞ্ছিত করা। আর দ্বিতীয়টি হল ঐ জাতির বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ফেলা। পাক সেনা ও তাদের দোসররা দুটি কাজই সফল ভাবে করেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জাপানি সেনা বাহিনী নালীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। আর তার থেকে শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী চালাল সেই একই বর্বরতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোন যুদ্ধে এতো পরিমাণ নারী লাঞ্ছিত হয় নি। তাদের এই লোলুপ কুদৃষ্টি কোন মতেই মেনে নিতে পারবে না বাঙ্গালী জাতি। এই বিষয়টি থেকে এখন বের হয়ে আসতে চায়। আর সেই থেকে গল্পে পদার্পণ করছি। আমার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার সব চেয়ে উত্তরের হালুয়াঘাট থানায়। ‘বিজয়ে গাথা’ জাদু ঘরে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অ্যামবুশ ও শম্বুক যুদ্ধের বেশ কয়েকটি স্মরক লিপি রয়েছে। এমন একটি স্মারক থেকেই জানতে পারলাম হালুয়াঘাটের তেলিখালীতে এক তুমুল সম্মুখযুদ্ধ সংগঠিত হয়। সাতাশ জন বীর মুক্তি সেনা শহীদ হন। প্রাণ হারায় শতাধিক ভারতীয় সেনা। আর পাক বাহিনীর নিহতের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। সব শেষে মাটি কামড়ে আত্মসমর্পণ করে খান সেনারা।
অবাক হয়ে গেলাম। কই আমার মা বাবা তো এ যুদ্ধের কোন কাহিনী শোনান নি!তাদের কাছে শুনেছি শুধু পালানোর খবর। এর একটাই কারণ অবশ্য আছে। আমার বাবা ভিতু ছিলেন। ভীরু মানুষের দূরদর্শিতার অভাব থাকে। সব সময় তারা আগে ফল বিবেচনা করে পরবর্তীতে সে কাজে হাত দেয়। যুদ্ধ শুরুর সময় আমার বাবা ভেবেছিলেন এতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাঙালিরা এই লাঠি সোটাধারী মুক্তিবাহিনীর ধুলায় মিশে যাবে। তা ছাড়া দরিদ্র মা বাবার এক মাত্র শিক্ষিত সন্তান এ বিষয়টিও আমার বাবাকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে রেখেছে। কিন্তু রাত খুব একটা হয়নি। খারের বিলে নাকটাকে উঁচিয়ে রেখে সারারাত জোকের কামড় খেতে হয়েছে। দৌড়াতে হয়েছে মাইরের পর মাইল। সাঁতরাতে হয়েছে খর স্রোতা নদী। এ সব কারণে বাবা মার কাছে নীতি বাক্যই শুনেছি যুদ্ধের কাহিনী শুনি নি। আরা যুদ্ধের সময়কার যে কাহিনী শুনেছি তা শুধু পারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। কিন্তু সেই স্মরকটি দেখার পর থেকে তেলিখালী যুদ্ধের কাহিনী শোনার জন্য মনটা পিপাসর্ত কাকের মতো উড়তে লাগল দিব্বি দিক। আমাদের গ্রাম থেকে আট কিলোমিটার দূরে ভোরাঘাট নদীর ধারে সেই তেলিখলি যুদ্ধক্ষেত্র। যায়গাটা সীমান্তের সাথে লাগানো, একেবারে ঝোপঝাড়ের আকীর্ণ। এখানো সেই স্থানে একই অবস্থা। বর্ডার ছুঁয়ে একটি মাঝারি আকৃতির রাস্তা আছে। খান সেনারা ছিল একটি মাঝারি আকৃতির রাস্তা আছে। খান সেনারা ছিল রাস্তার ঢালে আবার কেও কেও পাহাড়ে কিংবা খনন করা পরিখায়। এ সব তথ্য পরে সংগ্রহ করেছিল। মায়ের গল্পটাতে ও সব ছিল না। গল্পটা সংক্ষিপ্ত খানিকটা অসম্পত্ত। আমার বাবা ফুপাত বোন। ফোপাত বোন মানে একেবারে আপনার ফুপু মেয়ে নয়। অনেকটা দূর সম্পর্কের। তারা বাড়ি ছিল বর্ডারের কাছা কাছি। আমার ছোট কাকা শুনতে পেলেন সেখানে যুদ্ধের সময় তাদের দূরসম্পর্কের ফুপাতো বোনটি মারা গেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল তিনি গুলি বিদ্ধ হওয়ার সময় তার ছোট শিশুটিকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন। আর সেই অবস্থায় কোরে শিশুটিকে নিয়েই নাকি তিনি মৃত্যু বরণ করেন। গল্পটার সমাপ্তি এখানেই।
শিশুটি নাকি জীবিত চিল! তবে এখন কোথায় আছে? কি করছে? সবকিছুই অজানা থেকে গেল। মহিলাটি মারা গেলে বাড়ির আর সবাই কি করছিল এ সব তথ্য নেআ। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। কাঁকতলিয় ভাবে নাজু আপার সাথে আমার পরিচয় পরিচয় টুকুই তুলে ধরছি। নাজু আপার পরিচয় টুকুই তলে ধরছি। নাজু আপার বাবা ছিলেন আমার বাবার শিক্ষক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা চার বোন। রণক্ষেত্রের প্রত্যক্ষদর্শী যুদ্ধের সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি কুড়ে ঘরে। বাড়িটা ভারত সীমান্তের কহিব কাছে। রাজাকারেরা চিরের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তারা এড়িয়ে যেতে পারলো না। নাজু আপর মা আর বড়বোন খুব আপা যুদ্ধ শিবিরের রান্নাবান্না কাজ করতেন। ঘুম থেকে উঠেই ঐ ঘরে থাকা মহিলারা ভারত সীমানায় চলে গেল। হটাৎ প্রচণ্ড শব্দ হল। পাহাড়ের আড়াল থেকে সবাই তাকিয়ে দেখল ব্রাশ ফায়ারে কিভাবে বেঁচে গেলেন এই যাত্রায়। যৌথ বাহিনী তখনো গড়ে ইঠেনি। স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তি সেনারা কিছু আ্যম্বুশ করতে পারলেও প্রত্যক্ষ যুদ্ধে এতো বড় সেনা দলের সাথে পেরে উঠবে না। আবেগটাকে তাই চাপা দিয়ে পাহাড়েই আত্মগোপন করে থাকল। এ গল্পের কাহিনীটাও এই অতটুকুই কিন্তু এর প্রভাব আমার মনে বেশ ভালকরেই পড়েছে।
এমন অনেক লোমহর্ষক কাহিনী প্রায়ই শোনাতাম নাজু আপর কাছ থেকে। একটা ঘটনা সত্যি অবাক করে দিল আমাকে। ৭ ডিসেম্বর, পাকিস্তান এ সময় সম্মুখ যুদ্ধের ঘোষণা দিল। অর্থাৎ গরিলা আক্রমণ আর চলবে না। হয় হারবে নয় এগিয়ে যাবে গুলি করতে করতে। তেলিখালিতে চলছে তুমুল যুদ্ধ। বৃষ্টির মতো গুলি ঝরছে। গ্রেনেড ফাটছে যত্রতত্র। বোম করে বিকট শব্দে জ্বলে উঠে বোমার আগুন। এক সময় গোলাগুলির থামলো। খান সেনারা তাদের মৃত সৈন্যদের ফেরে রেখে পরাজয় মেনে চলে গেল। আনন্দে আড়াল থেকে লাফিয়ে উঠলেন এক মুক্তিযোদ্ধা দিগন্ত ফাটিয়ে চিৎকার দিলেন জয় বাংলা। একটা গুলির শব্দ হল। ছিটকে পড়লো গাঢ় লাল রক্ত। পরিস্থিতি একেবারে শান্ত হলে নাজু আপার বাবা ছুটে যান লাশটির কাছে। সে স্থানে নাজু আপারা পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। নিথর পড়ে আচে মানুষটি। সবাই কাঁদছে। নাজু আপার চাচা বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। শুধু বিশ্বভ্রমান্ডে ছড়িয়ে দিলেন একটা চিৎকার।
জয়... য় বাংলা
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মামুন মনির যেকোন লেখার গুণ বিচার বেশ কঠিন তবে আপনার বেলায় তেমনটি হয়নি। বেশ ভালো লাগল, তবে বানানের শুদ্ধতা জরুরী।
সূর্য আমি যেকোন লেখা পড়ার আগে লেখকের বয়সটা দেখে নিই। এই প্রফাইলটাতে বয়সটা দেয়া নেই। ছবিটা দেখেও ধারনা করতে পারলামনা। লেখাটা ছাড়া ছাড়া মনে হয়েছে, কোন একটা নির্দিষ্ট ঘটনা উঠে আসেনি কিন্তু লেখনীতে প্রচন্ড ধার রয়েছে। বাক্যগঠনও অসামান্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
বিষণ্ন সুমন বেশ লিখেছ তো ছুট ভাই
Rakib খুবই ভালো লাগলো,শুভকামনা রইল
সকাল রয় সুন্দর লেখা
মা'র চোখে অশ্রু যখন গল্পটা যে সত্যি সুন্দর আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না. আর কিছু বানান ভুল আছে.....................
ZeRo খুব সুন্দর
জাবেদ ভূঁইয়া ধন্যবাদ লেখক ভাইয়াকে ।আরও লিখুন ।
বিন আরফান. গল্পের নামকরন তা খুব সুন্দর, তেমনি লেখাও সুন্দর. মানুষ দেখতে ছোট হলে কি হবে, লেখায় ধার আছে. শুভ কামনা রইল
বিষণ্ন সুমন শুভকামনা রইলো

২৬ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪