ক্ষুধার রকম ভেদ

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

গীতু
  • ৩৫
  • 0
  • ৪২
ঘটনা--১ ডোবা তেলে ভেজে বড় ছাঁকনি হাতা দিয়ে ছেঁকে জিলাপি গুলো তুলে সেরার মাঝে ডুবান হচ্ছে । রাস্তার অপর প্রান্তে বসে লোলুপ দুটি চোখ চক চক করে উঠল । পেটের অসীম গর্ত থেকে হাহাকার করে উঠলো । লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে । পড়ন্ত বিকেল সময় বেশি নাই। সবার জিলাপি কিনে বাড়ি ফেরার তাড়া । মানুষের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ওই কড়াইয়ে হাত দিয়ে জিলাপি তুলে নিতে পারলে ভাল হত । ভাগ্যিস কড়ায়টা গরম ছিল, না হলে দোকানির কি অবস্থা হত ! ১০ বছরের ছেলেটা রোজা রাখেনি । কিন্তু পরিস্থিতি তাকে রোজা রাখতে বাধ্য করেছে । আকাশ ফুটো হয়ে যেন বৃষ্টি ঝরছে - কদিন হল তাই কাজ জুটেনি । বাড়ীতে আজও খালি হাতে যাব - এই ভাবনাই বসে ভবতে ভাবতে সে সামনে ওই দৃশ্য দেখছে । চারদিকে মানুষের ছুটো ছুটি , দোকানিদের ব্যস্ততা সব দ্যাখতে দ্যাখতে তার চোখে জল এসে গেল । আজও কি পারবোনা কিছু খাবার নিয়ে যেতে ? মানুষরা যেমন ছুটছে পেটের মাঝে ক্ষুধা ও এইভাবেই ছুটা ছুটি করছে । কি মনে করে সে উঠে দাঁড়াল । সোজা রাস্তা পার হয়ে গেল ওই দোকানের সামনে । দোকানের মালিক তখন টাকা গুছিয়ে রাখছে । সব চুলা বন্ধ হয়ে গেছে । অপেক্ষা শুধু একটি সাইরেন এর । ছেলেটি সরাসরি জিলাপি রাখে সেই কাচের বাক্সর দিকে তাকাল । সব বিক্রি হয়ে গেছে। কিছু ভাংগা টুকরো পড়ে আছে । তার সেই ক্ষুধাতুর দৃষ্টি তে এমন কিছু ছিল যে দোকানি ওর কর্মচারি কে বলল-“এই ফরিদ ছেলেটাকে ওই জিলাপিগুল দিয়ে দেত । সাথে একটু মুড়িও দিস । ঠংগাটা দুলাতে দুলাতে যখন সে বাড়ির দিকে ছুটে চলেছে , সাইরেন ও আজান পড়ছে । রাস্তাটা একদম ফাঁকা । চারদিক নিস্তব্ধ , ঠিক ছেলেটার হাতে এই প্যাকেট থাকায় তার পেটের মতই অবস্থা । ঘটনা - ২ শিলা আজ বেতনের টাকাটা নিয়ে ভাবল- কতজনতো কত ভাল ভাল দোকান থেকে ইফতারির আইটেম কেনে। আজ তার মনেও একটু শখ জাগল । যা ভাবা তাই কাজ। নাম করা এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সে দেখল কত্ত আইটেম ! কেনার জন্য সে দর দাম করতে লাগল । কিন্তু যেটা ভাল লাগে তার দাম শুনে সে থমকে যায় । মনে মনে ভাবে-এই সামান্য জিনিসের এত্ত দাম ! ওদিকে তাকিয়ে দ্যাখে গোটা মোরগ কেটে রোষ্ট না ফ্রাই কি একটা বানিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে । মনে মনে ওটার উপর পালক আর মাথা বসিয়ে জ্যান্ত মোরগ কক কক করছে সে দ্যাখতে পায় । গা টা ক্যামন গুলিয়ে উঠে । ভাবে সংযমের মাসে অসংযম অর্থ আর ক্ষুধার বেপরোয়া ভাবের কথা । “আরে রহমত সাহেব ! আসেন আসেন । বলেন কোন কোন আইটেম নিবেন ? দোকানি দ্বিগুণ উৎসাহে কাউকে ডাকছে । তাতে শিলা সম্বিৎ ফিরে পায়। দোকানির দৃষ্টি বরাবর তাকিয়ে দেখে সাদা পাঞ্জাবি,টুপি পরা, কাঁচা - পাকা দাঁড়ি ,বেশ স্বাস্থ্যবান এক লোক গাড়ি থেকে বের হয়ে এগিয়ে আসছে । এসেই বলে- আজ নতুন কোন কোন আইটেম আইসে? নাকি আগের গুলাই আসে? এক কাজ কর যে সব আইটেম কিনা হয়নাইকো । অর মধ্যে ভাল গুলা দিয়াদে । -এইযে এই চপ নিয়া যান । কিমার চপ -১৫ টাকা পিস ।এই মুরগির গ্রিল্ নেন - ৫০ টাকা । লোকটি তার পছন্দ দোকানির উপর দিয়ে দিয়েছে । আর দোকানিও যত দামি দামি আইটেম তাকে দিতে শুরু করেছে ।এভাবে ৬ টা আইটেম নিল । ১০ টা করে পিস । দোকানি বলল - ভাই আজ ১০ টা করে নিলেন? বাড়িতে নিয়ে যাবেন ? টাকা দিতে দিতে বলল- হ বাড়ির জন্যই লিছি । তোমাগ ভাবি আজ বহুত বিজি । সক্কাল থেকা এখন ও বাড়ি আসে নাই । এই শপিং সেন্টার থেকে ওই শপিং সেন্টার ঘুরে আর কিনে । ইফতারি নিয়া আজ তার ভাবনের টাইম নাই । বুয়াও কিছু বানাইছে তাউ আজ বেশি কিনলাম । লোকটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে আসে শিলা। মনে মনে ভাবে, ছোট বেলা থেকে মা - বাবার কাছে একটা প্রবাদ শুনত -“লিখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।“ কিন্তু আজ বড় হয়ে সে বুঝতে পারছে এই সত্যটা কতটা ! ওই রহমত লোকটার উপর সব রহমত । শিক্ষিত বলে ত মনে হল না ,কিন্তু আজ তার কাছে অর্থ , গাড়ি যখন আছে বাড়িও আছে । তাই প্রতিপত্তি আছে । এদিকে আমাদের মত সাধারন শিক্ষিত মানুষের পক্ষে সেই অর্থ নাই যে ইচ্ছা মত কিছু কিনে নিয়া গিয়ে ইফতার করবে । বাড়িতে এসে বাবার চিন্তিত মুখ দেখে শিলা জিজ্ঞাসা করল -“ আবার কিছু হয়েছে নাকি ওই জমি নিয়ে ? “ -হ্যাঁ রে ।ওই লোক আজ বাড়িতে এসেছিল ।না রে মা আমি সাধারন মানুষ ,এদের ক্ষমতার সাথে পারবোনা । ভাবছি জমিটার যাই দাম দিক আমি তাতেই বিক্রি করে দিব । কিছুতো টাকা আসবে । লোকটার অনেক প্রভাব ,আমার জমি দখল করে নিলে আমার কিছু করার থাকবে না ।কেস লড়তে লড়তে জীবন-টাকা দুই যাবে ।শেষে...... । কি ভাবলাম কি হল ! শহরের মধ্যে ভাল জায়গায় জমিটা কতো আগে কিনে রেখেছিলাম ,রিটায়াড করে যতোটুকু টাকা হবে আর যা জমান আছে তাই দিয়ে একটা বাড়ি করব । ভাড়া দিলে কিছু টাকা আসবে । তোর বিয়ে , আর দুটোর পড়াশুনাই শেষ হয়নি ............।।শহরে অন্য জায়গায় এই দামে জমিও পাব না আবার রহমতের মত মানুষের সাথে আমার লড়াই মানায় না। যা দেবে তাই লাভ । নামটা শুনে শিলা চমকে উঠে । বাবাকে বলে -“আচ্ছা বাবা লোকটা কেমন দেখতে ? “ বাবা বর্ণনা দেয়া শুরু করল.........।। সব মিলে যাচ্ছে - গায়ের রং , গঠন , কথা বলার ধরন , পাঞ্জাবি , গাড়ির রঙ । মনে মনে ভাবে - আজ তাহলে তার এই আনন্দে বেশি করে ইফতারি কেনা! তার বাড়িতে পরিবারের সাথে এক পরিবারের নিঃস্বতাকে উপভোগ করা! যার আত্ত আছে অন্যের এই সামান্য সম্বলের উপর এত্ত লোভ ! এ ক্যামন ক্ষুধা!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গীতু মোটামুটি ভালো লাগাতে ভালো লাগলো .
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মোহাম্মদ আকতার উজ জামান (মুন্না) মুটামটি ভাল লাগ্ল।।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
গীতু হালিম & সুর্য বন্ধু ধন্যবাদ, আসলেই আমার লেখা একটু ছোট রাখতে গিয়ে একটু এমন হয়েছে। এর বাকি টুকু এখানে ভাল করে না দিয়াতে। তবে পরের গল্প আসা করি এই সমস্যা কেটে যাবে ।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
সূর্য গীতু টুকরো দুটো কাহিনীর গল্প বেশ ভালই। তবে কিছু যত্ন নিয়ে গল্পটা পূর্ণতা দাও। বর্ণনায় একটা খেয়াল রাখলেই বাজিমাত হয়ে যেত। অনেক অনেক শুভ কামনা তোমার জন্য [এবং অবশ্যই ভোট]
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
M.A.HALIM ভালো। একটু যত্নবান হলে আরো সুন্দর হতে পারত। যাক বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
গীতু অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিষণ্ন সুমন ভিন্ন ধারার আঙ্গিকে অন্যরকম ক্ষুধার অবতারণা । বর্ণনাশৈলিতে আর একটু যত্নবান হলে পড়তে আরো ভালো লাগত । অল দা বেস্ট ফর উ।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
গীতু ধন্যবাদ । এক সাথে এতজনের উৎসাহ দেবার জন্য। নতুন গল্পে সেই প্রয়াস থাকবে। নিজে সময় নিয়া computer type করা আমার জন্য অন্যতম কষ্টের কাজ।তার উপর ঠিক করে পাঠানোর পর সেভাবে যদি দিত তবে ভাল লাগত।পরের গল্পটা প্রসারিত হবে আসা করি ভাল লাগবে।@সালিনা,জুয়েল,প্রজাপ্রতি
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
এফ, আই , জুয়েল # আক্ষেপ , অভিমানে ক্ষুধার বাহারী প্রকাশ খুবই সুন্দর ।।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১১

২৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪