আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছি

মুক্তিযুদ্ধ (ডিসেম্বর ২০২৫)

এফ. আর. মাহদী
  • 0
  • 0
আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছি—
যেখানে শব্দ ছিল না, ছিল শুধু গুলির গর্জন,
শিশুর কান্নার মধ্যে ভেসে উঠেছিল লাল সূর্যের জন্ম।
আমি সেই ভোরের কথা বলছি,
যেখানে ভাতের গন্ধের চেয়ে বারুদের গন্ধ বেশি ছিল পবিত্র,
যেখানে একমুঠো ধান মানে ছিল একদিনের বেঁচে থাকা।
আমি বলছি সেই নদীর কথা,
যার জলে ভেসে ছিল নাম না জানা মানুষের দেহ,
তবু তারা আমাদের পতাকা হয়ে উঠেছিল।
আমি বলছি সেই মাটির কথা—
যে মাটি রক্তে ভিজে উঠেছিল অন্ধকার রাতের দহন শেষে,
যে মাটি এখনো কাঁপে, যখন কেউ বলে “স্বাধীনতা সস্তা।”
না, স্বাধীনতা সস্তা নয়—
এটা কেনা হয়েছিল কিশোরের রক্তে,
মায়ের সিঁদুর ধুয়ে ফেলা কান্নায়,
এবং মাটির গভীরে সমাধি হওয়া লাশের ঘ্রাণে।
আমি দেখেছি—
কিশোরের হাতে অস্ত্র, আর পকেটে একটা চিঠি,
লেখা— “মা, আমি ফিরে আসবো না হয়তো, তবু জয় বাংলা।”
আমি শুনেছি—
রেডিওর ফিসফিসে কণ্ঠে মুক্তির ডাক,
আর অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে থাকা মানুষদের চোখে জ্বলে ওঠা অগ্নিশিখা।
আমি দেখেছি—
নারী, যার গায়ে শকুনেরা ইতিহাস লিখেছিল,
তবু সে দাঁড়িয়েছিল সূর্যের দিকে মুখ তুলে,
বলেছিল— “আমি হেরে যাইনি, আমি জন্ম দিচ্ছি নতুন প্রজন্ম।”
আমি সেই প্রতিশোধের গান শুনেছি,
যা গাওয়া হয় নীরবতাকে ছিঁড়ে,
যা এখনো বাজে ধানক্ষেতে, নদীধারে, কবিতার ভেতরে।
আমি বলছি—
মুক্তিযুদ্ধ মানে কেবল ইতিহাস নয়,
এটা রক্তের উত্তরাধিকার,
যে উত্তরাধিকার আমরা ভুলে যাচ্ছি আজও।
কত মিথ্যা স্বাধীনতা বিক্রি হয় আজ,
কত পতাকা দুলে কেবল অনুষ্ঠানের পর্দায়,
কত বক্তা উচ্চারণ করে “শহীদ” শব্দটাকে সাজসজ্জার মতো!
তবু, আমি বলছি—
আমাদের শহীদরা এখনো বেঁচে আছেন,
তাদের নিঃশ্বাস আছে এই বাতাসে,
তাদের রক্ত আছে আমার শিরায়।
আমি প্রতিবাদ করছি—
যে ইতিহাস বিক্রি হয়, তার বিরুদ্ধে,
যে স্বাধীনতা ভুলে যায় নিজের দাম, তার বিরুদ্ধে।
আমি প্রতিবাদ করছি—
যে যুবক মোবাইলের আলোয় ইতিহাস খোঁজে না,
যে কবি লেখে না লাল রক্তের কথা,
যে মঞ্চে আজ মুক্তিযুদ্ধ কেবল অভিনয়—
আমি তাদের বিরুদ্ধে লিখছি এই কবিতা।
আমি দেখেছি—
একজন মুক্তিযোদ্ধা চায়ের দোকানে বসে আছে,
কেউ চেনে না তাকে, কেউ জানে না তার চোখের ভিতরে
জ্বলছে এক অমর যুদ্ধের আগুন।
আমি দেখেছি—
একজন রাজাকার বীরের মতো হাঁটে শহরের পথে,
তার গলায় টাঙানো দামি পাঞ্জাবি,
কিন্তু মাটির নিচে এখনো জেগে আছে সেই গর্তগুলো,
যেখানে সে পুঁতে রেখেছিল অসংখ্য গুলির দাগ।
আমি বলছি—
এই দেশ কেবল মানচিত্র নয়,
এটা এক গর্ভধারণ করা মায়ের রক্তাক্ত ইতিহাস।
বাংলাদেশ—
তুমি কোনো নাম নয়, তুমি প্রতিদিনের যুদ্ধ,
তুমি কৃষকের ঘামের মতো পবিত্র,
আর তুমি সেই কিশোরের মতো,
যে হাসতে হাসতে গুলি খায় বুকে,
বলতে থাকে— “জয় বাংলা!”
আমি চাই,
আজকের তরুণরা বইয়ের পাতায় নয়, রক্তে খুঁজুক ইতিহাস,
তারা যেন জানে, স্বাধীনতা মানে
সীমান্তে দাঁড়ানো একটা প্রতিজ্ঞা—
যে আমরা আর কখনো নত হবো না।
এই শহরে যত অন্যায়, যত দুর্নীতি,
সবাই বলে— “এটাই সময়ের নিয়ম।”
না, এটাই পরাজয়ের নতুন নাম,
যার বিরুদ্ধে আবার রক্ত দিতে হবে।
আমি আবার যুদ্ধ চাই—
অস্ত্রের নয়, চেতনার যুদ্ধ,
যেখানে কবিতা হবে গুলি,
শব্দ হবে স্লোগান,
আর সত্য হবে পতাকা।
আমি আবার স্বাধীনতা চাই—
যে স্বাধীনতা মানুষের ভিতর সত্য করে জন্ম নেয়,
যে স্বাধীনতা চোখের জল মুছে ফেলে,
যে স্বাধীনতা পতাকার ভাঁজে নয়, হৃদয়ের ধ্বনিতে বাজে।
আমরা ভুলে গেছি—
এই মাটিতে একসময় রক্তের নদী বইত,
এখন আমরা কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখি দেশপ্রেম।
তবু আমি লিখে যাবো—
কারণ কবিতা থামে না গুলিতে,
ইতিহাস থামে না মিথ্যায়,
আর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় না—
যতদিন কেউ প্রতিবাদ করে,
যতদিন কেউ উচ্চারণ করে—
“আমি মুক্তিযুদ্ধের সন্তান।”
হে স্বাধীনতা—
তুমি আমার মায়ের কণ্ঠে,
তুমি আমার বাপের ঘামের গন্ধে,
তুমি আমার সন্তানদের চোখে এক চিরন্তন লাল সূর্য।
তুমি জানো তো?
তুমি এখনো অসমাপ্ত—
কারণ ন্যায়বিচার হয়নি, কারণ শহীদের রক্তের হিসাব কেউ রাখে না,
কারণ আমরা এখনো ভয় পাই “না” বলতে।
তবু আমি বলবো—
না মানে না,
মিথ্যা মানে না,
বিক্রি হওয়া স্বাধীনতা মানে না।
আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছি—
এটা শুধু অতীত নয়,
এটা প্রতিদিনের শপথ,
এটা আমার কবিতার ভিতর দাঁড়িয়ে থাকা শহীদের ছায়া।
আমি বলছি—
যে রক্ত একদিন পতাকা বানিয়েছিল,
সে রক্ত আজও আমার কলমে বয়ে চলে।
আমি বলছি—
আমি এখনো যুদ্ধ করছি,
তুমি কি করছো?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই কবিতাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আত্মা, ইতিহাস ও চেতনার সাথে গভীরভাবে সমঞ্জস্যপূর্ণ। কবিতার প্রতিটি পঙ্‌ক্তি মুক্তিযুদ্ধের মূল সুর—প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বহন করে। এতে বর্ণিত হয়েছে ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল বাস্তবতা, যখন বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে নিয়েছিল স্বাধীনতার স্বপ্নে, যখন প্রতিটি ঘরে ছিল ক্ষুধা, ভয়, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল স্বাধীনতার ডাক। কবিতায় শহীদ, নির্যাতিত নারী, কৃষক, তরুণ—সব শ্রেণির মানুষের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ একত্রে ফুটে উঠেছে। এটি শুধু অতীতের বর্ণনা নয়, বরং আজকের প্রজন্মের উদ্দেশ্যে এক তীব্র স্মরণ—স্বাধীনতা কেবল মানচিত্র নয়, এটি রক্তে লেখা ইতিহাস। কবিতার বক্তা প্রতিবাদ করেন ভুলে যাওয়া ইতিহাস, রাজাকারদের পুনরুত্থান, এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত প্রজন্মের বিরুদ্ধে। এই প্রতিবাদী সুর মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনারই প্রতিধ্বনি—অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সত্য উচ্চারণ করা, এবং ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকা। কবিতায় “আমি আবার যুদ্ধ চাই—অস্ত্রের নয়, চেতনার যুদ্ধ”—এই লাইনটি প্রমাণ করে মুক্তিযুদ্ধ কেবল ১৯৭১-এর সীমায় আবদ্ধ নয়; এটি আজও চলমান এক নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। অতএব, কবিতাটি মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও একই সঙ্গে আধুনিক প্রজন্মকে নতুন করে সেই চেতনায় জাগ্রত হওয়ার আহ্বান। এটি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, গৌরব ও প্রতিবাদের সঙ্গেই সম্পূর্ণভাবে সমঞ্জস্যপূর্ণ।

১০ নভেম্বর - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী