জিবন অংক

আতঙ্ক (নভেম্বর ২০২৫)

জি. ইস. জিহাদ
  • 0
  • ১৮
ডিসেম্বরের এক নিস্তব্ধ রাতে মেয়েটি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে তার মনে উত্তেজনার বাধ ভেঙেছে মস্তিষ্ক এখন বিশ্রাম নিতে চাইছে না সে এখন অতি উত্তেজিত ভবিষ্যত সম্ভাবনা কল্পনায়, রাতে খাবারের সময় বাবা জানিয়েছে তার জন্য পাত্র দেখা হয়েছে তার মত রইলে অতি শীঘ্রই বিয়ের আয়োজন শুরু করা হবে সে তখন কিছুই বলতে পারেনি তবে সে জানে বাবা যখন বলেছেন তখন ওটাই শেষ সিদ্ধান্ত, তার মত জানতে চাওয়াটা নিত্তান্তই ভদ্রতা মাত্র। তার অবশ্য তেমন কোন অসুবিধাও নেই বিয়েতে, বয়স কুড়ি পেরিয়েছে তার চেনা জানা অনেকের বিয়ে এর আগেই হয়েছে যাদের হয়নি তাদের হচ্ছে এখন, আর এই বয়সের একটি মেয়ের যে বাহ্যিক পছন্দ বলে একটা ব্যাপার থাকে অর্থাৎ প্রণয় সম্পর্কিত ঘটনা তা তার জীবনে কখনোই সংঘটিত হয়ে উঠতে পারেনি অথবা সেই সুযোগ টা পায়নি। তার জীবনটা এই অবধি তো তার বাবা মায়ের নির্দেশ মতোই হয়ে এসেছিলো আর তার স্মৃতি সঠিক হয়ে থাকলে জীবনের কোন অংশেই সেই নির্দেশে ছিলো না যে গিয়ে কোন অপরিচিত মানুষের সাথে বিশেষ সম্পর্কে লিপ্ত হও, সেও নিজে থেকে তার বিশেষ কোন প্রয়োজন ও মনে করেনি বা ওসব চিন্তা করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। আর সকল নির্দেশনা পালনের মধ্যে নিজ জীবন নিয়ে তার কখনো কোন মৌলিক আকাগুকাও তৈরি হয়ে উঠেনি। তার সম্পূর্ণ মনোসংযোগ কেন্দ্রীভূত ছিলো তার পড়াশুনা এবং তার জননীর মধ্যেই, অল্প বিস্তর সামাজিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব সম্পর্ক, কিছু সহপাঠীদের সাথে গড়ে উঠলেও তা কখনোই খুব ঘনিষ্ঠ কিছুতে রূপ নেয়নি। তবে আজকের এই হঠাৎ ঘোষণা তার মনে অনেক ভাবনা উদিত করছে সে এত বিস্তর ভাবনার সঙ্গে পরিচিত নয় সে এত কল্পনার সাথে পরিচিত নয়, সে উত্তেজিত তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা নিয়ে, তার উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলছে। হঠাৎ তার মনের দ্বারে কড়া নাড়লো এক নতুন ভাবনা, জননীর কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার কথা তার স্মরণে আসতেই মনে তোলপাড় আনলো অনিশ্চয়তা ও অজানার তুফান। সে আর উৎসাহিত নয়, তার উত্তেজনার ছটফট রূপ নিয়েছে এক নিশ্চফল অবস্থা। সে আতঙ্কিত। সে ভীত।
সময়ের পালাবদল ঠেকায় কে এবং অদৃষ্টের লেখাও কজনই বা পারে পরিবর্তন করতে। দেখতে দেখতে মেয়েটির বিয়ে হয়ে হয়েছে তার পরিচয় বাবা মায়ের ছোট্ট মেয়ে থেকে স্বামীর স্ত্রী হিসেবে পরিবর্তন হয়েছে বাড়ির বড় বউয়ের আসনে তাকে রেখেছে সবাই সেই পরিচয়েই সবার কাছে পরিচিত সে। সারাদিন তার কাজের ব্যস্ততা, কত দায়িত্ব, প্রথম প্রথম তার বেশ হিমশিম খেতে হলেও ঠুকতে ঠুকতে কোনোভাবে মানিয়ে নিয়েছে, আজ রাতে তার স্বামী ফিরতে বেশ দেরি করছে বাহিরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে, যেন আকাশ তার সকল বাধ ছেড়ে দিয়েছে এই নির্জন রাতে। এই ঘন বর্ষার রাতে তার মন একাকীত্বের গন্ধে আবার চঞ্চল হয়ে উঠলো যেমনটা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে এক শীতের রাতে, হাড় হিম করা কনকনে ঠান্ডায়, তার হাত পা সেদিন ঘামছিলো মনের উত্তেজনায়, মস্তিষ্কের চাঞ্চল্যকতায় সেদিনও সে বিশ্রাম নিতে পারেনি। আজও ঠিক তেমনি তার হাত পা ঘামতে শুরু করেছে মনের মধ্যে এক কেমন অদ্ভুদ চাপ্য ভাব অনুভব হচ্ছে তার, ঠিক তখনই ফোনের শব্দ....... তার মনের সকল চাঞ্চল্যতা বুপ করে থেমে গেলো, অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে এক কালো ছায়া, অজানা তার এই অনুভূতি, অজানা এই আতঙ্ক তার।
বছরখানেক পেরিয়েছে, শরতের এক উদাস বিকেল। ছাই মেঘের চাদরে গুরুগম্ভীর সেজেছে আকাশ। ক্লান্ত নারী। হ্যা মেয়েটি এখন একজন নারী, স্ত্রীর পরিচয় সে কয়েক বৎসর আগের বর্ষায় হারিয়েছে স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন কিভাবে যেন পাল্টে গেলো আত্মীয় পরিচিত কেমন সব দূরে চলে গেলো অথবা দূরে ঠেলে দিলো সে সঠিক করে কখনোই ভাবতে পারে না এসব। এই উদাস বিকেল সে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তার বাড়ি ফিরছে তার মনে আর কোন উত্তেজনা নেই আজ নেই কোন চাঞ্চল্যতা, নিস্তর হয়ে পড়ে আছে সে তার দেহ কারাগারে। পিছন থেকে ডাক, পরিচিত কণ্ঠ মনের ভাবনায় একবার চাকা ঘুরলো আবার ভাবলো না হয়তো মনের ভুল, দ্বিতীয়বার ডাক, এবার সে ফিরে তাকালো, একটি পরিচিত মুখ তার দিকে হাত নাড়ছে ঐযে দৌড়ে কাছে আসছে কিন্তু এ তো তার জীবনের গল্পে ইতিহাস হয়ে পড়েছিলো বাস্তবতার কালো ধুলো পরে ছিলো এর সকল স্মৃতি খাতায় তাহলে এমন হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে কেন উঠলো এ, মেয়েটি কিছু ভাবতে পারছে না,তার অনেক আগের বিশেষ কোন এক অনুভূতি মনের মধ্যে জেগে উঠতে শুরু করেছে তার নিস্তর মন আবার চঞ্চল হচ্ছে, পুরনো ভালোবাসা? না না তা কি করে হয়। তবে মানুষটার কথায় যে তার গাল লাল হয়ে উঠছে, তার পুরো শরীর গরম হতে শুরু করেছে, জ্বর হচ্ছে নাকি? সে নিজেই একবার নিজের হাত কপালে রেখে দেখলো না শরীরের তাপমাত্রা তো ঠিকই আছে। ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিজের মনেই কথা বলে যাচ্ছিলো, মেয়েটার অন্যমনস্কতা দেখে কথা থামিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইলো, মেয়েটাও ওর ভাবনা থেকে বের হয়ে ছেলেটার দিক মনঃসংযোগ করলো, দুজনে হাঁটতে শুরু করলো। এক লক্ষ্যে তারা চলতে শুরু করলো তাদের নতুন ভবিষ্যতের দিক, উদাস মেঘলা বিকেলের হাওয়ায় তাদের গল্পের অতীত পাতা গুলো এক পা এক পা করে পিছনে ফেলে নতুন রোদেলা সকালের দিক তারা যাচ্ছে। জীবন গল্পে তার নতুন অংক শুরু হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী মারুফ হারানো আশা হয়তো নতুন কোন ভাষা খুঁজে পেয়েছে। গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ডিসেম্বরের এক নিস্তব্ধ রাতে মেয়েটি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে তার মনে উত্তেজনার বাধ ভেঙেছে মস্তিষ্ক এখন বিশ্রাম নিতে চাইছে না

১১ অক্টোবর - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
কবিতার বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫