বিমানের জরুরি অবতরণ যাত্রীদের জন্য এক আতঙ্কের বিষয়। পাইলটের ঘোষণা শোনার পর অবতরণের আগের মুহূর্তগুলো অনেক সময় করুণ হয়ে ওঠে। আমারও এমন একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যদিও যাত্রী হিসেবে নয়, cabin crew হিসেবে।
যাত্রীরা তখন যে আতঙ্কে পড়ে এবং যা করে, আমি সেগুলো খুব সংক্ষেপে বলব। কারণ কিছু কিছু জিনিস আসলে বর্ণনা করার মতো নয়। ভাবলেই শরীর শিউরে ওঠে। যে স্মৃতিগুলো মনে করলে নিজেরও ভয় ধরে যায়, সেগুলো আমি এখানে বলব না।
গ্রীষ্মকালীন ছুটির ভিড়ে অতিরিক্ত স্টাফ দরকার ছিল। তাই Cork এয়ারপোর্টে একটি এয়ারলাইনের সঙ্গে চার মাসের জন্য seasonal cabin service support হিসেবে কাজ শুরু করি। প্রশিক্ষণ ছিল সীমিত-শুধু খাবার পরিবেশন ও যাত্রী সেবা। নিরাপত্তার দায়িত্ব সবসময় অভিজ্ঞ cabin crew-দের হাতে।
সংক্ষিপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণে শিখে ছিলাম-দুর্ঘটনা ঘটলে আগে যাত্রীদের জীবন, নিজের কথা পরে। কিন্তু আমার মাথায় এসব ছিল না। আমি জানতাম-পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ হলো আকাশপথ। আমার একমাত্র উত্তেজনা ছিল-কবে আমি প্রথম ফ্লাইটে উঠবা টাকা নয়, আসল আনন্দ ছিল বিনা খরচে ইউরোপ দেখা। ট্রেনিং আর মেডিক্যাল টেস্ট শেষে অবশেষে সেই স্বপ্নের ফ্লাইট পেলাম।
প্রথম ফ্লাইট ইংল্যান্ডে। আর প্রথম ফ্লাইটেই আমি হতাশ। প্লেন ল্যান্ড করেছে, কিন্তু ৪০ মিনিট পর আবার Cork এ ফিরবে। আমার মাথায় তখন ঘোরা-ফেরার প্ল্যান। ভেবেছিলাম, এয়ারপোর্ট থেকে বের হবো, একটু হাঁটাহাঁটি করব। কিন্তু আবার ব্যাক করতে হলো। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম-ফ্লাইট মাত্র এক ঘণ্টা বিশ মিনিট, তাই হয়তো দ্রুত ফিরছে। Cork এ গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। মনে মনে বললাম-এইবার নিশ্চয়ই লম্বা ব্রেক দেবে।
কিন্তু ভাগ্য আমার দিকে তাকিয়েই হাসছিল। দুই ঘণ্টা পর আবার ফ্লাইট। এবার গন্তব্য নরওয়ে। বিশাল উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রীদের সার্ভিস দিচ্ছিলাম। আড়াই ঘণ্টার বেশি উড়ে নামলাম। আমি খুশি হয়ে ভাবলাম-চলো, এবার নামব। কিন্তু তখন ঘোষণা এলো-নামা যাবে না, এক ঘণ্টা পর আবার ফিরতি ফ্লাইট।
শুনে মনটা এতটাই খারাপ হলো যে, বলে বোঝাতে পারব না। ওই এক ঘণ্টায় প্লেনের ভেতরের অনেক কাজ করতে হলো।
এই সময়ই পরিচয় হলো Orla নামের এক মেয়ের সঙ্গে। ও দুই বছর ধরে এই এয়ারলাইনে কাজ করছে। ওর মুখে যা শুনলাম, তাতে হতাশার শেষ নেই। মনটা এত খারাপ হয়ে গেল যে, বর্ণনা করার মতো না।
ও আমাকে জানাল-আমি যেহেতু non-EU আর কনট্রাকচুয়াল, তাই আমাকে শুধু সেই ফ্লাইট গুলো দেয়া হবে, যেগুলো, ১ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা break নিয়ে আমার ফেরত আসবে। তাই আমার কোনো সুযোগ নেই এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার। আমাকে শুধু তিন ঘণ্টার ভেতরে থাকা ফ্লাইটেই যেতে হবে।
ওর কথা শুনে আমি অনেক মন খারাপ করে Orla কে বললাম-
"Orla, তুমি কি জানো তুমি খুব সুন্দর? কিন্তু এই মুহূর্তে তোমাকে আমার ভীষণ বিরক্ত লাগছ। তুমি আমার মনটাই খারাপ করে দিলা "
আমার কথা শুনে Oria হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল-
"তুমি খুবই কিউট। কিন্তু তোমার মন খারাপ দেখে আমারও খারাপ লাগছে। তবে তুমি ককপিটে যেতে পারবে। ওটাও কিন্তু অনেক সুন্দর।"
আমি কিছু বললাম না। মুখ গোমড়া করে কাজে মন দিলাম। Oria ছিল আমাদের সুপারভাইজার। আমি চার মাস ওর আন্ডারেই ছিলাম। ওর সাথেই উড়েছি, কারণ আমি তার দলের একজন।
একদিন, Cork থেকে সুইডেন যাচ্ছিলাম। Orla হঠাৎ বলল,
-"ককপিটে কফি চাইছে, কফি দিয়ে আসো।"
সেদিনই প্রথম আমি ককপিটে ঢুকলাম। আর ঢুকেই চুপ করে গেলাম।
সামনে বড় কাঁচের জানালা। তার বাইরে মেঘের সাদা সমুদ্র। সূর্যের আলো মেঘে লেগে চকচক করছে-মনে হচ্ছে সোনার গুঁড়ো ছিটানো। নিচে সবুজ মাঠ, ছোট নদী। দারুণ দৃশ্য। মনে হচ্ছিল পৃথিবী আসলে শান্ত একটা জায়গা, শুধু আমরা মানুষরাই এটাকে অশান্ত করি।
পাইলটরা সামনে বসে ব্যস্তভাবে কাজ করছে। কিন্তু তাদের দিকে তাকানোর সুযোগই হলো না। আমার চোখ সামনে বড় কাঁচের জানালাতেই আটকানো। জীবনে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমি খুব কমই দেখেছি।
ওইখানেই প্রথম পরিচয় হলো Richard এর সাথে। পরবর্তীতে এই Richard সঙ্গে আমার এমন বন্ধুত্ব হলো, যা বলার মতো না। যদিও এটা প্রাসঙ্গিক না, তবুও বলে ফেলি। আমি যখন একবারেই দেশে ব্যাক করছিলাম, আমার অনেক বন্ধুদের মতোই এই Richard ও আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল। ওর কান্না দেখে আমরও কেন জানি চোখ ভিজে গিয়েছিল। যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
রিচার্ড আমাকে বলল-
-"Shon..." (সে আমাকে সুমন বলে ডাকতে পারত না, shon বলেই ডাকত)।
-"Orla বলল তুমি নাকি upset।"
ওর কথা শুনে আমি উত্তর দিলাম-
-"Richi (আমি ওকেই Richi বলেই ডাকতাম), আমি এখন একটা সুন্দর দৃশ্য দেখছি। এর মধ্যে ওই কথা মনে করিয়ে দিও না, প্লিজ।"
Richard হেসে ফেলল। তারপর বলল-
-"ওকে, ওকে।"
যাই হোক, এভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। চুক্তি শেষ হওয়ার পথে। ওটা আর বাড়ানো হবে না। কারণ আমি ছাত্র-আমাকে আবার কলেজে ফিরতে হবে।
আর মাত্র চারটা ফ্লাইট পর আমার কন্ট্রাক্ট শেষ হবে। একদিন হলো একটা বিপত্তি। আমাদের ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করল লন্ডনে। ঘটনাটা বলি।
সকাল ১০টা ৫০-এ আমরা উড়লাম ইতালির রোমের উদ্দেশ্যে। তিন ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা পনেরো মিনিটের মধ্যে নামব। কোনো সমস্যা ছাড়াই উড়ছিলাম। সব ঠিকঠাক। আমরা সবাই আস্তে আস্তে ব্যস্ত হয়ে উঠছিলাম-ফুড ট্রে সাজাচ্ছিলাম, আর orla র সঙ্গে টুকটাক গল্প করছিলাম।
হঠাৎ ককপিট থেকে মেসেজ এল। Orla ককপিটে ঢুকল। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এসে সবcabin crew দের একসাথে ডাকল। জানাল-ডান পাশের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছে। প্লেন লন্ডনে জরুরি অবতরণ করবে কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে। তবে আমাদের পনেরো মিনিটের মধ্যে সব গুছিয়ে ফেলতে হবে, এবং ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং জন্য রেডি হয়ে যেতে হবে।
ও কথাগুলো বলতে না বলতেই ডান পাশের ইঞ্জিনের গর্জন থেমে গেল। শব্দ বদলে গেল। প্লেন হালকা কেঁপে উঠল।
যাত্রীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। পাইলট শান্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন-
"Ladies and gentlemen, remain seated. We have an engine issue are returning to the nearest airport." we
আমি ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু কোনো cabin crew কে ঘাবড়াতে দেখলাম না। Oria আমার মুখ দেখে বুঝে ফেলল।
সে ধীরে ধীরে বলল-
"Shon, এটা খুবই নরমাল ইস্যু। প্লেন এক ইঞ্জিন দিয়েও উড়তে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে
নিরানব্বই শতাংশ সময় Safe landing হয়। আমরা সেই নিরানব্বই শতাংশের ভেতরেই আছি। তুমি যাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করো। একদম চিন্তা করো না।"
আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বাংলায় বললাম-"আমি চিন্তা করছি না, আল্লাহ ভরসা।"
আমার কথা শুনে Orla চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল-"কি বলছ তুমি?"
আমি তড়িঘড়ি করে বললাম-"সরি..." তুমি চিন্তা কোরো না, আমি আমার সেরাটা দেব।"
Orla হেসে উত্তর দিল-"Best of luck!"
আমরা কাজে নেমে পড়লাম। যাত্রীদের অনুরোধ করলাম-আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।
সবাই Zone ভাগ করে নিলাম। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করল। আমরা সংক্ষেপে যাত্রীদের বোঝালাম-এ ধরনের ল্যান্ডিং সাধারণত সেফ হয়। কাউকে চিন্তা করার দরকার নেই।
আমি দেখলাম, বেশির ভাগ যাত্রী প্রার্থনায় বসে আছে। চোখে-মুখে আতঙ্ক। অন্য cabin crew রা কী করছিলো, আমি খেয়াল করিনি। আমার কাজ ছিল-আমার Zoneকে শান্ত [ রাখা। জানি না কেন, সবাই তখন আমাকে অদ্ভুতভাবে আপন করে নিচ্ছিল। আমি বারবার সবাইকে আশ্বস্ত করছিলাম-এটা একটি Safe landing হবে। দেখবে, নামার মুহূর্তটাও এত সুন্দর হবে যে তোমরা টেরই পাবে না। শুধু শান্ত থেকো... কোনো ভয় নেই।
আমার Zone এ একজন বৃদ্ধা ছিল। উনার কথা না বললেই না। আমি যখন উনার কাছে গেলাম, উনি আমার হাত ধরল। বলল-"তুমি আমার সঙ্গে থেকো, কোথাও যেও না, আমার ভয় লাগছে।" আমি উনাকে বুজলাম, সব ঠিক আছে, এই তা বলে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু উনি কোনোভাবেই আমার হাত ছাড়বে না পরে কিছু যাত্রী আর একজন cabin crew মিলে আমাকে ধীরে ধীরে উনার কাছ থেকে সরিয়ে নিল। Orla আর আরেকজন cabin crew (নাম তা মনে পড়ছে না, সম্ভবত মার্থা সবাইকে দেখাচ্ছে -ল্যান্ডিংয়ের সময় মাথা কেমন করে নিরাপদে রাখবে।
Pilot ঘোষণা দিল-পাঁচ মিনিটের মধ্যে নামছি। আমাদের সবাইকে সিটে বসতে বলল। আমি যেদিন নিজের চোখে দেখলাম-মানুষের ভেতর মৃত্যুভয় কতটা ঘন হয়ে জমে থাকতে পারে। কারও ঠোঁট কাঁপছে দোয়ার শব্দে, কারও চোখে অঝোর অশ্রু, কেউ আবার নিঃশব্দে সিট আঁকড়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছিল, চারপাশের বাতাসটাও যেন ভয়ে ভারী হয়ে গেছে। সেই
দৃশ্য আজও মনে পড়লে বুকের ভেতর হাহাকার উঠে। আমি বসে মনে মনে বলতে লাগলাম
"আল্লাহ, তুমি আজরাইল (আ:) কে এই প্লেনে পাঠাবে না। দয়াকরে, আমাদের সবাইকে রক্ষা করো।"
হাজারো কণ্ঠস্বরের ভিড়ে, প্রার্থনার কান্না আর আতঙ্কের শব্দের ভেতরেও, একটা বাক্য আমার মাথায় হাতুড়ির মতো বাজছিল-'প্রথমে যাত্রীর জীবন... তারপর আমার জীবন।' মনে হচ্ছিল এটাই আমার শেষ দায়িত্ব, শেষ প্রতিশ্রুতি।
প্লেন আস্তে আস্তে নীচে নামছে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে রানওয়ে ক্রমেই কাছে আসছে, কিন্তু ভেতরে নিস্তব্ধতা আর্তনাদের সঙ্গে মিশে এক অদ্ভুত ভয় তৈরি করেছে। কেউ চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছে, কেউ আসনে আঁকড়ে ধরে আছে। প্রতিটি সেকেন্ড যেন একেকটা ঘন্টা হয়ে উঠছিল। চাকা মাটিতে ছোঁয়ামাত্রই কেবিন ভরে গেল দীর্ঘশ্বাস আর কান্নায়-মনে হলো সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল, 'আমাদের বাঁচাও!'
আমরা অবশেষে safely land করলাম। মুহূর্তের মধ্যেই কেবিন ভরে গেল হাততালিতে, কেউ হেসে উঠল, কেউ আবার আনন্দে কান্না চেপে রাখল। মনে হচ্ছিল, সবাই নতুন করে বেঁচে উঠল। আমি সিটবেল্ট খুলে বৃদ্ধার কাছে গেলাম। বললাম--"কেমন লাগছে তোমার?"
বৃদ্ধা হেসে উত্তর দিল-
-"খুব ভালো লাগছে। তুমি কি মুসলিম?"
আমি বললাম-
-"হ্যাঁ, আমি মুসলিম।"
বৃদ্ধা সাথে সাথে বলল-
-"আমার স্বামীও মুসলিম ছিলেন। আমি যখন চোখ বন্ধ করেছিলাম, আমার স্বামী এসেছিলো, সে আমাকে বলছে " ঐটা আমি এখানে বলতে পারবো না, শুধু বলব-শুনে আমি ভীষণ অবাক আর বিস্ময় হয়েছিলাম।
একটা মজার কথা বলি, আপনারা মজা পাবেন কিনা জানি না তবে আমার এখনো মনে পড়লে হাসি পায়।
আমি আসলে এতটাই আতঙ্কিত ছিলাম যে, সেই আতঙ্ক যেন কেউ বুঝতে না পারে, সেই জনা আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম। যাত্রীদের শান্ত রাখার জন্য আমি কখনো ইংরেজি বলেছি, কখনো বাংলায়। মজার ব্যাপার হলো, তাদের ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল, তারা আমার বাংলা বুঝছো অথচ আমি নিজেই বুজতেই পারি নাই, কীভাবে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলছিলাম।
কিন্তু এই ভুলটা ধরা পড়ে গেল Orla র কাছে।
ও একসময় আমাকে বলল-
-"Shon, তুমি খুব ভালো কন্ট্রোল করতে পেরেছ। সাধারণত তোমাদের মতো কনট্রাকচুয়াল যারা থাকে, তারা এভাবে ম্যানেজ করতে পারে না। তুমি দারুণ করেছো। আর তোমার অনেক বাংলা আমি বুঝেছি। তুমি বারবার বলছিলে-'শান্ত থাকুন, শান্ত থাকুন।"
এই কথা বলে Orla হেসে ফেলল।
আমিও হেসে উত্তর দিলাম-
-"Orla, you're beautiful. Your smile feels like a secret the world doesn't deserve."
আমার কথা শুনে Orla আবারও হাসল। তারপর বলল-
-"You know, Shon... I really like your skin, it's different... it feels warm."
এরপর থেকে orla র সঙ্গে আর দেখা হয়নি। ও ছুটিতে চলে গিয়েছিল। আমার শেষ দুইটা ফ্লাইটে সুপারভাইজার ছিল Mark।
আর সেই দুইটা ফ্লাইটে Mark হারামজাদা আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। শালা Racist.... হারামজাদা... মাদার প্লাষ্টিক... আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না।
Please follow