লাল মাটির প্রতিজ্ঞা

মুক্তিযুদ্ধ (ডিসেম্বর ২০২৫)

সুব্রত ভারতী
  • 0
  • 0
১.
মার্চের আগুনের মাস।
গ্রামের আকাশে তখন রোজ গুলির শব্দ, ধোঁয়ার ঘ্রাণ, মানুষের আর্তচিৎকার। ছোট্ট রাজু তখন বারো বছরের এক গ্রাম্য ছেলে। তার চোখে মুক্তিযুদ্ধ মানে—পাথরে গড়া ভয়, কিন্তু বুকের ভেতর ঝলসে ওঠা এক অজানা সাহস।

রাজুর বাবা ছিলেন স্কুলমাস্টার, মুক্তিকামী মানুষ। একদিন রাতে পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে ঢুকল। বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিল, মানুষ টেনে নিয়ে গেল। রাজুর বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন স্কুলের সামনে—বাংলা বই হাতে।
“এই বই আর এই ভাষা টিকবেই,” বলে শেষ নিঃশ্বাস নিলেন তিনি।
সেই রাতেই রাজু দেখল—তার শৈশব ছাই হয়ে গেল।


২.
পরের দিন রাজু মায়ের কোল ছেড়ে পালিয়ে গেল পারের ওপারের মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে। সবাই অবাক—এত ছোট ছেলে?
ক্যাম্পের কমান্ডার বললেন, “তুই যুদ্ধ করবি?”
রাজু বলল, “আমার বাবার রক্ত শুকায়নি এখনো।”

ছেলেটির কণ্ঠে এমন আগুন ছিল যে, কেউ আর প্রশ্ন করতে পারল না। রাজুকে দেওয়া হলো খবর পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব—এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, মুক্তিযোদ্ধাদের বার্তা বহন করবে।

বৃষ্টির রাতেও, গুলির শব্দের মাঝেও রাজু ছুটত। কখনো নদী পেরোতো, কখনো ধানক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে চলত।
মা জানতেন না ছেলেটা বেঁচে আছে কি না—শুধু প্রতিদিন ভোরে ঘরের কোণে বসে প্রার্থনা করতেন, “হে আল্লাহ, আমার সন্তান যদি বাঁচে, সে যেন দেশের মাটিতে মাথা তুলে বাঁচে।”


৩.
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। যুদ্ধ তখন চরমে। রাজু খবর নিয়ে যাচ্ছিল কুমিল্লার মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে। পথে ধরা পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের হাতে।
সেনারা জিজ্ঞেস করল,
“তুই কার হয়ে কাজ করিস?”
রাজু চুপ।
আরেকজন তার বুকের সামনে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল, “বল না হলে গুলি।”
রাজু শুধু বলল—
“আমি বাংলাদেশের হয়ে কাজ করি।”

তারপর ভেসে এল এক গুলির শব্দ।


৪.
পরের দিন মুক্তিবাহিনী সেই জায়গায় পৌঁছে রাজুর দেহ পেল। হাতে শক্ত করে ধরা একটি কাগজ—
তাতে লেখা ছিল,

“আমার বাবা বলেছিলেন,
বাংলা ভাষা টিকবে,
আমি তার প্রমাণ দিতে এসেছি।”

রাজুর ছোট্ট দেহটা শুয়ে ছিল লাল মাটির ওপর,
কিন্তু তার মুখে যেন বিজয়ের হাসি।


৫.
বছর ঘুরে গেছে।
আজ সেই জায়গায় রাজুর নামে একটি স্কুল।
দেয়ালের এক কোণে ঝুলছে রাজুর ছবি—চোখে আগুন, মুখে হাসি, বুক ভরা বাংলাদেশ।
প্রতিদিন বাচ্চারা শ্রদ্ধায় ফুল দেয়,
আর প্রতিটি শিশুর চোখে সেই একই প্রতিজ্ঞা—
“আমরা কোনোদিন হার মানব না।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্প “লাল মাটির প্রতিজ্ঞা” পুরোপুরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টির সঙ্গে গভীরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে যুদ্ধের সময়কার ভয়াবহ বাস্তবতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ভাষার মর্যাদার প্রতীকী রূপে গল্পের প্রতিটি অংশ নির্মিত হয়েছে।

২৫ জুলাই - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী