আমি তখনও কবি কিংবা লেখক ছিলাম না
সেদিন ছিলাম আমি,পাড়া গায়ে বখে যাওয়া ছেলেদের মধ্যে অন্যতম একজন!
লেখাপড়া সাইডে রেখে, নিত্যনতুন আগুন জ্বালাতাম তামাক পাতার মাঝে,
সকাল,বিকাল,কিংবা গভীর রাতের একাংশে।
বলে রাখা ভালো,
বখে যাওয়ার আগেও আমি ছিলাম
সব বাছাইকৃত ছেলেদের মধ্যে একজন!
ভাবছেন,তাহলে কিভাবে কি হলো?
আজ আপনাদের শুনাবো আমি
আমার অন্ধকার পথে হারিয়ে যাওয়া এক পরগাছার গল্প,
পাশাপাশি তার থেকে ফিরে আসার ও গল্প।
চলুন,
আর দেরী না করে আপনাদেরকে নিয়ে যায়
আমার নষ্ট অতীতের খানিকটা সময়ের ভিতরে।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি,
বাড়ন্ত বয়স আর উড়ন্ত মন নিয়ে ছুটে চলি
এ'দিক,সে'দিক তখনও কোনটা ভালো কোনটা
খারাপ, বিচার বিশ্লেষণ করার মত হিতাহিত জ্ঞান
আমার, ছিলো না!
সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ানো,আর গাছের মগডালে চষে বেড়ানোই ছিলো,আমি এবং আমার বন্ধুদের
প্রধান কাজ,
মাঝে মাঝে গাঙ্গের জলে সাঁতার কাটতাম,আর কাশফুলের ঝোপের মাঝে লুকোচুরি খেলতাম।
আর প্রতিদিন বিকেল হলে ব্যাট,বল হাতে মাঠ গরম করতাম, আর শুক্রবার এলে তো জুম্মার নামাজ শেষে পড়ে থাকতাম বন্ধুদের নিয়ে
দুষ্টুমি আর আড্ডায়,
তখনও তামাক পাতা কি জিনিস জানতাম না
শুধু জানতাম, লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে খেলাধুলা
করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তখন খুব সুন্দরের ভিতর দিয়ে দিন কাটাতে লাগলাম!
নামকরা মাষ্টারবাড়ির ছেলে বলেই সবার নজর
থাকতো শুধু আমার দিকে,
কি করছি,কোথায় যাচ্ছি, তা নিয়ে সবাই পরে থাকতো, এমন'কি দাঁড়ি পাকা মুরুব্বীরা ও নানান
মন্তব্য করতো আমাকে নিয়ে!
আর আমার পিছনে অযথা লেগে থাকতো কাঁঠালের কষের মতো,
বাকী বন্ধুদের নিয়ে আলোচনা বা গবেষণা করতো না পাড়ার কেউ!
কিন্তু কেনো?
এই কেনো উত্তর জানা ছিলোনা আমার,
তখন,ভিন্ন,ভিন্ন চিন্তা নিয়ে দিন পাড় করতে লাগলাম।
হয়তো,শৈশব কালটা এমনি করে সবার কাটে না!
যেমন করে আমার কাটতো দিন,
লোকের নালিশ,আর মায়ের অতিরিক্ত শাসন
আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো,
আমি কেনোকিছু না করার পরও লোকের নালিশের কারনে মায়ের হাতে মাইর খেতে হত!
আর যদি ভুলে করেছি,তাহলে তো কথাই নেই,
মাথা পেতে নাও,চিরধার্য করা,মায়ের হাতে দেওয়া কঠোর হতে কঠিন শাস্তি।
আপনি,ছেলে বা মেয়ে যে-ই হয়ে থাকেন,
লক্ষ্য করে দেখবেন,
ছেলেদের সব বন্ধুই ভালো থাকে না,
আর,মেয়েদের ও সব বান্ধবী ভালো থাকে না!
তাই বলে কি আপনার ছেলে বন্ধু,বা মেয়ে বান্ধবী
কোনো প্রকার খারাপ কাজের সাথে লিপ্ত থাকে,
তাহলে কি,আপনি তাহার সাথে চলেন বলে
আপনিও তার মতো খারাপ হয়ে যাবেন?
উত্তর আসবে না,কিন্তু আমাদের সমাজ বলবে
হ্যা,আপনিও দোষী!
কিন্তু,সত্যিকার অর্থে বা বাস্তব প্রেক্ষিতে আপনি একজন ভালো মানুষ।
তখন আপনার,কেমন লাগবে,নিশ্চয় খারাপ?
ঠিক,তেমনি আমি পাড়ার সব ছেলেদের সাথে মিলামেশা করতাম,ভালো খারাপ উভয়ের সাথে
কিন্তু,কোনোদিন,সমাজবিরোধী কাজে অংশগ্রহণ করিনি!
তারপরও এলাকার মুরুব্বী থেকে শুরু করে সবাই রটিয়ে দিলো, আমি একটা খারাপ ছেলে,বখাটে ছেলে,নেশাখোর, মদখোর,বদমাইশ, ইত্যাদি।
তারপর থেকে,আমি আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লাম, আর,আবেগের বশে রাগ,ক্ষোভ,অভিমান, হাজারো অভিযোগ নিয়ে
সমাজ বিদ্বেষী,ও বেয়াদবে পরিনত হওয়ার শপথ নিলাম।
যেহেতু,আমি ভালো থেকেও খারাপ মানুষ সমাজের চোখে, তাহলে তো আমাকে খারাপ হতেই হবে!
এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা,আমার সামনে খোলা ছিলো না,
এরপর থেকে আমি সবসময় খারাপ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল থাকতাম,আর,তাদের সাথে সাথে আমিও তামাকপাতা সেবন শুরু করলাম!
যদিও আমার বন্ধুরা লুকিয়ে লুকিয়ে তামাক পাতা আরও অনেক নেশাদ্রব্য সেবন করতো,
আর,যেহেতু সমাজ ও সমাজের মুরুব্বীরা আমাকে ভালো থাকার পরও অপবাদের খালি লাগিয়ে দিলো,তাই পরগাছার মতো আমার জীবন এই সমাজ ও সমাজের মুরুব্বীদের প্রতি আমার এই মন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল!
তাই,অত্র এলাকায় আমিই একমাত্র ছেলে ছিলাম
যে কিনা প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে নেশা সেবন শুরু করে দিলাম,
সমাজ ও মুরুব্বীদের কোনো নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই, কারন,তারাই আমাকে অপবাদ দিয়ে
পরগাছার মতো অন্ধকার নগরীতে নিক্ষিপ্ত করে দিয়েছিলো,
তাই,তাদের প্রতি ঘৃণা,আর রাগের আগুনটা আমার
দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো,
আর আমি,আরও বেপরোয়া হতে লাগলাম যন্ত্রনায়
তারপর থেকে সত্যি,সত্যিই,সমাজ ও সমাজের মানুষের চোখে আমি নিকৃষ্ট মানুষে রূপান্তরিত হলাম।
যদিও কেউ তখন আমার সামনে আমার রিরুদ্ধে
বলার সাহস পেতো না,
তারপরও আমি উপলব্ধি করতাম,আমার পিছনে
আমাকে সবাই খারাপ বলতো।
হ্যা,আমিও জানতাম আমি একজন খারাপ ছেলে
কিন্তু,তাতে আমার খারাপ লাগতো না,কেননা
আমি তো সত্যি সত্যিই খারাপ,তাহলে তো ওরা
খারাপ বলবেই, আর এটাই উচিত!
কিন্তু,আমার কাছে খারাপ লাগতো তখন
যখন আমি নেশা সেবন করতাম না,ভালো ছেলে
ছিলাম,তখন কেনো সমাজের লোকেরা আমাকে খারাপ বলে আখ্যায়িত করতো?
এই প্রশ্নের উত্তর,কেউ কি আমায় দিতে পারবে?
জানি,এর উত্তর কারো কাছে নেই,
ততদিনে, এর উত্তর আমি খুঁজে পেয়ে গেছি।
সিম্পল একটা উত্তর, কারন তারা আমার ভালো চাইতো না,আর আমার সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণা ছিলো,
যাই হউক,এখন তো তাদের কথা সত্যি প্রমাণ হলো
আমি খারাপ ছেলে সবাই জানে,
কেনোনা,আমি প্রকাশ্যে তামাক সেবন করি।
তখন থেকেই অনুতপ্তের সাগরে ভাসতে লাগলাম
পরগাছার মতো এই নিকৃষ্ট জীবন হতে মুক্তি চেয়ে
মৃদু,কন্ঠে,মহান স্রষ্টার কাছে,চোখের জল ফেললাম
আর আকূতি করলাম,ও অন্তরে শান্তি অনুভব করলাম,এরপরই আল্লাহর নামে শপথ করলাম
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কেনো প্রকার নেশা সেবন
করবো না,
ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এখন
পরগাছার মতো অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত,
প্রতিজ্ঞা আর সত্যের কলম হতে বছরের পর বছর।
পরিশেষে:- এখানে ও একটা শিক্ষার বিষয় আছে যে রাগের মাথায় হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই,
আর,আল্লাহ চাইলে কঠিন পথ ও পাড়ি দেওয়া সম্ভব বিনা বাঁধায়।