ছোটবেলা থেকে হেসে খেলে বড় হওয়া পাড়াগাঁয়ের দুই বন্ধু আসিফ আর তাহমিদ; তাদের বিচ্ছেদ ঘটে গেল এইচ. এস. সি পরীক্ষা শেষে অ্যাডমিশনের সময়। আসিফ চান্স পেল বুয়েটে, ভর্তি হলো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। তাহমিদের কপাল মন্দ, তার কপালে জুটল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সে ভর্তি হলো কৃষি অর্থনীতি বিভাগে। একইসাথে স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হওয়া অত্যন্ত মেধাবী দুই বন্ধুর সামাজিক অবস্থানের চূড়ান্ত পরিবর্তন ঘটে গেলো। পাড়া গাঁ হলেও তাদের এলাকায় শিক্ষিত সচেতন মানুষের সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল নয়। সবাই বলাবলি করতে লাগলো, আসিফ হলো বাপের ব্যাটা, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেল ছেলেটা। তাহমিদকে কেউ আলোচনার প্রসঙ্গ হিসেবে গণ্যই করলো না। যাহোক তারা দুজনই পদার্পণ করলো নতুন এক জীবনে, উচ্চশিক্ষার অচেনা-অজানা জগতে।
বুয়েটে এসে আসিফ ঢাকা শহরের যান্ত্রিক বাস্তবতা আর নাগরিক জীবনের কাঠিন্য অনুভব করতে শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই। কঠিন সিলেবাস, ক্লাস, ল্যাব, প্রচুর পড়াশোনা আর দুষণের শহরে সে যেন হাঁপিয়ে উঠলো। অন্যদিকে তাহমিদ প্রবেশ করেছিল প্রকৃতির নিবিড় ছাঁচে গড়া অনন্যসুন্দর এক জগতে; গাছপালা, ফলের বাগান, ফসলের মাঠ; ল্যাব থেকে শুরু করে ক্লাসরুম সবকিছু যেন এক অসাধারণ মনোরম পরিবেশে ঘেরা। তার বিশ্ববিদ্যালয় যেন সাজানোগোছানো এক স্বর্গরাজ্য। দুই বন্ধুর মধ্যে যখন ভিডিও কলে কথা হতো, আসিফকে দেখাতো মলিন চেহারার কাহিল হয়ে ওঠা কোন শ্রমিকের মতো, আর প্রাণবন্ত টগবগে চেহারার এক যুবক হয়ে উঠেছিল তাহমিদ।
আসিফ-তুইতো ক্যাম্পাসে গিয়ে আরো সুন্দর হয়ে গেছিস রে? বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে তোকে দেখতে।
তাহমিদ তুই আমার এখানে চলে আয়। সাতদিন থাকলে আমার চেয়েও হ্যান্ডসাম হয়ে যাবি।
আসিফ-আর বলিস না দোস্ত, ক্লাস্, ল্যাব, দুইটা টিউশন করাই। জীবনটা জ্বলে গেল। সময়ই নেই।
তাহমিদ সময় করে চলে আয়, ঘুরে যা। আশা করি দারুণ একটা রিফ্রেশমেন্ট পাবি।
আসিফ নীরব হয়ে যায়, সে ফোন স্ক্রিনে তাহমিদের আশপাশের পরিবেশ-প্রকৃতি দেখে আর মনে মনে বলে, 'কি সুন্দর ক্যাম্পাসই না পেয়েছে তাহমিদ। বুয়েটে না ভর্তি হয়ে আমিও যদি ওখানে ভর্তি হতাম, পরীক্ষা তো আমিও দিয়েছিলাম, চান্সও পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর কোন উপায় নেই, নিদারুণ মনঃকষ্ট আর কায়ক্লেশ নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটে আসিফ তার উচ্চশিক্ষার জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। তবে একসময় তার এসব সয়ে গেলো। ধীরে ধীরে ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতার সাথে অভিযোজিত হয়ে গেল সে।
পড়াশোনা দুজনেরই শেষের দিকে, একদিন রাতে দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হচ্ছে,
আসিফ দোস্ত, ফাইনাল ইয়ার, লাস্ট সেমিস্টার, পরীক্ষাটা হয়ে গেলে বেঁচে যাই।
তাহমিদ তুই এই কথা বলছিস? আমার তো কান্না পাচ্ছে।
আসিফ কেন রে? ফেল করবি নাকি?
তাহমিদ-আরে না। ক্যাম্পাস, হল ছেড়ে চলে যেতে হবে। ভেবেই বুকের মধ্যে হহ করে ওঠে।
আসিফ-আরে ব্যাটা ক্যাম্পাসের মায়া ছাড়, জবের চিন্তাভাবনা কিছু করেছিস?
তাহমিদ-আমি জব করবো না। এখানে মাস্টার্সও করবো না।
আসিফ-মাস্টার্সের জন্যে তো বাইরে যাব বলে ঠিক করলাম, তবে তার আগে অন্তত এক দুই বছর জব করবো ভাবছি। এক্সপিরিয়েন্স ম্যাটার্স, মামা।
তাহমিদ-আমি বাইরেও যাব না। আমাদের জেলায় অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের একটা ফার্ম হয়েছে শুনেছিস? কোরিয়ান ফার্ম। ওখানে ইন্টার্ন করবো একবছর।
আসিফ তারপর?
তাহমিদ-নিজের একটা ফার্ম দেব। আমার ইচ্ছা কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার।
আসিফহা হা হা, এসব ভন্ডামি ছেড়ে ঢাকা চলে আয় পরীক্ষা শেষ হলে। উদ্যোক্তা হওয়া একো সোজা না...
তাহমিদ-সহজ না, জানি। তবে আশা হারাচ্ছি না। ভালো কিছু একটা করবো এমন টার্গেট আছে দোস্ত।
আসিফ-বেস্ট অফ লাক। (কৌতুকের স্বরে) তোর অর্গানিক ফার্মের আলু-পটল ঢাকায় আমার কাছে পাঠাস্, এখানে সবকিছুতে যা ভেজাল!
তাহমিদ-মজা নিতে থাক। আমি ডিটারমাইন্ড মামা!
আসিফ বিএসসি শেষ করেই ঢাকার খ্যাতনামা একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরিতে ঢুকেছে। চিত্তাকর্ষক অফিস, মোটা বেতন, অফিস থেকে গাড়ি দিয়েছে যাতায়াতের জন্যে। আসিফ মনে মনে ভাবে, 'তাহমিদ আজীবন ক্ষ্যাতই রয়ে গেল, যে সাবজেক্টে পড়েছে, কোথায় রিসার্চ, বিসিএস এগুলোর দিকে আগাবে তা না, উনি নাকি উদ্যোক্তা হবেন! যত্তসব পাগলের প্রলাপ। আসিফের বস তাকে খুবই খাতির করেন কেননা বুয়েটে থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার বলে কথা। তার মতে, বুয়েটে তারাই চান্স পায় যারা ক্রিম অফ দ্যা ক্রিম; অর্থাৎ, সেরাদের সেরা মেধাবী। নতুন নতুন চাকরি, আসিফের দিন মহানন্দে কাটতে লাগলো। অফিসের এক সুন্দরী সমবয়সী কলিগের সাথে চোখাচোখি হতে হতে তা পরিণত হলো প্রণয়ে, ভাগ্যদেবী কি সুপ্রসন্নই না হয়েছেন আসিফের প্রতি। সে মনে মনে এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করা শুরু করে।
অন্যদিকে তাহমিদের পরিকল্পনায় তার পরিবার ইতিবাচক কোন সাড়া দিল না। তাহমিদের বাবা হাই স্কুলের শিক্ষক, তিনি কিছুটা সম্মতি দিলেও তাঁর চেহারায় ছিল অনিশ্চয়তা ও অজানা এক শঙ্কার ছাপ। যাহোক, তাহমিদ মন শক্ত করে নিজের কাজে মন দিল। নিজ বাড়িতে থেকেই শুরু হলো তার জীবনসংগ্রাম আর অমানুষিক পরিশ্রম। কোরিয়ান সেই ভদ্রলোক, যিনি ফার্মের মালিক, জনাব কাং হয়া জিন প্রথম দিনই তাহমিদের পরিকল্পনা শুনে খুবই খুশি হয়েছিলেন। তাহমিদ বেতন নিয়ে কোন আলোচনাতেই যায়নি, ভদ্রলোক যা দিতে চেয়েছেন তাতেই সে রাজি। তবে তাহমিদের কথা হচ্ছে অর্গানিক ফার্মিংয়ের পুরো এলেম তার চাই, ভদ্রলোকের কাছ থেকে সে সবকিছু হাতে কলমে শিখতে চায়। তাহমিদের উদ্যম আর আগ্রহ দেখে তিনিও উৎসাহবোধ করলেন। তাহমিদের চোখ ভরা স্বপ্ন, বুক ভরা আশা। তার নিজের একটা অর্গানিক ফার্ম হবে, নিজস্ব একটা ব্র্যান্ড দাঁড় করাবে সে, সফল একজন কৃষি উদ্যোক্তা হবে, তার নাম ছড়িয়ে পড়বে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।
দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেল, কোরবানি ঈদ চলে এলো, ঈদের ছুটিতে আসিফ বাড়িতে এসেছে। তাহমিদের কোন ছুটিছাটা নেই, সে ওসবের ধারও ধারে না, ফার্মে সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকতেই বেশি পছন্দ করে। সন্ধ্যার পর আসিফ তাহমিদের বাড়ি গিয়ে তার দেখা পেল, চেহারা পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে তাহমিদের, আর আসিফ বেশ গোলগাল হয়ে উঠেছে। বেশ খানিকক্ষণ
আড্ডার পর বিদায় নেওয়ার সময় পরদিন সকালে তাহমিদের সাথে ফার্ম দেখতে যাবে বলে ঠিক করে আসিফ। তাহমিদ তো মহাখুশি, তবে অনেক সকালে বের হওয়ার তাগাদা দিয়ে রাখলো আসিফকে।
ফার্ম পরিদর্শন করে, সেখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, মি. কাং-এর চমৎকার আপ্যায়ন এবং কাজ করার স্বাধীনতা, কাজের পরিবেশ- আধুনিক ভাষায় যাকে বলে ওয়ার্ক কালচার দেখে আসিফ তো যারপরনাই মুগ্ধ। চাষাবাদ, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীর খামারের অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর সাথে প্রাকৃতিক পদ্ধতির এমন দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ সে আগে কখনো দেখেনি। মনে মনে তাহমিদের উপর সামান্য হিংসাও হলো আসিফের। সে ভাবতে লাগলো, ঢাকা শহরে তো সবাই টাকার পেছনে ছুটছে, জীবন থেকে সবাই কত দূরে সেখানে। আর এখানে যেন জীবন নিজে তার দুহাত বাড়িয়ে আর্দ্র-উফ আলিঙ্গনে সবাইকে আগলে রেখেছে। আসিফ চিন্তা করতে লাগলো, সেও যদি এমন জীবনে নিজেকে সামিল করতে পারতো।
ঢাকা ফিরে আসিফের আর মন টেকে না। সারাদিন অফিসে বসে বসে ভাবে মি, কাং-এর কথা, লোকটার কৃষি রসায়নের উপর পি.এইচ.ডি আছে, অথচ মফস্বল গ্রামাঞ্চলে বসে আছেন, কিন্তু নিভৃত এই পল্লীসদৃশ অঞ্চলে কি এক স্বর্গই না তিনি গড়ে তুলেছেন। এতগুলো বছর ঢাকা শহরে বাস করে নিজের প্রাণশক্তির বিনাশ ছাড়া সে নিজে কিইবা হাসিল করেছে? বুয়েট থেকে বেরিয়ে এই কর্পোরেট বেড়াজালে মিথ্যে সুখশান্তি যৌজার নাটক করে চলেছে প্রতিনিয়ত; ভেতরে কতটুকুই বা সুখী সে? সেও কি যন্ত্রমানবের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে না? টাকার নেশায় সেও কি পাগল হয়নি? বসের সাথে প্রায়শই শয্যা নেওয়া সুন্দরী কলিগের সাথে সেও কি রগরগে যৌনাচার আর নাটুকে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রেম-প্রেম খেলেনি? শুরুতে সবকিছু ভাল্লাগলেও এখন আসিফের মানসিকতার হঠাৎ পরিবর্তন ঘটে গেছে, সে আর এসবে কোন তৃপ্তিই পাচ্ছে না। তার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে বাল্যবন্ধু তাহমিদের তামাটে চেহারা, যে চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে তার অসামান্য প্রাণশক্তির অপূর্ব এক প্রতিচ্ছবি। আসিফ জীবন থেকে আর নিজেকে দূরে রাখতে চায়না, সেও জীবনের প্রকৃত আস্বাদ পেতে চায়। অস্থির হয়ে উঠে তৎক্ষণাৎ ফোন করে তাহমিদকে....
তাহমিদ হ্যালো দোস্ত, কি অবস্থা, কেমন আছিস?
আসিফ ভালো নেই দোস্ত, তোর ফার্ম দেওয়ার আপডেট কি?
তাহমিদ ভালো নেই? শরীর খারাপ নাকি?
আসিফ-আরে ধুর, এমনিই। তোর ফার্মের খবর বল তো?
তাহমিদ এইতো কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের জমিতেই, মি. কাং ব্যাংক লোনের ব্যাপারে হেল্প করলেন, মানুষটা সত্যিই অনেক ভালো রে
আসিফ আমি তোর ফার্মে জয়েন করতে চাই, আমাকে কাজ দে, দিবি?
তাহমিদ-বলিস কি? ঢাকায় এতো ভালো চাকরি ফেলে তুই আমার সাথে ক্ষেত-খামারে ঢুকবি?
আসিফ ইয়ার্কি করিস না তো। সিরিয়াস মুডে আছি, এই শহর আর আমার পোষাচ্ছে না। যা কামিয়েছি, ইনভেস্ট করবো তোর ফার্মে। তোর কি মত?
তাহমিদ-আরেকটু ভেবে দেখতি দোস্ত। (তাহমিদ সৌজন্য করে এটা বললেও সে আসিফকে ভালো করেই চেনে, একবার কিছু মনঃস্থ করলে আসিফ সেটা করেই ছাড়ে)
আসিফ-বেশি উপদেশ দিস না তো, জীবনের অর্ধেক তো প্রায় শেষ, বুড়ো হওয়ার আগে মনে যা যা চায় করে ফেলবো। এখন বল, আমার প্রস্তাবে তোর কি মত?
তাহমিদ সত্যি বলতে দোস্ত এ আমার বিরাট সৌভাগ্য যে তুই আমার ফার্মে জয়েন করবি আবার ইনভেস্টও করবি। আমি বলি কি, চল দুইবন্ধু মিলে পার্টনারশিপে শুরু করি দস্তুরমতো।
আসিফ এইত্তো মামা! এই না হলে কথা। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে আসছি, অফিসের একাউন্টস থেকে হিসাবকিতাব ক্লিয়ার করে টাকাটুকা যা আছে সব নিয়ে আসছি...
তাহমিদ-আসার সময় ঢাকা থেকে অর্গানিক ফার্মিংয়ের উপরে কিছু বই নিয়ে আসিস তো, আমি লিস্ট দিয়ে দেবো কেমন? তোর আমার দুজনেরই কাজে দেবে, এদিকে পাওয়া যায়না।
আসিফ-অবশ্যই দোস্ত, তুই লিস্ট পাঠা, আমি এখনই কিনতে বেরোচ্ছি। এই অফিস, এই কর্পোরেট দুনিয়া থেকে পালাতে পারলে বঁচি।
সেদিন অফিস থেকে বেরিয়ে আসিফ যেন নিজেকে নতুন করে চিনলো। রিয়েল এস্টেট কোম্পানির উচ্চবেতন আর আকর্ষণীয় অফিসের দুনিয়া থেকে পদত্যাগের সংকল্প যেন তাকে দিতে লাগলো মুক্তির স্বাদ। রাতে সুন্দর করে গুছিয়ে গাছিয়ে ইস্তফাপত্র তৈরী করলো সে, মেইল না করে বসের সামনে সেটা সরাসরি পেশ করার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা তাকে রাতে ঘুমাতে দিল না। সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তাপানির ধার না ধেরে সে অফিসের পথে পা বাড়ালো, বস আসিফের ইস্তফায় মুখ হাড়ি করে ফেললেন, তার মুখ কালো হয়ে গেল যখন শুনলেন, আসিফ উদ্যোক্তা হওয়ার পথে নামছে; তিনি ভাবতে লাগলেন, তিনি কি এমন ভুল করেছেন যা তার অফিসের বাধ্যগত কর্মীকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করেছে? চিন্তা করতে লাগলেন, তিনি পরাজিত হয়েছেন, বসগিরিতে তিনি পারদর্শী হতে পারেননি। তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হলেন কেননা আসিফের এই কর্মকান্ড যদি অন্য কর্মীদেরও উসকে দেয়? তার অফিস চলবে কি করে? তবে আসিফ তার বসের এসব চিন্তার শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে একাউন্টস থেকে তার হিসাবকিতাব মিটিয়ে দেওয়ার তাগাদা দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে এল, তৎক্ষণাৎ তার ডেস্ক থেকে ব্যক্তিগত সব জিনিসপত্র হাসি হাসি মুখে নিজেই গুছিয়ে ওঠাতে থাকলো একটা কার্টন বক্সে। জিনিসগুলো গোছানোর সময় অফিসের অন্যান্য কর্মীরা এই দৃশ্য দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আসিফের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও আসিফ সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি, অনন্ত স্বাধীনতা প্রাপ্তির এক উদ্দাম নেশা তাকে তখন পেয়ে বসেছে। চাকরী ছাড়ার আনন্দে সে তখন আত্মহারা। সি.এন.জি করে বাসায় ফিরছে আসিফ, তার চোখমুখ উজ্জ্বল, দেহমন অপরূপ এক ফ্রিয়তায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পদত্যাগ সে করলো ঠিকই, তবে জীবনের কাছে, প্রাণের প্রতিটি উদ্দীপনার কাছে, সর্বোপরি নতুন এক জীবনের কাছে নিজেকে সপে দেওয়ার জন্যে; নিজেকে নতুন করে পাওয়ার প্রত্যাশায়।