পাইলট রাকিবের অস্থিরতা দেখে আমার বেশ উদ্বিগ্ন লাগলো। জিজ্ঞেস করলাম, "রাকিব, কোন সমস্যা?"
--"হ্যাঁ আশিক, বেশ বড় ধরনের একটা সমস্যা হয়ে গেছে। জানি না আজকে বেঁচে ফিরবো কিনা!!"
--"কি বলো? কি হয়েছে?"
--"মনে হচ্ছে প্লেনের জ্যাকস্ক্রু মিসিং। অথচ ফ্লাইটের আগেও দুইবার চেক করেছি।
--"কি বলো এইসব? এই অবস্থায় তো কোথাও ল্যান্ড করাও সম্ভব না। ল্যান্ড করলেই নিশ্চিত ক্রাশ করবে। তাছাড়া জেট ফুয়েল শেষ হয়ে গেলেও প্লেন নিচে নেমে পড়বে।
--"আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।"
--"আচ্ছা শোনো। আমি যাত্রীদেরকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিই। সবাই আল্লাহর নাম স্বরণ করুক। তুমি এটিসি (Air Traffic Control)-কে ব্যাপারটা জানাও।"
আমি জানি, পাইলট রাকিব যথেষ্ট দায়িত্বশীল। ফ্লাইটের আগেও আমি ওকে ইঞ্জিন চেক করতে দেখেছি। অথচ এত বড় একটা মিসিং কিভাবে হলো মাথায় আসছে না। এখন ২০৬ জন যাত্রী, ৮ জন এয়ার হোস্টেস আর ২ জন পাইলটের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। জানি, এটিসি-কে বললেও ওরা কিছু করতে পারবে না। আমি ককপিট থেকে বেরিয়ে হোস্টেস সবাইকে একত্র করে তাদেরকে আগে জানালাম। ২-৩ জন ব্যাপারটা নিতে পারলো না, ভয়ে ওখানেই কান্না শুরু করে দিলো। বাকিদেরকে বুঝালাম, "মৃত্যু আমাদের হাতে না, শান্ত থাকুন। যাত্রীদেরকে ব্যাপারটা জানানো উচিত।"
ওরা আমাকেই জানাতে বললো। কারণ ওরা জানে, কঠিন পরিস্থিতিতেও আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি। আমি গিয়ে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললাম, " দেখুন, আপনারা সবাই আমাদের কাস্টমার, মেহমান। ফ্লাইট শেষ হলে নিশ্চয়ই আমাদেরকে রেখে যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন। তেমনি আমরা তো এই পৃথিবীতেও মেহমান হিসেবে আছি। সময় হলে আসল গন্তব্যে ফিরে যাবো।" বেশ কয়েকজন আমার কথার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছে। একজন বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে পাইলট?"
--"আসলে আমরা আর অল্প কিছু সময় নিজেদেরকে অক্ষত রাখতে পারবো। এর পরেই হয়তো প্লেনটা ক্রাশ করবে। আপনারা আল্লাহকে ডাকুন।" কথাটা শেষ করেই আমি ককপিটে ঢুকে গেলাম।
রাকিব কন্ট্রোল অটোপাইলটে রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি বললাম, "এটিসি-কে জানানো হয়েছে? কি বললো ওরা?"
--"ওরা যা বলেছে, তাতে আশা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু জ্যাকস্ক্রু মিসিং কেন হলো বুঝতে পারছি না।"
--"শোনো, মৃত্যু কোন কারণ মানে না। যেদিন এই পেশায় নেমেছি, সেদিন থেকে প্রতিদিনই মৃত্যুর প্রস্তুতি নিতাম।"
--"তাই বলে এতগুলো মানুষকে সাথে নিয়ে..??" কথাটা শেষ না হতেই প্লেন নিচের দিকে বাঁক নিতে শুরু করেছে। রাকিব আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
--"ভাই, বিয়ে করেছি ২ মাস হলো। বাসায় নতুন বউ, অসুস্থ মা। ওরা কিভাবে থাকবে?"
--"আর কিছুক্ষণ আমাদের হাতে সময় আছে। শোনো রাকিব, আমার ব্যাগে একটা প্যারাসুট আছে। তুমি ওটা নিয়ে নেমে যাও।"
রাকিবের চোখেমুখে আশার আলো দেখতে পেলাম। আবার দ্বিধায় পড়ে বললো, "তোমাকে ফেলে কিভাবে স্বার্থপরের মতো নেমে যাই বলো?"
--"এখন এসব ভাবার টাইম নেই। তুমি যাও। আমার মৃত্যুভয় নেই। তোমাকে এসব ভাবতে হবে না।" আমি রাকিবকে প্যারাসুট পরিয়ে ককপিটের এক্সিট দিয়ে নামিয়ে দিলাম। ওদিকে যাত্রীদের চিৎকারের প্রচন্ড শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর হয়তো সাত আটশো ফুট। এরপরেই...!
আমি চোখটা বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর...! সব শেষ!!
মৃত্যুর পরেও মনে হলো কে যেন আমার পিঠে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। হয়তো কোন ফেরেশতা হবে। যে আমাকে দুনিয়ার পাপের শাস্তি দিতে শুরু করেছে।
এর কিছুক্ষণ পরে শরীরে জোরে জোরে ধাক্কা অনুভব করলাম। চোখ মেলতেই দেখতে পেলাম, পাশ থেকে বউ ধাক্কা দিয়ে আমার ঘুম ভাঙাচ্ছে।
--"কি সব বকবক করতেছো শুনি ঘুমের মইধ্যে? পেলেন, কেরাশ, প্যারাসুট নাইরকেল ত্যাল! ঘুমাইয়াও শান্তি নাই মোটে! আবার পোলার স্কুল ব্যাগ আমার কান্দে দিয়া ধাক্কাও মারছো! কি হইছে তুমার?"
--"আর কইয়ো না। স্বপ্ন দেখতেছিলাম। পেলেন চালাইতাছি। হঠাৎ এক্সিডেন্ট করলো!"
--"ওরে আল্লাহ রে..! সারাদিন অটো চালাইয়া চালাইয়া এহন রাতে ঘুমাইয়া পেলেন চালাও৷ হা হা হা! আমি তো তাইলে অহন থেইকা অটোরিকশা না, অটোপেলেনের পাইলটের বউ। আবার না জানি কবে ঘুমের মইধ্যেই পধান মন্ত্রীর বউ হইয়া যাই। যত্তসব আজাইরা!! যাও ঘুমাও..!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পে একজন অটোচালক স্বপ্ন দেখছে যে, সে একটা প্লেন চালাচ্ছে। পরে সেটা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ক্রাশ করে যায়। মানুষের স্বপন কত ধরনের হয়। এখানে সেই বিষয়টা ফুটে উঠেছে। প্রথমে সিরিয়াস একটা ব্যাপার থেকে হাস্যকর একটা ব্যাপারে গিয়ে গল্পটা শেষ হয়েছে। আসলে আমরা বাস্তবে বিমান পথ, সড়ক পথ বা নদী পথের কোন দূর্ঘটনাই কামনা করি না। ভালো থাকুক সবাই, ভালো থাকুক আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষগুলো। মাইলস্টোন স্কুলের মত আর কোন প্রতিষ্ঠান এমন দূর্ঘটনার কবলে না পড়ে!
১১ মে - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর,২০২৫