ভালোবাসার শেকড়

পরগাছা (আগষ্ট ২০২৫)

মেহেদী মারুফ
  • ১১
  • 0
  • ২৪৬
জ্ঞান ফেরার পরেই শান্তাকে দেখতে পেলাম বেশ দূরে দাড়িয়ে আছে। পাশে বড় চাচা আর ডক্টর। চাচা জানালো, দুইদিন আগে আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় একটা মাইক্রোবাসের সঙ্গে এক্সিডেন্ট করি। মাইক্রোবাসটা পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। আমার শুধু এতটুকু মনে আছে একটা মাইক্রোবাস এসে আমাকে ধাক্কা দেয়, এরপর আর কিছুই জানিনা।

সবাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আবার শান্তা ফিরে এসে আমার পাশে বসে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, "ডাক্তার কি বললো?" ও মাখাটা নিচু করে বলে, "তোর দুইটা পা কেটে ফেলতে হবে।" আমি কিছু বলার আগেই ও আমার হাত ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমাকে বিয়ে করবি আশিক?"

-"করুণা করছিস আমাকে?"

-"ছিঃ একদম না।"

-"তাহলে এখনই বিয়ের কথা বললি আর তাছাড়া আমি অলরেডি পঙ্গু হয়ে গেছি। পঙ্গুকে কেন বিয়ে করবি?" -"থামবি তুই? তোকে ভালোবেসেছি কি এইসব হিসাবের জন্য? তোর জায়গায় আমি এই অবস্থায় থাকলে তুই কি করতিস?"

-"জানি না রে। আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিবি?"

শান্তা কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে গেলো। আমি আর শান্তা দুজনেই ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ওর সাথে আমার পরিচয় অনেকদিনের হলেও প্রেমের সম্পর্ক মাত্র ১ বছরের। আমি ওর পেছনে অনেক ঘুরে ঘুরে রাজি করিয়ে ছিলাম। আর এখন আমিই চাচ্ছি ও আমার জীবন থেকে সরে যাক।

এক সপ্তাহ পরে অপারেশন করে আমার দুইটা পা কেটে ফেলা হয়। পা কাটার পরপরই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমার বাবা-মা মারা যায় আমি অনেক ছোট থাকতেই। বড় চাচার আশ্রয়ে আর নিজের চেষ্টায় বেশ অনেকটা দূর এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু তার চেয়ে দ্বিগুণ যেন পিছিয়ে গেলাম।

এর মধ্যে বেশ কয়েকবার শান্তা এসে আমাকে দেখে গেছে। তবে ওর উপস্থিতি কেন জানি আমার বিরক্ত লাগছে। হয়তো আমার পঙ্গুত্বের কারণে যেন নিজেকে অবহেলা না করি সেটা বোঝাতে চাইছে। ও কি সত্যিই আমাকে এতটা ভালোবাসে, যতটা ভালোবাসলে প্রিয়জনের অর্থ, সৌন্দর্য সবকিছু হারিয়ে গেলেও ভালোবাসা যায়?

ভাবতে ভাবতেই শান্তা চলে আসে।
-"কিরে? এখন কেমন বোধ করছিস?"

-"তুই কি ডাক্তার? আমি কেমন বোধ করছি সেটা বারবার শুনছিস?"

-"মনে কর তাই।" শান্তা অনেকটা গা ঘেঁষে বসলো আমার। এর আগে এতটা কাছাকাছি কখনও হয়নি ও।

টিফিন বক্স খুলে খাবার বের করে আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো, "শোন, আমি অত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। আমি তোকে বিয়ে করবো। তোর বড় চাচার সঙ্গে কথা বলেছি। উনি তোর মতামত নিতে বলেছেন।"

আমার গলায় খাবার আটকে গেলো। ও পানি এগিয়ে দিলো। এক ঢোক পানি গিলে ওকে বললাম, "আচ্ছা শান্তা, আমার অসুস্থতার পর থেকে তুই আমাকে এত ভালোবাসছিস কেন?"

-"কারণ তুই আমাকে আগে ভালোবেসেছিলি।"

-"আমি কি পারবো তোর এই ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে?"

-"তোকে আর এতকিছু ভাবতে হবে না।"

শান্তা আমার এক্সিডেন্টের পর থেকেই যেন আমার দেখাশোনার পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়ে নিলো। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেওয়ার পরের সপ্তাহেই আমাদের বিয়ে হলো। যদিও আমাদের প্লান ছিলো ফাইনাল ইয়ার শেষ করে বিয়ে করার। কিন্তু শান্তা এখানে দেরি করতে চাইলো না। ওর ফ্যামিলি এসব জানার পরে আমাকে মেনে নেয়নি। স্বাভাবিকভাবে কোন ফ্যামিলি এটা মানবেও না।

আমরা একটা ভাড়া বাসায় উঠলাম। আমি যে স্টুডেন্টগুলোর টিউশন পড়াতাম। শান্তা তাদেরকে পড়ানো শুরু করলো। আর আমি পুরোপুরি ভাবে হুইলচেয়ারের দখলে চলে গেলাম। দিনগুলো মোটামুটি ভালোই কাটছিলো। কিন্তু আমি নিজেকে অকেজো ভাবতে লাগলাম। শান্তা সবকিছু একহাতে সামলাচ্ছে। অথচ আমি ওকে কোনভাবেই সাহায্য করতে পারছি না।

ধীরে ধীরে ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম টাইম এগিয়ে আসলো। শান্তা আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছিলো এক্সাম এটেন্ড করার জন্য। সব ব্যবস্থা ও করবে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। হয়তো আমার এক্সামের জন্য আরও কিছু টাকা বেশি খরচ হয়ে যাবে সেই ভয়ে। শেষমেষ ও এক্সাম দিলো। এক্সাম দিযে আরও দুইটা টিউশন পড়িয়ে ওকে বাসায় ফিরতে হয়। আমার জন্যই ও এত কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে নিয়েছে। একদিন ও বাসায় ফেরার পরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে। এইটা যেন আমার পা কেটে ফেলার থেকে বেশি কষ্টদায়ক।

আমি শান্তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "আমার জন্য তুই এত কষ্ট কেন করছিস?"

-"আমার জন্য হলে তুই করতিস না?"
-'কিন্তু তোর জায়গা থেকে সবাই এটা পারে না।"

-"হয়েছে থাম কিছু খেয়েছিস?"

-"না।"

-"তোকে কতবার বলেছি, আমি না থাকার সময়টুকু অন্তত নিজের খেয়াল রাখবি।" বলতে বলতে ও হাত মুখ ধুয়ে এসে আমাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

ওর পরীক্ষা শেষ হলে ও একটা জবে ঢুকে গেলো। আগের থেকে আরও ব্যস্ততা বেড়ে গেলো ওর। আটটা-পাঁচটা ডিউটি। তবুও চেষ্টা করে আমার খেয়াল রাখার। ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় খেয়েছি কিনা। কিছু এত শান্তিও আমার কাছে অশান্তি মনে হয়। ও একতরফা কত কষ্ট করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর আমি??

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর হয়ে এলো। আমার মনে হলো, ওকে কোন একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু আমি তো কখনও কোনকিছু কেনাকাটা করি না। যা প্রয়োজন হয় ও কিনে আনে। একারণে আমার হাতে কোন টাকাপয়সাও থাকে না। মনে মনে ভাবতে থাকি, কোন উপায় খুঁজে পাই কিনা।

আমি হুইল চেয়ারে করে বাইরে বেরিয়ে পড়ি। এরপর যেটা করি সেটা আপাতত না বলি। শান্তা বাসায় ফিরে আমাকে না পেয়ে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। আশেপাশের বিভিন্ন জয়গায় খোঁজ করে। আমার ফোনটাও বাসায় থাকার কারণে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। ঠিক রাত ৮টার সময় ও আমাকে একটা ফ্যাক্টরির সামনে দেখতে পায়। আমি হুইল চেয়ারে বসে গায়ের চাদর দিয়ে ঘোমটা ঢেকে হাত পেতে বসে আছি। পাশে আরও দু চারজন বয়স্ক ভিক্ষুক আছে। শান্তা আমাকে চিনতে পেরে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। ওর ধাক্কা লেগে আমার হাত থেকে বেশ কিছু টাকা মাটিতে পড়ে যায়। ও আমার চেয়ার ঘুরিয়ে ঠেলে নিয়ে আসে। আমি পড়ে যাওয়া টাকাগুলো দেখিয়ে, "ওগুলো.."

-"একদম না। তুই কেন এসব করছিস?" বলে হাতের বাকি টাকাগুলো নিয়ে আরেকজন ভিক্ষুককে দিয়ে আমাকে নিয়ে আসে।

বাসায় এসে আমার মুখোমুখি বসে বলে, "তোর কি লাগবে আমাকে বল?" আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি। কারণ পঙ্গু মানুষের এর থেকে বেশি কি করার আছে? আমি বলি, জানিস? আমার নিজেকে একটা পরগাছা মনে হয়। আর তুই সেই মূলগাছটা। যেই গাছ থেকে জল আর ছায়া নিয়ে আমি বেঁচে আছি।" -"একদম বোকার মতো কথা বলবি না। তুই আমার শেকড়, আর শেকড় না থাকলে গাছের কি হয় জানিস তো??"

-"হ্যাঁ বুঝেমি। তুই আসলে ভালোবাসারও অনেক উর্ধ্বে।"

-"এখন তোর জন্য তিনটা সুখবর আছে। এক, আব্বু আম্মু আমাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। দুই, তোর জন্য একটা দোকান নিয়েছি। এখন থেকে আর নিজেকে পরগাছা মনে করবি না। আর তিন, এইটা থাক পরে বলবো।"

-"না এখনই বল।"

-"আমি প্রেগন্যান্ট।" কথাটা বলেই শান্তা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী মারুফ কতৃপক্ষকে জানানোর পরে আমার এই গল্পের বানান ও ত্রুটি সংশোধন করে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর তাছাড়া পরবর্তীতে আমি চেষ্টা করবো ডকুমেন্ট ফাইলের পরিবর্তে সরাসরি সাইটে লেখা জমা দেওয়ার জন্য। আর যারা নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে গল্পটা পড়ে হতাশ হয়েছিলেন। তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করি। সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ!!
মোঃ মাইদুল সরকার গল্পের একই অংশ দুইবার এবং শেষ লাইনগুলো না থাকতে গল্পটা পড়ে আরাম পাওয়া গেলনা এবং সুন্দর গল্পটি যেন ম্লান হয়ে গেলো। আপনি কি ওয়ার্ড ফাইল থেকে কপি করে এখানে দেন নাকি সরাসরি এখানে টাইপ করেন ?
ami golpo ta sob thik thak kore pdf file a joma diyechilam,, amar janamote sekhane kono banan bhul ba rewriting chilo na,, kintu ei problem gulo golpo prokasher pore kheyal korlam,, ami taderke mail korechi,, call diyechi,, amon ki messenger a bolechi,,, dekhi ki kore!! Dhonnobad apnake, somoy niye golpo ta porar jonno
ফয়েজ উল্লাহ রবি -বেশ লিখেছেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!!
মাহাবুব হাসান শেষ লাইনগুলো কমেন্টে দেয়ায় স্বস্তি পেলাম যে পংগু বলে ভিক্ষা করার মতো অসহায়ত্ব প্রটাগনস্টের থাকছে না। আর এমন মমতার আশ্রয় যার আছে সে অসহায় হয় কী করে! বেশ ভালো গল্প।
আপনার বোধগম্যতায় আমার স্বার্থকতা!!
ইমরানুল হক বেলাল সত্যিকারের ভালোবাসার উদারতা ফুটে উঠেছে আপনার লেখায়। সত্যিকারের ভালবাসা থাকলে এঁকে অন্যের প্রতি পরগাছার মতো বোঝা হতে পারে না। এটাই চিরন্তন। বেশ ভালো লাগলো পড়ে। লেখা মিস্টেক হওয়ার কারণে কিছু বানান ছুটে গেছে। এই বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে বন্ধু।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টা বুঝতে পারার জন্য। প্রকাশকালীন সময়ে হয়তো বানান সমস্যাটা হতে পারে। আমি যেকোনো লেখা জমা দেওয়ার পূর্বে অন্তত দুইবার চেক করি। এখানে প্রকাশের পরে অনেকগুলো সমস্যা পেলাম। যেটা এই সনামধন্য সাইট থেকে আশা করা যায় না। ❤️❤️
মেহেদী মারুফ গল্পের শেষের কয়েকটা লাইন বাদ দিয়েছে। সেটা এখানে লিখে দিলাম। কারণ গল্পের শেষের সৌন্দর্য প্রকাশ না পেলে পুরো গল্পটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।আবার রিরাইটিং করা হয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। তাছাড়া বেশ কিছু জায়গায় বানান ভুল করেছে। যেগুলো তাদের থেকে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। হয়তো তাদের টাইপিং মিসটেক হতে পারে। যাই হোক, প্রকাশের সময় একটু খেয়াল করে নিলে আশাকরি এই সমস্যা থাকবে না।
মেহেদী মারুফ --"এখন তোর জন্য তিনটা সুখবর আছে। এক, আব্বু আম্মু আমাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। দুই, তোর জন্য একটা দোকান নিয়েছি। এখন থেকে আর নিজেকে পরগাছা মনে করবি না। আর তিন, এইটা থাক পরে বলবো।" --"না এখনই বল।" --"আমি প্রেগন্যান্ট।" কথাটা বলেই শান্তা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

জ্ঞান ফেরার পরেই শান্তাকে দেখতে পেলাম বেশ দূরে দাড়িয়ে আছে।

১১ মে - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“সেপ্টেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী