আপনি কি সত্যিই বিবাহিত?
-হুম। একটা ৩ বছরের মেয়েও আছে।
হাবিবের এমন জবাবে রিনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো!! মনটা যেন কাচের ঘরের মতো ভেঙ্গেই গেল!! অথচ আধাঘণ্টা আগে হাবিব যখন রিনিকে মেসেজ করেছিল তখন সে যেন আঁতকে উঠেছিল। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল! কারণ মেসেজে লেখা ছিল, "আমরা কি গোপনে বিয়ে করতে পারি?" এমন মেসেজ দেখে রিনির হাত পা রীতিমতো কাঁপতে লাগলো!!
হাবিবের সাথে পরিচয় হয়েছে মাত্র ২ দিন আগে। সে ভাবতেই পারছে না ২ দিনের পরিচয়ে কেউ কি করে গোপন বিয়ে করার কথা চিন্তা করতে পারে!!
তাদের পরিচয়ও হয়েছিল এক মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে।
রিনির একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে যেখানে সে বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ নিয়ে ক্লাসের বিভিন্ন ভিডিও নিজেই তৈরি করে তা আপলোড করে।
২ দিন আগে রাত আনুমানিক ১১ টায় সে টেলিগ্রামের একটা নিউজপেপারের চ্যানেলের কমেন্টবক্সে সমাস নিয়ে করা ভিডিও এর লিংক শেয়ার করে। কিছুক্ষণ পরই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করে সে যেন এমন লিংক আর কখনো শেয়ার না করে। আবার এমনটা করলে তার আইডিকে ব্যান করে দেওয়া হবে!! এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কমেন্টে দেওয়া লিংকটি ডিলিট করে দেয়।
তারই কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে তাকে মেসেজ দেয়, 'আসসালামু আলাইকুম, ম্যাম। ঐ ভিডিওর লিংকটা দিতে পারবেন কি?'
এটা শুনে রিনি কিছুটা আঁতকে উঠল।
'কোন ভিডিও? কীসের লিংক?'
তখন ছেলেটা বলল, 'কিছুক্ষণ আগে নিউজপেপারের চ্যানেলে সমাসের ভিডিও এর যে লিংকটা দিয়েছিলেন সেই ভিডিও এর লিংকের কথা বলছি। দিতে পারবেন কি?' স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নিজের বোকামিতে মুচকি হেসে রিনি ছেলেটাকে ভিডিওর লিংক শেয়ার করল।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটা তাকে ভিডিও এর এডিট কেমন হওয়া উচিত, হাইকোয়ালিটির এডিট কী করে করতে এসব নিয়ে উপদেশ দিল।
তারপর তারা একে অপরের সাথে পরিচিত হলো। ছেলেটার নাম হাবিব। সে মোহমায়া নামের একটা ম্যাগাজিনে জব করে। ম্যাগাজিনের কথা শুনে রিনি তার লেখা কিছু গল্প, কবিতা হাবিবকে শেয়ার করলো আর অনুরোধ করলো তার বসকে দেখাতে।
হাবিবও রিনির কথামতো তার বসকে লেখাগুলো দেখালো কিন্তু বসের পচ্ছন্দ হয়নি একটাও।
'আরও ভালোমানের লেখা হতে হবে' এমনটাই হাবিবকে তার বস জানিয়েছে।
এটা শুনে রিনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সে হাবিবকে বলল, ' হয়ত আমাকে দিয়ে লেখালেখি হবে না!!
তখন হাবিব তাকে উৎসাহ দিলো। হাবিব নিজেও ম্যাগাজিনে লেখালেখি করে। সে রিনিকে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে নানারকম উপদেশ দিল। তার লেখায় কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে তা ধরিয়ে দিল। হাবিবের কথা শুনে রিনি মনে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো আর সেই সাথে তার মনটাও ভালো হয়ে গেলো।
তারপর তারা দুজন নিজেদের ব্যাপারে টুকটাক কথা বললো। হাবিব তার কাজের ব্যাপারে অনেকরকম গল্প বললো। কাজের চাপে হাবিবকে মাঝে মধ্যেই অফিসে থাকতে হয়। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। বাসায় তেমন একটা যাওয়া হয় না।
আর রিনি জানালো যে, 'সে ডিভোর্সি। ১ বছর আগে ডির্ভোস হয়েছে। বাংলা নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছে। ইচ্ছে আছে স্কুল / কলেজে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি লেখালেখি করার।'
দুজন এভাবেই অনেক রাত পর্যন্ত চ্যাট করলো। সেদিন রাতে নিজেদের জীবনের গল্প, সুখ, দুঃখের কাহিনি আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঘেরা স্বপ্নের জাল যেন মেলে ধরেছিল ফোনের দুপ্রান্তে থাকা দুটি মানুষ। তাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে অনেকটাই মিল ছিল। তাই হয়ত অল্প সময়ের মধ্যেই তারা এক মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়িয়েছিল। সেইরাতে অনেক রাত পর্যন্ত তারা জেগেছিল। গল্প করতে করতে কখন যে রিনি ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেল না।
এমনি করেই ২ দিন কাজের ফাঁকে কথা হলো তাদের মধ্যে। হাবিবের গাইডলাইনে রিনি আবারও লেখালেখি শুরু করার চিন্তা ভাবনা করতে লাগলো এবং কীভাবে লিখলে তার লেখার মান আরও ভালো হবে সে ব্যাপারে তারা কথা বলতো।
এরমধ্যেই হুট করে হাবিব সেদিন সকালে গোপন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। কিন্তু তার মধ্যে কোন অশ্লীলতা ছিল না। তাছাড়া এই ২ দিনে হাবিবের থেকে উৎসাহ পেয়ে, সাহস পেয়ে রিনিও খুশি ছিল। তার মনে তার অজান্তেই হাবিবের প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল কিন্তু তাই বলে গোপন বিয়ে করার মতো ইচ্ছা তার মনে কখনো জাগেনি।
সে হাবিবকে জানালো, "বিয়ে করলে পরিবারের সম্মতিতে হবে, গোপনে বিয়ে করতে যাব কোন দুঃখে!!"
তখন হাবিব যা বলল তার জন্য রিনি মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হাবিব রিনিকে জানালো, " সে বিবাহিত!! তার ৩ বছরের মেয়েও আছে!!"
রিনির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। জানি না কেন মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল!! সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না হাবিব বিবাহিত হতে পারে। প্রথমে ভাবলো হাবিব হয়ত তার সাথে মজা করছে কিন্তু পরে সে বুঝতে পারলো এটা মিথ্যে নয়, হাবিব সত্যি বিবাহিত। কিন্তু তখনও হাবিব গোপন বিয়ে করতে চায় কি না সে ব্যাপারে রিনিকে জিজ্ঞেস করলো। রিনি তখন একটা কথাই হাবিবকে বললো, "কারো সংসার ভাঙ্গা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমরা যদি গোপন বিয়ে করি আর ভবিষ্যতে কখনো যদি আমরা ধরা পড়ি তাহলে আপনার একূল ওকূল দুদিকই যাবে। আমি কখনোই গোপনে বিয়ে করতে চাই না। আর আপনার বউও হয়ত আপনার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিবে না। "
রিনি যখন তার মন খারাপ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে হাবিবকে জানালো হাবিব একটু অবাকই হলো। "গোপনে বিয়েও করতে চায় না, আবার বিবাহিত শুনে কষ্ট পেয়েছে!! অদ্ভুত তো!!" হাবিব বললো,"শোন রিনি, তোমাকে, তোমার চিন্তাধারাকে আমার অনেক ভালো লেগেছিল তাই তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। খারাপ উদ্দেশ্যে আমি এই প্রস্তাবটা দিইনি। কিন্তু তুমি যখন চাইছ না তখন বিয়ে হবে না!! কিন্তু আমরা তো ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে পারি, সুখ দুঃখের সাথী হতে পারি তাই না? " রিনি তখন বললো," আমাকে ২ দিন সময় দিন। আমি চিন্তাভাবনা করে দেখি। একটু স্বাভাবিক হয়ে নিই তারপর না হয় বন্ধু হব কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব!!" এতে অবশ্য হাবিব একটু অবাক হলেও রিনিকে জানায়, " আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি সময় নাও। ঠান্ডা মাথায় ভাবো। তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিও বন্ধু হবে কি না!!"
হাবিব কিছুতেই বুঝতে পারছিল না রিনির হঠাৎ হলোটা কী!! একদিকে রিনি তাকে বিয়ে করবে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে সে বিবাহিত শুনে মন খারাপ করছে, কষ্ট পাচ্ছে। আবার বন্ধু হবে কি না তার জন্য এতটাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে যে তাকে এখন সময় নিতে হয়েছে!! সত্যি, কথায় আছে, মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়।
রিনি অবশ্য পরের দিনই মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলো যে আচ্ছা আপনার স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও আমার মতো একজন ডিভোর্সীকে কেন বিয়ে করতে চাইলেন জানতে পারি? দয়া করে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন নাকি ঝোঁকের বশে?
জবাবে হাবিব যা জানালো তা দেখে রিনি আবারও একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। হাবিব লিখেছে, " আচ্ছা আমি যদি আমার স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি তুমি আমাকে বিয়ে করবে?"
রিনি প্রথমে কি লিখবে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু অনেক ভেবেচিন্তে লিখলো, "এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। আর তাছাড়া চাইলেই কি সব হয়!! ধরুন আপনি আমাকে আপনার স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বিয়ে করলেন কিন্তু ভবিষ্যতে আপনাদের মধ্যে কোন সমস্যা হলো, তখন সবার মনে হতে পারে এর জন্য আমিই দায়ী!! আর আমি চাইনা আমার কারণে কখনো কোন সংসারে অশান্তি হোক বা কেউ কষ্ট পাক। তাইতো ইচ্ছে না থাকা স্বত্ত্বেও আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। যদিও এই কাজের জন্য আমাকে আজীবন আফসোস করতে হবে কিন্তু তবুও এটা ভেবে ভালো থাকব যে আমার জন্য আপনার জীবনে কখনো কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় নি। এবার আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কি? আপনি কি আপনার স্ত্রীর সাথে সুখী নন?"
কয়েক সেকেন্ড পর হাবিবের রিপ্লাই এলো, " আমি তো আগেই বলেছি তোমাকে, তোমার চিন্তাধারাকে আমার ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে সারাজীবন সুখী দেখতে চাই। তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই। তোমার সব কষ্ট দূর করে দিতে চাই। তাই তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। দয়া করে বা ঝোঁকের বশে বিয়ে করতে চাইনি। তোমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ যদি জানতে চাও তাহলে সহজ ভাষায় বললে প্রয়োজনের তাগিদে!! কিন্তু তুমি যখন চাও না বিয়ে করতে, তখন আমি এব্যাপারে তোমাকে আর বিরক্ত করব না। আমি কখনো এমন কিছু করব না যাতে তুমি কষ্ট পাও বা তোমার অস্বস্তি হয়। কথা দিলাম। এবার বলো, আমরা কি বন্ধু হতে পারি? সুখ দুঃখের সাথী হতে পারি?"
- প্রয়োজনের তাগিদে!! শব্দটা দেখে রিনির মনে একটু খটকা লাগলো কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
ভাবলো হয়ত আমাকে সুখী দেখার ইচ্ছেটাই হয়ত তার কাছে প্রয়োজন হিসেবে ধরা দিয়েছে!!"
এটা নিয়ে বেশিকিছু ভাবার প্রয়োজনবোধ করলো না রিনি।
রিনি হাসিমুখে হাবিবকে মেসেজে জানালো, " অবশ্যই, আমরা বন্ধু হতে পারি। আর আমরা তো প্রথম দিন থেকেই নিজেদের সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করছি। তাই বন্ধু হতে আমার কোন সমস্যা নেই।" রিনির রিপ্লাই দেখে চিন্তামগ্ন থাকা হাবিবের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো,
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেল তার স্ত্রী মালিহা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে - মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট!! বিরক্তভরা কন্ঠে মালিহা জিজ্ঞেস করলো," এই যে, এতক্ষণ ধরে মুচকি মুচকি হেসে কাকে মেসেজ দিচ্ছিলে, জানতে পারি?" প্রশ্ন শুনে হাবিব একটু ঘাবড়ে গেলেও মুচকি হেসে বললো, " কার সাথে আবার!! আমার হবু বউ মানে তোমার সতীনের সাথে কথা বলছিলাম!! ঘর, সংসার, বাচ্চা সামলে তুমি তো সময়ই পাও না, তাই ভাবলাম আমার সেবা করার জন্য অন্য কাউকে নিয়ে আসি!! আমার তো মনে হয় নতুন সঙ্গী আনলে ভালোই হবে!! তোমার একজন সঙ্গী হবে। ঘরের কাজে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে!! এতে তোমার কি মত? বলো, আমি শুনি!! " উত্তরে মালিহা মুখ ভেংচিয়ে বললো, " হু, বুড়ো বয়সে ভীমরতি!! যা খুশি করো, আমার কি!!"
এই বলে মালিহা একরাশ বিরক্তি নিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে।
আর হাবিব তখন গোপনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় থাকা ইজি চেয়ারে হেলান দিল।
হঠাৎ করেই তার চোখে পড়লো পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে থাকা বরই গাছের দিকে !! হাবিবের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ খুব ভালোভাবেই দেখা যেত। বরই গাছটি মাঝারি আকারের বালতিতে লাগানো হয়েছিল। বরই গাছটাকে ছাদের কিনারার অনেকটা কাছেই রাখা হয়েছিল তাই হাবিবের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে খুব ভালোভাবে গাছটিকে দেখা যেত।
আজ বরই গাছের দিকে তাকাতেই হাবিবের চোখে পড়লো নাম না জানা এক লতা বরই গাছের গা বেয়ে উঠতে চাইছে!! সম্ভবত কোন লতানো গাছ কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি তাতে কোন পাতা নেই। রোদের আলোয় খাঁটি সোনার মতো চকচক করছে সেই লতা। কোন লতা যে এত সুন্দর, এত মোহনীয় হতে পারে সেটা হাবিবের জানা ছিল না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হাবিবের নজর ঐ সোনালী রঙের নাম না জানা লতার উপর।
সে বুঝতে পারছিল লতাটি বরই গাছকে আশ্রয় করে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু তার মনে প্রশ্ন জাগলো, (গত সপ্তাহে সে যখন বাসায় এসেছিল তখন তো এই লতাটা বরই গাছের টবে ছিল না। তাহলে রাতারাতি এত বড় একটা লতা এলো কোথা থেকে? আর তাছাড়া এই লতা যখন গাছ বেয়ে উপরে উঠবে, যখন গাছের চারদিকে লতাটি জড়িয়ে পড়বে তখন তো গাছের ক্ষতি হতে পারে। এত সুন্দর বরই গাছটা যদি মরে যায়!! পরক্ষণেই আবার মনে হলো লতার কারণে কোন গাছ মরেছে এমনতো কখনো শুনিনি। তাহলে অযথা এত চিন্তা করছি কেন? আর তাছাড়া যার গাছ সেই হয়ত কিছুক্ষণ পর এই লতা কে ছিঁড়ে ফেলে দিবে। আমি কেন অযথা মাথা ঘামাচ্ছি!!) " যা হবার হবে!! এসব না ভেবে বরং যাই গিয়ে অফিসের কাজগুলো সেরে নিই।"
এই বলে হাবিব রুমে এসে ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো। সেই সাথে কাজের ফাঁকে ফাঁকে রিনির সাথে চ্যাটিং করছিল।
হাবিব রিনিকে জানায় যে প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সে বাসায় থাকে। তাই এই সময়টাতে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। বাসায় থাকা অবস্থায় বেশিক্ষণ মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে দেখলে তার স্ত্রী সন্দেহ করতে পারে। তাই তার সাথে কথা বলার জন্য রিনিকে প্রতি সপ্তাহে রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রিনিও তাকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে," তুমি চিন্তা করো না। আমি অপেক্ষা করব। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিজে থেকে মেসেজ না দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাকে মেসেজ দিব না। "
এভাবেই কেটে যায় ৩ মাস। তারা প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে চ্যাট করত,একে অপরের খোঁজ খবর নিত, কেয়ার করতো, সুখ দুঃখের কথা বলতো, দুষ্ট মিষ্টি রোমান্টিক কথাও হতো মাঝে মধ্যে।
কিছুদিনের মধ্যেই তারা দুজনেই বুঝতে পারলো যে, তাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্কটি এখন আর কেবল বন্ধুত্বের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, সম্পর্কটা যেন বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিংবা প্রেমের থেকে একটু কম!!
তারা একে অপরের সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না। তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে দিনে কম করে হলেও ৫/৬ হবার চ্যাটিং করবেই। তবুও যেন তাদের মন ভরে না।
তারা দুজনই দেখা করার জন্য, একসাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। দেখা করার জন্য তাদের আর তর সইছে না!! কিন্তু সমস্যা হলো হাবিব থাকে ঢাকার উত্তরায়, আর রিনি থাকে কুমিল্লায়। তাছাড়া অফিস, বাসা সামলে কি করে হাবিব রিনির সাথে দেখা করতে যাবে সেটা সে কোনভাবেই বুঝতে পারছে না।
অন্যদিকে, হাবিব যখনই ২ দিনের জন্য বাসায় যেত তখন ঐ সময়ে রিনি হাবিবকে অনেক মিস করতো। হাবিবের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো না চাওয়া সত্ত্বেও রিনির মনে পড়ে যেত। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো রবিবারের জন্য।
রিনি বুঝতে পারতো, বাসায় গেলে রিনির কথা হাবিবের একটুও মনে পড়েনা কিন্তু তবুও সে নিজের অজান্তেই যেন হাবিবের মেসেজের জন্য অপেক্ষা করতো!!
এদিকে হাবিব জানে না যে হঠাৎ করে তার কি হয়েছে সে যখনই তার বউয়ের কাছাকাছি আসে এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটায় তখন তার মনে হয় সে যেন বউয়ের মাঝে রিনিকেই দেখতে পায়!! রিনিকেই অনুভব করে!!
অথচ সে রিনিকে আজ পর্যন্ত কখনো সরাসরি দেখেনি, শুধু তার ফটো দেখেছে। তার কাজলকালো ক্লান্ত চোখে একাকিত্বের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে, তার বাঁকা হাসি যেন এক ফালি চাঁদ হয়ে ঝড় তুলে হৃদয় জুড়ে!!
হাবিব বুঝতে পারেনা তার সাথে এসব কি হচ্ছে আর কেনই বা হচ্ছে? রিনিকে কখনো না ছুঁয়েও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে সে রিনির অস্তিত্ব কী করে অনুভব করছে? এসব কি তবে তার ভ্রম? এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই তবে এই ভ্রম তাকে এক অদ্ভুত আনন্দ দেয়!! এই ভ্রম দূর হোক এটা সে চায় না!! কেন চায় না তার কারণ সে নিজেই জানে না। শুধু এতটুকুই জানে যে, এই অদ্ভুত অনুভূতি তার ভালো লাগে!! ভীষণ ভালো লাগে!!
অন্যদিকে রিনি হাবিবের সাথে দেখা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। সে ভাবে, (যদি হাবিবের সাথে তার দেখা হয় তখন তারা কী করবে? সে ভেবেই পায় না কী করলে তাদের দেখা হওয়ার দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে? মাঝে মধ্যে ভাবে যদি হাবিব তার সাথে দেখা করতে কুমিল্লায় আসে তখন সে হাবিবকে নিয়ে রিকশায় চড়ে কুমিল্লা শহর ঘুরে বেড়াবে। হাতে হাত রেখে ধর্মসাগর পাড়ে ঘুরবে! রেস্টুরেন্টে একসাথে লাঞ্চ করবে!) এমনই আরো কত চিন্তা তার মাথায় ঘুরে!
তারা কয়েকবার দেখা করার প্ল্যান করে কিন্তু প্রত্যেকবারই কোন না কোন বাধার সৃষ্টি হয় আর তাদের যাওয়াও ভেস্তে যায়। কখনো হাবিব অসুস্থ, কখনো রিনি অসুস্থ, কখনো অফিসে কাজের চাপে হাবিব দিশেহারা, কখনো বাসায় ঝামেলা এসবের কারণে তারা এখনো পর্যন্ত দেখা করতে পারেনি। তাদের দেখা করার প্ল্যান যখনই ভেস্তে যায় তখনই রিনির মনটা খারাপ হয়ে যায় আর সেইসাথে হাবিবও এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ে যে হয়ত কখনোই রিনির সাথে তার দেখা হবে না!!
হাবিব যখনই বাসায় থাকে একবার হলেও তার ফ্ল্যাটের বারান্দায় যায়। বারান্দা থেকে সেই বরই গাছটিকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে যাকে অবলম্বন করে স্বর্ণলতা বেঁচে আছে। হাবিব যেদিন বরই গাছের টবে লতা দেখতে পেয়েছিল সেদিনই গুগলে সার্চ করে জানতে পেরেছিল যে এটি আসলে স্বর্ণলতা। বরই গাছের ডালপালায় স্বর্ণলতাকে জড়িয়ে থাকতে দেখেও বরই গাছের জন্য তার বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা হয় না। ভাবে (সামান্য একটা লতা এত বড় গাছের কি এমন ক্ষতি করবে!! আর তাছাড়া এই গাছের মালিকই যখন এতদিনেও আগাছা ভেবে স্বর্ণলতাকে ছিঁড়ে ফেলেনি তখন সে কেন অকারণে এ ব্যাপারে মাথা ঘামাতে যাবে!!)
হাবিব এসব আনমনে ভাবতে ভাবতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সোনালী আভার স্বর্ণলতার দিকে!! স্বর্ণলতার রূপ, গুণ, তার স্নিগ্ধতা হাবিবকে মুগ্ধ করে। যেন কতদিনের চেনা, কত আপন!!
রিনি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসার কাঙাল। যদি কেউ তার যত্ন নেয়, তাকে আদর করে সেও তার প্রতি ততটাই যত্নশীল হয়ে উঠে। সেও তাকে মনপ্রাণ দিয়ে উজাড় করে ভালোবাসে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ছোটবেলা থেকেই যাদের সে সারাজীবন আগলে রাখতে চেয়েছিল তারাই তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ; হোক সে কোন ব্যাক্তি বা বস্তু!!
পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতায়, অবহেলায় তার ছোট ছোট শখ, ছোট ছোট স্বপ্ন, আশা - আকাঙ্ক্ষা কতবার যে নষ্ট হয়েছে তার হিসাব নেই।
যখন সে হতাশায় ডুবে ছিল, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল, কি করবে বুঝতে পারছিল না তখনই তার জীবনে আশার আলো হয়ে হাবিবের আগমন ঘটে । প্রথমে তার সাথে বন্ধুত্ব করা নিয়ে রিনির মনে সামান্য ইতস্ততবোধ থাকলেও পরে হাবিবের মার্জিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে তা দূর হয়ে যায়। হাবিব তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, তার লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য সাধ্যমতো গাইডলাইন দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই হাবিব তার জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে।
রিনি চায় হাবিব সারাজীবন এভাবেই তার পাশে থাকুক। এই নিঃসঙ্গ জীবনে এভাবেই যেন হাবিব তাকে সারাজীবন সঙ্গ দেয়। কিন্তু এটা কি আদৌও সম্ভব? রিনি তা জানে না। রিনির কাছে এই প্রশ্নের কোন উওর নেই।
কিছুদিন পর রিনি তার আব্বুর সাথে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যায়। খবর পেয়ে দুপুরে হাবিব ছুটে আসে সেই আত্মীয়ের বাড়ির সামনের রোডে যেখানে রিনি ও তার আব্বু অবস্থান করছে!! কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে রিনিকে মেসেজ দিয়ে জানাতে পারে না সেই কথা।বলতে পারছিল না যে, " রিনি, নিচে নেমে এসো। আমি এসেছি। চলো আমরা দুজনে মিলে ঢাকা শহরে ঘুরে দেখব।"
কিন্তু বলা হয় না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন হাবিব চলে যেতে উদ্যত হয়, তখনই রিনি বারান্দায় আসে। প্রথমে দেখতে না পেলেও কিছুক্ষণ পর তারা দুজনই দুজনকে দেখতে পায়।
রিনির কাছে মনে হলো কিছুক্ষণের জন্য যেন সময় থমকে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু রিনি সাত তলায় থাকায় হাবিবকে অতটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল না।
হঠাৎ হাবিব ইশারায় তাকে নিচে নেমে আসতে বলে এবং বুঝানোর চেষ্টা করে যে নিচে নেমে এসো, আমরা দুজন একসাথে ঘুরতে বের হব। কিন্তু রিনি ইশারায় তাকে " না " করে দেয়।
একদিকে অপরিচিত জায়গা, অন্যদিকে বাসার সবাই জেগে আছে। তাছাড়া সে কী বলে বাসা থেকে বের হবে।
রিনি এটাই বুঝতে পারছে না যে তাদের বিশেষ করে তার আব্বুকে কী করে বিশ্বাস করাবে যে সে হাবিবকে চিনে, তারা ভালো বন্ধু আর যদি তারা মেনেও নেয় রিনির কথা তারপরও হাবিবের সাথে ঘুরতে যেতে পারমিশন কেন দিবে। হাজার হোক রিনির জন্য হাবিব পরিচিত হলেও তার আব্বুর কাছে তো সে অপরিচিত। আর নিজের মেয়েকে একটা অপরিচিত ছেলের সাথে ঢাকা শহরে কোন বাবা-ই যেতে দিতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। তাই তো রিনি হাবিবকে ইশারায় জানালো যে, 'সে তার সাথে যেতে পারবে না। '
রিনি নিষেধ করে দেওয়ায় হাবিবের মনটা খারাপ হয়ে গেল। চোখ দুটি ছলছল করছে। "কতদূর থেকে সে ছুটে এলো এখানে শুধু রিনির সাথে দেখা করার জন্য। আর রিনিকে দেখো!! বাসা থেকে বেরই হলো না!! আর কিছু না হোক রিনি তো অন্তত নিচে নামতে পারতো।"
হাবিব রিনির সাথে দেখা করার জন্য, রিনিকে ঢাকা শহর ঘুরে দেখাবে বলে এতটাই উত্তেজিত ছিল যে রিনি কেন নিষেধ করল বা নিষেধ করার কারণ কী হতে পারে সেটা তার মাথাতেই তখন আসেনি। হাবিবের মনে তখন রিনির প্রতি জমে ছিল মেঘের মতো একরাশ অভিমান।
রিনিও বুঝতে পারছিল যে, রিনি হাবিবের সাথে যায়নি বলেই হাবিবের অভিমান হয়েছে। কিন্তু সে তো নিরুপায়।
সে কি করে না বলে অন্য আরেকজনের বাসা থেকে বের হতো?
যদি তারা বুঝতে পারতো রিনি লুকিয়ে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে তাহলে তারা ধরেই নিতো যে রিনি হয়ত চাকরির পরীক্ষার নাম করে ঢাকায় এসে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছে আর আব্বুও তখন অপমানিত হতো। দেশে তো এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
রিনির খুব খারাপ লাগলো এত কাছে এসেও কথা বলা দূরে থাক তারা একে অপরকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখতে পারলো না। হয়ত এই আফসোস তাদের আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!! কিন্তু কি আর করা!! উপায়ই তো নেই!!
নেটওয়ার্ক সমস্যা দূর হলে রিনি হাবিবকে সরি বলল কারণ হাবিব তাকে নিয়ে ঘুরতে চেয়েছিল।
কারণ এই প্রথমবার রিনি ঢাকায় এসেছে। তাই হাবিব চেয়েছিল ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তাকে নিয়ে ঘুরতে, একসাথে তারা দুজন কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু রিনি না করে দিল!!
হাবিবকে ফিরিয়ে দেওয়ায় হাবিব যতটা কষ্ট পেয়েছে তারচেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছিল রিনি নিজেই। হাবিবের সাথে দেখা করার ব্যাপারে কত কিছু ভেবে রেখেছিল সে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
পরেরদিন পরীক্ষা দিয়ে রিনি কুমিল্লায় ফিরে যায়। হাবিবের সাথে আর দেখা করার সুযোগ পায়নি সে। কুমিল্লায় এসে রিনি হাবিবের সাথে যোগাযোগ করে, তার মন ভালো করে, অভিমান ভাঙ্গায়। এভাবেই সুন্দর কিছু মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো, যা তাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।
শুধু দুঃখ একটাই, কতমাস হয়ে গেলো তারা একে অপরকে চিনে অথচ এখনও পর্যন্ত তারা একবারও দেখা করতে পারলো না। তাদের আদৌও কখনো দেখা হওয়ার সুযোগ আসবে কি না, তারা জানে না। তবে তারা বিশ্বাস করে একদিন সব বাধা অতিক্রম করে তারা একসাথে একান্তে কিছু সময় কাটাবে।
কিন্তু এতকিছুর পরও মাঝে মধ্যে হাবিবের মনটা খচখচ করে।
তার মনে একটাই চিন্তা, রিনির সাথে তৈরি হওয়া এই সম্পর্কের জন্য তার সংসারে কোন অশান্তির সৃষ্টি হবে না তো? সে তার স্ত্রীকে ঠকাচ্ছে না তো?
যদিও এটা ঠিক হাবিব যখনই তার বাসায় যায় রিনির সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে।
হাবিব তার স্ত্রীকে কোনভাবেই বুঝতে দেয় না তার জীবনে রিনি নামে দ্বিতীয় কোন নারী আছে।
স্ত্রী ও সন্তানের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে যাতে তাদের মনে কোন রকমের সন্দেহ না হয়।
তবুও স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর সময় সে তার স্ত্রীর মাঝে রিনিকেই অনুভব করে। সে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারে না।
মাঝে মধ্যেই ভেবেছে রিনির সাথে কোন রকমের সম্পর্ক রাখবে না, যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু পারে না।
হাবিব চেষ্টাও করেছিল দু - একবার। কিন্তু রিনি কষ্ট পাবে ভেবে বলতে গিয়েও বলতে পারে নি।
হাবিব চেষ্টা করেছে রিনির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়ার কিন্তু পারেনি। তার মন মানে না।
রিনি যদি কোনদিন মেসেজ না দেয় তখন সে অস্থির হয়ে পড়ে!!
' কি হলো!! আজ রিনি মেসেজ দিল না কেন?'
এমন চিন্তা মাথায় ঘুরে সারাক্ষণ। হাবিব বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত; তার সাথে কেন এমন হচ্ছে? রিনিও সবসময় হাবিবের মেসেজের জন্য সবসময় অপেক্ষা করে। হাবিব মেসেজ না দিলে বা ইগনোর করলে না চাওয়া স্বত্ত্বেও রিনির মন খারাপ হয়। রিনিও বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত; তার সাথে কেন এমন হচ্ছে?
হাবিব এতটুকু বুঝতে পারে তারা একে অপরের সঙ্গ ছাড়া থাকতে পারবে না।
কিছুদিন পর হঠাৎ করেই হাবিবের চোখে পড়ে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে থাকা সেই বরই গাছের উপর। স্বর্ণলতাটা আগের থেকেও বড় হয়ে গেছে ও সেইসাথে বরই গাছের ডালপালায়, কান্ডে জড়িয়ে গেছে।
হাবিব দেখতে পেল এক মহিলা প্রাণপণে চেষ্টা করছে বরই গাছ থেকে স্বর্ণলতাকে আলাদা করার জন্য ।
দু - একটা জায়গায় লতা কেটে দিয়েছে তবুও কিছুতেই স্বর্ণলতার জট খুলতে পারছে না।
এই দৃশ্য দেখে হাবিব বুঝতে পারছে এখন চাইলেও বরই গাছ থেকে স্বর্ণলতাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। ঠিক তেমনি হাবিব যতই চেষ্টা করুক না কেন সে বুঝতে পেরেছে,
রিনির সাথে গড়ে উঠা তার এই মায়ার বাঁধন ছিন্ন করার ক্ষমতা হাবিবের নেই!!