“যে দড়িতে বেঁধে রাখতো গোয়ালিনী তার গরু, আহারে সেই দড়িই তাকে দিলো স্বাধীনতা !!!”
হাতের আলতা-মেহেদীর রঙ এখনো জেগে আছে নানান নকশায়। একজন নববধূর গায়ে যে আলাদা একটা সুবাস থাকে তাও শরীরে লেগে আছে পাগলীটার।
কুসুম কি এমন চেয়েছিল? সে তো গ্রামের বালু ধুয়ে পানি পান করা এক কিশোরী; রোজ রোজ আউলা বাতাসে বেবাক চুল উড়ায়ে প্রেমিক বকুলরে পাগল বানানো এক মায়াবিনী; সারাদিন টইটই করে বনে বাদাড়ে ঘুরে ফল-ফলাদি তল্লাস করা বোকা এক সুতা আর সেই ফলসমূহ পরম যত্নে প্রেমিককে ভোজন করানো এক প্রেমিকা। সে আবার দিন কয়েক আগে ওর পাগল বকুলরে বলেছে: ভালো-মন্দ রাঁধতে শিখলে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে বকুলকে, তখন আর বনে জঙ্গলে ঘুরে ফল কুড়োবেনা।
কুসুমের বয়স কম তো তাই বড্ড চঞ্চলা চপলা। গায়ের রং-এ একটু মরিচা ধরেছে কেবল রৌদ্র স্নানের ফলে কিন্তু অধরের গোলাপী আভা বরাবরই দৃষ্টিনন্দন । মেয়েটার রূপ যেমন ধারালো বচন ভঙ্গি তেমন সূঁচালো। বুদ্ধির বিকাশ হয়নি বটে আর তাই হয়তো হৃদয় টা ভীষণ নরম।
একদিন বকুল কুসুম রে বলে- “শোন ডিমের কুসুম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তোকে দেখলে তোর রূপের ঠিক এমন করে বর্ণনা দিতো-‘রূপরাশিতরঙ্গে কুসুমের যৌবনশোভা শ্রাবণের নদীর ন্যায় উছলিয়া পড়ে রোজ। আর তাহার উপর দৃষ্টি পড়িলে চক্ষু সুকোমল স্নেহময় রসে গলিয়া যায়’।হাহা!”
তেমন কিছু না বুঝেই কুসুম বলে-“ এমা! ছিঃ! আপনি এইসব কি বলেন? ধ্যাত!” এমনটা বলেই সে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আর কুসুমের উপর দৃষ্টি পড়ে সত্যিই বকুলের চক্ষু সুকোমল স্নেহময় রসে গলে যায়।
ভালো মনের অধিকারী বাপমরা ঝিয়ারী কুসুমের দিনখানা ‘বকুল’ ‘বকুল’ করে কাটলেও সায়াহ্ন হতে অরুণোদয় কাটে মা-এর সাথে কথায়-কাজে-খুনসুঁটিতে। মা-এর তো কেবল কুসুম আর কুসুম। ছোট্ট শরীর খানা জুড়ে মরণব্যাধি। তবুও কুসুমের জন্য মায়ের দুশ্চিন্তা সীমাহীন। কাউরে কুসুমের দায়িত্ব দিয়ে দু’চোখ বুজবে: দীর্ঘ মুনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে এই ফরিয়াদ জানান বারংবার।
আর কুসুম তো বড় উমেদ নিয়ে ছোটবেলার ভালোবাসারে বানাতে চায় তার –শয্যাসহচর! বকুল কে সেই কবে মন দিয়েছে সে। এখন তো তাই ওর ডর লাগে বড়- বকুল কে না হারিয়ে ফেলে সে! বেচারীর কতো অপেক্ষা রে মাবূদ!
অবশেষে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে একটা সরকারী চাকরী জুটলো বকুলের কপালে আর কুসুমের মায়ের কাছে খুব করে কুসুম রে চাইলো বোকা ছেলেটা। কুসুমের মায়ের ঠাহর হয়- এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! এই ছেলে তো সকলের কাছে সুপরিচিত নাম বকুল; বড্ড কর্মঠ আর পরোপকারী বকুল। কুসুম তো ওর বকুল ভাইরে অনেক সমীহ করে। কতো মানাবে দুজন রে।কি ভালো হবে! কি ভালো হবে! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে কুসুমের মা।
কুসুম তো একবাক্যে রাজি হয়ে যায় এই বিয়েতে আর মাকে জানিয়ে দেয় পূর্বতন ছয় খানা মাস সে বকুল কে আর ভাই ডাকে না তো। বকুল যেমন ওরে ভালোবাসে ঠিক তেমনি হয়তো তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে সে বকুলকে। সে-ই বলেছে চাকরী একটা পেলেই যেনো বকুল তার মায়ের কাছে এসে তাকে খুব করে চায়, মা যেনো ‘না’ বলতে না পারে! সবটা শুনে কেবল হাসতেই থাকে কুসুমের মা। বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয় আদরের মেয়ে কে। জীবন যেনো তার কাছে ভীষণ সুন্দর মনে হতে থাকে।আর মরণও যেনো লাগে মধুর।
এরপর গ্রামের কিছু মুরুব্বি আর বকুলের একমাত্র অভিভাবক ফুফুর সাথে বসে কুসুম আর বকুলের বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলে কুসুমের মা।
তিন পক্ষ দিবস অপেক্ষা শেষে চলে আসে আকাঙ্ক্ষিত পরিণয় দিন। বধূবেশে কুসুম যেনো লাল টুকটুকে একখান পরী। গোটা গাঁও যেনো সেজেছে পাণিগ্রহণ আহ্লাদে। এ তল্লাট এমন জমজমাট সাজেনি কো এর আগে।
বিয়েখানা হলো বৈ কি! এক্কেবারে রাজযোটক উদ্বাহে এলাহি কাণ্ড!
কুসুম যে সকলের বড্ড আদুরে তাই বকুল কোনো কমতি রাখেনি বিয়ের কোলাহলে, আদর-আপ্যায়নে। কুসুমের মায়ের কেবল আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সারা বেলা। আল্লাহ যে দুআ কবুল করেছেন। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। এজন্য তার আজ আরও বাঁচতে মন চাচ্ছে অনেক দিন; অনেক গুলো বছর!
গ্রামের এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও সবাই এলো কুসুম আর বকুলের বিয়েতে। ফুফুর বড়ই খটকা লাগে। সক্কলে কি কেবল দুআ দিচ্ছে নাকি নজর? ছেলে হারা মায়ের সব হারানোর ভয় হয়। বকুলের ফুফু দুশ্চিন্তার তাগিদে তাই কাছ ছাড়া করেনা কুসুমকে।
জলদি জলদি বিয়ের বিদায় পর্ব শেষে তিনি কুসুমকে নিয়ে আসে বকুলের দুই কামড়ার বাটিতে যেথায় আজ ফুলসজ্জা বকুল আর কুসুমের। ফুফু স্বহস্তে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য বাসর ঘর।
আল্লাহর অশেষ রহমতে বিয়েত্তা কুসুমের সুখের আয়োজনে কোনো কার্পণ্য নেই বকুলের। কতো প্রতীক্ষার পরে পেয়েছে নিজের ভালোবাসাকে। আর তাই বকুল কুসুমের কাছে লুকিয়ে গেলো সারটাদিন পোস্ট অফিসে কাজ করলেও প্রদোষে সে দেশের জন্য, দশের জন্য কি কি করতো! সে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কতটা বীরের ভূমিকা রাখতো- তা সে পুরোই আড়াল করেছিল কুসুমের কাছে! ফুফুও জানেনা দেশপ্রেমিক বকুলের কাজের ব্যাপারে তাই কুসুমও অজ্ঞাত থাকলো এ নিয়ে যা নিয়ে বকুল ওকে জ্ঞাত করতে চায়নি।
কুসুমের সবে বিয়ের তৃতীয় দিন, এই তিনটে দিনের বৈবাহিক জীবনে সে সবচেয়ে কাছ থেকে পেয়েছে পাশের গেরস্তবাড়ির একলা দুঃখী বকুলের ফুফু যারে গ্রামের সকলে ডাকে “মতির মা” আর পেয়েছে নয়া দুইখানা গরু। বাড়ি জুড়ে কেবল এই দুটো অবলা প্রাণীই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বর্তমান । তাই তো ঐ গরু দুটোরে নিয়ে এখন সকাল-সন্ধ্যে বেশ ভালোই কাটছে পাগলিটার। পাশের বাড়ির বকুলের ফুফু মানে মতির মা এই হেতুতে কুসুমের নতুন নাম দিয়েছেন- ‘গোয়ালিনী’।
আজ গোয়ালিনী সংসারের চৌঠা দিবস। আজ দিনটা অন্য দিনের মতো না। গোয়ালিনীর নাকি আজ মন খানা কেমন কেমন করছে; বালা কেচাচ্ছে! বকুল ওরে বলেছে- দুপুর বেলা খেয়ে দেয়ে সে যাবে খালের পাড়ে মতির কবর জিয়ারত করতে, সাঁঝের বেলায় সংবাদ অফিসে আর রাতে জরুরী কাজে যাবে পাশের গ্রামে। সেখানে এক ছোট ভাই এর আলয়ে রাত্রি যাপন করবে তাই রাতে ফিরবে না সে।
চেহারাটা বেশ মলিন করে রাখলেও বকুলকে মুখ ফুটে কিছুই বলেনি কুসুম। না করেছে শাসন, না করেছে বারণ। খানাপিনা শেষে ভরদুপুরের কাঠ ফাটা রোদেই তাই বেরিয়ে পড়লো কুসুমের পাগলটা। বিদায় বেলায় কেবল কপালে একখানা চুমু এঁকে কুসুমরে বললো- “আমারে একটু কম ভালোবাসিস তো, আমার জন্যে তোর দুশ্চিন্তা আমার সহ্য হয়না; যদি কম ভালোবাসিস তাহলে আমার জন্যে তোর অযথা বাড়তি দুশ্চিন্তাও কমে যাবে দেখিস!” কুসুম শুধু মুচকি একটু হেসেছে আর চোখের নোনা জল আঁচলে মুচেছে।
মতির মা বারবার করে কুসুম কে ওর মায়ের কাছে যেতে বলেছিলো। কিন্তু জিদ্দি কুসুম কেবল অভিমানের সুরে বললো- “তোমার ছেলে তো কাল ই আমার কাছে আসবে, কেবল একখানা রাতের ই তো ব্যাপার। আমি নয় ওনার অপেক্ষায় এক রাত্রি জেগেই কাটিয়ে দেবো। আর তোমারে যে রাতে আমার সাথে থাকতে বললো। তা যদি তুমি না থাকতে চাও তবে থেকো না। আমি একলা একাই ঠিক আছি। লাগবেনা কো আমার কাউকে।“
মতির মা মেয়ের গোসা বুঝতে পেরে হেসে কুটি কুটি হয় আর কুসুম কে ওর মায়ের কাছে যেতে না দিয়ে সন্ধ্যে থেকে কুসুমের সাথেই থাকে। গোটা রাতও থাকবে গোয়ালিনীর সাথে যেনো বকুলের কোনো দুশ্চিন্তা না হয় কুসুমের জন্য। আস্ত একটা সন্ধ্যে মতির মায়ের সাথে গল্পগুজব করে মতির মা-কেই যে কুসুম “মা” বানিয়ে ফেললো। বছর দুয়েক আগে মতি মরেছে এক মারাত্মক দুর্ঘটনায়। তাই নিঃসন্তান মতির মা ও এই সাঁঝের বেলা পেয়ে গেলো একটা মেয়ে -ঠিক তার সন্তান। মা আর মেয়ের কতো সে আহ্লাদ,কতো সে গপ্পো, কতো সে ভালোবাসা !
মা-মেয়ে পরে রাতে খাওয়া করে একসাথে স্নেহপল্লবে ঘুমিয়ে পড়ে।
গভীর রাতে যখন শুধুই ঝিঁ ঝিঁ ডাকছিলো আর কোনো নিনাদই কর্ণগোচর হচ্ছিলো না তখনই কুসুমের বাড়ির দরজায় কড়া... ফিসফিসিয়ে অনেক মানুষের ডাকাডাকি শুনছিলো কুসুম।
ঘুমের ঘোর কাটিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একপাল পাক-বাহিনী কুসুমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘরের আস্ত মস্ত দুয়োর খানা ভেঙ্গে। পাশেই হতবিহ্বল মতির মা ।তার মুখখানা চেপে ধরে তাকে নিয়ে গেলো পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র কক্ষে। বেবাক রাতখানা চলে গেলো-আহারে! সে কি নিপীড়ন!
এক ঘরে মা, অন্য ঘরে মেয়ে। মতির মায়ের কোনো হুঁশ নেই তখন আর বিচ্ছিরি এক কষ্টে কাতরাচ্ছে কুসুম। সে কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে গোটা শরীর জুড়ে। চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মাটি আর পাটি। ঠিক তখন সেবাদাস পাক-সেনা মশকরার সুরে উর্দুতে বলে যাচ্ছে দেশপ্রেমিক তরুণ বকুলের জয়জয়কার সমস্ত কীর্তি। কুসুম সেসব কথার কিছুই বুঝছে না বিধায় মাতবর চাচা সবকথা বাংলায় আবার তর্জমা করে দেয়।
“বকুল তো বড়ই বিয়াদবের বিয়াদব রে। মুক্তিসেনাদের সাহায্য করে। তোর স্বামী সরকারি চাকরি করে নিজেই গ্রামের সরকার হয়ে গেছে নাকি রে হারামজাদি? গ্রামে গ্রামে দল গঠন করিচ্ছে। ছোট ছেলেগুলাকে নিয়ে। নেতা হইছে বড়। পোস্ট অফিসে কাজ করে করুক। সংবাদ অফিসে শালার কাজ কি? মুক্তিবাহিনীর রেডিও না টেলিভিশন? উচ্চশিক্ষিত পোলার কাম একদম মুরুক্ষের মতো। তোর স্বামী দেশরে বাঁচাইতে চায়। বেটা তো ঘর ই বাঁচাইতে পারলো না।“
কুসুমের তখন সব বুঝে আসে তবুও তার মন বড়ো অবুঝ। কোথায় যেনো নিজের প্রতি এক ঘেন্না চলে আসে। বকুলরে আরো আরো ভালোবাসে সে, আরো সম্মান বেড়ে যায় তার প্রতি। নিজের স্বামীরে নিয়ে কতো যে গর্বের স্বাদ আস্বাদন করে বোকা মেয়েটা। কিন্তু বকুলের মতো আদর্শবান পুরুষের অযোগ্য মনে হয় নিজেরে। অসহায় কুসুম ঐ ঘরে তো আর উঁকিও দেয়না মা-এর খোঁজ নেয়ার তাগিদে। মন থেকে অফুরন্ত দুআ করে সে ওর ভালোবাসার মানুষটির জন্য আর চোখ দুখানা বন্ধ করে রাখে দীর্ঘসময়। এরপর...
হায়রে জীবন! কোনো অভিযোগ, অনুযোগ না করে কুসুম সেই ভোরেই সকল মানুষ রূপী শয়তানরা ওর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গরু বাঁধা দড়িখানা শক্ত করে গলায় পেঁচিয়ে অনেক কষ্টে ঝুলো পড়লো । না; সে আর বকুলরে কম ভালোবাসতে পারলো না। কেবল বকুলের দুশ্চিন্তার সমাপ্তি ঘটিয়ে গেলো সারা জীবনের জন্যে।
নিজে স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেলো - লজ্জা! লজ্জা আর লজ্জা!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
“যে দড়িতে বেঁধে রাখতো গোয়ালিনী তার গরু, আহারে সেই দড়িই তাকে দিলো স্বাধীনতা !!!”
২৫ ফেব্রুয়ারী - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।