শহরের বাইরে, পাহাড়ের গা ঘেঁষে একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল। গ্রামের নাম ছিল ভাষা—একটি শান্ত, নির্জন গ্রাম যেখানে আকাশে মেঘেরা মিষ্টি কথা বলত, আর নদী তার সঙ্গীত বাজাতো। কিন্তু এই শান্তির মাঝেও এক গভীর অস্থিরতা ছিল। গ্রামবাসীরা জানত, কোনো একদিন এই শান্তি চুরমার হবে। কারণ, তাদের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল।
গ্রামের কিশোর, সজল, সবসময় ভাবত—স্বাধীনতা কেবল একটি শব্দ না, এটি একটি অনুভূতি, একটি অধিকার যা কখনো খোয়া গেলে, তা কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না। সজল ছিল এক পিতৃহীন ছেলে, যার বাবা ছিল গ্রামের প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মায়ানমারের সেনাদের হাতে মারা গিয়েছিলেন।
একদিন, সজল যখন পাহাড়ের পাদদেশে হাঁটছিল, সে এক অচেনা পাথর দেখতে পেল। পাথরটির আকার অস্বাভাবিক ছিল, এবং এর মধ্যে কিছু লেখা ছিল—তবে তা ছিল পুরোনো ভাষায়। সজল পাথরটি তুলে আনে, আর ঘরে ফিরে বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় যে এটি একটি প্রাচীন ম্যাপ—ম্যাপটি কোনো এক গোপন স্থানের দিক নির্দেশ করছিল।
সজল চুপচাপ সিদ্ধান্ত নেয়, সে এই ম্যাপ অনুসরণ করবে। গ্রামের পুরোনো লোকেরা বলতো, “এ দেশে যদি স্বাধীনতা চাও, তো সেই স্বাধীনতা তুমি নিজেই খুঁজে নিতে পারো।” আর সজল জানত, তার বাবার মত তারও কোনো বড় লড়াই করতে হবে, কিন্তু একা নয়। এই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু তার নয়, তা পুরো গ্রামবাসীর।
সজল এবং তার বন্ধুরা, গোপনে গোপনে ওই স্থানের দিকে যাত্রা শুরু করে। পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্ণা—সব কিছু অতিক্রম করে তারা এক পুরোনো মন্দিরের কাছে পৌঁছায়। সেখানে তারা আবিষ্কার করে একটি অদ্ভুত বস্তু—একটি প্রাচীন তলোয়ার, যা তাদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে ব্যবহার করেছিল।
সে রাতেই সজল বুঝতে পারে, স্বাধীনতা শুধু অস্ত্র নয়, এটি একটি মনের শক্তি, একটি একত্রিত লড়াই। তাদের আত্মবিশ্বাস, তাদের মুল্যবোধ এবং একত্রিত উদ্দীপনা ছিল যে শক্তি, যা তাকে তার বাবার মতোই পুরো গ্রামকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
তারপর সজল ফিরে আসে গ্রামে, তার সঙ্গীদের সঙ্গে। সে জানত, এর পরের পদক্ষেপ, একটি বড় সংগ্রাম—স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু সে সঠিক ছিল, তাদের ঐক্য ছিল অপ্রতিরোধ্য।
এভাবেই, স্বাধীনতা কেবল একটি যুদ্ধের ফল নয়, এটি এক সংগ্রাম যা সময় ও স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন হয়। সজল জানত, মুক্তি আসবে, কিন্তু তা ধৈর্য, বিশ্বাস, এবং একত্রিত হৃদয়ের শক্তিতে আসবে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মূলভাব:
গল্পটির মূলভাব হল, স্বাধীনতা কেবল একটি বাহ্যিক অর্জন নয়, বরং এটি একটি অন্তর্নিহিত শক্তি যা মানুষের মনের মধ্যে জন্ম নেয়। সজল, একটি পিতৃহীন কিশোর, যিনি তার বাবার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতেন, খুঁজে বের করে যে স্বাধীনতা শুধুমাত্র অস্ত্র বা বাহিনীর সাহায্যে অর্জিত হয় না; এটি একযোগিতার মাধ্যমে, বিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে আসে।
গল্পে সজল তার গ্রামের স্বাধীনতা ফিরে পেতে একটি প্রাচীন ম্যাপের সাহায্যে একটি গোপন স্থানে যায়, যেখানে সে আবিষ্কার করে এক পুরোনো তলোয়ার। তবে এটি কেবল একটি অস্ত্র নয়; এটি তার পূর্বপুরুষদের সংগ্রামের চিহ্ন, যা তাকে তার উদ্দেশ্যে আরও দৃঢ় করে তোলে।
গল্পটি বোঝায় যে, স্বাধীনতার জন্য শুধু বাহ্যিক সংগ্রাম প্রয়োজন নয়, মানুষের অন্তরেও সেই সংগ্রাম জাগ্রত থাকতে হয়, এবং একত্রিত হয়ে লড়াই করা ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়। সজল ও তার বন্ধুরা এটি উপলব্ধি করে, আর তারা গ্রামবাসীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে, যা তাদের স্বাধীনতার পথ প্রদর্শন করে।
অতএব, গল্পটির মূলভাব হল যে, স্বাধীনতা শুধু বাহ্যিক প্রতিরোধ নয়, বরং এটি মানুষের মনে ও হৃদয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হয়, যাতে তারা একত্রে সংগ্রাম করতে পারে।
০৯ ফেব্রুয়ারী - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী