সেই ভোর এই ভোর

ভোর (মে ২০১৩)

আনিসুর রহমান মানিক
  • 0
  • ৩৩
ভোর হতে আর বেশী দেরী নেই। কিছুক্ষণ আগে ফজরের আযান পড়েছে। চোখ দুটো ভারী হয়ে আসে সুমনার। অনবরত কাঁদার ফলে তার এ অবস্থা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বেরিয়ে পড়বে। এখন জেলগেটে অপেক্ষা করছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে মামুনের লাশ।
কিছুক্ষণ পর পরই ডুকরে কেঁদে উঠছে সুমনা। আজও ভোর হবে। সূর্য উঠবে। অন্যান্য দিনের মত পাখিরা ডাকবে। ফুল ফুটবে। কিন্তু সুমনার কাছে আজকের ভোরটা বড়ই কষ্টের। কি করে এই ভোরটাকে সে পার করবে?
অথচ প্রতিরাতে ভোরের জন্য কতই না অপেক্ষা করতো সে। কখন ভোর হবে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে জেগে থাকত। শুধু এই ভোরটির জন্য।
তার স্বামী মামুন রাতে ডিউটি শেষ করে ভোরবেলা বাড়ি ফিরত। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটা এসেই এলিয়ে দিত বিছানায়। স্বামীকে কাছে পেয়ে নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি দূর হয়ে যেত নিমিষেই সুমনার।
ট্রাকে কফিনটা রাখা আছে। ট্রাকের উপরে কফিনের পাশে বসে কেঁদে চলেছে সুমনা।ভোরের আলো ফুটছে।শহরের ব্য¯—তা, কোলাহল বাড়ছে।
এত ব্য¯— শহর ভালো লাগত না মামুনের। প্রায়ই বলত এই শহরে দম বন্ধ হয়ে আসে তার।গ্রামে ফিরে যাবে সে।
সেখানে গিয়েই বা কি করবে! একদিন জীবিকার সন্ধানে তারা ছুটে এসেছিল শহরে। স্বল্প শিক্ষিত মামুনের চাকরী জুটেছিল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরী পদে।
সুমনা কাজ করতে চেয়েছিল।গার্মেন্টেসএ কিংবা যে কোন ধরনের কাজ। কিন্তু মামুন রাজী হয়নি। বলেছে, আমি সারারাত ডিউটি কইরা আসবো আর তুমি তখন কাজে যাবা। তাইলে আর সংসার করনের কি দরকার! যা কামাই করি এইটুকু দিয়াই দুইজনের সংসার পার হয়া যাইবো।
মামুন খুব ভালোবাসত সুমনাকে। সুমনাও কম ভালোবাসত তা নয়। দু’জনের ভালবাসার সংসার ভালোই চলছিল।আট মাস হলো তাদের বিয়ে হবার।
আজ মামুনকে নিয়ে কত কথাই না মনে পড়ে সুমনার। মনে পড়ে এমনি এক ভোরে ট্রেন থেকে নেমেছিল দু’জনে। এসেছিল প্রথম ঢাকা শহবে। অপরিচিত এই শহরটাতে কতই না ভয় পেয়েছিল। তারপর খুব দ্র“তই শহরটা পরিচিত হয়ে উঠলো তাদের কাছে।
এখানকার দু’একজনের সাথে পরিচয়ও হল।কেউ কেউ অতি আপনজন হয়ে উঠলো।

অন্যান্য দিনের মত সেদিনও ভোর হয়েছিল। কেন জানি সেদিন সুমনার সাজার খুব শখ হল। নিজেকে সাজিয়ে নিল।এক্ষুনি মামুন চলে আসবে।
হঠাৎই মামুন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে,বউ,ও বউ,আমার বড় বিপদ। এক্ষুনি আমাকে পালাতে হবে।
কেন? কি হইছে তোমার ?তুমি এমন করতাছো কেন?উদ্বিগ্নকন্ঠে জানতে চায় সুমনা।
তুমি গ্রামে চইলা যাইও। আমি অহন পালাই, গেলাম।
দ্র“ত ঘর হতে দু’চারটা কাপড় নিয়ে মামুন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। শুধু যাবার সময় বলে, তোমায় পড়ে সব জানাবো।
সুমনাকে আর বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হয়না। ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় পুলিশ। মামুনের খোঁজ করে।
সুমনার মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ে।এ যে অবিশ্বাস্য। তার স্বামী এমন কাজ কেমনে করতে পারে?
মানুষ খুন?
পুরো ঘটনা শুনে সে হতভম্ব হয়ে যায়। তার ভালোবাসার মানুষটা এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারে? কি করে সে এটা বিশ্বাস করবে।


টিভি চ্যানেলগুলো ব্রেকিং নিউজ দেয়।রাজধানীতে রাত্রিবেলা অফিসে নাইটগার্ড ও সহযোগীদের দ্বারা কিশোরীকে ধর্ষনের পর হত্যা । নাই্ট গার্ড পলাতক।

ঘটনাটা ঘটার বেশ কদিন পার হয়ে যায়।গ্রামে ফিরে আসে সুমনা।কিন্তু লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারেনা। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এরকম একটা জঘন্য কাজের সাথে তার স্বামী জড়িয়ে আছে।
অবশেষে ধরা পড়ে মামুন।জেলখানায় দেখা করতে যায় সুমনা।
সুমনাকে ঘটনাটা খুলে বলে। সে হাতজোর করে ক্ষমা চায়।
হ্যা ঘটনাটার সাথে মামুনও জড়িত।
ডিউটিরত অবস্থায়ই তার সাথে ঘটনা ঘটার বেশ কদিন আগে পরিচয় হয় সাগর ,মুন্নার। তারা ছোটখাট ব্যাবসা করে। মামুনের সাথে তারা সখ্যতা গড়ে তোলে।প্রায়ই রাতে এসে একসাথে আড্ডা দেয়। মাঝেমধ্যে একসাথে খায়।
ঘটনার রাতে সাগর,মুন্না আর একজন ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে ধরে নিয়ে আসে।তাকে ভিতরে র“ম খুলে দিতে বলে। তখন রাত দু’টার মত বাজে। ওরা তিনজন মিলে মেয়েটকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। মেয়েটি তাদের কাছ হতে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা মেয়েটাকে এমনভাবে ধরে রেখেছিল যে তার মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
তারা তাড়াতাড়ি মামুনকে গেট খুলে দিতে বলে।প্রথমে ইত¯—তঃ করতে থাকে মামুন।ওরা বলে পিছনে পুলিশ তাড়া করেছে।শীগগীর দরজা খুলে দে। ওকে নিয়ে লুকাই না হলে সবাই ধরা পড়বো।
বন্ধুদের বাঁচাতে কিংবা ভয়ে মামুন দরজা খুলে দেয়। মেয়েটিকে জোর করে নিয়ে তারা ভিতরের র“মে ঢোকে।ভিতর হতে কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেয় মামুন।
সঙ্গীদের সাথে মামুনও যোগ দেয়। পালাক্রমে ধর্ষিত হতে থাকে নাম না জানা কিশোরী মেয়েটি।
কর্মযজ্ঞ শেষ করার পর হিতাহিত জ্ঞান ভুলে মেয়েটিকে তারা শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।
হাউ মাউ করে ডুকরে কেঁদে ওঠে মামুন।আমি কেন এমন করলাম?
ঘৃণায় ক্ষোভে মামুনের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছেনা সুমনার।
সে চলে আসতে নেয়।পিছন থেকে ডাকে মামুন।
কিছু বলে গেলে না। আমি এখন কি করবো?
থেমে পিছন না ঘুরে দাঁড়িয়েই বলে সুমনা, তুমি আদালতে দোষ স্বীকার করবে।
মামুনসহ চারজনের মৃত্যুদন্ডের রায় হয়। বাকি তিনজন পলাতক থাকে। মামুনের ফাঁসি কার্যকর হয়।
ব্যস্ত কোলাহল শহর ছেড়ে কখন যে গ্রামে চলে এসেছে টেরই পায়নি সুমনা। হাল্কা বাতাস বইছে। দু’একটা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। সূর্য এখন মাথার উপরে। গরমে পুরো শরীর ভিজে গেছে।
এই ছাড়ো আমার লজ্জা লাগছে।
আমিতো লজ্জা ঢেকে দিচ্ছি। আমার বউকে জড়িয়ে ধরে আজ সারাদিন শুয়ে থাকবো।
পরনের শাড়িটা পেঁচিয়ে জড়সড় হয়ে কফিনের পাশে শুয়ে পড়ে সুমনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক জাদুকরী হতে লেখা সুন্দর গল্প....খুব ভালো লাগলো.....
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বেশ ভাল কাহিনী সুন্দর করে লিখা গল্পের সমাপ্তটা অনেক ভাল...................
এশরার লতিফ কাহিনীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার কাজটি দারুন দক্ষতার সাথেই সম্পন্ন করেছেন। মানুষের এমন পতন তো বিরল নয়।
সূর্য ক্ষনিকের কাম বাসনা যে জীবন ওলট পালট করে দিতে পারে তাই সুন্দর দৃষ্টান্ত এ গল্প। মামুন সুমনার সুন্দর সাজানো সংসার ছোট্ট একটা ভুলে তছনছ হয়ে গেল। ভালো লিখেছেন মানিক ভাই।
সুমন শেষ লাইনের আগের দুটো লাইনতো কল্পনায়! সুন্দর গোছানো গল্প।
স্বাধীন মামুনকে দিয়ে সত্য স্বীকারের ভাল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে সুমনা। সে হয়ত অনেক কিছুই হারালো কিন্তু সত্যের জয় হলো। সুন্দর গল্প
তাপসকিরণ রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পটি ভালো লেগেছে।সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা--ভাব ভাষার ধারাবাহিকতাও সুন্দর।
বশির আহমেদ এক নিশ্বাসে পড়ার মত গল্প । গল্প বলার ধরনটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে ।

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪