সেইতো এলে

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

আনিসুর রহমান মানিক
  • ১৭
-মা মা
-কে, খোকা এসেছিস ? বাবা সজল এসেছিস?
-হ্যা মা। উঠোনে এসে ঢোকে সজল,সাথে রকিব।
সজলকে জড়িয়ে ধরে মা বলে উঠে বাবা ভালো আছিস?
-হ্যা মা।তুমি ভালো আছোতো?
-হ্যা বাবা।এই রিমু দেখ তোর ভাইয়া এসেছে।
-মা এ আমার বন্ধু রকিব।সাথের ছেলেটিকে দেখিয়ে বলে সজল।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। এসো বাবা ঘরে এসো।
-কই রিমু কই।একটু থেমে আবার ডাক দিয়ে ওঠে সজল, কই আমার আপুমনি কই ?
ঘর হতে বেরোয় রিমু।
-ভাইয়া কেমন আছ?
-ভাল,কিরে তুই এতক্ষন পর বেরুলি ? কেমন আছিস? রিমুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সজল।
রকিবের দিকে তাকিয়ে সজল বলে এ আমার একমাত্র লক্ষী ছোট বোন। আর ও আমার বন্ধু রকিব।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। রকিব অবাক হয়ে যায় রিমুকে দেখে। মনে মনে বলে ওঠে এত সুন্দর তুমি!
-আয় ঘরে আয়।
দুু"দিনেই বাসার সবার সাথে ভাব জমে যায় রকিবের। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। তাই বন্ধুর সাথে গ্রামে বেড়াতে আসা। শহরেই জন্ম,শহরেই বড় হওয়া। গ্রাম সম্পর্কে খুব একটা ধারনা নেই তার। অপরদিকে সজলের বাবা হাইস্কুলের শিক্ষকতা করেন। সজল বড় ছেলে। এরপর রিমু।গ্রামের কলেজে ডিগ্রী পড়ছে। আর সজলের ছোট ভাই মামুন ইন্টারমিডিয়েট পড়ছে।
রকিবকে পেয়ে বাসার সবাই খুশী হয়। খুশী হওয়ার কারনও আছে। রকিবের সাথে বেশ ভাব জমেছে রিমুর। রিমু প্রায় সময়ই মন খারাপ করে থাকত।এখন সে প্রতিদিনই রকিবকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে দেখাচ্ছে।বেশ হাসিখুশি হয়ে উঠেছে মেয়েটি। ঠিক আগের মতই, পুরো বাড়িটাই যেন আনন্দে ভরে উঠেছে।
সজল ভয় পায়।আতঙ্কিত হয়। কোন ভুল হচ্ছে নাতো! নিজেকেই প্রশ্ন করে সে।
মার কাছে গিয়ে প্রসঙ্গটা তোলে।
মা বলে,ওরা দুজনে দুজনকে পছন্দ করলে দোষতো কিছু দেখছিনা।
কিন্তু রকিব যখন জানবে----
সজলকে থামিয়ে দিয়ে মা বলে, না বললেই হলো।রকিব যদি রিমুকে ভালোবেসে ফেলে তাহলে নিশ্চয়ই পরে আর আপত্তি করবে না।
-কিন্তু মা এটাতো ওকে জানানো দরকার।
-না বাবা জানাসনে। একটু থেমে তারপর তার মা বলে, হ্যা বলতে পারিস আমি স্বার্থপরের মত কথা বলছি। আমিতো মা। মেয়ের হাসিমাখা মুখ কোন মা না দেখতে চায়। একের পর এক বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গে যেতে লাগলো। মেয়েটি কেমন হয়ে গেল। ঠিকমতো খায় না। পড়েনা। ঘুমায় না। তুইওতো দেখলি তোর আসাতে আগের মত সেই প্রাণচাঞ্চল্য নেই। ওর এই অবস্থার জন্যতো ও দায়ী নয়। তবে কেন ও শাস্তি পাবে? আমরা সবাই শাস্তি পাব ?
কাঁদতে থাকে সজলের মা।
মাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয় সজল।তুমি কেঁদোনা মা সব ঠিক হয়ে যাবে।

রিমু আজ শাড়ী পড়েছে। নীল রঙের শাড়ী।কপালে নীল রঙের টিপ।
রকিব বলে তোমাকে শাড়ি পড়লেতো অনেক সুন্দর লাগে।শাড়ি পড়ো না কেন?
সাধারনতঃ উপলক্ষ ছাড়া শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না। আর মা বলেছে শাড়ী পড়লে বয়স বেশী লাগে।
-ও তাই বুষি? এখনও খুকি রয়েছো ? আজ বিয়ে দিলে বছর না ঘুরতেই মা হয়ে যাবে।
হঠাৎ মুখটা কালো করে ফেলে রিমু। হাঁটা থামিয়ে দেয়।
-কি হলো থামলে যে ? গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে ভাল লাগছেনা।
-না ।
-কেন কি হলো ? রিমুুর মুখের দিকে তাকিয়ে রকিব বলে, আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?
-না তা নয়। আস্তে করে বলে রিমু আমাকে কে বিয়ে করবে?
-মানে? অবাক হয়ে রকিব বলে তোমাকে শাড়ীতে যে সুন্দর লাগছে,দেখলেনা রাস্তার ছেলেরা সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছিল।
-থাক এসব নিয়ে আর দুষ্টুমি করবেন না।চলুন বাসায় ফিরে যাই।
রাতে শুয়ে শুয়ে রকিব ভাবে, রিমু হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেন? সেকি তাহলে রকিবকে ভালোবাসেনি ?আজ তের দিন হয়ে এলো, রিমু রকিবের সাথে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছে,হাসিখুশি থেকেছে।তবে কি রকিবের ধারনা ভুল। সে যেমন রিমুকে ভালবেসে ফেলেছে সে ভেবেছিল রিমুও নিশ্চয়ই তাকে ভালবেসেছে।তবে কি রিমুর কোন অতীত আছে। সেকি কাউকে ভালবাসে কিংবা ভালবেসেছিল। সেকি বন্ধু সজলের কাছে কিছু জানতে চাইবে?
পরদিন রিমুর মন খারাপ দেখে রকিব সজলকে বলে রিমু হঠাৎ কেন যেন মন খারাপ করে আছে।
-তুই চলে যা।
-মানে?
-তুই বাসা ফিরে যা। অনেকদিন হলো এবার তোর বাসায় ফেরা দরকার।
-আমি কি কোন দোষ করেছি?
-না।
পরদিন সকালে মার্কেট থেকে একটা হাল্কা গোলাপী বঙের শাড়ি নিয়ে এসে রিমুকে দিয়ে বলে, এটা তোমার জন্য। তুমি শাড়ি পড়বে। শাড়িতে তোমায় বেশ মানায়।
-আপনি এটা আনতে গিয়েছেন কেন?
-তোমাকে আজ একটা কথা বলি, আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। তুমি ভালবেসেছো কিনা জানিনা। তবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবেসেছি। আমি তোমাকে আমার বউ করে ঘরে নিয়ে যাব।
অবাক হয়ে রকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে রিমু।
-কি ব্যপার তুমি অমন করে কি দেখছো।
সে কথার জবাব না দিয়ে রিমু বলে আমি বউ হবো ? আপনি সত্যি বলছেন, আমি বউ হবো ? আমার বিয়ে হবে ?
-কি এসব বলছো রিমু ?কেন বিয়ে হবে না ? আমি এবার ঢাকা ফিরে বাবা মার সাথে কথা বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে বউ করে লাল টুকটুক শাড়ি পড়িয়ে---
-থামুন আপনি আমার সম্পর্কে না জেনে---
-আমার আর কিছু জানার দরকার নেই। তোমাকে চিনেছি,এ"কদিন তোমার সাথে মিশে যতটুকু জেনেছি তাতেই---
ঢাকা ফিরে যায় রকিব। প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে কথা হয় রিমুর সাথে।
বিষয়টা সজলের দৃষ্টিতে পড়ে।সেও ঢাকায় আসে।চাকরীর চেষ্টা করে।
রকিব বলে,আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়।দু"জনে মিলে একসাথে কাজ করব।
-একটু ভেবে দেখি।তারপর সজল বলে,রকিব তোর সাথে আমার একটা কথা ছিল।
-আমারও তোর সাথে একটা কথা ছিল। ঠিক আছে তোরটা আগে বল।রকিব বলে।
-না তোরটা আগে শুনি।

-আমি আর রিমু আমরা দুজনে দুজনকে ভালবাসি।হয়তো বন্ধু হিসেবে এটা বুঝেছিস।
-আমি এ বিষয়েই তোকে বলতে চাইছিলাম---
সজলকে থামিয়ে দিয়ে রকিব বলে,কি বলতে চাচ্ছিস ? আমি ওকে কথা দিয়েছি, ওকে আমি বিয়ে করবো। তোর আপত্তি আছে ? তুই কি মনে করিস আমি তোর বোনের যোগ্য নই। বাবা বড় ব্যবসায়ী,ঢাকায় বাড়ি----
-সেসব নয়।আমার তোকে আগেই বলা উচিত ছিল। আমারই ভুল হয়েছে।
-কি বলা উচিত ছিল।
সজল বলতে থাকে,বছর দু"য়েক আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় ওর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সেজন্যই ওর বিয়ের প্রস্তাবগুলো একে একে ভেঙ্গে যেতে থাকে।যখনই ওরা বিষয়টা জানতে পারে সবাই পিছিয়ে যায়।
-কি ক্ষতি হয় ?
-তুইও নিশ্চয়ই পিছিয়ে যাবি? ঐ দূর্ঘটনায় ওর জরায়ু কেটে ফেলতে হয়।ও জীবনে কখনও মা হতে পারবে না।
-কি বলছিস এসব?
-হ্যা হ্যা ,যা সত্যি তাই বলছি।
রকিবের হাতদুটো নিজের মুঠোতে ধরে সজল বলে,তুইও কি পিছিয়ে যাবি ? তুই না ওকে কথা দিয়েছিস ?
-তুই আগে বলিসনি কেন?

প্রতিনিয়ত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে রকিব। কি করবে সে? তার বাবা মাই বা বিষয়টা মেনে নেবে কিভাবে?
আস্তে আস্তে মোবাইলে রিমুর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলে রকিব।
ওদিকে রিমুও আবার আগের মতো মন খারাপ করে থাকে দিনের বেশীর ভাগ সময়।
এভাবে দিন যেতে থাকে।
অবশেষে ভালবাসারই জয় হয়। রকিব লাল রঙের শাড়ী সহ বিয়ের প্রস্তার নিয়ে আসতে থাকে রিমুদের বাসায়।রিমু কিংবা সজল কাউকেই জানায়নি যে সে আসছে। সে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
বাসার কাছে এসে চমকে যায় রকিব।থমকে দাঁড়ায় সে।বাসায় অনেক ভীড়।কি হয়েছে রিমুদের বাসায়। বাসার ভিতরে ঢোকে রকিব।
পা আটকে আসে তার।
ব্যাগ হতে শাড়িটা বের করে মেঝেতে শোয়ায় রাখা হালকা গোলাপী রঙের শাড়ী পড়া নিথর দেহটার উপর ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে রকিব বলে ওঠে রিমু তুমি এমন কেন করলে ?দেখো তোমার জন্য আমি লাল শাড়ি নিয়ে এসেছি। তোমাকে বউ করে নিয়ে যাবো বলে লাল শাড়ি নিয়ে এসেছি। তুমি জেগে ওঠো তুমি লাল শাড়ি পড়ো।

সজলকে জড়িয়ে ধরে রকিব বলে,দেখ আমি ওকে বউ করে নিয়ে যাবো বলে ওর জন্য লাল শাড়ী নিয়ে এসেছিলাম। ও কেন আর অপেক্ষা করতে পারলো না। তোরা কেন ওকে আটকাতে পারিসনি।
সজল কাঁদতে কাঁদতে বলে ,সেইতো আসলি, তবে অনেক দেরী করে ফেলেছিসরে।
রিমুর আত্মাও নিশ্চয়ই একই প্রশ্ন করছে ,সেই তো এলে । তবে আগে কেন এলে না।
কি জবাব দেবে রকিব ? পুরো বাড়িটায় শোকের মাতম চলছে।
পুলিশ ভ্যান এসেছে। কিছুক্ষন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা রিমুর লাশটা ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যেতে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম বেশ সুন্দর থিম -ভাল লাগল শুভকামনা
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
প্রিয়ম ভাই দারুন একটা আমেজ লাগলো |
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ওবাইদুল হক আমি মা নিয়ে সব কিছু লিখতে চাই । অসাধারন আপনার লেখা তবে এই (? )প্রশ্ন বোধক চিহ্নটা এত বেশি হবার মান আমি থোঁজে পাচ্ছিনা । আরেকটু যত্ন নিয়ে লিখবে আশা করছি । ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ইমরান আলম রোমান্টিক গল্প ,ভালই লাগলো
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জগজিৎ গল্পটা অনেক ঘটনাবহুল
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
বিষণ্ন সুমন গল্পে গতি ছিল, কাহিনীতে নাটকীয়তা ছিল, শুধু যদি বর্ণনা শৈলীতে একটু যত্নবান হওয়া যেত, তবে এটি নিঃসন্দেহে এই সংখায় সেরা গল্পের কাতারে চলে আসার পথ পেত । রকিবের সেক্রিফাইস এর পাশাপাশি রিমুর আত্নহত্যা আসলে একটা নিটোল প্রেমের করুন পরিনতি, যা মন ভিজিয়ে দিল । দুর্দান্ত লিখেছেন । অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
বশির আহমেদ রোমান্টিকতায় ভরা এক ইউনিক গল্প ।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মোঃ সাইফুল্লাহ অনেক ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জাকিয়া জেসমিন যূথী আমরা মানুষরা কত অদ্ভূত তাইনা? জড়ায়ূ নাই, এটা শশুড় শাশুড়ি জানতে পারবে কি করে? অযথা চিন্তা! নারী ও পুরুষের ভালোবাসার সাথে 'শরীর' একটা বড় বিষয়?! তা হোক, কিন্তু- অনেক সন্তান জন্মদানে অক্ষম পুরুষও তো থাকে। তাহলে এটা কেন বাঁধা হবে! ... পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দিলেন ভাই গল্পটা দিয়ে। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
তানি হক কি বলব কিছু বুঝতে পারছিনা ...আবেগে আমি স্থব্দ ...ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী