আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে জোনাকী। কপালে টিপ গেঁথে দিয়ে বলে ওঠে- কি গো সুন্দরী?তুমি কি ডায়ানা না কি বৃটেনের রানী।পাশে রাখা কুপিটা এগিয়ে নেয়।ভাল করে মুখের সাজ দেখে নেয়।ঠোঁটের রগরগে লিপষ্টিক ঠোঁট ছেড়ে গালে গিয়ে লেগেছে।হাত দিয়ে সেগুলো মুছে নিয়ে বলে-কি গো নাইট কুইন,রাইতের রানী।তোমার রাজা কোথায়? নিজেই আবার বলে ওঠে-আসবে রাজা আসবে।রাজা আসবে,মহারাজা আসবে,আসবে রাজপুত্র।ওদেরকে যে রাইতের রানীর কাছে আসতেই হয়।আয়নায় নিজের চেহারা দেখে কান্না চলে আসে তার।কি সুন্দর চেহারাই না ছিল তার।ছোটবেলায় তার একটা জোনাকী নাম থাকলেও আশপাশের সবাই তাকে রানী বলেই ডাকত।রূপের যখন রানী তখনতো সবার নজরই পড়বে তার উপর।মা অন্যের বাড়িতে কাজ করত।বাবা জন্ম দিয়েই নাই হয়ে গিয়েছিল।মা আবার বিয়ে বসেছিল।মার সঙ্গও সে বেশিদিন পায়নি।সেই ছোট্টবেলায়ই সবাই তাকে কাছে পেতে চাইত।আদর করতে চাইত।কি ছোট কি বড়।শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হল।এ পথ সে পথ ঘুরতে ঘুরতে তার আশ্রয় হল গিয়ে পতিতালয়ে।অপুর্ব রূপ যৌবনের অধিকারী জোনাকীকে খদ্দের পেতে বেগ পেতে হোত না।স্বাভাবিক জীবন তার অদৃষ্ট থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেল।প্রতিদিন খদ্দেরদের মনোরঞ্জনের জন্য তাকে সেজেগুজে থাকতে হোত।খদ্দেরদের কাছ থেকেই সে জেনেছে ডায়ানার নাম,ম্যাডোনার নাম।ওরাই তাকে বলেছে জোনাকী তুই খুব সুন্দরী।তুই আসলেই রানী।জোনাকী মনে মনে বলে ওঠে-সে শুধু রাইতের জন্যই,শুধু মনোরঞ্জনের সময়টুকুই।তারপর যেই জোনাকী,স্ইে জোনাকী। চোখের কাজল জলে ভিজে যায়।হাত দিয়ে মুছতে গিয়ে কাজলটা মুখে আরও ছড়িয়ে পড়ে।এখন আর সেই রূপ যৌবন নেই জোনাকীর।কোনমতে তিনবেলা খাবারের পয়সা জুটলেও মাথা গোজার স্থায়ী কোন ঠাঁই জোটেনি জোনাকীর।পতিতাপলি্লতে মাথা গোজার ঠাঁই মিললেও মাঝে মধ্যেই পুলিশের নাকানি চুবানি খেতে হতো জোনাকীদের।তারপর একসময় সমাজপতিরা তাদের স্বার্থে আঘাত লাগছে বলে নিজেদের স্বার্থেই পতিতাপলি্ল ভেঙ্গে দিল।মাথা গোজার ঠাঁইটুকু হারাল জোনাকীরা।ততদিনে জোনাকীর রূপ যৌবন অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল।পতিতাপলি্লর বাসিন্দারা,রাতের রানীরা ছড়িয়ে পড়ল বিভিন্নদিকে।যার যেখানে সুযোগ ঘটল আশ্রয় নিল।আশ্রয়ের ঠিকানা পেল না জোনাকী।রূপ যৌবনহীন এরকম জোনাকীকে কেউই আশ্রয় দিতে রাজী নয়।যেসব হোটেলে জোনাকীদের মত মেয়েদের ঠিকানা থাকে সেখানেও ঠাই হল না জোনাকীর। পথেই আশ্রয় হল জোনাকীর।পথে পথেই ঘুরতে লাগল জোনাকী।পথেই সঙ্গী হল আরও কয়েকজন।এভাবে দিনের বেলা ষ্টেশনে,ফুটপাতে শুয়ে বসে দিন পার করতে লাগল।আর রাতে মুখে রঙ লাগিয়ে খদ্দেরের খোঁজে উকি ঝুকি মারা চলতে লাগল। হায়রে মানুষ টাকার বিনিময়ে কিই না হয়।দেহকে বিক্রি করতে করতে নিঃশেষ হয়ে গেছে তার দেহখানি।কিন্ত হয়নি তার স্বামী সংসার।সৃষ্টিকর্তাকে অভিশাপ নাকি ধিক্কার জানাবে জানে না জোনাকি।তার জীবনটা কেন এমনভাবে চলল সে নিজেও জানেনা।স্বামীর সোহাগ কেমন সে জানে না।কিন্তু সে বোঝে মাতৃত্বের আকাঙ্খা।সে যে নারী।তার ইচ্ছে হয় তার গর্ভে সন্তান আসুক।কিন্তু সে সন্তান টাকার বিনিময়ে কোন অজানা,অচেনা পুরুষের কাছ থেকে নয়,ভালবাসাহীন মিলনের মাধ্যমে নয়।কেননা সে সন্তান একদিন তাকে প্রশ্ন করবে,তার পিতার পরিচয় জানতে চাইবে।সে তার নিজ মাকে ধিক্কার দিবে। কুপিটা নিবিয়ে দিয়ে রাস্তার গলিতে এসে দাঁড়ায় জোনাকী।আশেপাশে উঁকি দেয়।রাস্তার পথচারী কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখে।এগিয়ে যায় জোনাকী।অশ্লীল ইঙ্গিত করে।কামনা করে কোন এক খদ্দেরের।দেহের প্রয়োজনের জন্য নয়,মনের ক্ষুধা মিটানের জন্যও নয়।তার কালকের পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন।আর সেই অর্থের সন্ধানেই খদ্দেরের খোঁজে এগোতে থাকে জোনাকী,রাতের রানীরা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জোড় হস্ত
লেখাটির শেষ অংশ বলে দেয় লেখাটার মাঝে "বীজ" নিহীত ছিল, কিন্তু কেবলই মনে হচ্ছে (আমার ভুলও হতে পারে) লেখকের তাড়াহুড়ায় পরিপূর্ণ হতে পারল না।সামনের বার এই আক্ষেপ টুকু থাকবেনা,এই আশা করলাম লেখকের কাছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।