বৃষ্টির মধ্যে গ্রামে আসে শান্তরা। সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি। উঠোনে কাদা পানি।শান্ত চলে যেতে চেয়েছিল তার বাবার সাথে। কিন্তু বাবা বললেন,এখনতো সবখানেই বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলে যেতে পারবে না। থাকো না মার সাথে,সপ্তাহখানেক। অনীচ্ছা সত্ত্বেও থাকতে হয় তাকে।অবশ্য নানু বাড়িতে খুব একটা আসাও হয় না তার।এবার যখন শুনল নানী অসুস্থ মা তাকে নিয়ে চলে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা বললেন আমারও অনেকদিন যাওয়া হয় না যাই মাকে দেখে আসি। নানু বেঁচে নেই। নানু বাড়িতে নানী আর এক মামা থাকেন। মামী ছাড়াও সে বাড়িতে তারই সমবয়সী ক্লাস এইটে পড়া মামাতো ভাই সোহাগ তার ছোট ভাই ফয়সাল আর একবড় আপু দিবা আছেন। নানী এখন অনেকটাই সুস্থ। একরকম গৃহবন্দী হয়ে আছে শান্ত। বৃষ্টির মধ্যে যে ঘরে বসে কম্পিউটারে গেম খেলবে সে সুযোগ নেই ।মামাবাড়িতে কম্পিউটার নেই। মা বলে,শান্ত ওদের সাথে খেল।ভাল লাগবে।সারাদিন ঘরে থাকিস ভাল লাগবে কি করে! বৃষ্টির মধ্যে খেলব কি করে?শান্ত বিরক্তির সাথে জবাব দেয়। -বৃষ্টিতে ভিজ। দেখ অনেক মজা লাগবে।দেখছিসনা ওরা বৃষ্টিতে ভিজছে। মাঠে ফুটবল খেলছে। পুকুরে মাছ ধরছে।ঢাকায়তো আর এগুলো পাসনা। -তা পাইনা সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সেখানে বাসায় বসে বৃষ্টির মধ্যে কম্পিউটারে গেম খেলা যায়। সোহাগ বলে,এসো না শান্ত প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে আমরা ভিজছি। বৃষ্টিতে বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলছি।অনেক মজা পাবে এসো শান্ত। -ওরা এত করে বলছে যা না একদিন ভিজে দেখ। ভাল না লাগলে আর ভিজিস না।
মা আর সোহাগের পীড়াপীড়িতে বৃষ্টিতে নেমে পড়ে শান্ত। সোহাগের বন্ধুদের সাথে বৃষ্টির মধ্যেই মাঠে ফুটবল খেলতে থাকে।সবাই অনেক মজা করছে।তারও ওদের সাথে খেলতে ভাল লাগছে।
তাইতো বৃষ্টিতে ভিজতে এত মজা ! কখনো সে এভাবে মজা পায়নি। মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে ফিরতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছে। কিন্তু তখনতো এরকম মজা লাগেনি।কিংবা কখনো ভিজবার জন্য বৃস্টিতে ভিজতে সে নামেনি। রাতে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। টিনের চালে শব্দ হয়। বৃষ্টির শব্দ। শান্ত বলে, দেখেছো সোহাগ কি সুন্দর শব্দ হচ্ছে। -হ্যা,তোমার ভাল লাগছে?অবাক হয়ে জানতে চায় সোহাগ। -হ্যা অনেক ।ইচ্ছে করছে সারারাত জেগে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনি। -জানো শান্ত,দাদী বলেছেন,আমাদের বাসার ভিতর দিয়ে বর্ষাকালে মাছ যেত। বাড়ির দক্ষিনপাশ্বর্ে একটা পুকুর ছিল। বর্ষাকালে ওটা পানিতে ভরে যেত। সেখানকার মাছগুলো বাসার ভিতর দিয়ে ভেসে যেত।চাচা,বাবা,ফুপুরা মজা করে বৃষ্টির মধ্যে সে মাছ ধরত।তোমকে ফুপু কখনো বলেনি। -না মার কাছ থেকে গল্প শোনার সময়ইতো নেই।যত পড়াশুনা,স্কুল,কোচিং,প্রাইভেট তারপর যেটুকু সময় পাই কম্পিউটারে বসি। -তুমি কখনে ভূড়ায় চড়েছ? -সেটা আবার কি? -কলাগাছ দিয়ে বানায়।ওটায় চড়ে পানিতে ভেসে বেড়াতাম।এখনতো বাসায় কলাগাছ নেই। থাকলে বানাতাম। খুব মজা হোত। -তোমাদের খুব মজা। এখানে খেলার মাঠ আছে।খেলতে পারো। ইচ্ছে হলে বৃষ্টিতে ভিজতে পারো।বন্ধুরা মিলে অনেক মজা কর।আর আমরা ! আমরা কম্পিউটারে বসে বন্ধুদের সাথে মজা করি।একটু থেমে শান্ত বলে,জান সোহাগ আমার না এখন আর নানুবাড়ি থেকে ফিরে যেতে মন চাইছে না ! মা তো পরশু যাবেন বলেছেন। -হ্যা তা বলেছেন।ফুপুকে বলে দেখ আর কটা দিন থাকা যায় কিনা!।
মা শুনে বললেন,কিরে তখনতো থাকতেই চাইলি না এখন যে যেতে চাচ্ছিস না ! -হ্যা মা এখন ভাল লাগছে। -ঠিক আছে একদিন মঞ্জুর হল। কিন্তু এরপর যেতে হবে। ক্লাস আছেনা !
এদু'দিন অনেক মজা করে শান্ত।বৃষ্টিতে ভিজে লাফালাফি করে। ডিজিটাল ক্যামেরায় সেসব ভিডিও করে নেয়।ছবি তুলে। বৃষ্টি পড়ার শব্দ রেকর্ড করে। ব্যাঙের ডাক রেকর্ড করে।
মন খারাপ করে বিদায় নেয় শান্ত।
ছাতা মাথায় নিয়ে রিঙ্ার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শান্ত।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।রাস্তায় পানি জমে গেছে। রিঙ্া নেই বললেই চলে। যাও দু'একটা চলছে সেগুলো ফাঁকা নেই ।ঘাড় হতে স্কুলব্যাগটা হাতে নেয়্।শার্টটা খূলে ব্যাগটাকে ভাল করে পেচিয়ে নেয়। মাথা হতে ছাতাটা সরিয়ে ভাজ করে ফেলে।বৃষ্টি মুহুর্তেই তাকে ভিজিয়ে দেয়।সে রাস্তার হাটু পানিতে এসে লাফাতে থাকে। যেন সে একটা বৃষ্টি ভেজা পাখি। মনে মনে ভাবতে থাকে সে,তাদেরকে যেন ডানা কেটে সব বড় বড় উচু উচু ফ্লাটগুলোকে খাঁচা বানিয়ে তার মধ্যে রেখে দিয়েছে। তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় এসো বন্ধূরা আমরা বৃষ্টিতে ভিজি। ডানা মেলে পাখি হয়ে উড়ি।বৃষ্টি ভেজা পাখি হয়ে নীড়ে ফিরি।
তার অস্ফুট চিৎকার কেউ শুনতে না পেলেও তার দেখাদেখি তার সহপাঠি,তার সমবয়সী অনেক কিশোরই তার সাথে যোগ দেয়। তারা বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে মনের আনন্দে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।