আমি কে ?

কষ্ট (জুন ২০১১)

আনিসুর রহমান মানিক
  • ২৪
  • 0
হেনা ,এই হেনা!
কে ? কে ওখানে?
আমি রানা,তোর ভাইয়া।রানা ভাইয়া।
ওমা ভুত!চিৎকার করে পড়ে যায় হেনা।ঘরের আড়াল থেকে দেখে রানা। এগোতে গিয়েও আগায় না। পুলিশের বাশির শব্দ শুনতে পায়।সেখান হতে পালিয়ে যায় রানা।সে বুঝতে পারেনা কেন তাকে দেখে ভূত বলে চিৎকার করে তার বোন হেনা অজ্ঞান হয়ে গেল।
রাত ২টা কি ৩টা হবে। আবার বাড়িতে আসে রানা।দরজায় আস্তে করে শব্দ করে।
চুপিসারে ডাকে ,মা, মা, ওমা!
ভিতর থেকে জবাব আসে,কে ?কে এত রাতে?
মা ,আমি রানা।
কোন রানা?
তোমার ছেলে মা।
ভিতর থেকেই আবার জবাব আসে,সেতো অনেক আগে মরে গেছে।
কি বলছ মা?এই যে দেখো আমি বেঁচে আছি।একটু দরজা খুলো মা।
না তুই মৃত।দরজা খুলে আমি কোন মৃত আত্মাকে ভিতরে ঢুকতে দিতে পারিনা।তুই চলে যা।তোর বোন তোকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছিল। আামি চাইনা বাসার আর কেউ তোকে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ুক। তুই চলে যা।
আবারও পুলিশের বাঁশির শব্দ।পালিয়ে যায় সেখান থেকে রানা।বুঝতে পারে না সে, তার মা ,বোন কেন তাকে মৃত ভাবছে।জেল থেকে পালিয়ে পরিস্কার হয়ে তার মায়ের আদরের সন্তান রানা হয়েইতো সে এসেছে। কিন্তু কেন তারা তাকে চিনতে পারছে না।বাড়িতে এসেও মায়ের কাছে আশ্রয় জুটছে না।কষ্টে তার বুকটা ফেটে যেতে চাইছে।সে কি করে বেঁচে থাকবে!
সে ফেরারী হয়ে ঘুরতে থাকে। বিকেলে পার্কে দেখতে পায় অনুকে। একটা ছেলের সাথে বসে গল্প করছে। বুঝতে পারে রানা ছেলেটি নিশ্চয়ই অনুর নতুন প্রেমিক।তার হৃদয়ে রক্তক্ষরন হতে থাকে।তার সাথেইতো প্রেম ছিল অনুর।কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল।সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লিখিয়ে সে আস্তে আস্তে সবার কাছ থেকে দূরে সরে গেল।সে বুঝতে পায় না সে কেনই বা সন্ত্রাসী হল আর কারাই বা তাকে সন্ত্রাসী করে তুলল।
এই যা ছেলেটি চলে যাচ্ছে। এগিয়ে যায় রানা।
পিছন থেকে ডাকে রানা-অনু,অনুৃ।
অনু থমকে দাঁড়ায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রানার দিকে।
আমাকে চিনতে পারছ না?
কে?কে আপনি?ঠিক মনে করতে পারছি না।
কি বলছ অনু?আমাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে! আমি রানা ।তোমার রানা।
সেতো অনেক আগে মরে গেছে।
মরে গেছে মানে?তাহলে আমিকে?
সেটা আপনি ভাল বলতে পারবেন।
দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে রানার।অনুর হাতটা ধরতে নিয়েও ধরে না।সত্যি করে বলোতো অনু তুমি কি এখনো আমাকে ভালবাসো না?
আমি যে রানাকে ভালবাসতাম,সেতো মৃত।আপনি চলে যান।
অনু চলে যায়।রানা দাঁড়িয়ে থাকে। কষ্টে সে ছটফট করতে থাকে।
সে কি করবে বুঝতে পারেনা।একদিকে ফেরারী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে,অন্যদিকে মা, বোন, প্রেমিকা সবাই তাকে অস্বীকার করছে।চিনতে পারছে না।নিজেকেই সে প্রশ্ন করে,তাহলে আমি কে? তার সে কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে তার কাছে<জবাব পায় না।
পরিচিত দোকানদার,বন্ধু সবাই তাকে দেখে আতকে ওঠে।তাকে অস্বীকার করে,সবার এক কথা রানা বছর তিনেক আগে মারা গেছে। সে মিথ্যে বলছে।
সে রানা হতে পারেনা।
সেলুনে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় রানা। এতো সেই-ই। মায়ের আদরের রানা। এলাকার সবচেয়ে ভদ্র,ভালো ছেলে রানা। কলেজের সেরা ছাত্র রানা।তাহলে কেন সবাই তাকে মৃত বলছে।
তাহলে কি শরৎচন্দ্রের কাদম্বিনীর মত তাহাকে মরিয়া প্রমান করিতে হইবে যে সে মরে নাই।
কি করবে সে? কি করা উচিত তার?বুঝতে পারেনা।সে কি আবার জেলে ফিরে যাবে! নাকি আবার সন্ত্রাসী হয়ে যাবে।সন্ত্রাসী,থেকে সে যে ভাল হতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবার, সমাজ কেউ তাকে ভাল হতে দিচ্ছে না কেন?
হাসপাতালের মর্গে আসে সে। লাশটি দেখে চমকে ওঠে। একি ? এযে তারই লাশ। বমি আসতে নেয তার। মাথা ঘুরতে থাকে।
তাহলে সে কে? মর্গের ডোম জানায় লাশটি রানা নামের এক ছেলের প্রায় তিন বছর আগের।
রানা বুঝতে পারে তার আর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই। অন্ততঃ সুবোধ ভাল ছেলে রানা হয়ে। সবার কাছে সে মৃত।হাসপাতালের মর্গের রানার লাশই তার জ্বলন্ত প্রমান্ ।
কেন এমন হল? কে তাকে মৃত বানাল। নাকি সেই নিজেকে হত্যা করল। এসব প্রশ্নের উত্তর খুজে পায়না।
এলাকার সবচেয়ে ভাল ছেলে ,কলেজের সেরা ছাত্র ,মা বাবার আদরের সন্তান যখন ধীরে ধীরে অপরাধ করতে শুরু করল তখনই তাদের সেই রানা আস্তে আস্তে তাদের কাছে মরে যেতে লাগল।তারপর একসময় মরেও গেল।
রাতের অন্ধকারে ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে রানা। আপনমনে বিড়বিড় করে বলতে থাকে সে-
পরিবার, সমাজের আমার এই সন্ত্রাসী হওয়ার পিছনে কি কোন দায় নেই।
আবার যখন আমি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলাম তখন তোমরা কেউ আমাকে সুস্থ হতে দিলে না।সবাই আমাকে মৃত ভেবে দুর দূর করে তাড়িয়ে দিলে।
এ কষ্ট শুধু রানার একার নয়।এ কষ্ট সমস্ত বিবেকবান মানুষের।
ফিনে এল সন্ত্রাসীদেন আস্তানায় রানা। নেমে পড়ল আবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে।
র্যাবের হাতে ধরা পড়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিছলা রানা। পরদিন মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই জানতে পারে ক্রসফায়ারে মারা গেছে পিছলা রানা। শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসীর মৃতু্যতে সবাই স্বস্তি পায়।
রানার লাশ গ্রহন করতে আসে তার বাড়ির লোকজন। একদিন যারা তাকে ভালো হওয়ার সুযোগ না দিয়ে আবার সন্ত্রাসী পথে পাঠিয়েছিল,আজ তারাই আবার তাকে নিতে এসেছে।
ধিক্কার এই সমাজের সেইসব মানুষদের যারা রানার মত ছেলেকে ভাল হতে দেয় না,ভাল থাকতে দেয় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আনিসুর রহমান মানিক Khondaker Nahid Hossain ধন্যবাদ আপনাকে /অবস্যই ভাবব এবং সচেতন হব /
খন্দকার নাহিদ হোসেন গল্প পড়ে কিছু বিষয় বোঝা যাচ্ছিল না কিন্তু লেখকের মন্তব্য পড়ে বুঝলাম। কিন্তু ব্যাপারটা গল্পেই বোঝান উচিত ছিল। আশা রাখি লেখক বিষয়টা নিয়ে ভাববে।
আনিসুর রহমান মানিক আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ,আপনাকে ধন্যবাদ /পড়ে ,সুন্দর মন্তব্যের জন্য /
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ভালো লাগলো | বিপথগামীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের সবার সাহায্য, সহযোগিতা, ধৈর্য় এবং মানসিক শক্তি ও সাহস বড় ভূমিকা রাখতে পারে |
আনিসুর রহমান মানিক জাহিদুল ইসলাম আপনাকে ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য /
জাহিদুল ইসলাম ভালো লাগলো, খুব ভালো
আনিসুর রহমান মানিক ধন্যবাদ ,নিভৃতে স্বপ্নচারী (পিটল) কষ্ট করে পড়ার ( নাকি নয়ন বুলানোর ) জন্য /
নিভৃতে স্বপ্নচারী (পিটল) খুব ভালো LEKHESEN.......apnar jonno suvo kamona roilo......parle amar kobitai aktu noyon bulaben.....

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪