নানীর আদর আর মায়ের ভালোবাসা।

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

ইবনে মনির হোসেন
  • 0
  • 0
আমাদের ছিল একটি বড় যৌথ পরিবার। চাচা, চাচি, ভাইবোন সবাই মিলে আমাদের বাড়িটা যেন এক ছোটখাটো উৎসবের মতো ছিল। তবে আমার শৈশবের বড় অংশটা কেটেছে মামার বাড়িতে। বাবা ছিলেন প্রবাসে। জীবিকার তাগিদে দূর দেশে থাকতে হতো তাকে। তাই আমার ছোটবেলায় বাবার স্নেহ ছিল অনেকটাই চিঠি আর ফোনকলের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মামার বাড়ি ছিল গ্রামের এক কোণায়। উঠোন জুড়ে শীতলপাটি, পাশে বাঁশঝাড়, আর সামনের পুকুরটা যেন জীবন্ত আয়না। সেখানেই কাটত আমার দিনের বেশিরভাগ সময়। নানী ছিলেন আমাদের পরিবারের প্রাণ। তার আদর ছিল ঠিক তেমনই, যেমন মধুর গন্ধে মৌমাছি আসে।

সকাল বেলায় নানীর গলা জড়িয়ে ধরে ঘুম থেকে উঠতাম। নানী বলতেন, তুই কত বড় হয়ে গেছিস রে, তাও এখনো বাচ্চাদের মতো ঘুমাস! তার কথায় লজ্জা পেতাম না, বরং আরও গুটিসুটি মেরে তার কোলে শুয়ে থাকতাম। মা তখন আমাদের দুজনকে দেখে মুচকি হেসে বলতেন, নানীর কোলে চিরকাল শুয়ে থাকবি নাকি?

নানীর হাতে ছিল জাদু। রান্নাঘরের সেই চুলায় তার রান্না করা পিঠা আর খিচুড়ির স্বাদ যেন পৃথিবীর অন্য কোথাও পাইনি। তিনি আমাকে বলতেন, খা, খেয়ে নে। বড় হলে বুঝবি, এই স্বাদ আর পাবি না। তখন বুঝিনি, কিন্তু আজ বুঝি, তার কথাগুলো কত সত্য ছিল।

মামার বাড়ির উঠোনের কোনে অনেক বড় একটি বটগাছ ছিল। আমি আর আমার মামাতো ভাইবোনেরা মিলে গাছতলায় বসে খেলতাম। কখনো লুকোচুরি, কখনো দল বেঁধে গাছের পাতা কুড়ানো। নানী আমাদের সেই দুষ্টামি দেখে হাসতেন। বলতেন, এই পিচ্চিরা কত মজা করে! যখন তোমরা বড় হবে, তখন আর এমন খেলা হবে না।

মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল খুব গভীর। মা যখন আমাদের নিজ বাড়িতে আসতেন, তখন অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তবু আমি যখন ডাকতাম, সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসতেন। মাঝে মাঝে আমি মায়ের আঁচল ধরে টান দিতাম। বলতাম, মা, তুমি বাবার মতো দূরে চলে যেও না। মা তখন কপালে চুমু দিয়ে বলতেন, আমি কোথাও যাব না। আমি তোকে রেখে যেতে পারব না। তুমি আমার আদরের সোনা-মানিক!

মামার বাড়ির দিনগুলো ছিল খুবই আনন্দময়। বর্ষার দিনগুলো ছিল আরও সুন্দর। নানী বড় হাঁড়ি বের করতেন, আর তাতে পানিভর্তি করে রাখতেন। আমি আর মামাতো ভাইবোনেরা মিলে সেই পানিতে মাছ ধরার ভান করতাম। মা আর নানী আমাদের দুষ্টুমি দেখে বলতেন, তোমাদের মাছ ধরা শেষ হলে, এবার ভাত খেতে এসে বসো।

একদিন বিকেলে নানী আমাকে গল্প শোনাতে বসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোর বাবা যখন ছোট ছিল, তখন তোর মতোই ছিল কিনা তোর দাদিকে বলতে হবে, এতো দুষ্টুমি কেন করো? বাবা মতো বিদেশে যেতে হলে সাহসী হতে হবে, যদিও আমি ভিতু ছিলাম, তার কথা শুনে খুব গর্ব হতো।

আমার ছোটবেলা ছিল নানীর আদর আর মায়ের ভালোবাসায় ভরা। মামার বাড়ি ছিল আমার জন্য একটুকরো স্বর্গ। আজ, বড় হয়ে আমি যখন সেই দিনগুলোর কথা ভাবি, তখন নানীর হাসি, মায়ের স্নেহ, আর মামার বাড়ির সেই নির্ভেজাল দিনগুলোকে খুব মনে পড়ে। নানী যেন আমার সোনালী ব্যাংক ছিল কিছু চাওয়া পাওয়া আবাদার পূরণের। আজ নানী নেই অনেক বছর হলো। নানীর জন্য দোয়া ছাড়া কিছুই করা র নেই যেন এখন।

নানী এখন আর নেই। তার জায়গাটা শূন্য হয়ে গেছে। তবে তার আদর আর মায়ের ভালোবাসার স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থাকবে। ছোটবেলা হয়তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু তার ছায়া সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। আজ মায়ের চুলে সাদা রঙ্গে রঙিন। মায়ের আদরগুলো এখনো সজীব নতুন কুড়ি গাছের পাতার মতো সতেজ। মায়ের ভালোবাসা আর আদর কখনো শোধ করার নেই কোন উপমা। ছোটবেলা মানেই জীবনের সেরাবেলা সেরা কিছু স্মৃতি অমলিন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ছোটবেলার স্মৃতির পাতায় মনে পড়ে কত কথা। এরই মধ্যে একটি স্মৃতি সোনালী ফ্রেমে বাধাই করা। নানীর আদর আর মায়ের ভালোবাসা।

১৯ ডিসেম্বর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫