সংসার ধর্ম

সংসার (মে ২০২৫)

Asif Akram
  • 0
  • ৩৬
প্রথম অংশ: সংসারের আখর

একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল একটি সাধারণ, অথচ সুখী পরিবার। পরিবারটির প্রধান ছিলেন মহেশ চন্দ্র দাস। গ্রামটির এক কোণে ছোট্ট একটি বাড়ি, যেখানে ছিল তার স্ত্রী রানী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মহেশ চন্দ্র দাস ছিলেন একজন কৃষক, তাকে প্রতিদিনই মাঠে কাজ করতে হতো। সারাদিন কাঁধে মাটি তুলে ঘাম ঝরানোর পরও, তার মুখে কোনো অভিযোগ ছিল না। কেননা, তার কাছে পরিবারের সুখই ছিল সবচেয়ে বড়।

রানী, তার স্ত্রী, সংসারের সমস্ত কাজ সামলাতেন। তার হাতে ছিল স্নেহ ও ভালোবাসার শাসন। রানী জানতেন, সংসারে সবকিছু একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। যখন রানী কাজ করতেন, তখন তার চোখে এক ধরনের প্রশান্তি ছিল, কারণ তিনি জানতেন, তার কাজের ফলস্বরূপ তার পরিবার সুখী থাকবে।

A তবে তাদের জীবনে কিছু সমস্যা আসতে শুরু করেছিল। মহেশের জমি খুব একটা ফলপ্রসূ ছিল না, এবং শহরে কিছু মানুষ এসে তাদের জমি কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। একদিন মহেশ তার স্ত্রীর কাছে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বললেন, "রানী, আমি জানি, আমাদের জমি ভালো নয়। তবে যদি আমরা এটি বিক্রি করি, আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে। তবে এই পরিবর্তন কি আমাদের জন্য ভালো হবে?"

রানী কিছু সময় চুপ করে থাকলেন। তারপর তিনি বললেন, "মহেশ, তুমি জানো, আমাদের এই জমি শুধু কৃষি নয়, এটি আমাদের শেকড়। যদি আমরা এটি বিক্রি করি, আমাদের পরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। সংসারের ধর্ম তো শুধু অর্থ নয়, সম্পর্কের মধ্যেও থাকতে হয়।"

দ্বিতীয় অংশ: সংসারের ধর্মের পরীক্ষা

একদিন, গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসে মহেশের বাড়িতে আসেন। তিনি মহেশকে বলেন, "মহেশ, তোমার ছেলে আকাশ এবং মেয়ে মিতুল খুব ভালো পড়ালেখা করছে। আমি চাই, তারা শহরের স্কুলে ভর্তি হোক, যাতে তারা আরো ভালো সুযোগ পায়।"

এ কথা শুনে মহেশ কিছুটা অবাক হন। তিনি জানতেন, শহরে পড়ালেখা অনেক খরচের ব্যাপার। কিন্তু তিনি তার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি রানীকে জানালেন, "রানী, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য শহরে পাঠানো উচিত, তবে সেটা আমাদের জন্য কঠিন হবে।"

রানী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, "মহেশ, সংসার শুধু অর্থের জোগান নয়, আমাদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা ও শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের সন্তানরা যেন সমাজে ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য আমাদের একটু ত্যাগ করতেই হবে।"

তৃতীয় অংশ: ধর্মের পথ

যত দিন যেতে লাগল, মহেশের মনে নানা প্রশ্ন উঠছিল। অর্থনৈতিক সংকট, সংসারের পরিবর্তন, সন্তানের ভবিষ্যৎ-এই সব কিছুর মাঝে সংসারের ধর্ম কি আসলেই পূর্ণতা পাবে? তবে একটি ঘটনা তাদের জীবনকে চিরতরে বদলে দিল।

একদিন মহেশ ক্ষেত থেকে ফিরে আসার সময় দেখতে পান, আকাশ তার ছোট বোন মিতুলকে বই পড়তে সাহায্য করছে। তারা দুজনেই একসাথে একটি প্রকৃতির ছবির দিকে তাকিয়ে হাসছিল। রানী তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

"দেখো মহেশ, সংসারের ধর্ম শুধু টাকা বা জমি নয়, আমাদের ভালোবাসা এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি। এই সংসারে এসবই সবচেয়ে মূল্যবান।"

মহেশ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার মনে হলো, রানীর কথাই সঠিক। সংসারের ধর্ম শুধু বাহ্যিক সুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার প্রকৃত সুখ হলো সম্পর্কের মধ্যে, পারিবারিক বন্ধনে।

চতুর্থ অংশ: সংসারের সত্য ধর্ম

মহেশ ও রানী একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা তাদের জমি বিক্রি করবেন না। বরং, নিজেদের প্রয়োজনে কিছু ঋণ নিয়ে, তারা আকাশ ও মিতুলের পড়াশোনার জন্য শহরে পাঠাবেন। তারা জানতেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের জীবনে কঠিন সময় আনবে, তবে তাদের মনের শান্তি ও সন্তুষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

বছর দুই পরে, আকাশ এবং মিতুল ফিরে আসে শহর থেকে। তারা এখন আরো পোক্ত, আত্মবিশ্বাসী, এবং নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে স্পষ্ট। তাদের ভালোবাসা এবং শেকড়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা মহেশ ও রানীর জন্য ছিল সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল একটি সাধারণ, অথচ সুখী পরিবার।

০৯ ডিসেম্বর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫