চার বন্ধুর ছোটবেলা

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

নুর হোসেন ভূঁইয়া
  • 0
  • ২০
ফুলঝুড়ি গ্রামে জন্ম নেওয়া নুর, সবুজ, আতা আর জিসান। বয়সে সমবয়সী হলেও চরিত্রে তারা ছিল ভিন্নধর্মী। নুর ছিল চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল প্রকৃতির। ছোটবেলা থেকেই সে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে ভালোবাসত। সবুজ ছিল বুদ্ধিদীপ্ত, তবে তার রাগটা ছিল তেজি। আতা ছিল শান্ত, লাজুক, আর সহজ সরল, যার মিষ্টি স্বভাব সবাইকে আকৃষ্ট করত। আর জিসান—সে ছিল হাসির ঝর্ণা। যেকোনো পরিস্থিতিতে হাসতে এবং হাসাতে পারত।
তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল প্রাথমিক স্কুলের বেঞ্চে বসে। স্কুলের মাঠে একসঙ্গে দৌড়ানো, খেলা, আর মাটির ব্যাংকে কয়েন জমিয়ে বার্ষিক মেলায় যাওয়ার দিনগুলো এখনো তাদের স্মৃতিতে অমলিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য তারা শহরে পাড়ি জমায়। যদিও তারা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছিল, তাদের হৃদয় একসূত্রে গাঁথা ছিল। প্রতিটি ছুটিতে তারা গ্রামে ফিরত। গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা, নদীর ধারে বিকেলের আড্ডা আর রাতে বারবিকিউ পার্টি যেন তাদের বন্ধুত্বের নতুন গল্প রচনা করত।
একবার ঈদে, গ্রামের যুবকদের নিয়ে তারা আয়োজন করল এক বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট। সবুজের নেতৃত্বে দল বাছাই হলো, নুর করল টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা, আতা দেখল খেলার নিয়মকানুন, আর জিসান ছিল সবার মন ভালো করার দায়িত্বে। তাদের উদ্যোগে সারা গ্রাম একত্রিত হলো। জয়-পরাজয়ের বাইরে, এই টুর্নামেন্ট ছিল গ্রামের জন্য এক বড় উৎসব।
গ্রামের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকে চার বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিল, তারা সমাজ সেবায় কিছু করবে। তারা প্রথমে গ্রামের স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে শুরু করল। এরপর গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য নিজেরাই উদ্যোগ নিল। তাদের সেবামূলক কাজ গ্রামের সবার মন জয় করল।
সময়ের পরিক্রমায় তারা জীবনে অনেক সাফল্য অর্জন করল। নুর একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখল। সবুজ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করল। আতা গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াল। আর জিসান একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে মানুষকে জীবনের প্রতি উৎসাহিত করল।

তবে তাদের বন্ধুত্বে কোনো ভাটা পড়েনি। ঈদে বা ছুটির দিনে তারা এখনো একত্রিত হয়। গ্রামের সেই ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে হাসি-আড্ডা দেয়। তাদের স্বপ্ন একটাই—একসঙ্গে থেকে সমাজের জন্য কিছু করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু রেখে যাওয়া।
চার বন্ধুর এ বন্ধন শুধু বন্ধুত্ব নয়, এটি দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, আর একতার প্রতীক। তাদের গল্প আমাদের শেখায়, জীবনে যত ব্যস্ততাই আসুক, বন্ধুত্ব ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কখনো হারানো উচিত নয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি "ছোটবেলা" বিষয়টির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারণ এটি ছোটবেলার স্মৃতি, বন্ধুত্ব এবং জীবনের শুরু থেকে প্রাপ্ত সম্পর্কগুলোর গভীরতাকে তুলে ধরেছে। নিচে বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলোঃ ছোটবেলার শিকড়: গল্পের মূল চরিত্র নুর, সবুজ, আতা এবং জিসান একসঙ্গে তাদের ছোটবেলার শুরুর দিনগুলো কাটিয়েছে। প্রাথমিক স্কুলের বেঞ্চে বসা, মাঠে দৌড়ানো, মেলার জন্য মাটির ব্যাংকে কয়েন জমানো—এই সবকিছু ছোটবেলার সরল আনন্দকে তুলে ধরেছে। ছোটবেলার বন্ধুত্বের অটুট বাঁধন: তারা একসঙ্গে ছোটবেলার খেলা ও হাসি-আনন্দের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা ভিন্ন ভিন্ন পথে গেলেও তাদের বন্ধুত্ব অক্ষত থাকে। এই বন্ধুত্ব ছোটবেলার শিকড় থেকে গড়ে উঠেছে, যা সময়ের সাথে আরো শক্তিশালী হয়েছে। স্মৃতি গল্পে গ্রামে ফিরে আসা এবং ছোটবেলার মাঠে খেলা বা চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্যগুলো ছোটবেলার দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে বোঝা যায়, তাদের জীবনে ছোটবেলার স্মৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার প্রক্রিয়া: গল্পটি দেখায়, ছোটবেলার মজার দিনগুলো কেবল তাদের জন্য আনন্দের নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা ও আদর্শের ভিত্তি তৈরি করেছে। ছোটবেলার সেই বন্ধুত্বই তাদের পরবর্তী জীবনে সমাজ সেবার জন্য একত্রিত করেছে। মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা: ছোটবেলায় একসঙ্গে সময় কাটানো এবং গ্রামের সবার সঙ্গে মিশে থাকা তাদের মধ্যে একতা ও দায়িত্ববোধ তৈরি করেছে। তারা শৈশবের শিক্ষা ও বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে সমাজ সেবায় যুক্ত হয়েছে। গল্পটি ছোটবেলার আনন্দদায়ক মুহূর্ত এবং সেই মুহূর্তগুলোর মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যতের আদর্শকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। ছোটবেলার দিনগুলো যেমন আনন্দময় ছিল, তেমনই সেই সময়ের শিক্ষা ও বন্ধুত্ব তাদের বর্তমান জীবনে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছে।

১৭ নভেম্বর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫