স্থিতিশীলতা

স্থিতিশীলতা (ডিসেম্বর ২০২৪)

MD Shuaib Bhuiyan
মোট ভোট ৩৪ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৫
  • 0
  • ২১২
বলা ভালো—**অস্থিরতার মধ্যে স্থিতিশীলতার খোঁজ**।
এটাই ছিল রাজীবের জীবনের শেষ শট, আর সেই শটটা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে ছোঁয়ার আগেই—নেমে এল অন্ধকার। তার হৃদয়ের ভিতরে এক দুর্বিসহ চাপ, চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছিল অস্থিরতা, কিন্তু তার মধ্যে যে শান্তির অভ্যন্তরীণ শক্তি ছিল, সেটি রাজীব এখনও বুঝে উঠতে পারেনি।

এটাই কি ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত? একদমই নয়। রাজীব জানত, তার জীবনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে প্রশ্ন ছিল—এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য তার কতটুকু প্রস্তুতি আছে? তাঁর আশেপাশে যা ঘটছিল, তাকে মোকাবিলা করার জন্য মানসিক শক্তি তো প্রয়োজন, কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা ছিল—স্থিতিশীলতা। সেই স্থিতিশীলতা যে নিজের ভিতর থেকে আসে, তা রাজীবের জানা ছিল না। আজকের এই অন্ধকারে, যখন তার সমস্ত আশাগুলো একে একে মেঘের মতো ঝরে যাচ্ছিল, তখন তার কাছে মনে হচ্ছিল—স্থিরতা একটা মিথ।

রাজীবের জীবনের গল্পটি সেই কিশোর বয়স থেকে শুরু, যখন সে প্রথম বুঝতে শিখেছিল পৃথিবীর এই বিশালতার মধ্যে কোথাও একটা জায়গা থাকতে হবে, যেখানে শান্তি থাকবে। ছোটবেলা থেকেই তার ভেতরে একটা গভীর চিন্তা ছিল—যদি সে তার মনের ভিতরে এক জায়গা খুঁজে পায়, যেখানে সে স্থির থাকতে পারবে, তবে সারা পৃথিবীকে জয় করা সম্ভব হবে।

বাড়ির লোকেরা জানত, রাজীব কিছু একটা নতুন চিন্তা করছে। কিছুদিন আগে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যতই দুনিয়া অস্থির হোক, সে নিজের জীবনকে শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল রাখতে পারবে। কিন্তু এই শান্তির পথে একাধিক বাঁধা আসবে—রাজীবেরও জানা ছিল। প্রথম দিনেই তার আত্মবিশ্বাস কমে যেতে লাগল। পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক, পরিবার—সব কিছু যেন একে একে তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছিল। একটা সময়, রাজীব বুঝতে পারল, যে কোন পরিস্থিতিতেই সে যেন তার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে না।

একদিন, সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে রাজীব। ঢাকার অদূরে এক ছোট শহরে তার নতুন জীবন শুরু হয়েছিল। শহরটা শান্ত, কিন্তু সে জানত—তার সামনে অনেক কিছু আসবে। প্রথম দিন কলেজে গিয়ে, সে সেখানে কিছু কিছু মানুষের আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যায়। তাদের অস্থিরতা, তাদের একে অপরকে ধাক্কা দেওয়ার আচরণ—এগুলি দেখে রাজীবের মনে হয়েছিল, এই জগতের কেউ কি কখনও স্থিতিশীল থাকতে পারে? সেদিন সে একা বসে ছিল এক কোণে। তার সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে মগ্ন, কেউ লেখাপড়ায়, কেউ আড্ডায়—কিন্তু সে বুঝতে পারছিল না, কোথাও একটি স্থিরতা নেই। সেখানে সবার মনোযোগ শুধু বাইরে—তবে ভেতরের মনের অবস্থা কোন জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, সেটা সবার কাছে অজানা ছিল।

**অস্থিরতার প্রথম লেশ**

কলেজের প্রথম বছরেই, রাজীবের জীবনে এসেছে প্রথম বড় অস্থিরতা। তার বাবা-মা তার জন্য এক আশ্চর্য পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। বাবা চাইছিলেন, রাজীব খুব দ্রুত বড় হবে, তার জীবনের লক্ষ্য পেতে হবে। মা চাইছিলেন, সে এমন কিছু কাজ করুক যা তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলবে। কিন্তু রাজীবের মন তো কোথাও থেমে থাকতে চায় না। তার পছন্দ ছিল—ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। প্রতিদিনই সে ভাবতে শুরু করেছিল, সে কি করবে, কোন পথে যাবে?

একদিন, কলেজের পাঠ শেষে বাড়ি ফিরে এসে রাজীব নিজের কক্ষে বসে ছিল। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, আর তার মনে হচ্ছিল—এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই অস্থির, শুধু বৃষ্টি ছাড়া। বৃষ্টির প্রতিটি বোঁটা যেন জানিয়ে দেয়, সমস্ত কিছু পরিবর্তনশীল, কিন্তু এই বৃষ্টির স্থিরতা, এক নিঃশব্দ শান্তি, সে অনুভব করেছিল।

বৃষ্টির সেই মুহূর্তে, তার মনে পড়েছিল তার প্রথম ভালোবাসার কথা। সে এক মেয়ে ছিল, নাম ছিল **মিতালী**। রাজীবের সাথে মিতালীর সম্পর্ক ছিল এক আশ্চর্য মেলবন্ধন। তারা দুজনই একে অপরকে খুব ভালোবাসত, কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে এক অদ্ভুত অস্থিরতা ছিল। তারা প্রায়ই ঝগড়া করত, কখনও সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করত। মিতালী রাজীবের শান্তির জন্য কিছুই করতে চাইত না। সে শুধু চেয়েছিল, রাজীব যেন তার মতোই দ্রুত দৌড়ায়, নিজের পথ খুঁজে বের করে। কিন্তু রাজীব জানত, সে যত তাড়াতাড়ি চলবে, ততই অস্থির হয়ে উঠবে।

**নতুন পথের সন্ধানে**

একদিন রাজীবের সামনে আসে একটি বড় পরিবর্তন। কলেজে সে একটি নতুন কোর্সে ভর্তি হয়, যেখানে তাকে খুবই কঠিন কিছু পরীক্ষা দিতে হবে। তার জন্য এই কোর্স ছিল এক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু রাজীব বুঝতে পারে, এই চ্যালেঞ্জই তার জন্য একটি সুযোগ। সেখানেই সে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করে যে, স্থিতিশীলতা শুধু বাহ্যিক শর্তে পাওয়া যায় না, তা ভেতরের গভীরতা থেকেই আসে। সে যতই কঠিন পরীক্ষা দিক, যতই বিপদে পড়ুক না কেন, তার নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে।

পরীক্ষার দিনগুলোতে, রাজীবের মনে হচ্ছিল—এখন সে আসলেই কিছু বুঝতে শুরু করেছে। যদিও, একদিন সে ভেবেছিল, তার জীবনের পথে কোন স্থিতিশীলতা আসবে না। কিন্তু নিজের একান্ত অনুভূতি জানার পর, সে বুঝতে পারে—স্থিতিশীলতা আসবে। একে একে সমস্ত অস্থিরতার মাঝে, তাকে তার পথে চলতে হবে।

**শেষে স্থিতিশীলতা**

তিন বছর পর, রাজীব জানে—এই কলেজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সে আর আগের মতো অস্থির নয়। তার ভিতর এক অদৃশ্য শক্তি এসেছে—স্থিতিশীলতা। জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ, সমস্ত প্রতিকূলতা সে এখন ভেতরের শান্তি নিয়ে মোকাবিলা করতে জানে। সে জানে, যে কোন অস্থিরতা আসুক, তার ভিতরের শান্তি কখনো ভেঙে যাবে না।

এটা ছিল রাজীবের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অস্থিরতা আসবে, কিন্তু স্থিতিশীলতার মধ্যে থেকে সেই অস্থিরতা একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে।

এটাই ছিল রাজীবের গল্প—অস্থিরতার মধ্যে স্থিতিশীলতার খোঁজ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী চমৎকার লিখেছেন
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এটাই ছিল রাজীবের জীবনের শেষ শট, আর সেই শটটা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে ছোঁয়ার আগেই—নেমে এল অন্ধকার। তার হৃদয়ের ভিতরে এক দুর্বিসহ চাপ, চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছিল অস্থিরতা, কিন্তু তার মধ্যে যে শান্তির অভ্যন্তরীণ শক্তি ছিল, সেটি রাজীব এখনও বুঝে উঠতে পারেনি।

১৬ নভেম্বর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৫

বিচারক স্কোরঃ ২.৫৯ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৯১ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্বাধীনতা”
কবিতার বিষয় "স্বাধীনতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫