অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

Rakib Zafir
  • 0
  • ১৫
রাতের ঢাকার নিঃশব্দতা যেন গুমোট, সবার ঘুমানোর সময়। কিন্তু নিশাতের চোখে ঘুম নেই। তিনতলার জানাল্য দিয়ে সে বাইরে তাকিয়ে থাকে, অন্ধকার গলিটা যেন এক রহস্যের চাদরে মোড়া। তার মনে হচ্ছে, কেউ তাকে দেখছে।

পাঁচ দিন ধরে এই অনুভূতিটা তার পিছু ছাড়ছে না। অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময়, রাস্তায় হাঁটার সময়, এমনকি নিজের ঘরেও। একটা কাগজের টুকরো তিন দিন আগে তার দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাতে লেখা দিল- "তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। সময় শেষ।"

নিশাত পুলিশে রিপোর্ট করতে চেয়েছিল, কিচ কে বাকেন বা এই হুমকি দিচ্ছে তা সে নিজেই জানে না। নেই। এমনকি সে চেষ্টা করেও এর কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না। তার কোন শত্রু

সে রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করেও পারছিল না। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। একটা অপরিচিত নাম্বার। সে ধীরে ধীরে ফোন ধরল।

"হ্যালো?"

অপর প্রান্ত থেকে এক গুরুগম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো।

"তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে আনাদের কাছে। যদি সত্যি জানতে চাও, কাল রাত ১০টায় পুরান ঢাকার নির্জন ঘাটে আসবে। একা।"

নিশাত ভয়ে খরখর করে কাঁপতে লাগল। তবে তার কৌতূহল দমাতে পারল না। সে-সিদ্ধান্ত নিল, যাবে।

পরবর্তী দিন

পুরান ঢাকার নির্জন ঘাটটা যেন আরও ভয়ঙ্কর লাগছিল। আশেপাশে মানুষের চিহ্ন নেই। নিশাতের হাতে একটা ছোট পেপার স্প্রে আর ব্যাগে একটা ঘোট চাকু। তার ভেতর শক্তি সঞ্চয় করে চারপাশে তাকাল।

তখনই সে একটা ছায়া দেখতে পেল। একটা লম্বা, কালো পোশাক পরা মানুষ তার দিকে এগিয়ে আসছে। তুমি নিশাত, তাই না?"

নিশাত গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো করে বলল, 'তুমি কে? আমার সাথে কেন এইসব করছ?"

ব্যক্তিটি হাসল, তার হাসি যেন অন্ধকারকে আরও গাঢ় করল।

'তোমার বাবার পুরোনো একটা পাপের ফল তুমি ভোগ করতে যাচ্ছ। তিনি একসময় এমন কিছু করেছিলেন যা ভুলে গেছেন। কিন্তু আমরা ভুলিনি। এবার সেই গাণের মূল্য চুকানোর সময় এসেছে।"

নিশাত চমকে উঠে বলল, 'আমার বাবা তো অনেক আগেই মারা গেছেন। তুমি কী বলছ? তার সাথে এর কী সম্পর্ক?

বাক্তি কোনো উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে একটা ঘবি বের করে দেখাল। নিশাতের শিরদাঁড়া হয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। ছবিটা দিল তার ঘোটবেলার, বাবার সাথে। ছবির পেছনে লেখা ছিল- রেে রিকের ঋণ রক্ত দিয়েই পরিশোধ করতে হয়।

এ সময়ে একটা গাড়ির হেডলাইট জ্বলে। উঠল। নিশাত আর ব্যক্তিটি হতভম্ব হয়ে গাড়ির দিকে তাকাল। গাড়ি থেকে একজন যুবক নেমে এলো। তার হাতে পিয়ল। এমন

'তোমাকে অনেক খুজেছি, নিশাত। যুবকটি বদল। 'ওরা তোমাকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিল।"

নিশাতের মাথা ঘুরছিল। সে ভাবতে পারছিল না। লোকটা কে? কীভাবে জানল? আর কেনই বা তাকে সাহাযা করতে চায়?

গাড়ি থেকে নামা যুবকটি নিশাতকে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসে। তার চোখে কিছু একটা গভীর সংকরের ছাপ। "তুমি কে?" নিশাত অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।

যুবকটি বলে, "আমার নাম আরাফ। আমি তোমার বাবার পুরোনো বন্ধু রিয়াজ চাচার ছেলে। আমার বাবাও এদের শিকার হয়েছিলেন। এখন তোমাকেও এরা একই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি জানতাম এই মুহূর্তটা আসবে। তাই তোমাকে রক্ষা করার জন্য এখানে এসেছি।"

নিশাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, "কিন্তু আমার বাবা কী করেছিলেন? কেন এরা আমার পেছনে?"

আরাফের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ পড়ে। "এটা জানার সময় হয়েছে। তোমার বাবা একসময় 'ব্ল‍্যাক রেভেন' নামে এক গোপন সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তারা বিপজ্জনক কাজ করত-অস্ত্র পাচার, গুপ্ত হত্যা, এমনকি রাজনীতিবিদদের ব্ল‍্যাকমেল করত। কিন্তু তোমার বাবা একটা কাজ করার সময় তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। সেই বিশ্বাসঘাতকতায় তাদের বিশাল ক্ষতি হয়। এরপর তারা তোমার বাবাকে খুঁজতে থাকে।"

নিশাত শিউরে ওঠে। "কিন্তু আমার বাবা তো অনেক আগেই মারা গেছেনা আমি তো এসব কিছু জানতাম না।"

আরাফ মাথা নাড়ে। "তারা তোমার পরিবারকে ধ্বংস করতে চায়। কারণ তাদের ধারণা, তোমার বাবার সেই বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ এখনো তোমার পরিবারের কাছে রয়েছে। তারা হয়ত ধরে নিয়েছে, তুমি জানো কোথায় তা লুকানো আছে।"

হঠাৎ পেছন থেকে একটা শব্দ আসে। ঝোপের আড়াল থেকে কালো পোশাক পরা আরও দুজন লোক বেরিয়ে আসে। তাদের একজন চিৎকার করে বলে, "আরাফ, তুমি এখানে কেন? আমরা তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম।"

আরাফ নিশাতের হাত ধরে বলে, "আমাদের এখান থেকে বের হতে হবো" নিশাত ভয় পেয়ে যায়। 'তোমার সাথে ওদের সম্পর্ক কী?"

আরাফ তাকে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে, "আমি একসময় এদের হয়ে কাজ করতাম। কিচে এখন আমি বুঝতে পেরেছি এরা কতটা ভয়ঙ্কর।"

কালো পোশাকধারী লোকেরা বন্দুক বের করে তাদের লক্ষ্য করে। আরাফ দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয় এবং নিশাতকে ভিতরে উঠিয়ে দেয়। গুলি ছুটে আসে, কিফ গাড়ি বেরিয়ে যায়।

গাড়িতে বসে নিশাত আরাফকে বলে, "আমার বাবার সেই প্রমাণ কোথায়? আমি কীভাবে এটা খুঁজে বের করব?"

আরাফ গভীর শ শ্বাস নেয়। 'তোমার বাবার পুরনো ডায়েরি। । সেটায় সেব উত্তর আছে। সেটা হয়ত এখনো তোমাদের পুরনো বাসায় কোথাও লুকানো আছে। কিফ সমস্যা হলো, তারা সেটাও জানে। তারা ইতিমধ্যে তোমার বাড়ি তল্লাশি করেছে। তবে তারা হয়ত পুরোপুরি সফল হয়নি।"

নিশাত এক মুহূর্ত থেমে বলে, 'আমার বাবার ডায়েরি... এটা আমি শেষবার দেখেছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে।"

আরাফ বলে, "তাহলে আমরা সেখানেই যাব। কিন্তু সাবধান, ধান, এরা আমাদের পিছু নেবে। সত্যি যা আছে, তা শুধু আমাদের জানলে হবে না, এদেরও থামাতে হবে।" তোমার বাবার ডায়েরির

নিশাত আর আরাফের যাত্রা শুরু হয় গ্রামের বাড়ির দিকে। পথে তাদের গাড়ি ভাড়া করে একদল সশস্ত্র লোক। রাতের আধারে শুরু হয় গাড়ি খাওয়া, যেখানে আরাফ তার কৌশল আন আরাফ তার কৌশল আর সাহস দিয়ে একাধিকবার তাদের ফাঁকি দেয় ।

গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে নিশাত পুরোনো একটি ট্রাঙ্ক বের করে। অনেক খুঁজে সেখানে বাবার পুরোনো ডায়েরিটি পায়। ডায়েরির পাতাগুলোতে নানা সাংকেতিক ভাষায় লেখা। এক জায়গায় লেখা

"শেষ সিদ্ধান্তের দলিল, পূর্ব ঘাটের পাখরের নিচে।"

আরাফ ডায়েরির লেখাগুলো দেখে বলে, "এটা সেই প্রমাণ হতে পারে, যেতে হবে।" যা তাদের ধ্বংস করবে। আমাদের ওই জায়গায়

কিন্তু তখনই বাড়ির বাইরে কালো পোশাকের দল এসে হাজির হয়। তারা দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে। আরাফ দ্রুত নিশাতকে সিঁড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেয় আর বলে, "তুমি পেছনের দরজা দিয়ে পালাও। আমি ওদের সামলাচ্ছি।"

নিশাত ভয় পায়। "তুমি একা সামলাতে পারবে তো?"

আরাফ হাসে। "তোমার বাবার বিশ্বাসঘাতকতা যেভাবে তাদের ধ্বংস করেছিল, তেমনি এবার আমি তাদের পতনের শুরু করব। তুমি শুধু দৌড়াও।"

নিশাত আরাফের কথামতো পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। অন্ধকার রাতে গ্রামের রাস্তা ধরে দৌড়াতে থাকে। দূরে আরাফের ধ্বংসাত্মক প্রতিরোধের শব্দ শোনা যায়। নিশাতের মনে ভয় আর সন্দেহ, তবে বাবার ডায়েরি তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।

গথে অনেক বিপত্তি এড়িয়ে নিশাত পূর্ব ঘাটে পৌঁছায়। সেখানে এক বিশাল পাথরের নিচে লুকানো একটি ধাতব বাক্স পায়। নিশাত শ্বাস রুদ্ধ করে বাক্সটি খোলে। ভিতরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, ছবি, এবং একটি পেনড্রাইভ।

পেনড্রাইভে একটি ভিডিও রেকর্ডিং। সেখানে তার বাবা বলছেন,

'যদি তুমি এই বার্তা দেখো, তবে আমি হয়ত বেঁচে নেই। এই নখিগুলোতে 'ব্ল‍্যাক রেভেন'-এর সমস্ত অপরাধ লিপিবদ্ধ আছে। যারা মানুষকে নিঃশেষ করেছে, তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ার সময় এসেছে। এগুলো প্রকাশ করার জন্য তোমাকে নির্ভীক হতে হবে।"

নিশাত পেনড্রাইভ এবং নখিগুলো হাতে নিয়ে ভাবে, 'এটাই তাদের পতনের শুরু। কিক্ত আরাফ? সে কি নিরাপদে আছে?"

এদিকে আরাফ কালো পোশাকধারীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা আর সাহসিকতায় সে তাদের বেশ কয়েকজনকে পরাজিত করে। তারপর সে নিশাতের কাছে পৌঁছানোর জন্য তার যোগাযোগের সাহায্যে পুলিশের একদল বিশেষ বাহিনী ডেকে পাঠায়। তার গোগন

নিশাতের কাছে পৌঁছে আরাফ বলে, "তুমি কি প্রমাণ পেয়েছ?" নিশাত মাথা নেড়ে বলে, 'হ্যাঁ। কিরু এটা কীভাবে নিরাপদে প্রকাশ করব?"

আরাফ হামে। 'তুমি এখন সাহস দেখাবে। আমরা এটাকে সংবাদমাধ্যমে দেব। তাদের চিরতরে থামাতে হলে সত্যি সবার সামনে আনতে হবে।"

নিশাত আর আরাফ এক প্রভাবশালী সংবাদ চ্যানেলের সহায়তার পেনড্রাইডের সময় তথ্য এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সরকার এবং আন্তর্জাতিক তথ্য প্রকাশ করে। প্রমাণগুলো সংস্থাগুলো অবিসয়ে ব্ল‍্যাক রেভেন'-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তাদের কয়েকজন গ্রেভার হয়, বাকিরা গালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়ে।

নিশাতের জীবনে শারি ফিরে আসে। কিন্তু আরাফ? তার পুরোনো জীবনের শত্রুরা তাকে সহজে ছেড়ে দেয় না। নিশাত তাকে জিজ্ঞাসা করে, 'তুমি এখন কী করবে?

আরাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "আমি অন্য শহরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করব। তবে তুমি যে সাহস দেখিয়েছ, সেটা আমাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।"

নিশাত মুচকি হেসে বলে, "তোমার জীবনের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। আর যদি কখনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, জানিও।"

আরাফ নিশাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বিদায় জানায়।

নিশাত নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পায়। বাবার স্মৃতিকে শক্তি হিসেবে নিয়ে সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে। আর আরাফ? অজানা শহরে গিয়ে নতুন পরিচয়ে নিজের অতীতের পাপ থেকে মুক্তি পেতে চায়।

তাদের জীবনের পথ আলাদা হলেও, এক রাতে তাদের ভাগ্য একসঙ্গে বেঁধে দিয়েছিল। আর সেই বাঁধনে তাদের জীবনে নতুন আলো এনেছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর প্রকাশ, ভালো লাগল পাঠে

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

রাতের ঢাকার নিঃশব্দতা যেন গুমোট, সবার ঘুমানোর সময়। কিন্তু নিশাতের চোখে ঘুম নেই। তিনতলার জানাল্য দিয়ে সে বাইরে তাকিয়ে থাকে, অন্ধকার গলিটা যেন এক রহস্যের চাদরে মোড়া। তার মনে হচ্ছে, কেউ তাকে দেখছে।

১৯ অক্টোবর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫