নতুন দিন

আন্দোলন (সেপ্টেম্বর ২০২৪)

রনি হক
  • 0
  • ৮৬
জাবির ঘুম ভেঙ্গে দেখল আটটা পার হয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় সে তার বন্ধু অদৃতকে ফোন দিল।
-হ্যা, জাবির বল।
-কোথায় তুই?
-বাসায়।
-টিএসসিতে যাবি না?
-যাব।
-কখন? নয়টাতো প্রায় বাজে।
-সাড়ে নয়টার ভিতর নীলক্ষেতে চলে আয়। আমি যাচ্ছি।

জাবির উঠেই নাস্তার জন্য তাড়া দিতে লাগল তার মাকে।
-এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? কোথায় যাবি?
-কাজ আছে। ভার্সিটিতে যেতে হবে একবার।
-কারফিউ চলছে, আজ আবার বাইরে কি?
-বললাম তো কাজ আছে।
-কাজটা কি?
-মিটিং হবে।

নিউমার্কেট সিগন্যালের পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল জাবির আর অদৃত। কারফিউ থাকার কারনে দোকানপাট সব বন্ধ। শুধু একজন বৃদ্ধ মানুষ ফ্লাস্কে করে চা বিস্কিট বিক্রি করছিলেন।

তারা যাবে টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে। সেখানে মিটিং হবে। মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কারফিউ ভঙ্গ করা হবে কি হবে না।

তারা হাঁটতে হাঁটতে চলল। চারদিক কেমন থমথমে। পরপর দুইটি পুলিশ ভ্যান চলে গেল। কিন্তু হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল পেরিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের বাসার কাছাকাছি আসতেই সামনে থেকে লোকজনের গলার আওয়াজ শোনা যেতে লাগল।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে দেখা গেল লোকে লোকারণ্য। উত্তাল জনসমুদ্র ফুঁসছে। সিদ্ধান্ত হলো মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার...

সামনে খুব বেশি ভীর নেই। মূল মিছিল অনেকখানি পিছনে। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, সাউণ্ড গ্রেনেডে মিছিলের গতি একটু মন্থর করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি একেবারে। টগবগে রক্তের এক ঝাঁক যুবক এগিয়ে আসছে সামনের দিকে। ভয়ডরের লেশমাত্র তাদের চোখেমুখে নেই। তারা চায় ঝলমলে আলোর নতুন এক দিন। যেখানে থাকবে শুধু সাম্য, বৈষম্য বলে কিছু থাকবে না।

যারা অনেকটা এগিয়ে পুলিশের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ করছে, তাদের মধ্যে আছে জাবিরও। এদের হাতে অস্ত্র নেই। ইট পাটকেল লাঠিসোটা যা আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে তারা। কিন্তু কতক্ষণ আধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকতে পারা যায়। কয়েক সেকেণ্ডের বিরতিতে পর পর দুইটি বুলেট এসে জাবিরের শরীরে লাগল। তারপরও চেষ্টা করলো সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে কিন্তু পারল না। টাল খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে।

কয়েকজন বন্ধু এগিয়ে এসে ধরাধরি করে নিয়ে ছুটল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে...

জাবিরের মা তখন যোহরের নামাজ পরে বাইরের বাড়ান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। দারুণ রোদ উঠেছে। হাওয়াটাও উষ্ণ। রেনট্রি গাছের ডালে বসে কাক ডাকছে একটা। তিনি কেমন যেন অস্থিরতা অনুভব করলেন। জাবিরের কথা মনে হলো তার। তিনি মনে মনে বললেন, ছেলেটা যে কোথায় গেল? এমনিতে দেশের অবস্থা ভালো না...কত করে বললাম খেয়ে যা, না খেয়েই বেড়িয়ে গেল।

তিনি বাড়ান্দা থেকেই ডাকলেন, জুঁই!
-হ্যা, মা।
-জাবিরকে একটা কল দে তো।
-আচ্ছা দিচ্ছি।

জুঁই কল দিল। দুইবার রিং হলো। কেউ রিসিভ করলো না।

তৃতীয় বারের বেলায় রিসিভ করলো অন্য কেউ। রিসিভ করা মাত্রই লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি কানে এলো তার।
-আমি জাবিরের বন্ধু। জাবির খুব অসুস্থ, ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।
-আমি তার বোন। কি হয়েছে ভাইয়ার?
-গুলি লেগেছে।

চিৎকার করে উঠল জুঁই। বাড়ান্দা থেকে ছুটে এলো জাবিরের মা।
-কি হয়েছে?
-ভাইয়ার গুলি লেগেছে।
-হে আল্লাহ! একি হয়ে গেল।

জাবিরের বাবা আলতাফ সাহেব বিছানায় কেবল একটু শরীর এলিয়ে দিয়েছেন। এই সময় চিৎকার চেঁচামেচি কানে এলো তার...

স্ট্রেচার নিয়ে সবাই দৌড়াচ্ছিল। জাবির অবসন্ন চোখ দুটি মেলে দেখতে পেল একদল ব্যস্ত মানুষ তাকে নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে। এদের ভিতরে সে তার বন্ধু অদৃতকেও দেখতে পেল। অস্পষ্ট ভাবে জাবির শুনতে পেল অদৃত তাকে বার বার বলছে, চোখ খুলে রাখ বন্ধু! জাবির চোখ খুলে রাখতে পারছে না। অতল এক ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে সে। ঘুমের ঘোরে সে বিড়বিড় বলল, Miles to go before I sleep...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
mdmasum mia সুন্দর।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কেতকী ‌শেষ কথাটা খুব ছুঁ‌য়ে গে‌লো
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
doel paki জীবন দিয়ে এভাবেই সফলতা এনে দিয়েছে তরুণেরা।
ভালো লাগেনি ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ফয়জুল মহী গভীর ভাবনার অনবদ্য সৃজন
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

জাবির আর অদৃত দুই বন্ধু আন্দোলন সফল করার উদ্দেশ্যে মিছিলে যায়। মিছিলে জাবিরের গায়ে পুলিশের গুলি লাগে।

১৪ আগষ্ট - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪