ঢাকা শহর। এখানে প্রতিটি সকাল, প্রতিটি সন্ধ্যা যেন এক নতুন যুদ্ধের গল্প। যানজটের শহর হিসেবে খ্যাত এই নগরী প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে কর্মস্থলে পৌঁছানোর সংগ্রামে অংশ নিতে বাধ্য করে। আমি শাহরিয়ার, এ শহরের এক সাধারণ বাসিন্দা। আমার বাসা মোহাম্মদপুর, অফিস কাওরান বাজারে। প্রতিদিন আমাকে অফিসে যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা আর ফিরতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে, আর এই পুরো সময়টা যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটে।
সকাল বেলাঃ এক যুদ্ধের শুরু
প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে আমি ঘুম থেকে উঠে তৈরি হই অফিসে যাওয়ার জন্য। আমার অফিসের সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। মোহাম্মদপুর থেকে আসাদ গেট এভিনিউ পর্যন্ত যেতে আমি সাধারণত প্রজাপতি পরিবহন অথবা পরিস্থান পরিবহনের বাসে উঠি। এই ছোট পথটাও পার হতে আমাকে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে, তাও যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকে।
মোহাম্মদপুরের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়, বাসের জানালা দিয়ে চারপাশের মানুষের মুখের দিকে তাকাই। সবাই যেন একই চিন্তায় মগ্ন—কখন এই ট্রাফিক শেষ হবে? কেউ কেউ হয়তো হর্নের আওয়াজে বিরক্ত, আবার কেউবা গাড়ির ধোঁয়ার গন্ধে নাক ঢাকে। কিন্তু দিনের শুরুতেই এই যানজট যেন সকলকে ক্লান্ত করে দেয়। মাঝে মাঝে রিকশার সঙ্গে বাসের ধাক্কাধাক্কি, প্রাইভেট গাড়ির হুটোপুটি, এবং রাস্তার মাঝখানে থেমে থাকা মোটরবাইকগুলো এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে।
আসাদ গেটে গাড়ি পরিবর্তনঃ
আসাদ গেট পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৩০ মিনিট কেটে যায়, আর সেখানে পৌঁছে আবার আমাকে বাস পরিবর্তন করতে হয়। লাব্বাইক পরিবহন বা ওয়েলকাম পরিবহনের বাস ধরতে চেষ্টা করি, কিন্তু এগুলোর জন্যও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আসাদ গেট এভিনিউ যেন ঢাকার যানজটের এক কেন্দ্রবিন্দু। এখানে পৌঁছানোর পর প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হয়, আরেকটা যুদ্ধ শুরু হলো। লাব্বাইক পরিবহনের বাসে উঠে কাওরান বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে প্রায় আরও ৪০-৫০ মিনিট লেগে যায়।
বাসে ওঠার পর ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা মানুষের চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কেউ হয়তো অফিসে পৌঁছতে দেরি হওয়ার চিন্তায় উদ্বিগ্ন, আবার কেউবা সবকিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। রাস্তায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যানজটের কারণে আমার সহযাত্রীদের মধ্যেও বিরক্তি বেড়ে যায়।
অফিসের দিনঃ
অবশেষে কাওরান বাজার পৌঁছে যখন অফিসের বিল্ডিংয়ে পা রাখি, মনে হয় যেন প্রথম রাউন্ডের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজের দিনের শেষেও যেন আরেকটা যুদ্ধ অপেক্ষা করছে—ফেরার পথ। অফিসের কাজ শেষে, সন্ধ্যা ৭টায় বের হওয়ার পর, আবার সেই চিরচেনা যানজট। অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে মাঝে মাঝে এই ট্রাফিক নিয়ে কথা হয়, সবাই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি।
কেউ কেউ ভিন্ন রাস্তায় চেষ্টা করেছে যানজট এড়িয়ে যাওয়ার, কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসেনি। ঢাকার এই যানজট যেন আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে।
সন্ধ্যার যুদ্ধঃ বাড়ি ফেরা
সন্ধ্যা ৭টার পর অফিস থেকে বের হয়ে আবার সেই আসাদ গেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। লাব্বাইক পরিবহনের বাসে উঠি, কিন্তু সন্ধ্যার এই সময়ে রাস্তার ভিড় যেন আরও বেড়ে যায়। রাস্তার মাঝে প্রাইভেট কার, বাস, মোটরবাইক, সব মিলিয়ে এক বিশাল জটলা। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখে মনে হয়, যেন একটা অচল শহর।
আসাদ গেটে এসে আবার গাড়ি পরিবর্তন করে প্রজাপতি পরিবহন অথবা পরিস্থান পরিবহনের বাস ধরতে হয়। তখন রাস্তায় বাতাসে গাড়ির ধোঁয়ার গন্ধ আর মানুষের ব্যস্ততা মিলেমিশে একটা ভারী পরিবেশ তৈরি করে। আমার বাসায় ফিরতে প্রায় ২.৫ ঘণ্টা লেগে যায়, আর বাসায় পৌঁছে শরীর আর মন দুইই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
যানজটের দিনশেষের স্বপ্নঃ
প্রতিদিনই এই যানজটের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরে মনে হয়, যদি কখনও ঢাকার এই যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যেত! কখনো কখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন এই শহরের রাস্তাগুলো খালি থাকবে, আর গাড়ি চলবে নির্বিঘ্নে। রাস্তায় কোনো থামা নেই, ট্রাফিক সিগন্যাল নেই—শুধু শান্তিপূর্ণ যাত্রা।
কিন্তু প্রতিদিন সকালে যখন বাস্তবতার মুখোমুখি হই, তখন আবারও সেই যানজটের অসহায় পরিস্থিতি। ঢাকার এই যানজট আমাদের জীবনের অংশ, যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেন কঠিন। তবুও আশা রয়ে যায়—একদিন হয়তো এই শহরের রাস্তাগুলো শান্ত হয়ে যাবে, আর আমরা পাব মুক্তির স্বাদ।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এই গল্পে ঢাকার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, যেখানে যানজট একটি অপরিহার্য অংশ। শাহরিয়ারের মতো হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে সময়মত অফিসে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, আর দিনের শেষে ঘরে ফেরার জন্য আবারও সেই একই যুদ্ধের মুখোমুখি হয়।
১৩ মে - ২০২৪
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪