অবহেলা আর অবহেলা

অবহেলা (মে ২০২৪)

আদনান খালিদ সাম্য
  • 0
  • ২৬
রিশা তাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান,সে তার মা এবং ছোট্ট ভাই রাশানের সাথে ধানমন্ডির একটা বাড়িতে থাকে,তার ভাইয়ের বয়স ১৪ আর তার বয়স ২২,সে তার ভাইয়ের চেয়ে ৮ বছরের বড়।সে নিজের ভাইকে খুব আদর করে এবং তার ভাইও তাকে মন দিয়ে ভালোবাসে,তার ভাই কখনো তার সাথে বেয়াদবি করে নি,আর সে তার ভাইয়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে নি,তো এমনি একদিন তার ভাই তার কাছে এসে বলল,দিদি,আমাকে তোর একটা কলম দিতে পারবি,রিশা বলল,হ্যা,বলে সে তাকে একটা কলম দিয়ে দিল,রাশান সে কলমটা নিজের প্রয়োজনের নিয়েছিল অবশ্য,আর সে বলেছিল, ফেরত দিয়ে দিবে,কিন্তু সে দিতে পারেনি কোন এক কারণে, আর এই কলমটা রিশার বয়ফ্রেন্ড গিফট করেছিল, আসলে রাশান এর বন্ধুরা সেটা নিয়ে গিয়েছে,বেচারা টের পায়নি,তবে এর ফলে দিদিকে সরি বলার প্রয়োজন বোধ করেনি,কিন্তু দিদি তার নামে নালিশ করে দেয়,রাশান তখন বাসায় ছিল না, মা বলল,ছেড়ে দে তো,হারিয়ে ফেলেছে ভুল করে,এত রাগের কি আছে,তুইও না,রিশা ফিরে এলো, তার মনে পড়ল,তিন বছর আগে তার ভাই যখন ক্লাস ৫ এ পড়ত সেও তার ভাইয়ের একটা কলম হারিয়ে ফেলেছিল,সে যদিও বিচার দেয়নি,মা জেনে গিয়েছিল,তখন তো মা খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিল,আজ এমন কেন,কিছুটা উপলব্ধি হল,মা এমন করছে কি কারণে,ও তো,আচ্ছা যাই হোক, এখন যা হয়ে গেছে তা নিয়ে মাথা ঘামানোরই দরকার হয়না, যদিও কঠিন কাজ, তবুও সে সামলে নিল,তার জানা ছিল,ছোট্ট সন্তানদের মা বাবারা বেশি প্রায়োরিটি দেয়,এতে হিংসা করার কিছু নেই, সে ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাচ্ছে না,নিজের ভাইকে সে খুব ভালোবাসে,২ বছর আগে তো সে রাশানকে পানিতে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়ে দিয়েছিল,আর রাশানও তাকে আত্নহত্যা থেকে বাচিয়েছিল,বুঝিয়েছিল জীবনের আসল মানে,গলায় দড়ি দিয়ে প্রায় মারা যাচ্ছিল সে।দুর্গাপূজার তখনও বেশ দেরি,তবে রেশ পড়ে গেছে এখনই,একদিন বই পড়ার সময় রাশান এসে ডাক দিল,দিদি,রেডি হ,পুজোর শপিংয়ে যাবি আয়,সে বলল,আচ্ছা,হচ্ছি,।রাশান বলল,দিদি তাড়াতাড়ি রেডি হোস,শপিং মল বন্ধ হয়ে যাবে,খুব সস্তা দামে ভালো ভালো জামা পাওয়া যাচ্ছে,তাড়াতাড়ি কর,।।।।
রাশান আর রিশা একসাথে হাটছিল,মা সামনে হেটে হেটে জামা কাপড় বাছাই করছেন,রাশান বলল,দিদি,দেখছ,কত ভিড়, হাটা যাচ্ছে না ঠিকঠাক, দুবার তো আমার কেডস ও খুলে গিয়েছিল,আর একটু হলে ম্যানহোলে যেত,তখন কি হত বল তো,রিশা হাসল,ছেলে তো মন্দ বলেনি,মা একটা দোকানে ঢূকলেন,সেখান থেকে রাশানের জন্য একটা পাঞ্জাবি আর একটা ধুতি কিনলেন,ফুল সেট,দোকানদার মা  সব মিলিয়ে দাম চাইলেন,৫০০০ টাকা,মা বললেন,কিছু  টাকা কমে দেয়া যায় না! দোকানদার বললেন,১০% ডিসকাউন্ট দেওয়া যায় না,দোকানদার বললেন,৪০০০ এর কমে দিলে লস হবে,বলুন নেবেন কি না,সিল্কের পাঞ্জাবি,পিওর রাজশাহীর মাল,বলুন নেবেন কি না,এত সস্তা আর কোথাও পাবেন।তো মা আর কথা বাড়ালেন না,কিনে নিলেন ৪০০০ দিয়েই,আর এখন একটা লেডিস শপে ঢুকলেন,সেখানে ৩০০০ টাকার একটা টপ দেখলেন,দোকানী বললেন,২৫০০ টাকার নিচে সম্ভব নয়,সে মনে করল,মা এটা কিনবেন,কিন্তু মা বললেন,আচ্ছা আরেকটা দিন দেখি,এখন যেটা এলো, স্কিন কালারের,এটা রিশার এটা পছন্দ হল কারণ স্কিন জানাই সে বেশি পড়ে থাকে,তবে একটা ধাক্কা  খেল,মনে মনে ভাবল,মা রাশের জন্য ৪০০০ দিয়ে জামা কিনলেও তার জন্য ৩০০০ দিতে রাজি হলেন না,তার খুব কষ্ট পেল সে,সে ভাইকে বাসায় জিজ্ঞেস করল,রাশান,তোর জামা ভাল লেগেছে,রাশান বলল,হ্যা,দিদি,তোর ভালো লেগেছে,রিশা না বলল না।রাশান বলল,মা দেখলাম আমার জন্য ৪০০০ খরচ করলেও তোর জন্য ২৫০০ দিয়ে জামা কিনলেন,কেন রে দিদি,রিশা উত্তর দিতে পারে না,কি বলবে সে,সেও তো জানে না এর কারণটা আসলে কি।
খুব রমরমা পরিবেশ,দুর্গাপূজা যে আজ,আজ সবাই খুশি,রাশান, মা আর রিশা একসাথে মন্দিরে গেল পুজা দিতে,খুব বড় পরিসরে দুর্গাপূজা হচ্ছে,দেবীকে প্রণাম শেষ,ভোগ নেয়াও শেষ, এখন পালা টিকা প্রদানের, মা নিজ হাতে রাশানকে চন্দন টিকা দিয়ে দিলেন,আর রিশাকে বললেন,পুরোহিত ঠাকুরের কাছ থেকে চন্দন টিকা নিয়ে আয় মা,রিশা গেল,তার ভালো লাগছে না,মাকে জিগ্যেস করল,মা,আমাকে টিকা নেওয়ার জন্য পুরোহিত ঠাকুরের কাছে পাঠালে কেন,মা বললেন,পুরোহিতরা সনাতনধর্মে খুব সম্মানিত,তোর পুণ্যি হবে রে রিশা,রিশার এই কৈফিয়ত ভালো লাগল না,যদিও তা খুব লজিক্যাল ছিল,

বাসায় গেল,সে ভাবল,সে টিকা দিল কি না দিল,এতে কিছু যায় আসে না কারও,তবে এটা ভুল ছিল,মায়ের মনে ছিল অন্য কিছু,সেতো রিশাকে জীবনের মানে বোঝাচ্ছে,রিশা বুঝছে না,তার মনে জলছে কামনার আগুন,রিশার মা চায়,রিশা নিজের পায়ে দাড়াতে শিখুক,তবে এই বিষয়টা প্রধানত,এই টিকার বিষয় রিশার মনকে তিক্ত করে তুলল,মনে পড়ল,রাশানের জন্মের দিন মা সবাইকে যে রসগোল্লা খাইয়েছিলেন,আর তার দাদিকে জিজ্ঞেস করলে জানল,তার জন্মের সময় খাইয়েছিল ছানা পায়েস,এটা তার মনের আগুন জ্বালিয়ে দিল,নিজেকে বিরত রাখা কঠিন হলো তার পক্ষে, কামনার আগুন লাগল ঠিকঠাকভাবেই,জীবনকে ভ্রান্ত মনে হল,গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল,টিপ করে শব্দ হলো, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল,।
পরদিন,গোসলে ঢুকেছে, এমন সময় রাশান ডাকল,দিদি,মারকেটে যাবি,সে বলল,না, তোরা যা,আজ শরীর ভালো লাগছে না, যা,সে স্পষ্ট শুনল,রাশান মাকে গিয়ে বলল,মা,দিদির ভালো লাগছে না,যাবে না,মা বললেন,আচ্ছা,অসুস্থ তো থাক,যাওয়ার আগে বলে গেলেন,মা,দরজাটা বন্ধ করিস,গোসল সেরে একটা তোয়ালে পেচিয়ে রিশা বেড়িয়ে এল,আয়নায় নিজেকে দেখল,আজ সে বুঝেছে যে মা তাকে ভালোবাসে না,আয়নার কাছে গেল,তার ঠোঁটের কোণে যে তিল ছিল তা তার চোখে পড়ে গেল,আজ সে প্রায়শ্চিত্ত করবে,আজ করবে সে,অবশই করবে,।তাড়াতাড়ি সে কাপড় পড়ে নিল,আজ পড়ল,লাল জামা,লাল একটা স্কার্টটা পড়ে নিল,
রাত হয়ে গেছে,বাইরের সব স্ট্রিট লাইট নিভে গেছে,কিছু প্রতিশোধের আগুন যে নেভে না,রিশা এগিয়ে গেল,মা ঘুমোচ্ছে,এসিটা অন করল,সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় দিয়ে চলে গেল,মা হাইপোথারমিয়ায় মারা গেলেন, এখন রাশানের পালা,সেই যে মুল কারণ এই অবহেলার,রাশানের রুমে গেল,ঘুমোচ্ছে,আজ সারা জীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেই,।ঘুমের মধ্যে নিঃশব্দে নাড়ি কেটে হত্যা করল ভাইকে।তারপর সব চুপ,চারপাশ নিরব,।কিছুক্ষণ পর রিশা নিজেও গলা কেটে আত্নহত্যা করল,।একা একা থাকার চেয়ে মারা যাওয়া ভালো। কিন্তু দেখুন,নিরব পৃথিবীর মধ্যে নিরব এক লালসা কত বড় সর্বনাশ করে দিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
mdmasum mia বেশি অবহেলা পেলে মানুষ অনেক সময় হিংস্র হয়ে উঠে তাই বলে হত্যা বা আত্মহত্যা ঠিক নয়।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এটা সম্পুর্ন সামঞ্জস্য রাখে,যেহেতু অবহেলা আর তার প্রতিশোধ এর গল্প,নিসন্দেহে এটা সামাঞ্জ্য রাখে,কোন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নেই।

০২ এপ্রিল - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "যানজট”
কবিতার বিষয় "যানজট”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৮ অক্টোবর,২০২৪