দরিদ্র স্বামী স্ত্রী সংসার

অভিমান (এপ্রিল ২০২৪)

Junayed Ahmed
  • 0
  • ৩৫
তনুর ছোট বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছে, রাস্তার মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় একজন হকারের সাথে দেখা। হকারটা এতিম ছিলেন। তনু তাকে আগে ফেরিওয়ালা কাজ করতে দেখেনি। কেন তিনি ফেরিওয়ালা হলেন? তনু জানতে চায়। ফেরিওয়ালার নাম আতিক। আতিকের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এখন তার কাছে চাকরিতে যোগদানের জন্য কোনো টাকা ছিল না। তার বাবা-মা গরিব ছিলেন। সে টেনেটুনে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার কয়েক মাস পর তার বাবা-মা মারা যান। আতিকের কোনো আপন ভাই বোন নেই। তার কথা শুনে তনু খুব কষ্ট পেল। রাতে বাবা-মাকে কিছু না বলে পালিয়ে যায় সে। কাজী অফিসে লাভ ম্যারেজ করে বিয়ে করেন আতিক এবং তনু। তনুর ছোট বোনের নাম ফাইজা ইসলাম। স্কুল ছুটিতে বান্ধবীর সাথে হাঁটছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই তনুর স্বামীর বাড়ি। ফাইজা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছায় তখন তার বড় বোন তাকে দেখতে পায়। ফাইজা তার বাবা-মাকে জানান, ফাইজার বাবা চেয়ারম্যান ছিলেন। ফাইজা বাবাকে বলল: আমি যখন বাড়িতে আসি, তখন আমার বড় বোন প্রাইমারি স্কুলের পাশের বাড়ির উঠোনে দেখেছি। সে স্নান সেরে তার জামা কাপড় রোদে শুকাতে দেয়। ছোট মেয়ের কথা শুনে মা বসার ঘরে বসে ভাবছেন। কয়েক মিনিট পর, আমার বাবা বুঝতে পারলেন যে আমার তৃতীয় মেয়ে আমাদের না জানিয়ে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। চেয়ারম্যান সাহেব এক লোকের কাছে গিয়ে বললেন, পাশের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পাশে আমার ছোট মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে, কার সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে তুমি খবর জানার পর আমার কাছে বইল। খবর নিতে লোকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামে যায়। তার বায়োডাটা নিয়ে তিনি চেয়ারম্যানের হাতে বায়োডাটা দেন। বায়োডাটাতে লেখা ছিল ছেলে শিক্ষিত, তার পরিবার গরিব, টাকার জন্য চাকরিতে যোগ দিতে পারেনি, আর এখন সে ফেরিওয়ালা। বাবা বড়, মেজ, ছোট মেয়েকে জানিয়ে দিলেন, তোমার তনু বোন আমাকে না বলে দরিদ্র পোলার সাথে বিয়ে করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামের। কয়েক মাস পর ফাইজা মাধ্যমিক এস.এস.সি পরীক্ষা। ফাইজা বাবাকে বলল আমার এস.এস.সি পরিক্ষা। সবাইকে আমার গ্রামে আসতে বল। বাবা ছোট মেয়ের কথা শুনে তার বড় বোন ও মেঝো বোনকে ফোন করলেন। বাবা বললেন তোমাদের ছোট বোনের সামনে পরীক্ষা। ছোটবোনকে দোয়া করার জন্য আমার গ্রামে এসো। বাবার কথা শুনে কিছুক্ষণ পর তারা বাবার গ্রামে চলে আসে। ফাইজা বাবাকে তনুর নাম বলে। কিন্তু ছোট বোনের কথা শুনে বাবার কলিজা শুকিয়ে গেল। বাবা কাঁদছে। কাল মিষ্টি নিয়ে ফাইজার পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তনুকে গ্রামে আসার জন্য অনুরোধ করেন।

বাবার নাম: রফিক, বড় বোনের নাম: জান্নাত, বড় বোনের স্বামীর নাম: সালাম, মেঝো বোনের নাম: শুমি এবং মেঝো বোনের স্বামীর নাম: আবদুল্লাহ। ঢাকা থেকে বাবার গ্রামে আসেন সালাম ও জান্নাত। তিনি বাজার থেকে সোনার মালা, দই ও মিষ্টি নিয়ে আসেন। চাঁদপুর থেকে সুমি ও আবদুল্লাহ এসেছে গ্রামে। তিনি বাজার থেকে কিছু সন্দেশ ও পরীক্ষার জন্য কিছু কলম, বেগ, রাবার কিনলেন। তনু আর আতিক গ্রামে শুধু কলম নিয়ে আসে, কিন্তু বেচারা গরীব তার কারণে আর কিছুই কিনতে পারেনি। তনুর হাতে কলম দেখে বড় ২ বোন হাসতে শুরু করে, তনু ও আতিক বিরক্ত হয়ে যায়। তনু বড় ২ বোনকে চ্যালেঞ্জ দেয়। আমরা গরীব মানুষ বলে ঘ্রীনা করছ! গরিব থেকে ধনী হয়ে দেখাই দিব। আর তোরা অহংকারের কারনে গর্তে পড়ে যাবি।

তনু আতিককে বলল, "যাই হোক আমরা গরিব থেকে অনেক বড় হবে। আমি আমার দুই বোনকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, আর আমি ২ বোনের বাড়ির সামনে যাব না।" আতিক তার কথা মেনে নেয়। তনু আর আতিক ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ শুরু করে। তনু রাস্তার ফেরিওয়ালার কাজ করছে কিছুক্ষণ পর তার দুই বড় বোন সামনে আসে, ২ বড় বোন ঢাকা যাচ্ছে। দুই বোন হাসতে হাসতে বলল শেষ বারের মত তুই গরীবকে বিয়ে করে ফেরিওয়ালা হয়ে গেলি। তার কথা শুনে তনু হালকা রেগে গেলেন এবং বললেন আমি সব হইতে পাড়ি। তারা ঢাকা শহরে চলে গেল। সালামের শ্বশুর বাড়িতে তার পরিচিত একজন আছে, তাকে ডেকে আতিককে মালামাল দিয়ে মারতে বলে। আতিককে মারধর করার পর, আতিক বাড়ির সামনে এসে তনু দ্রুত আতিকের কাছে যায়। কয়েকদিন পর বড় দুই বোন ও তার স্বামী তনুর বাড়িতে মারধরের ঘটনা জানতে আসে। আতিক অসুস্থ, ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজে যেতে পারছেন না। তনু একা ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ করতে চায়। মাঝপথে তনুর বাবা সামনে এলেন, মেয়েকে দেখে বাবার খুব খারাপ লাগল। বাবা বললেন, ফেরিওয়ালা হয়ে কাজ করতে হবে না। আমি তোমাকে সব টাকা দেব। বাবার কথা শুনে তনু প্রত্যাখ্যান করে। সকালে, ফাইজা তনুর বাড়িতে আসে, ফাইজা তনুকে জানায় যে তার বাবা অসুস্থ। তনু আর আতিক বাবার গ্রামে আসে বাবাকে দেখতে। বাবাও তাদের দেখতে চায়, কিন্তু মা তাকে ঘরে ঢুকতে দেয় না।

তনু ও আতিক একসঙ্গে হকারের কাজ করে টাকা সংগ্রহ করে। ওই টাকা দিয়ে বাজারে একটি বড় দোকান দিয়েছেন। তনু ও আতিক একই দোকান চালাচ্ছে। ভালোই চলছে ব্যবসা। কয়েকদিন পর সালামের পরিচিত লোকজন দোকানের তালা ভেঙ্গে জিনিসপত্র চুরি করে। সকালে অনেকেই আতিকের দোকানে গিয়ে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। আতিক দোকানে ঢুকে কোন জিনিসপত্র দেখতে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে দোকানের ভিতরে মাটিতে বসে পড়ে। তারা ভাবছে এখন কী করবেন, গ্রামে ব্যবসা করলে আয় হবে না। তারা শহরে গেল। আতিক শহরে রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা রোজগার করে এবং তনু বাসা খুঁজতে গিয়ে বড় বোনের বাড়িতে যায়। কিন্তু তনু তাদের বাড়িতে কাজ করবে না। তাই সে সুইপারের কাজ শুরু করে। তারা ২ জন ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান এবং বড় কাপড়ের দোকানে কাজ শুরু করে। টাকা জোগার করতে গিয়ে আতিক চাকরি পেয়ে যায়।

দুই বড় বোনের জামাইয়ের ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। একজন ব্যক্তি এমন পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন যা তার কাছে পৌঁছায়নি। এক লাখ টাকা খরচ করে তিনি বিশ লাখ পাবে। কিন্তু তিনি এটা পায়নি। আরেক বোনের জামাই ছিলেন প্রধান শিক্ষক। কর্মচারীরা বেতন না দিয়ে কর্মচারি তাকে লাথি মেরে বের করে দেয়। লস খাওয়ানোর পর তারা গ্রামে ফিরে যায়। সে তার বাবার কাছে টাকা চাইছে। বাবা এক লাখ টাকা দিয়েছেন। বাবা টাকা দেওয়ার পর তারা ঢাকায় ফিরে যায়। তারা চোরাচালান ব্যবসা শুরু করে। তার ব্যবসা ভালো চলছিল না এবং বাড়ির ভাড়াও দিতে পারছিল না।

রোগে ভুগছেন ফাইজা। বাবা ফাইজাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, বললেন এক সপ্তাহের জন্য ডাক্তারের কাছে আসতে। ফলাফল দেখার এক সপ্তাহ পরে, বাবা হতাশাগ্রস্ত। এই রোগের নাম ক্যান্সার। ফাইজা ও বাবা ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় আসার পর বড় জামাই রিকশাচালক। ফাইজা দুলাভাইকে বলল, “তুমি রিকশাচালক,” কিন্তু বড় জামাই বাকরুদ্ধ। বাবা তাকে বললেন "আমার মেয়ে ফাইজা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। তুমি কি তাকে সাহায্য করতে পারবে?" তার চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা ছিল না। বাবা ও ফাইজা কয়েক ঘণ্টা পর এই এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। তারা বড় বোনকে দেখেছে। বাবা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। ফাইজা শুমিকে বলল, তুমি গরীবের মতো রাস্তায় হাঁটছ কেন? সুমি সব বুঝিয়ে দিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের দরিদ্র পরিবার থেকে তনু এখন বড় পরিবারে পরিণত হয়েছে। ৮ নম্বর গলি ২৫ নম্বর তনুর বাড়ি। ফাইজা তনুর বাসায় গেলে তনু আর ফাইজা খুব খুশি হয়। ফাইজা বাবা তনুর সাথে ক্যান্সার রোগের কথা শেয়ার করেছেন। এই কথা শুনে তনু ফাইজাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি আমার কলিজা ছোট বোনকে মরতে দেব না। আতিক ফাইজাকে হাসপাতালে নিয়ে ফাইজাকে সুস্থ করে তোলে। তিনি আগের মতোই সুস্থ হয়ে গেছে। বাবা, তনু ও আতিক খুশি।

বড় বোন ও মেঝো বোন জামাইকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিল। সে তার বাবার কাছে টাকা চাইছে। বাবা বললেন, এই ঘর ছাড়া আমার কাছে জিনিসপত্র নেই। মা বললেন, তনুর সংসার পাশের বাড়ির সবাইকে দান করছে, ওখানে যাও। বড় বোন তনুর প্রতি অন্যায় করেছে বলে ২ বোন তার কাছে যাচ্ছে না। ফাইজা তাদের তনুর কাছে যেতে বলে। ফাইজারের কথা শুনে সবাই তনুর বাসায় যেতে শুরু করে। পৌঁছানোর পর তনু তার বড় দুই বোনকে দেখে রেগে যায়। বড় দুই বোন ক্ষমা চায়, তনু সহজে মাফ করে না। ফাইজা তনুকে বলল, তুমি ওকে মাফ করে দাও। আতিক সুপারিশ করেন। তনু তার ছোট বোনের কথা শুনে তাদের ক্ষমা করে দেয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sadman Saom ভালো লেগেছে
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর প্রকাশ।দারুণ শব্দ চয়ন। ভীষণ মুগ্ধ হলাম পাঠে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

তনুর ছোট বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছে, রাস্তার মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় একজন হকারের সাথে দেখা।

০৮ মার্চ - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪