একটি সাধারণ দুপুরে, ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, মোবাইল ফোনে রং নাম্বার এসেছিল নুসরাত জাহানের। ফোনটা ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে একটি অজানা কণ্ঠ ভেসে এল, "হ্যালো, তৃষা?"
নুসরাত কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এরপর আস্তে আস্তে বলল, "আপনি ভুল নম্বরে ফোন করছেন, আমি তৃষা না, নুসরাত।"
অপর প্রান্ত থেকে একটু থমকে গিয়ে পুরুষ কণ্ঠটি বলল, "ওহ, দুঃখিত। আসলে... আমি মুক্তাদুল। তৃষার সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। মনে হলো, একবার ফোন করে দেখি।"
নুসরাত একটু অবাক হয়ে শুনল, কিন্তু কিছু বলল না। মুক্তাদুলের কণ্ঠে এমন এক ধরনের আলাপচারিতা ছিল, যেন দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু, যেন কিছু না কিছু জানাই আছে।
তৃষা, যাকে মুক্তাদুল মনে করেছিল, সে কে ছিল না জানা নুসরাতের। কিন্তু কিছুটা কৌতূহল তাকে ওই ফোনের সঙ্গী হতে বাধ্য করল। "তৃষার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কি ছিল?" নুসরাত জিজ্ঞেস করল, তীক্ষ্ণ কৌতূহলে।
মুক্তাদুল কিছুটা হাসি দিয়ে বলল, "তৃষার সঙ্গে আমার অনেক ভালো স্মৃতি ছিল। সে ছিল আমার প্রথম ভালোবাসা, আমার হৃদয়ের এক অমূল্য রত্ন। তবে জীবন আমাকে তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। কারণ, তৃষার জীবন ছিল অন্য কোন দিক থেকে বাঁধা, এবং আমি সে সময় কিছুই করতে পারিনি।"
নুসরাত কিছুটা নিরব থাকল। তার মনের মধ্যে একধরণের সংশয় ছিল—কেন মুক্তাদুল তৃষার কথা এত আন্তরিকতার সঙ্গে বলছে? তাহলে কি তাদের মধ্যে কিছু গোপন ছিল, যা তৃষা তাকে না বলেই সরে গিয়েছিল?
এমনকি মুক্তাদুলের কাছ থেকে জানা গেল, সেই সম্পর্ক অনেক বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছিল। তৃষা অন্যত্র জীবন শুরু করেছিল। আর মুক্তাদুল নিজের কাজ, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তার মনে আজও তৃষার স্মৃতি অম্লান ছিল।
"তৃষার প্রতি আপনার অনুভূতি কি এখনো বেঁচে আছে?" নুসরাত একেবারে সরাসরি প্রশ্নটি করল।
মুক্তাদুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "আমি জানি না। হয়তো এখন আর তেমন কিছু অনুভব করি না, তবে সে ছিল আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কখনো কখনো মনে হয়, যদি আবার তার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম, তাহলে সবকিছুই অন্যরকম হতো।"
নুসরাত আর বেশি কিছু বলতে চাইল না। তার মনে হয়েছিল, মুক্তাদুল সত্যিই তৃষার প্রতি ভালোবাসা রেখেছে, তবে সে অনুভূতিতে সময়ের ছোঁয়া লেগেছে।
ফোনের অন্য প্রান্তে মুক্তাদুল আর কিছু না বলে লাইন কেটে দিল। নুসরাত কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল। তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল—ভালোবাসা কখনো মরে না, যদিও সে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। ভালোবাসা জীবনে এত গভীর ছাপ রেখে যায় যে, তা কখনো মুছে ফেলা যায় না।
বুকের ভেতর এক অজানা অনুভূতি পেয়ে, নুসরাত নিজের জীবনের দিকে তাকাল। সে জানত, মুক্তাদুলের মতো মানুষগুলোর জীবনেও ভালোবাসার চিহ্ন থাকে, তবে সেই চিহ্ন কখনো গাঢ় হয়ে ওঠে না যদি সে চিহ্নের জন্য সময় দিতে না পারা যায়।
তারপর নিজে একমনে ভাবল, “আমি কি কখনো এমন ভালোবাসার গল্পে জড়াবো, যার শেষ হবে না?”
এভাবেই একটি রং নাম্বার, যা একসময় শুধুই ভুল ফোন মনে হয়েছিল, তা নুসরাতের হৃদয়ে জীবনের গভীর দিকগুলো নিয়ে প্রশ্ন রেখে গেল।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
নাম্বারের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবনের এক অব্যক্ত ভালোবাসার স্মৃতির খোলস খুলে যায়, যা মূলত অনুভূতির সাথে সময় ও সম্পর্কের খেলা। মুক্তাদুলের ভালোবাসার অভিব্যক্তি, নুসরাতের কৌতূহল এবং তার মনের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রশ্নগুলি ভালোবাসার এক দিক তুলে ধরে, যেখানে সময় কখনো কখনো আমাদের অনুভূতিকে পরিবর্তন করে ফেললেও, মূল অনুভূতি চিরকাল থাকে।
গল্পের কাহিনীতে ভালোবাসা, সম্পর্ক এবং সময়ের জাল একত্রিত হয়ে যেভাবে মানুষের মনের গভীরে পৌঁছে যায়, তা এক অদ্ভুত রকমের প্রভাব ফেলে। নুসরাতের জন্য এটি একটা নতুন উপলব্ধি এনে দেয়, যেখানে তাকে জীবনের কিছু গভীর দিক বুঝতে শেখায়।
০৬ জানুয়ারী - ২০২৪
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৫