আকাশ সম্পূর্ণ মেঘ মুক্ত। বসন্তের এ সময় প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনুভূতি গ্রাম ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। তবে গ্রাম যদি হয় ছবির মতো প্রকৃতি যদি হয় সবুজারন্য মন তখন এমনিতেই প্রসন্ন থাকে। মানুষের নাকি ভাবনার শেষ নেই। কিন্তু আমি আমার ভাবনা আরও বিস্তৃত। কেননা আমার ভাবনাতে ঠাঁই হয়েছে ভালোবাসা নামক এক পরম সুন্দর অধ্যায়ের। কবিদের ভাষায় "জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান " তবে আমার ভাবনায় "ভালোবাসাহীন মানুষ পাথরের সমান" শুনতে অদ্ভুত হলেও বিষয়টি সত্য। ভালোবাসা হীন জীবনের স্বাদ অপূর্ণ। আর এই ভালোবাসার মোহ আমাকে নতুন এক স্বপনের পথ দেখিয়েছিলো। আমার ভালোবাসার গল্পটি সম্পূর্ণ ট্রাজেডি। তার কিছু স্মৃতি নিচে বর্ণনা করছি।
১৮ই বসন্ত ২০০১, রমনার বটমূলে শান বাঁধানো গাছের নিচে বসে আছি। এমন সুন্দর এক দিনে আমি খয়েরি রংয়ের পাঞ্জাবি পড়ে চোখে চশমা দিয়ে প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। ঠিক তখনি ওনি বলল, ইসস! ভরদুপুরে এতো ন্যাকামি করে তাকিয়ে আছো কেনো? কথা বলতে এতো লাজ। আজকে তোমাকে বাদর রাজা
রামমোহন এর মতো লাগছে।
কথার শেষে সশব্দে মন খুলে হাসতে লাগলো জুই।
ভ্রুকুচকে আমি রাগ করার ভান করতেই বলে ওঠলো
--- এই যাহ! এতো রাগ। হয়েছে, হয়েছে এখন বলো কতক্ষণ আছো এইখানে।
--- যতক্ষণ তুমি থাকো।
আমার কথাটি শুনে ও বলে ফেলল
"তোমার টউশনি করাতে যেতে হবে না আজ?"
-ভুলেই গিয়েছিলাম হ্যা যেতে তো হবেই।
ঔশীর শিশুসুলভ আচরণ আমাকে আরও বেশি বিমোহিত করে। তার আবদার পূরণের ব্যর্থতা আমার সহজ সরল মন কে অশান্ত করে তুলে। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খুক করি। কিন্তু একদিন ওর হাতে নাতে ধরা পরেছিলাম। যাইহোক ঔদিন রাতে ঘুমের মধ্যে ভিষণ একটা খারাপ স্বপ্ন আসে। অনেকবার ঘুমানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও ঘুম আসছিলোনা। আমার রুমে আমার তিন বন্ধু থাকে রাফি, জিসান আর প্রিন্স। আচমকা ঘুম থেকে ওঠে অস্থির হওয়ার ভঙ্গিমা তাদের ঠিক মনে হচ্ছিল না বিধায় আমাকে প্রশ্ন করে ওঠে কি হয়েছে আমার। করুনকন্ঠে বললাম স্বপ্নে দেখলাম মা মারা গেছে। বন্ধুরা উপদেশ দিলো গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসার। আনমনে ভাবতেছিলাম এটায় হয়তো সঠিক সিদ্ধান্ত। ঠিক করলাম কালকে বিকেলে রওনা দিবো।
রাতে জুইকে অফলাইন দেখলাম তাই শুধুমাত্র একটা মেসেজ দিলাম। "আমার হৃদগঙ্গা অস্থির হয়ে আছে। করালগ্রাসী ঠেউ সাঁই দিচ্ছে না। হে প্রেমসুন্দরী একটিবার দেখা দিও কাল। অপেক্ষায় থাকিব তোমার।"
পরদিন সকালে ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি, জুইয়ের সাথে দেখা করার পর বাড়ি যাবো। এসময় এক ছোট্ট মেয়ে এসে বলতেছে " ভাইয়া ফুল ন্যেন। আফা আইলে ওনারে দিয়েন।" রজনীগন্ধার মালা নিলাম। অনেক্ষণ হলো জুই আসে না। ফোন করছি তাও ধরে না। অভিমান করতে লাগলাম। তিনঘণ্টা হয়ে আসলো জুইয়ের খবর নেই। আমার বাড়ি যাওয়ার ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে আসছিলো। বাধ্য হয়েই চলে আসলাম। বাড়িতে আসার পর মা অনেক খুশি হয়েছে বড় আপাও আসছে সাথে দেখলাম আমার ছোট্ট ভাগনী। আদর করে আম্মু ডাকি। বিকেলে ছোট্ট ভাগ্নীকে নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম পথে দেখা
শিউলির সাথে।
এককালে এই শিউলির পিছে অনেক ঘুরছি পাত্তা দেয় নায়। আর এখন আমার দিকে আবেগের সহিত তাকিয়ে থাকে আমি ওর সাথে কথা পর্যন্ত বলি না। এইবার হঠাৎ বলে ওঠলো
- কিগো ফাগুন! কেমন আছো?
এমন পরিস্থিতিতে বলেই ফেললাম ভালো আছি। তারপর ও আরও অনেক কথা বললো ওর বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু ওর স্বামী নাকি বিদেশে আরেক বিয়ে করছে। যাইহোক শুনে খারাপ লাগল। সন্ধ্যায় বাড়িতে আসলাম। আপু বললো কিরে ফাগুন তোর চোখ লাল কেন কান্না করছিস নাকি অন্য কিছু খেয়েছিস। আমি বললাম আরে নাহ! মন ভালো নেই। পাশের ঘর থেকে মা বললো বিয়ে করে ফেল তখন মন ভালো থাকবে। আমি বললাম সময় হলে করবই তো। ফোনে চার্জ ছিলো না চার্জ করার পর অন করলাম কিন্তু জুই একটাও ফোন দেয় নায়। মেসেজও করে নায়। তখন জিসান কে ফোন করে বললাম জুই এর খবর আনতে। রাত গভীর আমি জিসানের ফোনের অপেক্ষায় আছি। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠল আমি ফোন রিসিভ করা মাত্র বললাম।
জিসান আমার জুইয়ের কি হয়ছে? কেমন আছে ও? নিঃশব্দে জিসান বলে জুই...
আমি বলি জুই কী?
জুই সকালে এক্সিডেন্ট হয়েছে প্রাইভেটকারের সাথে। সোহরাওয়াদী হসপিটালে ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি আছে। বিষয়টি শুনামাত্র চিৎকার দিলাম। আপু, মা, বাবা আসলো বললো কি হয়ছে? আমি শুধু বলতেছি আমার জুই কই! আমার জুইকে দেখব আমি। একরাশ জল অনবরত পরতেছে আমার। ঔদিন রাতেই আমি আর আমার আপা ঢাকা আসি। জুইকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যায় হাসপাতালে। গিয়ে দেখি জুইয়ের মা আর বাবা বাইরে বসে আছে। আমি পাগলের মতো কান্না করছি আর বলতেছি "জুই আমি আসছি। তোমার বানর রাজা আসছে জুই। একটিবার আমাকে ডাকো। আমি আর সিগারেট খাবোনা জুই। ও জুই তুমি না বলেছিলে আমার জন্য এক ফোঁটা অভিমান তোমার নেই। ওঠ ওঠ! ওঠ! কথা বল্ জুই।"
হাসপাতালের নার্স এসে বলে এটা হাসপাতাল রোগীর সমস্যা হচ্ছে আপনারা বাইরে গিয়ে চেঁচামেচি করেন। সারাটা রাত
আমি কেঁদেছি হ্যালানো দিয়ে বসে ছিলাম মেঝেতে। আমার বন্ধুরাও এসেছিলো। জুইয়ের মা আমাকে বলে বাবা আল্লাহর কাছে দোয়া করো। আমার মেয়ে এক্সিডেন্টের পরেও বলতেছিলো "ফাগুন ওগো তুমি যেও না আমি আসতেছি। আমরা গল্প করব তুমি আমাকে রেখে যেও না।"
পরদিন সকালে জুইয়ের জ্ঞান ফিরে। আমি হন্তদন্ত হয়ে ওর কাছে গিয়ে আমার দুটি হাত দিয়ে জুইয়ের গালে ধরে বলি। আমার সোনাপাখিটা কেমন আছে? চেখের জল পরতে লাগলো ওর শরীরে। ও বললো
কে আপনি?
আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। বললাম "অ্যাইঅ্যাই পাগলি আমি ফাগুন। তোমার ফাগুন। চিনতে পারছো না।" নিঃশব্দ। জুইয়ের বাবা বলে কিরে মা তুই আমাকে চিনতে পারিস তো। জুই বলে হ্যা বাবা। তখন জুইয়ের বাবা বলে ও ফাগুন তোর ফাগুন চিনিস না। ছেলেটা সারারাত কান্না করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। জুই বলে না চিনি না। আমি বলাম না! না! জুই ও জুই আমি কিন্তু এখন মরেই যাবো। তোমার এসব কথা আমাকে তীব্র আঘাত করছে জুই। আমি সশব্দে কান্না করছি। আপু দেখি আমার কান্না দেখে শাড়ির আচল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছে। হঠাৎ একটুপর একটা গরম ঠোঁটের চুম্বন পড়ল আমার কপালে। চেয়ে দেখি জুই কাঁদছে আর চুমু খাচ্ছে।
বলল
-আরে পাগল তুমি আমার জীবনের সব। কেমনে ভুলে থাকব বলো। আমার জীবনে বানর রাজা সব। ঔদিন রাতে তোমার মেসেজ দেখামাত্র তোমার সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। কখন যে গাড়ি আসল মি
বুঝলামি না। আমি বললাম
--জুই আমি এমন করলে সত্যি মরে যাবো। খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না। এই আমি কান ধরলাম। আর এমন করে আসতে বলবো না তোমাকে। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমি সত্যি মরে যেতাম সত্যিই। একরাশ ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমার অস্থিরতা তখন কমতে থাকল।
আজ আমি উপলব্ধি করি ভালোবাসলে ঠিক আমার মতোই ভালোবাসা দরকার। যে ভালোবাসাতে অপবিত্রতার ঠাঁই নেই। তবেই ভালোবাসা হয়ে ওঠে স্বর্গীয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আকাশ সম্পূর্ণ মেঘ মুক্ত
২৯ নভেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।