অপমান আর অভিযোগের উঠে আসা আঙুলের ভিড়ের মাঝে মাথা তুলে দাড়াতে লজ্জা লাগে না?
- নাহ লাগে না।
- তুমি বড়ই অদ্ভুত কিসিমের লোক।
যা ঘটনা করছো, সমাজে কেমনে মুখ দেখাও তাই বুঝিনা। আমি থাকলে হয় গ্রাম ছেড়ে পালাতাম নয়তো অত্মহত্যা করতাম।
- জীবনটা তো কষ্টের নদীর মতো। যার শেষ অসীম সুমুদ্দুরে।
- তাই বলে, তোমার নদীতে তো ভরা যৌবনী বর্ষা মৌসুম চলতেছে অনিরুধ বাবু। আবার কোন কোন সময় মনে হয় তুমি অভাগা।' অভাগা যেদিকে যায়, সুমুদ্দুর শুখিয়ে
যায় গো"
- হয়তো তাই।
এই বলে অনিরুধ চাতালের উপর গিয়ে বসলো। আউশের ধান ক্ষেতে বর্ষার জল। খোদার সৃষ্টি দুনিয়ায় মানুষের মতো বেকুব খুব কমই আছে। তার মধ্যে বড় বেকুব হলো এই মহাশয়। গত মাসে ওনার প্রবেশিকা পরীক্ষা ছিলো। এলাকায় বেশ নাম ডাক ছিলো। আর থাকবেই বা না কেন সরল সহজ মন, যে যাই বলে তাই করে। কী যে হলো শেষ পর্যন্ত অভিমান করে পরীক্ষার দিলো না। শিমুল ঘটকের মেয়ের সাথে ফষ্টি নষি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়লো।
আমার তো মনে হয় ছেলেটা নির্ঘুষ। তাই বলে কি গ্রামের মানুষ আমার কথা শুনবে?
সাহস করে অনিরুধ বাবু কে বললাম, - আচ্ছা ঐ দিন যে কেলেঙ্কারির ঘটনা করছো তা কি সত্যি? হাছা কথা করা।
- মৃদুস্বরে হেসে বলল" দুনিয়াটা বড্ড বেশি ভালো মাসুদ ভাই। দুই দিনের আলেমের মুরিদের অভাব নাই। আলেম যাই বলে তাই ফরজ হইয়া যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হইছে। ঐ শিমুল ঘটকের মাইয়া শরতী আমার পিছে বহুত ঘুরছে। এলাকার মানসম্মানের ডরে ওর লগে কথা পর্যন্ত কই নায়। আর হেই মাইয়া আমার নামে খারাপ কথা কইয়া আমার সোনার মতো জীবনটারে পুড়াইয়া জ্বালাইয়া কয়লা বানাইছে।
করুন দৃষ্টিতে তার কথা শুনলাম এবং বললাম' আচ্ছা ঐ দিন কি হয়ছিলো খুইলা কও তো দেহি।"
সকালে ফরিদ ভাই দেখি ফজরের নামাজে যাইতাছে আমিও পূজার জন্য সরকার বাড়ির পুকুরে পদ্ম ফুলের জন্য যাইতেছিলাম। দুইজন বেশ খানিক্ষন কথাবার্তা বলে যে যার কর্মে চলে গেলাম। যাওয়ার পথে কাঁচের চুরি আর নুপুরের শব্দ শুনতে পেলাম।
পিছনে তাকাইয়া দেখি শরতী। মাথাটা নিচু করে আমি সামনে যাওয়া মাত্র সে রাস্তা আটকালো। আমি বললাম পূজোর জন্য দেরি হইতাছে আমারে যাইতে দেন। সে আমারে কয়
-" আমার জন্য তোমার বহুত ঘৃনা লাগে তাই না। আমি শরতী ভালোবাসার তৃষ্ণায় ধুঁকছি কয়েক বছর ধরে। তুমি আমার ভালোবাসার মর্যাদা তো দূর ভালোভাবে তাকাও নাই পর্যন্ত। অনিরুধ বাবু আজকে তুমি আমাকে জবাব দিবা। আমাকে ভালোবাসো কি ভাসোনা। না দিলে এই ছুরি দিয়া আমার হাত কাইট্টা মইরা যামু।
আমি নির্বোধ এর মতন চুপ ছিলাম। এরই মাঝে সে চাকুখানা দিয়া যেই ফেস লাগাবো হাতে অমনি আমি চাকুটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলাম। আর ওনারে কইষা একখানা থাপ্পড় মারলাম। কিছুক্ষণ পড় আমার মাথা খালি ঘুরতে থাকে মনে হলো পুরো দুনিয়া আন্ধার হইয়া আইতাছে। জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর দেহি আমার পরনে হাফ প্যান্ট ছাড়া কোন কাপড় নাই আর পাশে অর্ধউলঙ্গ হয়ে শরতী বইসা বইসা কান্না করতাছে। আশেপাশে লোকজনের অভাব নাই।
আমি নিরুপায় হয়ে বাবা-মাকে বললাম আমি কিছু করি নায়। বাবা ক্ষেপে গিয়ে পায়ের জুতা দিয়া পিটাইলো ইচ্ছামতন। শিমুল ঘটক তো জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকার করতেছিলো।
এলাকার মাতাব্বর পুরোহিত বিয়ে করাই দিলো শরতীর লগে। সেই থেকে পিতা-মাতা ও গ্রামের সকলের প্রতি আমার প্রচুর অভিমান। তারা মুখচাটু দিয়ে সুসময়ে ভালো ভালো বলতো। আর দুঃসময়ে আছোলা বাঁশ দিয়ে চলে গেল। আমার জীবনটাই অভিমানে ভরপুর বুঝলেন মাসুদ ভাই।
আমি তখন ওনাবে বললাম:
- শুনেন অনিরুধ বাবু অভিমান করা স্বাভাবিক বিষয়। আমি বুঝতে পারছি আপনি কেমন মাইনকারচিপায় পরছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে করছেন আপনার অমতে। এখন বউয়ের খেদমত না করলে বউ একলাই বাপের বাড়ি চইলা যাবো। কিন্তু আপনে পড়ালেখা বাদ দিলেন কেন?
কড়া সূরে বলল আব্বার মন ভাঙ্গতে আর ওনার স্বপ্নে পানি ঢালতে। বিয়া করার পর আমারে পুলা পরিচয় দিতে লজ্জা পেত। নিজের বাপ যদি পুলারে বিশ্বাস না করে সেই বাপের পা ধুইয়া পানি খামু। ওনার ইচ্ছে ছিলো সরকারি চাকরি করবো। ওনাবে শিক্ষা দিলাম, পড়ালেখাই ছেড়ে দিলাম।
তখন মাসুদ ভাই বলল' সব অভিমান সার্থকতার পথ নিশ্চিত করে না। আপনার অভিমানের পেছনে এক আকাশ ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি আমি। সময় হলে আপনি সব বুঝবেন।
অনিরুধ বাবু চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আর বললেন জ্ঞান আমার চিন্তার জগতের এক ক্ষুদ্রতম অধ্যায় কিন্তু আপনাদের মতো মানুষের মনে টাকা উপার্জনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। যাদের ভালো মন্দ চেনার সাধারণ জ্ঞান নেই তাদের মুখে নীতি বাক্য শুনালে আমার লজ্জা হয়। আমি আমার অভিমান আখড়ে ধরে বাঁচতে চায়। আমার জীবন ছেড়ে দিয়েছি অজ্ঞাত গন্তব্যের পথে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অপমান আর অভিযোগের উঠে আসা আঙুলের ভিড়ের মাঝে মাথা তুলে দাড়াতে লজ্জা লাগে না?
২০ অক্টোবর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।