নির্মল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। শুষ্ক ঠোঁটের প্রান্তে হাসির উপমা এমন ভাবে ফুটে ওঠেছে যেন ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের মোহ আমাকে বশ করে রেখেছে। মনের গভীরে যে অনেক কথা আছে। ওগো বিচিত্র সুন্দরী, তোমারি অপলক আঁখি দুটি যেন মায়াবী। কাজল চোখের চাহনিতে বিষন্নতার কোন ঠাঁই নেই। তোমাকে পাশে না পাওয়ার শূন্যতা এক বৈরীভাব সৃষ্টি করে মনের গহীনে। আর ক্ষনিকের জন্য দেখার ঔ বিশেষ মূহুর্ত টুকু আমার শূন্যতাহীন মনে নৈসর্গিক প্রফুল্লের মুহূর্ত সৃষ্টি করে।
আমি রাকেশ চন্দ্র বাঙলা থেকে শুরু হয়ে আসাম এবং দক্ষিণের কর্মান্ত পর্যন্ত ছিলো আমার পিতামোহ সুধীন্দ্রনাথ চন্দ্রের জমিদারিত্ব। ডাচ শাসন তখনও বিরাজমান। জমিদারি বংশধর হওয়ার সুবাদে বিলেত পাঠিয়েছিল ব্যারিস্টার বানানোর জন্য। দূর্গাপূজো উপলক্ষে প্রায়শ ফিরে আসতাম বাঙলায়। গতানুগতিক ধারার মতো সেইবারও গিয়েছিলাম পূজোতে। তবে এইবার ডাচ জাহাজ একটু আগেই চলেআসে ভারতবর্ষে। জাঁকজমকপূর্ণ পূজো হচ্ছিল গৌড় ও মূর্শিদাবাদের সীমানার মাঝামাঝি স্থানে। মূর্শিদাবাদ পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়
ভাগীরথী নদী। খেয়া নৌকায় ব্যাগখানা রেখে যেই বসেছি অমনি এক মৃন্ময়ী সুদর্শন ছায়া এসে পড়লো খেয়ার পাটাতনে।
মুখখানা ঘুরিয়ে যেই তাকিয়েছি অমনি মনে হলো সয়ং স্বর্গ হতে কোন সয়ম্বরা এসেছে। শরতের হিমেল হাওয়ার ঘন কালো
কেশ উড়ছিলো। লাল পাড় সাদা শাড়ি কপালে রক্তবর্ণ টাটকা লাল রঙয়ের টিপ। তার সুদর্শন রূপের মোহে আকৃষ্ট হয়ে
কখন যে ঘাটে এসেছি তা খেয়ালই করি নেই। ইংরেজদের মতো পোশাকে সবায় বিলেত মানুষ ভাবে কিন্তু এ কুমারী
আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে একটিবারো তাকালো না। নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ কাশবন মাঝপথ দিয়ে কোন সুন্দরী রমনী পাযে আলতা পরে কোমল-কোমল ভাবে হেঁটে যাচ্ছে আর আমার প্রেমসুন্দর দৃষ্টিতে সে আসবেনা তাকি হয়? বাড়ি পৌঁছালাম, সবায় আদর আপ্যায়নের কমতি রাখলনা। অন্দরমহলে ধূতি ফতুয়া পরে হাজির আমার কৈশোর কালের বন্ধু সুনীমল। দীর্ঘদিনপড় দেখা। ওর সাথে গ্রামে ঘুরছিলাম সেদিন। সন্ধ্যায় মা দূর্গার আরতি দেওয়ার সময় মণ্ডপে যাবো ঠিক করলাম। সুনীমল বেশ চতুর আমার থেকে বিলেত সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায়। আমিও বলি যে সেখানে এখন বরফ পড়ছে, শীতকাল। ও বিশ্বাস করতে চায় না। যাইহোক সারাদিন ঘুরাঘুরির পর সন্ধ্যায় মণ্ডপে গেলাম। অজস্র রমনীর আনাগোনায় মুখরিত পূজা মণ্ডপ। মায়ের প্রতিমাতে পুষ্পার্বন করার সময় ফের সেই রমনীর দেখা। আহা কি নেই এই রমনীর মাঝে। দূরদৃষ্টিতে আগলে রেখেছি তারে আমি। সুনীমল আমরা দৃষ্টিকে সহজেই ধরে ফেলল। বলল "পছন্দ খারাপ নহে বান্ধব। তবে এ যে অন্য রাজার পাখি" কথাটা শুনামাত্র আমি বললাম মানে? তখন ও বললো ওড়িশার রাজা বিভূষণ নাথের হবু স্ত্রী। বাংলা, ইংরেজিতে শ্রেষ্ঠ বিদুষী। অকুলতার সহিত বললাম ওনার নাম কী? সুনীমল বলল তুমিই জিজ্ঞেস করে নিও। সুধীন্দ্রনাথের একমাত্র নাতী তুমি, তোমার হুকুম ও কুমারী অবশ্যই পালন করবে। যাইহোক পূজোর পর তাকে আর দেখতে না পেয়ে দৌড়ে গেলেম ভাগীরথী নদের কূলে। রজনীর উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় তার শাড়ি চমকাচ্ছে। চন্দন এর ঘ্রানে মম করছে চারিপাশ। খেয়া পার করার জ্যেঠা নেই আর সেই সুযোগে খেয়া পার করব আমি। কিছুক্ষণ পড় নরম পায়ের স্থান পড়ল খেয়ার উপর যার শব্দে মনগঙ্গার জল উত্থাল পাখাল করছে। খেয়ার
একপাড়ে সে বসল আর আচমকা এক মধূসূরের আবির্ভাব
-ওহে জৈনক, ভাগীরথী নদে ফেলাও বৈঠা। পার করে দাও মোরে। বিনিময়ে তুমি কি চাও ওগো বলে দাও আমারে।
সাহসের সহিত তাকে বললাম কয়েকটা প্রহর দেবে আমাকে। তোমাকে জানার জন্য এক আকাশ আগ্রহ আমার মনের ভিতরে।
মিষ্টি ভাবে হাসছে আর বলল আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাকে মাঝনদে নিয়ে গেলাম আর বললাম তার নাম কী? কোমল আঁখি দুটি উজ্জ্বলিত করে বললো চৈতালি।
সে তখন বিচলিত সূরে বলল" আপনিতো সেই ছেলে। ঔ যে কাল হা করে তাকিয়ে ছিলেন এই খেয়াতে" আমি তো লজ্জায় পরে গেলাম। তখন সে বলল" আপনি নাকি জমিদারের নাতনি। বিলেতে পড়াশোনা করেন। So could you please tell me why you want some time from me.
উত্তরে আমি বললাম "আমার সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানো। একটা সত্যি কথা বলি। তুমি না সত্যি অনেক সুন্দর। যতবার তোমার দিকে আমার নজর যায় মন ভরে আসে। তুমি এতো সুন্দর কেন চৈতালী?"
"সৌন্দর্যের বড়ায় করি না গো জমিদার বাবু। আর আমাকে এতো গভীর ভাবে দেখার কারণ কী?" আমি বললাম " হয়তো মনের ইচ্ছে হয় তাই। " গল্প করার মাঝে চৈতালী দুষ্টমী করে নদীর পান তার কোমল হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলো আমার দিকে। আর আমার হাতের বৈঠা গিয়ে পরে গেল নদীতে। এখন উপায় কি কেমনে যাবো পাড়ে। ঔদিকে আবার নদীর ঐ পাড়ে খেয়ার জন্য মানুষের হিড়িক লেগে গেছে। আমি তো ভয়ে কাঁপছি। তখনি চৈতালী সশব্দে হেঁসে ওঠলো। আর আমাকে নদীতে নামিয়ে সাঁতার কাটিয়ে খেয়া পার করালো। পরদিন সকালে তীব্র জ্বর আমার। ডাক্তার ডেকেছে পিতামশায়। আমার জ্বরের দিকে কোন খেয়াল নেই। শুধু অপেক্ষায় আছি কখন বিকেল হবে। বিকেলে সুনীমল বলল জ্বর আসার কারণ কি রাকেশ? আমি হন্তদন্ত হয়ে বলি এমনি হয়েছে। আর বলি বিকেলে আমরা পূজোতে যাবো। বিকেলে মণ্ডপে গিয়ে খুঁজতেছি চৈতালীকে কিন্তু পাচ্ছি না। হঠাৎ পেছন থেকে একটা কোমল হাত আমার হাত ধরে টান মারলো। পিছু তাকিয়েই দেখি আমার বিচিত্র সুন্দরী এসেছে। গলায় বকুলফুলের মালা। মিষ্টি বকুলের গন্ধে মম করছে শরীর। আমায় বললো চলো পড়ানো মন্দিরে যাই। তার সাথে গেলাম আর ভেবেছিলাম তাকে আজ মনের কথা বলে দিব। তার চোখের মায়ায় পড়ে গেছি আমি তখন ও আমাকে বলে
" আপনি হয়তো জানেন আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ওড়িশার রাজার সাথে। যদিও বিয়েতে আমার কোন মত ছিলো না। "
আমি বললাম "হ্যা। হ্যা। শুনেছি, আচ্ছা আমি তোমার সাথে কথা বললে কি তোমার সমস্যা হয়? সমস্যা হলে বলো
আমাকে।"
নিশ্চুপ ভাবে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। কথা বলে না। আমি ভাবছি কিছু ভুল বলে ফেললাম নাকি। তখন আমি
বললাম " আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লাগে চৈতালী?"
ও বলল সুনীল আকাশের মতো শান্ত। নির্মল বাতাসের মতো প্রশান্তির আর..
আমি বললাম আর কী?
ও কথা বলে না। তখন আমি ওকে বলে ফেললাম
ওগো চৈতালী। আমার প্রেমযমুনায় ভালোবাসার জল নামেনি কখনো। তোমার জন্য আমার মায়া অনেক। তোমার প্রেম বাগিচায় ভ্রমর হিসেবে আমাকে ঠাঁই দিবে তো?
করুন কন্ঠে বলল " মা বিসর্জন দেওয়ার পরের দিন আমার বিবাহ"
তখন অবহেলিত সূরে আমি বললাম তাহলে কি আমার প্রথম প্রেমই বৃথা যাবে। এরইমধ্যে তার চোখে আমি জল দেখতে
পেলাম যা আমার মনে ভীষণ ভাবে আঘাত করলো। হঠাৎ জ্বর এতই তীব্র হলো যে আজান্তেই জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান
ফেরার পর দেখি আমি আমার কক্ষে শায়িত আছি আর গলায় একটি বকুল মালা। একটু পর সুনীমল আসলো আর বললো মুখে টিপের লাল রং লেগে আছে সেটা মুছতে। আর বলল ও আর কয়েকজন পেয়াদা মিলে আমাকে মহলে এনেছে। আমার কিছুই ভালো লাগছিলো না। পরদিন সকালে আমি পিতামশায়ের কাছে যাওয়ার চিন্তা করি আর ভাবতে থাকি কেমনে বলব আমি অন্যর হবু স্ত্রীকে ভালোবেসে ফেলেছি। সাহস নিয়ে পিতামশায়ের কাছে যাই আর দেখি ওনি বই পড়ছে পাশে বিলেতি সিগারেটের ধোঁয়া ওড়ছে সামনের টেবিলে রাখা আছে একটা বিবাহ নেমন্ত্রনের কাগজ। ইতি বিভূষণ নাখ।
চকমকে ওঠলাম আমি। পিতামশাই বলল
-" কি খবর রাকেশ, সাত-সকালে এসেছো। কিছু দরকার নাকি?"
-"জি মানে এমনি আরকি। বলছিলাম বাবা আমার ইয়ে হয়েছে "
-কি হয়েছে?
-আসলে বলতে পারছি না। ভয় লজ্জা দুটিই করছে।
- আজব তো। বলো সমস্যা নেই।
বাবা আমি চৈতালী কে ভালোবাসি।
- বেশ ভালো কথা।
-আর ও রাজা বিভূষন নাথের হবু স্ত্রী।
তখন বাবা আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর বলল তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও। দেখি আম করতে পারি।
পরদিন সকালে বাড়ির সবায় তটস্থ হয়ে আছে কেউ কোন কথা বলছে না। আমাকে দেখে সবায় মুখ ফিরিয়ে নেয় ভয়ে কাঁপছি। তখন হঠাৎ পিতামহ আমাকে ডাকল।
আর বলল ওড়িশার জমিদার কে বিনীতভাবে অনুরুধ করেছেন তিনি। আর রাঢ় অঞ্চলের জমিদারির দায়িত্ব উপ হিসেবে দিয়েছে তাকে। আমাকে বলল ব্যারিষ্টারি পড়া শেষ করে চৈতালীকে নব বধূ করে ঘরে তুলবে। আহ কথাটি শুনার পর আমার যে কি আনন্দ হলো বলে বুঝাতে পারবো না।
আজ প্রতিমা বিসর্জন আমি দৌড়ে গেলাম ভাগীরথী নদের তীরে তীব্র আওয়াজে বললাম চৈতালী আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই বলে চৈতালীর বাড়ির কাছে গেলাম। দেখলাম ও আলপনা আঁকছে। আমাকে দেখা মাত্র আলপনার হাতে নিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখে আমি খুশির অশ্রু দেখলাম। আর বললাম
"ওগো প্রিয়তমা তোমাকে পাওয়ার জন্য যত বিপদ সমানে আসুক না কেন প্রেমশক্তি দিয়ে লড়ে যাব চিরকাল।
আজ আমি লন্ডনে আছি মাঝে মাঝে তার চিঠি পাই আমি। আমিও লেখি। শুধু তার সেই অপলক দৃষ্টি ও ভালোবাসার দিনগুলিকে মনে পরে। এইতো আর মাত্র কয়েকটা দিন। তখনি অপূর্ন ভালোবাসা পূর্ন হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ডায়মান্ডা সান
চমৎকার লিখেছেন। এতো রোমাঞ্চকর ছিল ভাবতেই পারি নায়।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
নির্মল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
২০ অক্টোবর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১০ টি
সমন্বিত স্কোর
৮.২২
বিচারক স্কোরঃ ৫.২২ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।