যুদ্ধের পরে যুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধ (ডিসেম্বর ২০২৫)

মাহাবুব হাসান
  • 0
  • 0
শূন্য.

স্কালপেল জিনিসটা মারাত্মক। ছুরির চেয়ে হালকা, কিন্তু ব্লেডের চেয়েও ধারাল। সার্জন ডা. ফারুক শেখের হাত ধরে এই ছোট্ট জিনিসটা অজস্র মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজে এসেছে। কিন্তু তার হাতে এখন স্কালপেল নয়, যেন স্টেনগান! যে স্টেনগান দিয়ে একদা সে অগণিত শত্রু বিনাশ করেছে।

গলার রগটায় সামান্য একটা পোঁচ দিলেই ফিনকী ছুটিয়ে রক্ত বের হয়ে কতক্ষণে মরণ হবে সেই অঙ্কটা সার্জন হিসেবে তার ভালোই জানা। কিন্তু লোকটাকে এত সহজ মৃত্যু দেবে, নাকি তার আগে কোটর থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে আনবে চোখ দুটো, যে চোখ মাতৃভূমির স্বাধীনতা দেখতে চায় নি? যে কানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বিষের মতো ঠেকেছিল, কেটে দেবে নাকি সেই কান দুটো? নাকি টেনে ছিঁড়ে ফেলবে নিরীহ মানুষকে হত্যার আদেশ দেয়া জিভটা?

ডা. ফারুক সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না!


এক.
অর্ধযুগ আগে…

শেষ বর্ষের ফাইনাল এক্সাম শুরু আগামীকাল থেকে। রাত বাজে ১১টা, এখনো পুরো এক চ্যাপ্টার রিভাইস বাকি। লাঙল দিয়ে ক্ষেত চষার মতো বইয়ে লাইনের মাঝ দিয়ে কলম চালাচ্ছে রসুল। চার্চে মধ্যরাতের ঘণ্টা বেজে গেছে ক্ষণিক আগে। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দে তন্দ্রা ভেঙে গেল। হতবিহ্বল রসুল ছুটে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ডা. ফজলে রাব্বি হলের তেতলার বারান্দায় ঘুমভাঙা-রাতজাগা ছাত্রদের ভিড়। মুহূর্তেই সবার মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল সংবাদ- রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করছে পাকবাহিনী!

অন্যদের মতো রসুলও এককাপড়ে বেরিয়ে এলো হল থেকে। গন্তব্য রংপুরের শালবাড়ী- বহুদূরের পথ! যানবাহন বন্ধ। অনেক কায়দাকসরত করে তিন দিন পর যখন বাড়ি পৌঁছল তখন ওর বাবা মা যেন হাতে ঈদের চাঁদ পেল। একমাত্র ছেলের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছিল তারা।

রসুলের শরীরটা শুধু ঘরে ফিরেছে, মনটা পড়ে আছে হলের গেস্টরুম, ডাকসু, মধুর ক্যান্টিন, রেসকোর্স ময়দানে। বিগত সময়গুলোতে দেশের রাজনৈতিক গতিবিধি সবটাই কাছ থেকে দেখা। বর্তমান পরিস্থিতি জানতে রেডিওতে পড়ে থাকে দিনরাত। মনে উঠেছে অস্থিরতার ঝড়। দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। কিশোর তরুণ যুবক, কিষান মজুর রিকশাওয়ালা থেকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার- সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে যুদ্ধে। রসুল তো পঙ্গু-বিকলাঙ্গ না, তাহলে সে কেন পড়ে থাকবে ঘরে?

দেশের প্রতিটা মানুষের মৃত্যুতে রসুলের বুকে রক্তক্ষরণ হয়, প্রতিটা শত্রুবিনাশে শিরায়-উপশিরায় খুন ছোটে। যুদ্ধময়দানের প্রতিটা বুলেট, প্রতিটা গ্রেনেড ফাটে তার মনোভূমিতে। ডানাভাঙা পাখির মতো সে তড়পায় উদয়াস্ত। তার এই অস্থিরতা বাবা-মায়ের নজর এড়ায় না। ওরা বুঝতে পারে, যে সুনামি ছেলের হৃৎসাগরে উঠে আসছে তাকে কোনো বাঁধ দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না। এ ছেলে যুদ্ধে যাবেই! তবু শেষ চেষ্টা হিসেবে ছেলের ঘরে শিকল দেয়, আছড়ে ভাঙে শখের রেডিওটা। ছেলে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দুই দিন দুই রাত ঘরে বসে থাকে। তৃতীয় দিন ভেতর থেকে আওয়াজ না পেয়ে বাবা শিকল খুলে দেখে ঘরের একপাশের বেড়া ভাঙা; টেবিলের ওপর পড়ে আছে চিঠি-

“আব্বা-আম্মা, আমি যুদ্ধে যাচ্ছি…”


দুই.

হানাদারেরা ভেবেছিল এদেশের নিরীহ মানুষকে অস্ত্রের মুখে সহসাই দমিয়ে দেবে। কিন্তু যে বীরবাঙালিকে এখন ওরা দেখছে তা অকল্পনীয়। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে যে প্রতিরোধ ওরা গড়ে তুলেছে তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই আর একটিও। আধুনিক অস্ত্র নেই, মিলিটারি ট্রেনিং নেই; শুধু বুকের সাহস আর স্বাধীন হওয়ার প্রবল আকুতিতে ভর করে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ওরা।

রসুলের জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই এসেছে, কিন্তু এই অগ্নিঝরা দিনগুলোর মতো নয় তার কোনোটাই। ওদের আজ এখানে রাত কাটে, তো কাল ওখানে। কখনো মাথার ওপর চালা থাকে, কখনো খোলা আকাশ। গোসল ছাড়াই এককাপড়ে কেটে যায় দিনের পর দিন। ভরপেট খায় না কত বেলা!

প্রতিটা মুহূর্তেই সতর্ক থাকতে হয়। হাতের স্টেনগান এখন প্রিয়তমার চেয়েও আপন! তাকে সাথে নিয়ে কাটে প্রতিটা মুহূর্ত- তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়, খায়, স্বাধীন বাংলা বেতার শোনে…

রসুল মেডিকেল স্টুডেন্ট, মৃতদেহ আগেও অনেক দেখেছে; লাশকাটা ঘরে নিজের হাতে মরদেহ কাটাছেড়াও করেছে। কিন্তু চোখের সামনে জ্যান্ত কাউকে মুহূর্তে লাশ হয়ে দেখে নি কখনো। যুদ্ধে নেমে সেটাও দেখা হয়ে গেছে!

ওরা গতরাতে একটা অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানী ক্যাম্পে। অপ্রস্তুত হানাদারেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেরি করে নি। রসুল আর ইয়াকুব দুই দিক থেকে মুহূর্মুহূ গুলি আর গ্রেনেডে পাকসেনাদের ডিসট্র্যাক্ট করছিল। সেই সুযোগে ওদের বাহিনীর একটা অংশ চুপিসারে ক্যাম্পের দিকে অগ্রসহ হচ্ছিল আরেক দিক দিয়ে। এই ট্যাকটিকস কাজে লাগিয়ে ওরা বহুবার সফল হয়েছে। আজও যখন মনে হচ্ছিল আরেকটা সফল মিশন সম্পন্ন হচ্ছে তখনই ঘটে বিপর্যয়। ক্যাম্পের পেছন দিকেও যে পাকবাহিনী একটা সিক্রেট ব্যাক-আপ নিয়ে রেখেছিল সেটা ওরা জানত না।

রসুলদের টিমের দুজন গেল আক্রান্ত টিমমেটদের কভার করতে। শেষমেশ দুজন মুক্তিসেনার প্রাণদানের বিনিময়ে বাকিরা জীবিত ফিরল। রসুলরা যখন পিছু হটছিল তখন আচমকা একটা গুলি এসে লাগে ইয়াকুবের বুকে। রসুল ‘ভাই ইয়াকুব’ বলে চিৎকার দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।

ইয়াকুবের তখনো জান ছিল। বহুকষ্টে হাত নেড়ে রসুলকে চলে যেতে বলল। রসুলের পক্ষে বিশালবপু ইয়াকুবকে একা তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ওদিকে পাকসেনারা ছুটে আসছে… শেষ পর্যন্ত ইয়াকুবলে রেখেই রসুল দলের সাথে পিছু হটে।

রসুল এই ক’দিনে বহু সতীর্থের প্রাণহানি দেখেছে, কিন্তু কখনো আজকের মতো ভেঙে পড়ে নি। ইয়াকুব শুধু সহযোদ্ধা না, ওর বাল্যবন্ধুও। ওকে হায়েনাদের মুখে ফেলে আসাটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।

“ভাই রে! মনটা শক্ত কর। এই কঠিন সময়ে ইমোশনাল হলে দেশ স্বাধীন করবি ক্যামনে?”

কমান্ডারের সান্ত্বনাবাক্য রসুলকে প্রবোধ দিতে পারছিল না একটুও। গভীর রাতে সবার অলক্ষ্যে সে বেরিয়ে এলো, চুপিসারে পৌঁছে গেল সেই জায়গাটাতে, যেখানে ইয়াকুবকে ফেলে গেছিল ওরা। ইয়াকুব তখনো ওখানেই পড়ে আছে। দেহে প্রাণ নেই; চোখ দুটো উপড়ানো। বেয়নেটের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত চেহারা চেনার উপায় নেই। চিনিয়ে দিচ্ছে অনামিকার আঙটিটা; যুদ্ধের মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করেছিল সে।

ইয়াকুবের আঙুল থেকে আঙটিটা খুলে নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে এলো রসুল। একদিন যুদ্ধ থামবে, দেশ স্বাধীন হবে। সেদিন যদি সে জীবিত থাকে তাহলে যার জিনিস ফিরিয়ে দিয়ে আসবে তাকে।


তিন.

সময়টা এখন এমন যে হৃদয় নিংড়ে কাঁদারও সুযোগ নেই। ছেলেকে বিদায় দিতে গিয়ে মা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। বাবার চোখ দিয়েও গড়াচ্ছে অশ্রুজল। তবে আজ আর ছেলেকে আটকাল না তারা।

রসুলদের বাহিনী যুদ্ধ করতে করতে যখন নিজ এলাকার কাছাকাছি চলে এসেছে তখন রসুল নিজেকে আর সংবরণ করতে পারে নি। বাবা-মাকে দেখে নি সাত মাস হলো; কেমন আছে ওরা? সহিসালামতে আছে তো? রসুল কমান্ডারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এক ঘণ্টার জন্যে বাড়িতে এসেছিল লুকিয়ে।

ছেলেকে চিনতে কিছুটা সময় লেগে গেছিল আতিয়ার শেখ-ময়না বেগমের। হৃষ্টপুষ্ট ছেলেটা না খেয়ে না ঘুমিয়ে শুকিয়ে গেছে। মুখভর্তি দাড়িগোঁফের জঙ্গল। ছেঁড়াফাটা পোশাক, গায়ে ময়লা-ঘামের গন্ধ। ছেলেকে চিনতে পেরে আবেগাপ্লুত হলেও নিজেদের সংযত রেখেছে নিরাপত্তার খাতিরে।

এলাকায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প বসেছে; স্থানীয় কয়েকজন ফায়দা লুটতে নাম লিখিয়েছে রাজাকারের খাতায়। ছেলের অন্তর্ধান নিয়ে রসুলের বাবাকে বহুবার জবাবদিহি করতে হয়েছে।

কোথায় আছে তার নওজোয়ান ছেলে? সে কি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে? হাজী ইদ্রিস মোল্লা কয়েকবারই জানতে চেয়েছে। আতিয়ার প্রতিবারই বলেছে, ছেলে যাতে মুক্তিবাহিনীর সাথে জুড়তে না পারে সেজন্যে নানাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন যদি জানতে পারে ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে তাহলে আখেরে খারাপ আছে।

রাতে বাবা-মায়ের সাথে পেটপুরে ভাত খেয়েই রসুল বেরিয়ে পড়ল। অদূরেই ছোট চাচার ঘর। বাপ-মার পর চাচা-চাচীই ওর আপনজন। হাফসা নামে ওদের একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে- ভাই বলতে পাগল! সারাক্ষণ রসুলের কোলে কোলে থাকত। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওদের দেখে আসার সুযোগ নেই। কমান্ডারের বেধে দেয়া এক ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে বহু আগেই।

বাবা-মাকে কদমবুচি করে যখন রসুল বেরিয়ে এলো তখন ওরা জানত না ছেলেকে এটাই তাদের শেষ দেখা। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কেউ একজন দেখছে ওদের।


চার.

ডিসেম্বরের কনকনে শীতও শীতল করতে পারছে না রসুলদের রক্তের উত্তাপ। প্রতিদিনই শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর আসছে কোথাও না কোথাও থেকে। আশা করা যায় অচিরেই গোটা দেশ শত্রুমুক্ত হবে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তাই আনন্দের আবহ। রসুলের মনে আনন্দ, বাবা-মায়ের চোখে দুঃখের জল দেখে এসেছে, ফিরে গিয়ে দেখবে আনন্দ-অশ্রু। যে বাবা-মা চায় নি ছেলে যুদ্ধে যাক, তারাই কিছুদিন পর ছেলেকে নিয়ে গর্ব করবে।

ডিসেম্বরের এক হাড় কাঁপানো শীতের রাতে কমান্ডারের বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে রসুল একটা মিশন পরিচালনা করছিল বীরদর্পে। আচমকা গুলি এসে লাগল রসুলের গায়ে। লুটিয়ে পড়ল সে মাটিতে। পরাধীন দেশের সূর্যটা তখন অস্তাচলে।

তার দুই সপ্তাহ পর দেশ শত্রুমুক্ত হলো।

দমবন্ধ পরাধীনতা থেকে মুক্তির আনন্দে মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। মুক্তিবাহিনীর সাথে তারাও যোগ দিয়েছে বিজয় উদযাপনে। এই আনন্দের মুহূর্তগুলো দেখে যেতে পারে নি রসুল।


পাঁচ.

গত ছয় বছরে স্বাধীন দেশটা নানা পালাবদলের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে শালবাড়ী থেকে উঠে এসে রাজধানীর বুকে গাড়ি-বাড়ি জমিয়ে বেশ ভালো আছে হালিমারা। তাদের নিশ্চিন্ত জীবনে ছেদ পড়ল এক মধ্যরাতে। দরজায় কড়া নাড়ে এক আগন্তুক। লোকটাকে দেখে হালিমা ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে। রসুল! কিন্তু ও না যুদ্ধে মারা গেছে?

৬ বছর আগের সেই মিশনে বুলেটের আঘাতে রসুলের হাঁটুর বাটি চূর্ণ হয়ে গেছিল; দেশে চিকিৎসার সুব্যবস্থা না থাকায় সতীর্থরা তাকে পৌঁছে দেয় বর্ডারের ওপারে।

কোমা থেকে ফিরতে রসুলের লেগেছিল এক মাস। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে আরো ছয় মাস। পা-টা পুরোপুরি ঠিক হয় নি, হবেও না কখনো- ডাক্তার ফাইনাল ভারডিক্ট দিয়ে দিয়েছিল। বিকলাঙ্গ পা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রসুল ফিরে এসেছিল গ্রামে। কিন্তু চিনতে পারছিল না কিছুই।

পাকসেনারা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে মাইলের পর মাইল ঘরবাড়ি ক্ষেতখামার জ্বালিয়ে দিয়েছে। রসুলদের পোড়া বাড়ির দুয়েকটা খুঁটি ছাড়া অবশিষ্ট নেই আর কিছুই। কিন্তু ওর বাবা-মা? কোথায় আছে তারা?

রসুলের যুদ্ধে যোগদানের খবরটা পাকবাহিনী জেনে গেছিল। ওর বাবা-মাকে তারা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসে নি।

রসুল বাড়ির ভিটে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। ওর বাবা-মাকে মেরে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে হানাদারেরা। কবরটুকু জোটে নি ওদের কপালে। রসুলের কাছে এই ভিটেমাটিই ওর বাবা-মায়ের কবর।

রসুলের এই পৃথিবীতে আপন বলে কেউ রইল না। বাবা-মা তো মরেছেই, চাচাও নিখোঁজ। রসুলদের বসতভিটার দলিল ওনার কাছে রাখা। রসুল দিনের পর দিন চাচাকে খুঁজে ফেরে। কিন্তু এত বড় একটা দেশে ঠিকানাহীন একটা মানুষকে খোঁজা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার চেয়েও কঠিন।

অবশেষে ৬ বছর পর চাচাকে খুঁজে পায় রসুল। ঢাকায় বাড়িগাড়ি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছে।


ছয়.

গভীর রাতে বাড়ির দরজায় ভাতিজাকে দেখে আঁতকে উঠেছিল মনোয়ার শেখ। জমির দলিল নয়, রসুল চায় ইনসাফ- জানের বদলে জান! ওর যুদ্ধে যাওয়ার খবরটা পাকিস্তানি ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছিল তার আপন চাচা-ই!

কী নির্ভাবনায় ছিল সে এতটা দিন, ৬ বছর আগে গ্রামবাসী, এমনকি আপন ভাইয়ের সাথে যে অন্যায় সে করেছে তার কোনো সাজা বুঝি মিলবে না! সে কি ভুলে গেছিল, কিছু পাপের সাজা এই জনমেই পেতে হয়?

চাচার এখন অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তি, কিন্তু চিৎকার দেয়ার সামর্থ্যটুকুও এই মুহূর্তে নেই। রসুল ভাবছে কীভাবে মারলে তার মনের ক্ষত সারবে। চরম ক্রোধে গাদ্দারটার গলায় পোঁচ দিতে যাবে, ঠিক তখন ‘বাবা’ ডাক শুনে রসুল চমকে পিছন ফিরল।

ঘুম ভেঙে উঠে এসেছে মনোয়ারের ছোট্ট মেয়ে হাফসা। সেদিনের ফুটফুটে মেয়েটা এখন আট বছরের পরী যেন! বাবাকে ওই অবস্থায় দেখে ওর কোমল মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রসুল থেমে যায়, ভাবে, এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে বাবা-হারা করা কি ঠিক হবে?

“আজ এই মাসুম মেয়েটার কারণে বেঁচে গেলি! তবে মনে রাখিস, যে দেশের সাথে তুই গাদ্দারি করেছিলি সেই দেশের বাতাসে শ্বাস নেয়াটাও তোর জন্যে পাপ”
………

হতবিহ্বল পরিবারটাকে পেছনে ফেলে পা টেনে টেনে ফিরে আসছে ডা. ফারুক শেখ ওরফে রসুল। শান্ত কুটির নয়, যেন বিক্ষুব্ধ রণাঙ্গন থেকে ফিরছে সে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বিজয়ী রসুল বিজয়ী হয়েছে আজকের যুদ্ধেও, যে যুদ্ধ মনোভূমিতে, ক্রোধের সাথে উদারতার; যে যুদ্ধে উদারতাই জয়ী হয় সবসময়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে গল্পটি লেখা হয়েছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা স্বাধীন দেশে মুখোমুখি হয় আরেক যুদ্ধের। এই যুদ্ধে সে জিতবে কিনা দেখার বিষয় সেটাই।

৩০ সেপ্টেম্বর - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ৪৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী