বাজার করে এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলাম। এতো গরম পড়েছে, কেমন যেনো একটা ভ্যাপসা গরম! শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে বাতাস খাচ্ছি।
শারমিন শরবত নিয়ে এলো। ঢকঢক করে পুরোটা গ্লাসের শরবত সাবাড় করে দিলাম। সারাদিন অফিসে গাধার খাটুনি খেটে এসে শারমিনের হাতের ঠান্ডা লেবুর শরবত মুহূর্তেই সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। মনে হয় যেনো বেহেশতে আছি।
এতদিন দুজনের ছোট্ট সংসার ছিলো আমাদের। আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমতে ছমাস হলো আমাদের ঘর আলো করে এসেছে এক রাজপুত্র। অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায়ই ওর জন্য টুকটাক খেলনা কিনে আনি।
- "এই, শুনছো? পুরা মাসের বাজার একবারে এনেছো নাকি?" শারমিন জিজ্ঞেস করলো রান্নাঘর থেকে।
- "হ্যাঁ। তোমাকে এখনই গোছাতে হবেনা কিছু। তুমি রেস্ট নাও। কাল আস্তেধীরে আমি সব গুছিয়ে রাখবো। তুমি শুধু একটু ডিরেকশন দিও। জানোই তো, কোন কৌটায় কী রাখো, আমার মনেই থাকেনা। সব কৌটা একরকম লাগে।"
শারমিন হাসলো। বললো - "এই বুদ্ধি নিয়ে যে কিভাবে অফিসের কাজ করো! যাই হোক, গরুর মাংস দেখি অনেকখানি এনেছো। সাথে একজোড়া ইলিশও!! এগুলো আর শাকসবজিগুলো গুছিয়ে রাখি। বাকি টুকিটাকি জিনিসগুলো কাল গোছাবো। চালের বস্তাটা একটু ওদিকে সরিয়ে রাখবে? তো সব মিলিয়ে মাসিক বাজারে কতো খরচ হলো টোটাল?"
- "মাত্র দেড় হাজার।"
শারমিন স্বস্তির এক নিশ্বাস ফেলে বললো - "যাক! এই মাসেও তাহলে ভালোই সেভিংস করতে পারবো।"
হাসলাম আমি। তৃপ্তির হাসি। পনেরো হাজার টাকা বেতনের একটা ছোট্ট চাকরি করি আমি। বাসা ভাড়া, বাজার খরচ, সংসারের সব খরচ চালিয়েও মাস শেষে কিছু সেভিংস করি আমি আর শারমিন। আমাদের রাজপুত্রটার জন্য। শারমিনের খুব শখ ছেলেটা বড় হলে ওকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করাবে।
সব মিলিয়ে বেহেশতেই আছি বলা যায়!
-"এই যে জমিদার সাহেব, উঠেন। অফিস থেকে এসেই এভাবে ঘুমাইলে হবে? বাসায় যে বাজার সদাই কিছু নাই কয়দিন ধরে, কী রান্না করবো?"
শারমিনের চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেলো।
নিচুস্বরে বললাম - "ডিম ভাজো দুইটা। বাজার করার মতো টাকা তো নেই। বাজারে সবকিছুর যেই চড়া দাম, কিভাবে কী করবো বুঝতে পারছিনা।"
শারমিন রাগী কন্ঠে জানালো - ডিমও নেই ঘরে। বাচ্চার দুধও শেষ। এভাবে যদি সংসার চালাতে না পারি তাহলে যেনো ওকে বাপের বাড়ি রেখে আসি। এই অভাবের সংসারে ও আর থাকতে পারছেনা। বাচ্চাটাও দিনদিন রোগা হয়ে পড়ছে দুধ না পেয়ে।
শার্টের বোতাম লাগিয়ে রাস্তায় বেরোলাম। দুমাস ধরে মাছ মাংসের মুখ দেখিনি আমরা। ডিম খেয়ে বেঁচে ছিলাম, এখন ডিমের দামও বেড়ে গেলো। বউ বাচ্চা নিয়ে কী খাবো ভাবতে ভাবতেই সামনের মুদির দোকানে চলে এলাম। দোকানী খুব একটা খুশি হলোনা আমায় দেখে। অনেক বাকি পড়ে আছে তার কাছে।
দোকান থেকে দুটো ডিম কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে। বাকিতে এক কেজি চাল। দোকানী সাফ জানিয়ে দিলো - এরপর বাকি পরিশোধ না করলে আর কোনো কিছু দিতে পারবেনা সে।
মাথা নিচু করে দুটো ডিম আর চাল নিয়ে ঢাকার অন্ধকার এক গলি ধরে হাঁটছি। একটু আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। কী সুখী লাগছিলো স্বপ্নটা দেখার সময়! চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো। চোখ মুছলাম। আজ মাসের বিশ তারিখ। পকেটে কেবল একশো বিশ টাকা আছে। সামনের দশটা দিন কিভাবে কাটাবো জানিনা।
এসময় পাশের এক টং থেকে টিভিতে সম্প্রচারিত খবরের শব্দ ভেসে এলো। সুপরিচিত এক কণ্ঠস্বর জানাচ্ছেন কিভাবে কাঁঠাল দিয়ে মুরগির আইটেমগুলো রাঁধা যায়, ডিম সিদ্ধ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যায়।
মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। শারমিনকে জানাতে হবে টিপসগুলো। এতে যদি কিছুটা সাহায্য হয়।
টিপসগুলো আউড়াতে আউড়াতে মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছি। আর ভাবছি সন্ধ্যায় দেখা আমার সেই স্বপ্নের কথা। স্বপ্নলোক কতই না সুন্দর!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অলোক সুখ
২১ সেপ্টেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।