স্বাধীনতার সন্ধানে

স্বাধীনতা (মার্চ ২০২৫)

মোহাম্মদ শাহজামান
  • 0
  • 0
শ্রাবণের এক বৃষ্টিভেজা সকাল। জানালার পাশে বসে থাকেন শিক্ষক আনিসুর রহমান। বারান্দার বাইরে স্কুলের মাঠে বৃষ্টির পানি জমেছে, কিন্তু ক্লাসের ভেতর ছেলেমেয়েদের কোলাহল থেমে নেই।

"স্যার, আমি বই আনতে ভুলে গেছি," এক ছাত্র মৃদু স্বরে বলে।
আনিসুর রহমান তাকিয়ে দেখেন, রাহাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
"পরের বার মনে রাখবে," তিনি হালকা স্বরে বলেন।

এক সময় ছিল, শিক্ষকের সম্মান ছিল সমাজের শিরস্ত্রাণ। কিন্তু এখন? তিনি জানেন, শিক্ষার্থীকে শাসন করতে গেলে অভিভাবক কিংবা কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ঝড় বয়ে যাবে।

স্কুল ছুটির পর আনিসুর রহমান রাস্তার ধারে ছোট্ট চায়ের দোকানে বসেন। তার হাতে একটি পুরোনো পত্রিকা। হেডলাইন পড়েন, “শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জোরদার হচ্ছে।” তিনি ম্লান হাসি দেন। তার নিজের সংসার চলে অভাবের সাথে বোঝাপড়া করে। বাজারে যাওয়ার সময় তিনি মনের ইচ্ছামতো কিছুই কিনতে পারেন না। তবু শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে যান।

তার বাড়ি ফেরার পথটা খুব চেনা। রাস্তার ধারে ছোট ছোট দোকান, পথশিশুরা খেলে বেড়াচ্ছে, আর দূরে একটা বড় বিলবোর্ডে চকচকে বিজ্ঞাপন ঝুলছে- "স্বপ্নের স্বাধীনতা, আপনার হাতের মুঠোয়।" তিনি মৃদু হাসেন। কী অদ্ভুত স্বপ্ন! তিনি কি সত্যিই স্বাধীন? না কি তার জীবন শুধুই এক অবিরাম সংগ্রাম?

বাসায় ফিরে মেয়েকে কোলে নেন। ছোট্ট ফারিহা জিজ্ঞেস করে, “আব্বু, তুমি কী চাও?”
তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। এরপর মৃদু হেসে বলেন, “স্বাধীনতা, মা। সত্যিকারের স্বাধীনতা।”

রাতে খাটের এক পাশে বসে আনিসুর রহমান তার স্ত্রীর দিকে তাকান। নীলা সারাদিন সংসারের কাজ সামলে ক্লান্ত। সে বলেন, "তুমি যদি অন্য কোনো চাকরি নিতে পারতে, তাহলে কী ভালো হতো?"

আনিসুর রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। "আমি ভালোবাসি এই পেশা, কিন্তু কখনও কখনও মনে হয়, আমাদের শ্রমের মূল্য কেউ বোঝে না।"

পরদিন সকালে তিনি ক্লাসে ঢুকে দেখেন, ছাত্ররা কেউ পড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে না। অর্ণব নামে এক ছাত্র মোবাইলে ব্যস্ত।

"অর্ণব, ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করা ঠিক নয়।"

অর্ণব নির্লিপ্তভাবে বলে, "স্যার, বাড়িতে আমার বাবা-মা বলেছে স্কুলে এসে শুধু পাস করলে হবে। বেশি কিছু শেখার দরকার নেই।"

আনিসুর রহমান হতাশ হন। শিক্ষা কি শুধুই পরীক্ষায় পাশ করা? এই চিন্তাগুলো মাথায় নিয়ে তিনি ক্লাস শেষ করেন। বিকেলে স্কুলের মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষক জানালেন, "নতুন নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণ করতে হবে। ছাত্রদের কোনোভাবেই বকাঝকা করা যাবে না।"

আনিসুর রহমান বুঝতে পারেন, দিন দিন শিক্ষকের ক্ষমতা কমছে। অথচ সমাজের প্রত্যাশা শিক্ষকের প্রতি আগের মতোই রয়ে গেছে।

সন্ধ্যায় তিনি ফেরার পথে আবার চায়ের দোকানে বসেন। তার এক পুরনো ছাত্র, রাকিব, হঠাৎ এসে বলে, "স্যার, আপনি আমার জীবনে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। আপনার কথাই আমাকে প্রকৌশলী হতে সাহায্য করেছে।"

এই ছোট্ট কথাটুকুই যেন তার দিনের সমস্ত হতাশা দূর করে দেয়। তিনি বুঝতে পারেন, সমাজ যাই বলুক, কিছু শিক্ষার্থী আজও শিক্ষকের মূল্য বুঝে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবেন, সত্যিকারের স্বাধীনতা কি কেবল অর্থের স্বাধীনতা? না, স্বাধীনতা মানে আত্মতৃপ্তি, শিক্ষা দেওয়ার আনন্দ, আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করার স্বপ্ন। তিনি মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করেন— যত বাধাই আসুক, তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবেন। কারণ প্রকৃত স্বাধীনতা নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্বের মাঝে নিহিত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শ্রাবণের এক বৃষ্টিভেজা সকাল। জানালার পাশে বসে থাকেন শিক্ষক আনিসুর রহমান।

১১ আগষ্ট - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী