ভালোবাসা এক মানবিক অনুভূতি। আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে ভালোবাসার স্পর্শ লেগে থাকে। একেকজনের ভালোবাসার উপলক্ষ একেকরকম। আমার জীবনে সেই বিশেষ ভালোবাসার একটি অংশ ছিল আমার ফুফুর বাড়ির লাল কুকুরটি, যাকে আমি আদর করে ডাকতাম লালু।
ফুফুর বাড়ি গেলে লালু আমাকে স্বাগত জানাতে কোনোদিন ভুল করত না। তার সেই উচ্ছ্বাস, লেজ নেড়ে ঘুরঘুর করা, আর মায়াভরা চোখে চেয়ে থাকা—এসব যেন ভালোবাসার নিঃস্বার্থ প্রতিচ্ছবি। যখনই আমি তাকে বিস্কুট বা রুটি দিতাম, খুশিতে তার লেজের ঝাঁকি বেড়ে যেত। এই সখ্যতার মধ্যেই গড়ে উঠেছিল আমাদের এক অপূর্ব বন্ধন।
লালুর প্রতি আমার ভালোবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, ফুফুকে বারবার বলতাম লালুকে আমাকে দিয়ে দিতে। ফুফু রাজি থাকলেও তার নাতি জামাল কিছুতেই রাজি হতো না। তবুও লালু আর আমি যেন অদৃশ্য কোনো সুতোয় বাঁধা ছিলাম।
আমার হোস্টেল থেকে ফুফুর বাড়ি যাওয়া মানেই ছিল আনন্দময় এক সময়। লালু প্রতিবার আমাকে দেখতে পেলেই দৌড়ে এসে লেজ নেড়ে জানিয়ে দিত, “আমি আছি, তুমি এসেছো।” আমরা একসাথে হাঁটতাম, খেলতাম। বাড়ির সীমানার বাইরে যখনই যেতাম, সে যেন তার দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে আসত না।
একদিন, ফুফুর বাড়িতে থাকাকালীন দেখলাম, লালু বড় বড় শ্বাস নিয়ে আমার গায়ে ঘেঁষছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে নিলাম, লালুর খিদে লেগেছে। খাবার দিয়ে তার খিদে মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে সে যেন তার তৃপ্তি প্রকাশ করত মায়াবী চোখে তাকিয়ে। এমন ছিল আমাদের বোঝাপড়া।
ফুফুর বাড়ির প্রহরী হিসেবে লালু ছিল অদ্বিতীয়। রাতে বাড়ির আশেপাশে কোনো অচেনা শব্দ শুনলেই সে ঘেউ ঘেউ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। অন্য কুকুরদের তাড়ানোর মতো কাজেও সে ছিল পারদর্শী। আমাদের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ছিল অনন্য।
যখন কলেজের জন্য হোস্টেলে ফিরে যেতাম, লালু মায়াবী চোখে তাকিয়ে থাকত। তার সেই চাহনিতে যেন ছিল এক অনুচ্চারিত প্রশ্ন, “তুমি আমাকে রেখে কেন চলে যাচ্ছো?” আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতাম, “লালু, ভালো থেকো। ফুফুর খেয়াল রেখো।”
দু’বছর পর আবার ফুফুর বাড়িতে গিয়ে শুনি মর্মান্তিক এক সংবাদ—লালু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। সেই মুহূর্তে মনে হলো, আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। বাড়ির উঠোন, খেলার মাঠ—সবকিছুতেই লালুর স্মৃতি যেন ভেসে বেড়াচ্ছিল।
আমি লালুর জন্য বিস্কুট নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তাকে আর খাওয়ানোর সুযোগ হলো না। প্রতিটি কোণায় লালুর অভাব অনুভব করছিলাম। ফুফু বুঝতে পারছিলেন আমার মনের অবস্থা, তাই কোনো কথা না বলে আমাকে শান্ত থাকতে দিলেন।
ফুফুর বাড়ি থেকে ফিরে এসে দীর্ঘদিন লালুর কথা ভুলতে পারিনি। তার স্মৃতিগুলো যেন আমাকে ঘিরে রেখেছিল। লালু শুধু একটি কুকুর ছিল না; সে ছিল আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, ভালোবাসার এক মায়াবী রূপ।
এই স্মৃতিগুলো এখনো আমার মনে ভেসে ওঠে। জীবনের প্রতিটি ভালোবাসা যেমন বিশেষ, তেমনি লালু আমার জন্য ছিল এক অনন্য ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ভালোবাসা এক মানবিক অনুভূতি।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।