আমাদের গ্রামটা ছিল ছায়াঘেরা সবুজে ঘেরা। বৈশাখ এলেই চারদিকে মৌসুমী ফলের বাহার। আম, কাঁঠাল, ডাব—সবকিছুতে একধরনের মিষ্টি সুগন্ধ। ছোটবেলায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিলাম এক ‘মৌসুমী ফল চুরির দল।’ ফল চুরিটা যেন আমাদের কাছে একধরনের খেলা ছিল। গাছ মালিকের চোখ এড়িয়ে নারিকেল কিংবা আম পাড়ার মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। তবে আমাদের কাজের মধ্যে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল—অসহায়দের গাছ থেকে চুরি করব না।
দলে আমাদের ভূমিকা ভাগ করা ছিল। আলম ছিল প্রধান অভিযানে—গাছে উঠার দায়িত্ব তার। আমি আর হালিম থাকতাম পাহারায়। কেউ এলে সংকেত দিতাম। আর নুর আলম থাকত গাছের নিচে, গাছ থেকে নামানো ফল দ্রুত সরানোর জন্য।
একবার শান্তির মা দিদির বাড়ির নারিকেল গাছ থেকে ডাব চুরি করার পরিকল্পনা হলো। শান্তির মা ছিলেন গ্রামে একটু অসহায় প্রকৃতির। উনার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনিই সংসারের হাল ধরেছেন। গাছের ডাব বিক্রি করে যা পেতেন, তা দিয়েই সংসার চলত।
সেদিন রাতের অন্ধকারে আলম গাছে উঠল, আমি আর হালিম পাহারায়, আর নুর আলম নিচে দাঁড়িয়ে। আমাদের সংকেত ঠিকঠাক ছিল। কাজ শেষ হতেই চুপিসারে ডাব নিয়ে ফিরে এলাম।
পরদিন সকালে শুনি শান্তির মা দিদি বিলাপ করছেন। “কী অপরাধ করলাম আমি! আমার গাছের ডাবগুলো কে যে চুরি করল! আমার সংসার এখন কী করে চলবে?” তিনি আরও বলেন, “ওরে আল্লাহ! যে-ই করুক, ওরে নষ্ট করে দে!”
আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল। আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকালাম। সত্যি, আমাদের দুষ্টুমি তো ছিল খেলার মতো, কিন্তু অসহায় মানুষের ক্ষতি করা তো আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।
দল বেঁধে সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার শান্তির মা দিদিকে জড়িমানা দিতে হবে। সবাই মিলে চাঁদা তুললাম। রাতের আঁধারে তার দরজায় গিয়ে টাকা রেখে এলাম। টাকার সঙ্গে একটা চিরকুটও লিখলাম:
“আমরা আপনার ডাব চুরি করেছি। এই টাকা দিয়ে ক্ষতি পূরণ করুন। আর আমাদের অভিশাপ দেবেন না। আমরা আর কখনো চুরি করব না।”
পরদিন শান্তির মা দিদি টাকাটা পেয়েছেন শুনে আমাদের মনটা বেশ হালকা লাগল। তিনি বলছিলেন, “আমার গাছের ডাব যে চুরি করেছিস, জানি তোদের মধ্যে কেউ। কিন্তু তোরা যদি এভাবে ফিরে আসিস, তাতে আমার কিছু বলার নেই। আল্লাহ তোদের ভালো রাখুক।”
এরপর থেকে আমাদের দলে আর কেউ ফল চুরি করার কথা বলেনি। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, চোরেরও একটা মন আছে। আমাদের দুষ্টুমি হয়তো মজার ছিল, কিন্তু তাতে যদি কারও ক্ষতি হয়, তবে তা ঠিক নয়।
সেই ঘটনার পর গ্রামে আর কখনো ফল চুরি করার খবর শোনা যায়নি। আমাদের ছোট্ট ‘চোরের দল’ শান্তির মা দিদির সেই অভিশাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিক করে নিয়েছিল, গ্রামের মানুষকে আনন্দ দেওয়া আর তাদের কষ্ট না দেওয়ার জন্যই হবে আমাদের নতুন লক্ষ্য।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আমাদের গ্রামটা ছিল ছায়াঘেরা সবুজে ঘেরা। বৈশাখ এলেই চারদিকে মৌসুমী ফলের বাহার।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।