ইচ্ছের আকাশ

স্থিতিশীলতা (ডিসেম্বর ২০২৪)

মোহাম্মদ শাহজামান
  • 0
  • ২৯
শামার বয়স ৩৫। ঢাকার এক বস্তিতে জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই সে স্বপ্ন দেখত—সেও পড়াশোনা করবে, ভালো চাকরি করবে, তার নিজের জীবন হবে। কিন্তু জীবনটা সহজ ছিল না। বাবার মৃত্যুর পর শামার মা একজন গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করলেন, আর শামাকে স্কুল থেকে সরিয়ে গৃহকর্মে সহায়তা করতে বাধ্য করলেন।

শামার কৈশোর কেটে গেছে কঠোর পরিশ্রম আর পরিবারের চাপের মধ্যে। তবুও তার স্বপ্নে মরিচা ধরেনি। একদিন সে ঠিক করল, নিজের সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব শিক্ষার জন্য কিছু করবে। প্রতিদিনের কাজ শেষে সে গোপনে স্থানীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ত, সেখানে অল্প শিক্ষিত এক মহিলার কাছ থেকে সে লেখাপড়ার হাতেখড়ি নেয়। এরপর আস্তে আস্তে নিজেই অনেক কিছু শিখে ফেলল, যদিও উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না।

সময় পার হতে থাকে। শামা বড় হয়। বিয়ের বয়স পার হতে না হতেই তার মা ও প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। একটা মোটামুটি ঘরের ছেলে ঠিক করে শামাকে বিয়ে দিয়ে দেন তারা। তবে বিয়ের পরও শামার স্বপ্ন তাড়ায় তাকে। সে চাইছিল নিজে কিছু করতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে।

কিন্তু স্বামীর সংসারেও শামা তার ইচ্ছেপূরণে স্বাধীনতা পায় না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতিনিয়ত তাকে বলে, "তুমি তো মেয়ে। ঘরের কাজ করাই তোমার দায়িত্ব। এইসব বইপত্র রেখে ঘরেই মনোযোগ দাও।" শামা তবুও হার মানেনি। দিনের কাজ শেষে রাতের নির্জনে সে বই পড়ত, বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও দেখত। তার ভেতরে একটা আশা ছিল—কখনো না কখনো সে নিজের পরিচয়ে কিছু করবে।

একদিন সুযোগ এল। শামার এক বন্ধু তাকে জানাল, শহরের একটি প্রতিষ্ঠানে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কিছু প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। শামা গোপনে সেই প্রশিক্ষণে যোগ দিল। ধীরে ধীরে সে কম্পিউটার ও সেলাই শেখা শুরু করল। এতে তার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

কিন্তু তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানতে পারলে, তাকে রীতিমতো অপমান করে। "নারী হয়ে তুমি কাজ করতে চাও? সংসার সামলাও। নারীর কাজ বাইরে নয়!" শামা কোনো জবাব দেয় না, শুধু তার মনের গভীরে স্বপ্নকে আগলে রাখে। অনেক ত্যাগের পরেও শামা সেই প্রতিষ্ঠানে তার শিক্ষাগ্রহণ চালিয়ে যায়।

কিছুদিন পর সে ছোটখাটো কাজ শুরু করে, প্রথমে কিছু সেলাইয়ের কাজ, এরপর পরিচিতদের জন্য মেহেদী ডিজাইন, ছোটখাটো ডেটা এন্ট্রির কাজ। এই সামান্য আয়েই সে কিছুটা আত্মনির্ভরশীল হতে শুরু করে। এতে সে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এবার সে ভাবল, তার নিজের জন্য একটা ছোট্ট দোকান খুলবে, যাতে সে তার সেলাইয়ের কাজগুলো নিয়মিত করতে পারে।

কিন্তু তার স্বামীর কাছে এ ইচ্ছা প্রকাশ করতেই বাধা আসে। "তুমি কি পাগল? ঘরের বাইরে কাজ করবে?" শামা তার স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করে, "এ কাজ আমি ঘরেই চালাতে পারব। শুধু আমাকে একটু স্বাধীনতা দাও।" তবু সে বাধার মুখোমুখি হয়।

একদিন শামার মেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে, "মা, তুমি কি আমাকেও কাজ শেখাবে? বড় হলে আমি কি তোমার মতো হতে পারব?" মেয়ের এই কথায় শামার ভেতরটা আলোড়িত হয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, যেভাবেই হোক সে তার স্বপ্ন পূরণ করবে, যাতে তার মেয়ে তাকে দেখে সাহস পায়।

অবশেষে নিজের জমানো টাকা দিয়ে শামা নিজের ছোট্ট কাজ শুরু করে ঘর থেকেই। স্বামী বাধা দিলেও সে তার লক্ষ্যে অটল থাকে। তার কাজের গুণে আশপাশের লোকজন তার কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠে। নিজের চেষ্টায় শামা একটা ছোট ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলে। তার মেয়ে তার সঙ্গেই কাজ শেখে।

শামা জানে, তার এই ছোট্ট জগতে নারী হিসেবে তার লড়াই থেমে নেই। কিন্তু সে তার মনের আকাশে মুক্ত পাখির মতো উড়ছে। মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নে আর কোনো বাধা নেই। এই সংগ্রাম, এই অর্জন তাকে সাহসী করেছে। সে জানে, সমাজ তাকে ছোট করে দেখলেও তার প্রতিটি পদক্ষেপ নারী সমাজের বিপন্নতার বিরুদ্ধে একরকম প্রতিবাদ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
doel paki আরও ভাল গল্প চাই।
ইনশাল্লাহ। আমার প্রচেষ্টা থাকবে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শেষমেশ শামার গল্প শুধু তার নিজের নয়—এটি প্রতিটি নারীর, যে তার ক্ষমতায়নের লড়াই চালিয়ে যায়, চুপচাপ, একান্তে, নিজের মতো করেই। নারীর জীবন স্থিতিশিল নয়। সংগ্রাম সাধনায় এগিয়ে চলে।

১১ আগষ্ট - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪