ঢাকার বিকেল, রাস্তা যেন থমকে গেছে। যানবাহনের লম্বা লাইন যতদূর চোখ যায়, তার শেষ দেখা যায় না। প্রতিটি গাড়ি যেন স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শহরের এই চিরচেনা দৃশ্যটিই আজ আমার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আজ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন—কনিকা আজ লন্ডনের ফ্লাইটে চলে যাচ্ছে। আমাদের শেষ মুহূর্তের বিদায়ের সাক্ষী হতে আমি তার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। আর সেই প্রতিশ্রুতি ছিল তার দেওয়া একটি চুম্বন, যা তাকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলাম যেন তার অনুপস্থিতে কেউ আর আমার হৃদয় ছুঁতে না পারে।
ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে, সময় যেন আমার বিরুদ্ধে দৌড়াচ্ছে। গাড়ির ভেতরে বসে আমি বারবার ফোনের স্ক্রিনে তাকাচ্ছি। কনিকার কল আসছে একের পর এক। প্রথমে সে শান্ত গলায় বলেছিল, "তুমি কি আসছো?" আমি আশ্বস্ত করেছিলাম, "হ্যাঁ, আসছি। একটু যানজট।" সে জানে ঢাকা শহরের রাস্তায় যানজট কতটা দুঃস্বপ্ন হতে পারে, তাই সে কিছুটা ধৈর্য দেখিয়েছিল।
কিন্তু সময় পার হতে হতে সে একটু বিরক্তি নিয়ে আবার ফোন করল, "তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি আসতে পারবে?" আমি উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ, প্রিয়তমা। একটু ধৈর্য ধরো, আমি আসছি।"
রাস্তায় গাড়ির হর্ন, মানুষের কলরব—সবকিছু মিলিয়ে যেন এক অস্বস্তিকর জটিলতা। প্রতিটি মুহূর্ত যেন আমার শ্বাস প্রশ্বাস থমকে দিচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা দ্রুত চলছে, অথচ আমি সেই জটে আটকা পড়ে আছি। প্রতি মিনিট যেন আমার হৃদয়কে চুরমার করে দিচ্ছে।
শেষবার যখন কনিকা ফোন দিল, তার কণ্ঠে অসহিষ্ণুতা আর উৎকণ্ঠা মিশে ছিল, "ফ্লাইটের বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে, তুমি কি আসছো না?" আমার মনে হল যেন তার কণ্ঠের ভারীতা আমার সব প্রতীক্ষা ও আবেগকে মুছে দিচ্ছে। আমি দম বন্ধ করা কণ্ঠে বললাম, "কনিকা, আমি আসতে পারছি না... যানজট, এই অভিশপ্ত যানজট আমাকে আটকে রেখেছে।"
ফোনের ওপাশে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কনিকা বলল, "আচ্ছা, তাহলে বিদায়।" এত সহজেই যেন সব শেষ হয়ে গেল। আমি কিছু বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কণ্ঠ আটকে গেল। ফ্লাইটের ঘোষণার শব্দ শুনতে পেলাম। সে ফোন কেটে দিল। আমি জানি, এই কেটে দেওয়া ফোনের সঙ্গে কেটে গেল আমাদের একসঙ্গে থাকার সেই প্রতিশ্রুতি।
বিমানবন্দর তখন অনেক দূরে, আমার হৃদয়ের মতোই অপ্রাপ্য। যানজটের মধ্যে আটকে থাকা গাড়ির ভেতরে বসে আমি অনুভব করছিলাম কতটা অসহায় হতে পারে একজন মানুষ। সবকিছু এত সহজে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
কনিকা এখন আকাশের ওপরে, আমাকে পেছনে ফেলে। হয়তো সে আর কোনো দিন ফিরবে না, হয়তো সে আর কোনো দিন আমার জন্য অপেক্ষা করবে না। আর আমি? আমি এই নগরের যানজটের মতোই থমকে আছি।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বিদায়ের দিনে আমাকে জড়িয়ে কিস(চুম্বন) দেবেন যাতে তার অনুপস্থিতে আর কারো কিস (চুম্বন) না নিতে হয়। আমিও এই চুম্বনের অপেক্ষা করছিলাম। আমার প্রেমিকা কনিকা লন্ডন গিয়ে আমাকে পরে লন্ডনে নিয়ে যাবে। বিমান বন্দর থেকে কনিকা একটু পর পর ফোন দিচ্ছে কিন্তু আমি যানযটের কারনে আসতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানাচ্ছি।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১০ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.২
বিচারক স্কোরঃ ২.২ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী