রঞ্জিত বাবু গণিত বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন। মাস্টার্স পাশ করার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছেন। কয়েক জায়গায় ছোট খাটো চাকুরীও হয়েছে কিন্তু চাকুরির দশ পনেরো দিনের মাথায় রঞ্জিত বুঝে যায় যে এই চাকুরী তাঁর করা যাবে না। হয় বেতন ভাল না নয়তো অফিসার বা মালিক ভাল না। এইরূপভাবে কাটতে লাগলো দুবছর। রঞ্জিত বাবুর বাবা এলাকার বিখ্যাত বিজ্ঞানের শিক্ষক। এলাকায় রঞ্জিতে বাবা হারাধনের সুনাম রয়েছে। হারাধন সাহেবের অনেক ছাত্র বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই রঞ্জিত বাবু সংসারের জন্য কোন টেনশন করতে হয় না। রঞ্জিত চাকুরী ছাড়ে আবার অন্যটাতে যোগদান করে। কয়েকবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু ভাল করতে পারে না। দুবছরে রঞ্জিত বাবুর নিয়মিত পড়াশোনা ছিল পত্রিকার চাকুরী চাই বিজ্ঞাপন। এই দুবছরে রঞ্জিত বাবু বুঝতে পেরেছে ছাত্রজীবনই জীবনের সবচেয়ে মধুর জীবন। কোন ভাবনা চিন্তা বা সংসার ছিল না। বাবা নিয়মিত টাকা দিতো আর রঞ্জিত নিয়মিত লেখাপড়া করতো। এখন রঞ্জিতবাবুর জীবন যেন মহাযুদ্ধু। এই যুদ্ধে জয়ী হলে বিয়ে করতে পারবে তা নাহলে স্ত্রী পাওয়াও সম্ভব নয়। শিক্ষা জীবনের সতের বছর না শিখেছে তারচেয়ে বেশি শিখেছে এই বেকার দুবছরে।
বেকার দুবছরে শূন্য জীবন ফলাফল নিয়ে গ্রামে আসলেন রঞ্জিতবাবু। বাবা হারাধন ছেলেকে নিজ গ্রামের পাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কথা বললেন। বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকতায় আসাও সহজ নয়। বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক হারাধন মাস্টারের ছাত্র ছিল তাই সহজেই চাকুরীটা পেল রঞ্জিতবাবু। দুবছর বেকার জীবনের পর শিক্ষকতায় এসে কিছু প্রাইভেটের টাকা এবং শত শত ছেলে মেয়ের আদাব নমস্কার শোনতে শোনতে শিক্ষকতা ভাল লাগতে শুরু করছে। বাবা হারাধনের মতই রঞ্জিত বাবুর শিক্ষকতার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। হারাধন শিক্ষকতায় টাকা পয়সা কামাই না করতে পারলেও রঞ্জিত বাবু কামিছে অজস্র টাকা। রঞ্জিতবাবুকে বিয়ে করিয়ে হারাধন স্বর্গে চলে গেলেন।
হারাধন মারা যাবার পর রঞ্জিত বাবুর সম্মানের উন্নতি না হলেও টাকার উন্নতি হয়েছে। ঢাকায় একটি ফ্লাট কিনেছেন। গ্রামে কিছু জমি কিনেছেন। জমি বর্গা চাষীদের দিয়ে ফসল ফলান ফলে অভাব চোখে পড়ে না। দেখতে দেখতে রঞ্জিত বাবুরও একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। ছেলেকে মানুষ করার জন্য ঢাকার ফ্লাটে রঞ্জিত বাবুর স্ত্রী পুত্রকে স্থানান্তর করলেন। নিজে একটি উপশহরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করলেন। প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের পর আয়ের পরিমান আরো বেড়ে গেল। এবার রঞ্জিত বাবু প্রাইভেট পড়ানো, স্কুলের ভাউচারে আর বেতনে আয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। রঞ্জিত বাবু নিজে একটা টাকার মেশিন হয়ে গেছে। স্ত্রী পুত্রকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। কাজের পরিমাণও বেড়ে গেছে।
প্রধান শিক্ষক হয়ে কাজ করার এক যুগ পর রঞ্জিত উপলব্ধি হলো জীবনে এতো টাকার পরিমাণ দরকার ছিল না। ছেলে মেয়ে নিয়ে ছোট একটি সংসারে একসাথে থাকতে পারলেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেত। এখন সে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায় না। জীবনের সার্থকতার জন্য অন্যান্য দিকগুলিতে যেমন শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক কর্ম, ইত্যাদি সার্থক কাজের মাধ্যমে নিজকে সম্পৃক্ত করতে পারতো। বাবার মতো গ্রামের অন্যান্য মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে পারতো। বাবার চেয়ে টাকার পরিমাণ বেশি কিন্তু বাবার মত গ্রামে সম্মান পায় না। গ্রামের সকল পেশার লোকের রঞ্জিত বাবুর বাবাকে সম্মান করত। সার্থক জীবনে অন্যদের সেবা ও সমাজের সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেটা হারাধন বাবু কম টাকা আয় করেও সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত আর রঞ্জিত অনেক টাকা পয়সা অর্জন করেও হারাধনের মত অন্য মানুষের ভালবাসা আর সম্মান পায় না।
রঞ্জিতবাবুর পুত্র বিদেশে লেখা পড়া করে। পুত্র বিদেশে লেখা পড়ার দু এক বছর রঞ্জিত বাবুর সাথে ফোনে ভাল যোগাযোগ করতো। এরপর আর তেমন যোগাযোগ করে না। রঞ্জিতবাবু দিনদিন নিজকে একা একা মনে করছেন। নিজের কাছে নিজকে শূন্য মনে করছেন। একাকিত্বের কি যে যন্ত্রনা তা ধীরে ধীরে অনুভব করেছেন। রঞ্জিত বাবুর মান অভিমানে বাবা সকল সমাধান দিতেন। আজ বাবা নেই। নিজেই বাবা হয়েছেন কিন্তু হারাধনের মত বাবা হতে পারেননি। হারাধন আর রঞ্জিত বাবুর মান অভিমান থাকতো কিন্তু রঞ্জিত বাবুর সাথে তাঁর ছেলের মান অভিমান কিছুই নাই। ছেলে আর রঞ্জিত বাবুর খোঁজ খবর নেয় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ শাহজামান
আমার বাস্তব লিখা সার্থক হলো। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এইভাবে অনুপ্রেরণা পেলে আমি লিখা চালিয়ে যাব।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রঞ্জিতবাবু দিনদিন নিজকে একা একা মনে করছেন। নিজের কাছে নিজকে শূন্য মনে করছেন। একাকিত্বের কি যে যন্ত্রনা তা ধীরে ধীরে অনুভব করেছেন। রঞ্জিত বাবুর মান অভিমানে বাবা সকল সমাধান দিতেন। আজ বাবা নেই। নিজেই বাবা হয়েছেন কিন্তু হারাধনের মত বাবা হতে পারেননি। হারাধন আর রঞ্জিত বাবুর মান অভিমান থাকতো কিন্তু রঞ্জিত বাবুর সাথে তাঁর ছেলের মান অভিমান কিছুই নাই। ছেলে আর রঞ্জিত বাবুর খোঁজ খবর নেয় না।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।