আগুন আমাকে আগুন ধরিয়ে দিলো

বন্ধুত্ব নাকি ছলনা (নভেম্বর ২০২৩)

মোহাম্মদ শাহজামান
  • 0
  • ৬৭
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবো। অফিশিয়াল কাজ। থাকতে হবে সপ্তাহ খানেক তাই এক সপ্তাহের জামা কাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটি ব্যাগে ঘুছিয়ে নিলাম আর ল্যাপটপটা ল্যাপটপ ব্যাগে ডুকিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলাম। আরামবাগ থেকে হানিফ পরিবহন কাউন্টার থেকে টিকেট নিলাম। রাত ১১টায় বাস ছাড়বে। আমি কাউন্টারে আসলাম রাত দশটায়। আমি চা পান করে লেপটপ নিয়ে আগামীকালে প্রেজেট্রশন রিভিউ করতে লাগলাম। রাত ১০টা ৪৫ এ বাসের সুপারভাইজার আমাকে বাসে উঠার আহবান করলেন। আমি বাসে উঠে আমার সিট খুঁজে পেলাম। আমার সিটের পাশেই একজন ভদ্র মহিলার বসা আছে। আমি ভদ্র মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি আপনার সিট? ভদ্র মহিলা মুখের কাপড় মাথার উপরে রেখে আমার দিকে হেঁসে বললেন, জি হ্যাঁ; মহাশয়। মহিলার হাঁসি আর কন্ঠ আমার পরিচিত মনে হল। কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না। তবে আমার পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। আমি জানালার পাশের সিটে বসলাম। উনি দড়িয়ে আমাকে আমার সিটে যেতে সাহায্য করলেন।
আমি সিটে বসে ভাবতেছি, এই মহিলা কে? আমাকে দেখে একটু মুছকী হাসল কেন? কেনইবা আমাকে মহাশয় বললেন? আমি চুপচাপ বসে রইলাম আর ভাবতেছি এই ভদ্র মহিলা কে? বাস ছেড়ে দিল। বাসটি সায়েদাবাদ অতিক্রম করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলেন। আমি মহিলাকে ভালভাবে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলে উনি যদি আমাকে অভদ্র মনে করে তাই মহিলার দিকে তাকালাম না। চুপচাপ ভাবনার শেষে ঘুমানো চেষ্টা করলাম। হঠাৎ মহিলার কন্ঠ গর্জে উঠল।
- কী শুভ সাহেব? আমাকে চেনে না? আমার যৌবন বয়সে আপনি আমার পিছু পিছু কত ঘুরেছেন আর এখন আমাকে না চেনার ভান ধরেছেন?
- আমি অভাক হয়ে, বললাম, আপনি আয়েশা না?
- জি আমি আমিই আয়েশা, যার সাথে গভীর রাতে ফোনে কথা বলতেন। আমি অপেক্ষা করছি, তুমি আমায় চেনো কী না?
- জি, ম্যাডাম ১০০% চিনেছি। তুমি একা কোথাও যাচ্ছো?
- এই বাস কী রংপুরে যাবে?
- না, এটা কক্সবাজারে যাবে।
- তাহলে কেনো বললে কোথায় যাবে? আমি কক্সবাজারে যাবো তিন দিনের জন্যে।
- ও, আমি ভাবছি, তুমি চট্রোগ্রামে যাবে তাই বললাম। হ্যাঁ, তোমার স্বামি বা বাচ্চা-কাচ্ছা কই?
- হ্যাঁ, আমার মেয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটেতে পড়ে। শেষ বর্ষ। আর স্বামী নাই।
- নাই মানে? মেয়ের বাবা কি মৃত?
- না, মৃত নয় তবে জীবিতও নয়।
- মানে?
- মানে মানে আমার সাথে থাকে না। থাকে আরেক মহিলার সাথে।
- বলো কী? তোমার মত এত সুন্দরী বউ থাকতে আরেক মহিলার সাথে থাকে তা আমার কাছে বিশ্বাস হয় না।
- বিশ্বাস আর অবিশ্বাসে কারণেই তিনি আমার সাথে থাকতে চায় না। গত ৩/৪ বছর আমার সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি। তার আগে মাঝে মধ্যে আমার সাথে অল্প স্বল্প যোগাযোগ ছিল। এখন মাঝে মধ্যে মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে। তবে আমার সাথে একেবারেই নয়। থাক এই কথা। তোমার সাথে অনেকদিন পর দেখা। তুমি কেমন আছো? তোমার ছেলে মেয়ে কয়জন? বউ কেমন?
- আমি তোমার কথাই কিছুই বুঝলাম না। আমার এক ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে আর ছেলেট কলেজে পড়ে। ছেলের কলেজেই আমার স্ত্রী অধ্যাপনা করে। মানে ছেলেটি তার কলেজে পড়ে। মেয়েটি আমার ভার্সিটিতে পড়ে।
- বাহ! তোমার তো সুন্দর সংসার। শুনে খুব খুশী হলাম। বউয়ের সাথে ঝগড়া-টগড়া হয়?
- জি, কালে ভদ্রে হয় তবে আমার মেয়ে সঠিক বিচার করে তাই ঝগড়া-টগড়া করতে পারি না।
- তোমার মেয়ে কী বিষয়ে পড়ে?
- আইন বিষয়ে পড়ে। তুমি না পুলিশে চাকরী করতে। আমি বিদেশ থাকা অবস্থায় উত্তমের নিকট জেনেছি। তবে উত্তম তোমার ফোন নাম্বার আমাকে দেয় নাই।
- হ্যাঁ, আমি পুলিশের চাকুরী করি।
- পুলিশের চাকুরী করে, স্বামী নিজের হাজতে রাখতে পারো না?
- স্বামী তো আসামী নয় তাছাড়া মনের মিল না থাকলে আইন বা পুলিশ দিয়ে কি করবো? কথা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
- দুঃখিত, তোমার ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা আমার ঠিক হয়নি।
- এক সময় তুমিই আমার ব্যক্তিগত ছিলে। আমি তোমাকে ভালবাসতাম। তুমি আমাকে সন্দেহ করে অভিমান করলে আর আমিও তোমার অভিমান ভাঙলাম না।
- এই বুড়া বয়সে প্রেমের কথা ছাড়ো। ছেলে মেয়ে কথা বলো আর চাকুরির কথা বলো।
এরপর আমাদের উভয়ের মাঝে এক অদ্ভুত নিরবতা শুরু হলো। গাড়ী চৌদ্ধগ্রামে বিরতির জন্য একটি হোটেলে থামালো। আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম, চলো কিছু খাবো খুদা লাগছে। আয়েশা গাম্ভীর্য ছেড়ে বললো, চলো। আমরা দুজনে কপি পান করে আবার গাড়ীতে উঠালাম। আয়েশা চায়ের বিল খুব দ্রুত প্রদান করেছে যাতে আমি না দিতে পারি। আমি আয়েশাকে বললাম, ম্যাম আমি একটু ঘুমাবো কারণ কাল ১১টায় আমার প্রেজেট্রেশন আছে। আয়েশা বলল, শুভ তোমার মনে আছে, একরাতে তুমি আর আমি নাইটকোচে চট্রোগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেম। সেই রাত্রে আমারা একটুও ঘুমাইনি। আমি বললাম, আরে ওটা তো প্রেমের আলাপ ছিল, তাই দিবা রাত্রির খোঁজ ছিলনা। এখন আমি একটু ঘুমাতে হবে। না হয় হাই প্রেসারে ডিসট্রাভ করবে। আয়েশা জানাল, আয়েশারও হাইপার টেনশন আছে। বাসে আয়েশা আমাকে একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলো যাতে আরামে ঘুমাতে পারি। আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আয়েশাও ঘুমানের চেষ্টা করছে।

আমার মনে পড়ল আয়েশাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল। তাকে খুব ভালবাসতাম। প্রতিদিন একটা না একটা ম্যাসেস দিতাম তাকে। শেষের দিকে তাকে ফোনে পাইতাম না। অনেকক্ষণ পরে পেলে বলতো, আমি বাড়িতে আব্বার সাথে কথা বলেছি বা মায়ের সাথে কথা বলেছি ইত্যাদি। আমার ম্যাসেজের রিপ্লাইও দিতো না। পরে একদিন আয়েশার বাসায় গেলাম। আয়েশা আমাকে দেখে আগের মত খুশী হয়নি। আমাকে সৌজন্যতা করে আয়েশার কক্ষে নিয়ে গেল। আমি কক্ষে বসে ম্যাগজিন পড়ার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ আয়েশার মোবাইল ফোনের আওয়াজ হলো। আয়েশা সম্ভবত ভুলে ফোনটি সাথে করে নেয়নি। আমি ফোনটি হাতে নিলাম। লক্ষ করলাম, আগুন নামে একজন ফোন করেছে। আমি কৌতুহল বশত ফোনটি রিসিভ করলাম। আমি হ্যালো বলার পর ফোনটি কেটে দিল। পরে ফোনের ম্যাসেস চেক করে দেখি শত শত আগুনের ম্যাসেস। ম্যাসেজের ভাষা জান-পরান, আই লাভ ইউ, ইত্যাদিতে ভরপুর। সাথে সাথে আমার সারা শরীরের মনের ভিতর আগুন ধরে গেল। আমি আয়েশা কিছু না বলেই সেইদিন চলে আসলাম আর কোন যোগাযোগ করিনি। পরে অবশ্যই দু একবার কথা হয়েছিল কিন্তু আমার মনের আগুনের কারনে আয়েশাকে একেবারে ভুলার চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে খুব খারাপ লেগেছিল, পরে বিদেশ যাবার পরে একেবারেই ভুলে গেছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অথই মিষ্টি সুন্দ তো , বাহ্
ফয়জুল মহী বেশ চমৎকার লিখেছেন খুব ভালো লাগলো । শুভকামনা রইল ।
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার উৎসাহ আমার প্রাপ্তি।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবো। অফিশিয়াল কাজ। থাকতে হবে সপ্তাহ খানেক তাই এক সপ্তাহের জামা কাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটি ব্যাগে ঘুছিয়ে নিলাম আর ল্যাপটপটা ল্যাপটপ ব্যাগে ডুকিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলাম

১১ আগষ্ট - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪