রাত ১১ টা। অফিসে বসে কাজ করছে নীশা। আজকে ওর এক্সট্রা কিছু ফাইল কমপ্লিট করতে হবে, কারন আগামীকাল ওর ছুটি চাই। কাজ করতে করতে কখন ১১:৩০ পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি নীশা। ১২ টা বাজতেই ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে উঠলো।
ওহ্ মাই গড ১২ টা বেজে গেছে আমাকে তাড়াতাড়ি ফাইলগুলো কমপ্লিট করতে হবে।
হঠাৎ করে ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। লাইট গুলো জ্বলা নেভা করতে লাগলো। কিন্তু এতে নীশার বিন্দুমাত্র টেনশন হচ্ছে না। ও আগাগোড়াই সাহসী একটা মেয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব লাইট অফ হয়ে গেলো।
জানতাম আমি। আমি জানতাম ইলেকট্রিসিটির প্রবলেম আছে। সেইজন্য-ই লাইটগুলো জ্বলা নেভা করছিলো। এখন যদি এখানে অফিসের অন্য কোনো স্টাফ থাকতো এতোক্ষণে চিৎকার চ্যাচামেচি শুরু হয়ে যেত। ভাগ্যিস আমি একাই অফিসে।---- এই ভাবতে ভাবতে মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে নিজের ব্যাগ গোছাতে লাগলো নীশা। আর নিজমনে বিড়বিড় করতে লাগলো---
আমার আর কালকে মাসির বাড়ি যাওয়া হবে না।
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া আসলো আর নীশার ফাইলের একটা পেপার উড়ে গিয়ে দূরে পড়লো। এখানে হাওয়া কোথা থেকে এলো এই ভাবতে ভাবতে নীশা পেপারটা নীতে ওদিকে যেতেই একটা বাজে গন্ধ নাকে এলো। গন্ধটা নাকে আসার সাথে সাথেই পেট উল্টে এলো নীশার কিন্তু কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ির জন্য বেরিয়ে পরতে যাবে তখন-ই একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। এটা আসলে ছিলো নীশার ফোনের রিংটোন।
এখন আবার কে ফোন করলো! ওহ্ মা। হ্যালো মা তোমাকে আমি বলেছিলাম না আজকে আমার ফিরতে লেট হবে। হ্যালো মা কোনো কথা বলছো না কেনো? হ্যালো হ্যালো...
ফোনটা কেটে গেলো।
থাক একবারে বাড়ি গিয়েই কথা বলবো। হয়তো ভুল করে ফোন করেছিলো। যাইহোক নীশা বাড়ির পথে রওনা হলো।কিন্তু এখানেও ঝামেলার শেষ নেই। কিছুটা পথ আসতেই স্কুটির পেট্রোল শেষ হয়ে গেলো।
উফ্। যতসব ঝামেলা। আজকে আমার কপালটাই খারাপ। সকালে কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম ভগবান। এই মাঝপথে এসে স্কুটির তেল শেষ। এখন আমাকে এই স্কুটি ঠেলে ঠেলে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। তার মধ্যে চারিদিকে এতো অন্ধকার একটা মানুষ-ও রাস্তায় নেই। গা ছমছম করা পরিবেশ। হঠাৎ করে খুব ঠান্ডা পরেছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে নীশার। কোনো রকমে স্কুটিটাকে ঠেলে ঠেলে বাড়ি নিয়ে গেলো। অনেকবার কলিং বেল বাজানোর পরেও কেউ এসে দরজা খুলছে না দেখে বিরক্ত হয়ে দরজায় হাত চাপড়ালো নীশা। সাথে সাথে অফিসের সেই বাজে গন্ধটা নাকে আসলো। কিন্তু এবার গন্ধের তীব্রতা এতোটাই ছিলো যে নীশা নিজেকে সামলাতে পারলো না বমি করতে শুরু করলো। তারপর পুরো ঘরে পারফিউম স্প্রে করে পুরো ঘর পরিষ্কার করলো। মা মা করে অনেকবার ডাকার পরেও কোনো শব্দ পেলো না নীশা। এবার ওর টেনশন হচ্ছে। তাই ফোন করলো ওর মাকে।
হ্যালো মা তোমরা কোথায়? পুরো বাড়িতে কোথাও তোমাদের খুঁজে পেলাম না।
আমরা তো তোর মাসির বাড়ি চলে এসেছি।
তো তুমি একবার আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না? আমরা কতো টেনশন হচ্ছিল জানো তুমি? (রেগে)
তুই তো নিজেই আমাকে ফোন করে বললি তোর অফিসের কাজ কমপ্লিট হয়নি তাই তুই আসতে পারবি না আমরা যেনো চলে আসি।
কিহ্ আমি?
হ্যাঁ।
কখন?
১০ টা নাগাদ। কেনো কিছু হয়েছে?
না কিছু না। আচ্ছা রাখছি।
ফোনটা রেখে নীশা চিন্তিত হয়ে পড়লো। নীশা ভাবছে ও আবার কখন ফোন করলো? কিন্তু মা-ই বা মিথ্যে বলবে কেন? এখন থাক ওসব! নীশা কিচেনে গিয়ে নুডুলস বানালো। এখন ও নুডলস্ খাচ্ছে আর হরর মুভি দেখছে। এটা ওর রোজকার অভ্যেস। রাতে করে হরর মুভি দেখতে পছন্দ করে নীশা। কিন্তু আজকে কেনো জানি না ওর ভয় ভয় করছে। গা শিউরে উঠছে বারবার। মনে হচ্ছে ওর আশেপাশে কেউ আছে। ওর একটু বেশিই ভয় করছে। তাই তাড়াতাড়ি নুডলস্ শেষ করে শুয়ে পড়লো। নীশা এতোটাই ভয় পেয়ে ছিলো যে লাইট-ও অফ করেনি। শুয়ে আছে অনেকক্ষণ কিন্তু ঘুম আসছে না। হঠাৎ করে লাইনগুলো অন অফ হতে লাগল। তারপর লাইট গুলো পুরোপুরি অফ হয়ে গেলো। এতো সাহসী মেয়েটাও কোনো এক অজানা কারণে ভয়ে ঘেমে গেছে। ওর মনে হচ্ছে আজ ওর সাথে খারাপ কিছু হবে। তবুও বারবার মনকে শান্তনা দিচ্ছে ' না না আমার কিচ্ছু হবে না। ডোন্ট ওয়ারি।' ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে কেউ দরজা খুললো।
কে আছো এখানে সামনে এসো। সামনে এসো বলছি।
এবার একটা উদ্ভট আওয়াজ ভেসে এলো সাথে সেই দুর্গন্ধটাও।
আমি সামনে আসলে আমাকে দেখে সহ্য করতে পারবে তো?
একটু ইতস্তত হয়ে উত্তর দিলো নীশা 'পারবো'।
ঘরের একটা লাইট জ্বলে উঠলো আবছা আলোয় বোঝো যাচ্ছে এটা কোনো মানুষ হতেই পারে না, এটা একটা অশরীরি। পুরো চেহারা পুড়ে গেছে দেখতে একদম বিদঘুটে, যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে। এই অশরীরির দেহ থেকেই বেরোচ্ছে ওই বাজে গন্ধ। আতকে উঠলো নীশা।
চলে যাও এখান থেকে চলে যাও।
তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে এসেছি নীশু। আমাকে চিনতে পারছো না?
কে তুমি? (ভয়ে)
আমি রোহিত।
কোন রোহিত?
তোমাকে কতোবার প্রপোজ করেছি! কতো ভালোবাসতাম তোমায়? তোমাকে বলেছিলাম তোমার জন্য মরতেও রাজি আমি। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বুঝলে না। আমাকে বারবার রিজেক্ট করেছো। তাও শুধুমাত্র ওই বরুন এর জন্য।
ওহ্ তুমি ওই সাইকোটা!
তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি বরুনকে মেরে ফেলেছিলাম।
তুমি মেরেছিলে বরুনকে? (কেঁদে)
হ্যাঁ। কিন্তু তবুও তুমি আমার ভালোবাসা একসেপ্ট করলে না। তাই আমি নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলাম। তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনার সামনে মৃত্যু যন্ত্রনাও কিছু না।
তাহলে কেনো এসেছো এখানে চলে যাও চলে যাও!
তোমাকে নিয়ে তবেই ফিরবো আমি।
নাহ্! আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।(কেঁদে)
এই জনমে তোমাকে পাইনি তো কি হয়েছে পরের জনমে তুমি আমার হবেই। তোমাকে আর কারো হতে দিবো না আমি। তুমি শুধু আমার।
আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
কিন্তু আমি ভালোবাসি।
এটাকে ভালোবাসা বলে না। পাগলামো বলে। যদি তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসতে তাহলে আমাকে মারার জন্য আসতে না। আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে না। বরুনকে মারতে না তুমি। (কেঁদে)
শুধু বরুনকে কেনো যাকেই তুমি ভালোবাসবে তাকেই শেষ করে ফেলবো আমি। কতোবার বলবো তুমি শুধু আমার। শুধু আমার।
আমি মরে গেলেও তোমার মতো একটা সাইকোকে কোনো দিন ভালোবাসবো না।
বাসবে বাসবে বাসবে। বাসতেই হবে। চলো এখন আমার সঙ্গে ওই জগতে চলো।
নাহ্। (কেঁদে)
তারপর রোহিত মানে অশরীরিটা নীশাকে জড়িয়ে ধরলো। নীশা বমি করতে শুরু করলো। রোহিত ওকে দেয়ালে ছুড়ে ফেলে দিলো। মাথা ফেটে রক্ত পরছে নীশার।
চিন্তা করো না নীশু আমি তোমাকে বেশি কষ্ট দেবো না। একটু কষ্ট সহ্য করো তারপর আমরা একসাথে ওই জগতে যাবো।
নীশা কিছু বলার অবস্থায় নেই। ওর চোখ দিয়ে অঝোরে জল পরছে। রোহিত নীশাকে আবার জোরে ছুড়ে মারলো দেয়ালে। এবার নীশার মাথা তোলার ক্ষমতাটুকুও নেই। রোহিত একটা কেরোসিনের ড্রাম নিয়ে এসে নীশার গায়ে ঢেলে দিলো তারপর আগুন লাগিয়ে দিলো নীশার গায়ে।
এখন থেকে তুমি শুধুই আমার---এই বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো রোহিত।
নীশা মৃত্যুর আগে শুধু একটাই কথা বললো 'বিষাক্ত প্রেম'।
সমাপ্ত।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রাত ১১ টা। অফিসে বসে কাজ করছে নীশা
০৮ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।