বিদায়বেলা-
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভোরবেলা ভিড় নেই।
প্যারিসগামী ফ্লাইটের জন্য গেটে দাঁড়িয়ে শাহরিয়ার মাকে ভিডিও কল করল।
মা স্ক্রিনে হাসিমুখে—
মা: “তুই ঠিকমতো খেয়েছিস তো?”
শাহরিয়ার: “হ্যা মা। তোমাদের জন্য অনেক কিছু এনেছি। কাল সকালের নাস্তা একসঙ্গে করব।”
পাশেই বাবা, ঠোঁটের কোণে হাসি, তবে চোখের কোণে জল—
বাবা: “প্লেন থেকে নামলেই ফোন দিবি, বুঝলি?”
শাহরিয়ার: “জ্বি বাবা।”
মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দে তার চোখে উজ্জ্বল আলো। প্যারিসে পড়াশোনা শেষ করে এই প্রথম দেশে ফেরা।
আকাশের পথে-
প্লেন রাত দশটায় আকাশে উঠল। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল নীচে শহরের আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
পাশের সিটে বসা এক বৃদ্ধা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন—
বৃদ্ধা: “তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
শাহরিয়ার: “ঢাকা। অনেক দিন পর পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে। আর আপনি?”
বৃদ্ধা: “ছেলের কাছে যাচ্ছি। পাঁচ বছর পর ওর মুখ দেখব।”
এভাবে কথা বলতে বলতে তারা গল্পে মেতে উঠলেন। মাঝেমধ্যে প্লেনের কেবিন ক্রু এসে খাবার পরিবেশন করছে।
মেঘের ভেতরে-
রাত একটা নাগাদ পাইলটের ঘোষণা—
"প্রিয় যাত্রীরা, সামনে সামান্য টার্বুলেন্স আছে, সবাই সিটবেল্ট বেঁধে নিন।"
জানালার বাইরে কালো মেঘ জমে গেছে, দূরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
শাহরিয়ার হালকা অস্বস্তি অনুভব করল। পাশের বৃদ্ধা তসবিহ বের করে ধীরে ধীরে পড়তে লাগলেন।
বিপর্যয়-
হঠাৎ এক প্রচণ্ড শব্দ—
প্লেন কেঁপে উঠল যেন আকাশে কেউ ধাক্কা দিয়েছে।
লাইট নিভে গেল, কেবিনের ভেতর চিৎকার আর আতঙ্কে ভরে উঠল।
পাশের বৃদ্ধা কাঁপা হাতে শাহরিয়ারের হাত চেপে ধরলেন—
বৃদ্ধা: “বাবা, আমি ভয় পাচ্ছি…”
শাহরিয়ার: “চিন্তা করবেন না খালা, কিছু হবে না।”
বিমান দ্রুত নিচে নামছে, জানালার বাইরে কালো সমুদ্র কাছে চলে আসছে।
মানুষ শেষ মুহূর্তে নামাজের দোয়া পড়ছে, কেউ মুঠোফোনে প্রিয়জনকে শেষবারের মতো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ লিখে পাঠাচ্ছে।
নীরবতার পর-
এক মুহূর্তে সব শেষ।
কালো সমুদ্রের বুক চিরে আগুনের ফুল ফেটে উঠল।
আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, পানিতে ভাসছে ভাঙা ডানা, আর মানুষের চিহ্নহীন স্মৃতি।
অপেক্ষা-
ঢাকার বিমানবন্দরে সেই রাতেই মানুষ ভিড় করেছে।
মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন শাহরিয়ারের বাবা, পাশে মা।
হঠাৎ টিভির ব্রেকিং নিউজ—
“ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, সবাই নিহত”
মায়ের হাত থেকে ব্যাগ ছিটকে পড়ে গেল, বাবার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
কেউ কিছু বলল না, শুধু নিঃশব্দ কান্না ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।
সকালে তাদের ঘরে টেবিলের উপর রাখা রঙিন প্যাকেটগুলো পড়ে আছে—
একটা শাড়ি, বাবার জন্য একটি ঘড়ি…
যা আর কখনো হাতে পরানো হবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী মারুফ
প্রথমে লিখেছেন "হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভোরবেলা ভিড় নেই।
প্যারিসগামী ফ্লাইটের জন্য গেটে দাঁড়িয়ে শাহরিয়ার মাকে ভিডিও কল করল।"
আবার শেষের দিকে লিখেছেন "ঢাকার বিমানবন্দরে সেই রাতেই মানুষ ভিড় করেছে।"
আসলে প্যারিসগামী বলতে তো প্যারিসের দিকে গমন করা বোঝায়। আমি ভুল বললে আমাকে সংশোধন করে দেবেন দয়া করে। এছাড়া গল্পটা চমৎকার ছিলো।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পাইলটের ভাঙা কণ্ঠ—
"মে ডে… ইঞ্জিন ব্যর্থ… নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি… সবাই প্রস্তুত থাকুন…"
মুহূর্তের মধ্যে নীচের সমুদ্রের কালো ঢেউ কাছে চলে এল।
তারপর—
এক অদ্ভুত নীরবতা,
যেন সময় থেমে গেল।
পরের দিন খবরের কাগজের শিরোনাম—
"মধ্যরাতে ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা, সবাই নিহত"
২২ জুলাই - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
২৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।