মায়াবতী

ভালবাসার গল্প (ফেব্রুয়ারী ২০২৪)

Sajjad Saddam
মোট ভোট ৪৫ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৮.২২
  • ১০০
আজ একটু আগে ভাগেই ঘুম ভাঙ্গলো। ৭ টা বেজে ৩৭ মিনিট। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি ১১ টা মিসড কল। অপরিচিত নাম্বার।
ফোন ব্যাক করলাম।
--হ্যালো ফয়সাল ভাই বলছেন?
-- জি। আপনি?
--- আমি জুনায়েদ। অনলাইনে একটা ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ থেকে আপনার নাম্বারটা পেয়েছি।
---- জি বলেন।
--- ভাই আমার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ। প্রেগন্যান্ট। ব্লাড লাগবে ইমারজেন্সি। ভাই দিতে পারবেন?
--- কি বলেন। পারবো না কেনো। কখন লাগবে? কোন হসপিটাল। ও নেগেটিভ তো??
--- জি ভাই। বাঁচালেন আমাকে। যতদ্রুত সম্ভব এসে পরেন। ঠিকানা টেক্সট করছি।

পাশ থেকে সাদিয়া বলল
-- ব্লাড দিতে যাবে বাবু? তুমি জলদি ফ্রেস হয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি
-- হুম জান৷ থ্যাংকস।
-- শুধু থ্যাংকস। আজকের তারিখ দেখেছো?
--- ১৭ জানুয়ারি? কি জানো আজ? মনে পরছে নাতো
--- আচ্ছা থাক মনে করতে হবে না। যাও ফ্রেস হয়ে নাও।


বাসা থেকে বের হওয়ার পর ও বার বার মনে করার চেষ্টা করছিলাম ১৭ জানুয়ারি কি হয়েছিল। বাট কিছুই মনে পরছে না। সাদিয়া মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। বাট খুব ভালো একটা মেয়ে ও। বুঝতেই দিতে চায় না। কেনো যে এত ভোলা মন হল আমার। আগে তো এমন ছিলোনা।

৫ বছরের রিলেশনের পরে আমাদের বিয়ে। ৫ বছর তো কোনো কিছুই ভুলে যায় নি। প্রথম এসএমএস, প্রথম দেখা, প্রথম একসাথে খাওয়া, আরো যে কত কি সবই তো মনে আছে কিন্তু সতেরো তারিখে যে কি?

প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজ লাইফের সেকেন্ড দিন। কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।

দেখা, পরিচয়, ফ্রেন্ডশিপ চলছিলো বেশ। এত এত মিল খুজে পাচ্ছিলাম দুজন দুজনের কাছে আসাটাই শুধু বাকি ছিলো। দেড় বছরের ব্যবধানে ভালবাসাও হয়ে গেলো।

ফোন বেজে উঠলো।
-- হ্যালো জুনায়েদ ভাই। এইতো আর ঘণ্টা খানেক লাগবে।
--- আচ্ছা ভাইয়া। অনেক অনেক ধন্যবাদ।


ফোন থেকে নোট প্যাড বের করলাম। সতেরো তারিখের কথা মনে পরতে।


-এই আর কতদিন বাবার বাড়িতে রাখবা?
- কেনো থাকতে মন চায় না?
- ৪ টা বছর ধরে শুধু বিয়ে করবা করবা বলে রেখে দিলা। ফাজিল। আমার আর একটুও ভালো লাগে না। জলদি আমার বাসায় চলো।।
-- কি যে বল। দুজনি এখনো স্টুডেন্ট। বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি।
--- কি বিয়ের বয়স হয়নি? ওকে তুমি বুড়ো হয়ে যাও। আর বাবা আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে..
-- চুপ একদম। চুপ। চলো আজই যাবো। চলো আজই যাই।
--- বাবা দেশে নেই। তাই নাটক করছো তাইনা? ফাজিল কোথাকার।
--- ওহ আমার তো মনেই নেই বেবি। দেশে ফিরুক সব খুলে বলবো।
--- যাক আর বলা লাগবে না। আম্মু তোমার মাকে ফোন দিয়েছিলো। মা বলেছে জলদি আমার বাসায় আসবে
আর হ্যা মা বললো তোমার বাবা আর একলা পারছে না। তাড়াতাড়ি ব্যবসা বুঝে নাও।
--- এখনি কাজ। তো প্রেম কবে করবো?
- আর পারিনা তোমাকে নিয়ে।


১৭ তারিখে তো কিছুই লেখা নেই। বুঝলাম না সাদিয়া কিসের কথা বলতে চাচ্ছে। তবে কি বিয়ের পরের কিছু।


হাসপাতালে এসেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। শুরুতেই দেখা হলো আজিজ সাহেবের সাথে। মনে পরে গেলো সেদিনের ঘটনা।
বাইকে করে ফিরছিলাম। ড্রাইভ করছিলো রাসেল। আজিজ সাহেবের গাড়ির সাথে মোড় ঘুরতে যেয়ে লেগে যায় বাইকটা। উনি নেমেই অকথ্য ভাষায় গালি দেন। রাসেল সরি বললে উনি ওকে ধাক্কা মেরে আবার গালি দেন। আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি ওনাকেও ধাক্কা মেরে বসি। এরপর হাতাহাতি। লোক জনের আগমন। তারপর বাড়িতে ফেরা। বাবার বয়সি একজনের উপর হাত তোলাটা অন্যায় হয়েছে বুঝেছিলাম তখন। তবে তখনো রাগ কন্ট্রোলের রেসিপি শেখা হয়নি।

ইচ্ছা করছিলো আজো তাকে কিছু একটা শুনিয়ে দেই। বাট নেহাত একটা ভালো কাজে এসেছি নয়তো খবর ছিলো। জুনায়েদ কে ফোন দিতেই দেখি পাশ থেকে ফোনটা বেজে উঠেছে। আর আজিজ সাহেব পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো।

-- হ্যালো। বাবা ফয়সাল কোথায় আপনি? আমি..
--- আমি আপনার পিছনে।

আমার দিকে তাকাতেই হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো। আমি এগিয়ে যাবো তখন কেউ একজন আসলো। বাবা এত টেনশন নেওয়ার কিছু নেই। ফয়সাল সাহেব চলে আসবেন।
আজিজ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। এরপর বলল ঐ যে ফয়সাল। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে সামনে আগালাম। আজিজ সাহেবের সাথে কথা না বাড়িয়ে জুনায়েদের সাথে গেলাম । আগেও একবার এখানে এসেছিলাম ব্লাড দিতে। সাদিয়ার সাথে। সাদিয়া এক ফ্রেন্ডকে ব্লাড দিতে।


-- বাবু। আমার খুব ভয় করছে
-- এই কেনো?
-- তোমার শরীর থেকে এতগুলো রক্ত নিয়ে যাবে। তোমার কিছু যদি হয়ে যায়।
-- ধুর পাগলী কি হবে।
--- না মানে আমার জন্য যদি তোমার কিছু হয়ে যায়।
--- পাগলী ব্লাড আমি আগেও দিয়েছি। এবার প্রথম নয়
--- জানি। কিন্তু আমি কি একবারো সাথে ছিলাম।
--- হা হা হা। তোমার ব্লাড গ্রুপ টাও আজ টেস্ট করে নাও
--- উহু ভয় করে..


আজিজ সাহেব এসে আমার পাশে বসলো।
-- বাবা?
--- হুম।
--- আগে যা হইছে ভুলে যাও।
জানোই তো ও নেগেটিভ কতটা রেয়ার গ্রুপ। কত যে খুজেছি। ডাক্তার তো বলেই দিছে ডোনার লাগবেই । নয়তো অপারেশন এ হাত দিবে না। তুমি সময় মত না এলে..
-- আংকেল থামেন তো। সব ঠিক আছে। সেদিনের জন্য আমি দুঃখিত। তা অপারেশন শুরু হয়েছে?
--- হুম বাবা। চলো চা খাই।
-- না আংকেল চলে যাবো। বাসায় সাদিয়া অপেক্ষা করছে।
--- সাদিয়া??
--- জি আপনার মেয়ে সাদিয়া। সেদিন ওকে নিয়ে পালানো ছাড়া আমার উপায় ছিলো না।
-- বাবা তোমার মাথা ঠিক আছে
আজ তুমি সাদিয়াকে রক্ত দিতে এসেছো। আর জুনায়ের ওর হাসব্যান্ড
--- হুম আংকেল জানি। সেদিন সাদিয়ার সাথে আমার সব শেষ হয়ে গেছিলো। তবে সে অনুভুতি গুলো আজো মনের মাঝে রয়েই গেছে। আপনি আপনার মেয়ে সাদিয়াকে জুনায়েদের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। ও কেমন আছে আমি জানিনা। তবে আমার মনের ভিতর যে সাদিয়া ছিলো ও আজো মনের মাঝে বেঁচে আছে। ভাবতেছি জলদি বাবা ও হবো। সাদিয়াকে নিয়ে আমি মনে মনে সংসার বেধেছি। ওকে আপনি কেড়ে নিতে পারবেন না।
সেদিনের করা ঐ ভুলটা এত বড় হয়ে দাঁড়াবে আমি জানতাম না। আপনি সাদিয়ার বাবা তাও জানতাম না। ক্ষমা চাওয়ার পরো বাবা মাকে অপমান করার পর ওভাবে ঝগড়াটা ভুল না ঠিক জানতাম না।
তবে মেয়ের বয় ফ্রেন্ডের কাছে লাঞ্চিত হবার পর বাবা হয়ে ঐ ছেলেকে মেনে নেওয়া অসম্ভব সেটা বুঝি। এই বাবার মেয়ে হিসাবে বাবার পক্ষে যাওয়া উচিত সেটা বুঝে আমি আর ফিরে আসিনি।

আজিজ সাহেব আমার হাত টা ধরে বললেন। বাবা সরি। আমার মেয়েটাও অনেক কষ্ট পেয়েছে। রাতের পর রাত কেঁদেছে। না খেয়ে থেকেছে। আমি গলে যাইনি।

কি আর বলবো। ভালো থেকো।।।


গল্পটা এখানে শেষ হতে পারতো তবে ১৭ তারিখ কি না জানিয়ে কি শেষ করা যায়। কোন এক ১৭ জানুয়ারি আমাদের যোগাযোগ চিরতরে বন্ধ হয়েছিল। আজ অন্য এক সতেরো জানুয়ারি সাদিয়ার লাইফে নতুন কেউ আসলো। জুনায়েদ ফোন দিয়েছিল। ওদের ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে ফয়সাল। আর মা ছেলে দুজনেই ভালো আছে। দুয়া করে দিলাম ওরা অনেক অনেক অনেক শুখি হোক। কাল দাওয়াত করেছে আমায়। কিন্তু আমি না করে দিয়েছি কাল যে আমার সাদিয়াকে নিয়ে কক্সবাজার যাবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Pervez Chowdhory Darun
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Thanks
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
অথই মিষ্টি সুন্দর লিখেছেন লেখক
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Thanks
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সম্পর্কে ভেঙ্গে যায় তবে হৃদয়ে থেকে যায় ভালবাসা অনন্তকাল

২৮ জুন - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ৪ টি

সমন্বিত স্কোর

৮.২২

বিচারক স্কোরঃ ৫.২২ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪