দুর্ঘটনা

অভিমান (এপ্রিল ২০২৪)

Faisal Bipu
  • ১৩
  • 0
  • ৫০
বাইক এক্সিডেন্ট করে গুরুতর আহত হয়ে শুয়ে আছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে ১৫ দিন নাকি বিছানায় থাকতে হবে। পৃথিবীর সবচাইতে কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়তবা বেডে শুয়ে থাকা।
টাইপগত এবং বাস্তবগত বানানের ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন। সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।


আছি নানার বাড়ি মান্দা নওগাঁ। কেশর হাটের বিখ্যাত টিপু মামার কালা ভোনা রমজানের আগে লাস্ট দুপুরের খাবারে খাওয়ার পর ফ্যান হয়ে ছিলাম। রোজা আসার পর থেকেই চিন্তায় ছিলাম যাবো একদিন ওখানে ইফতার করবো। তবে ছোট্ট একটা ভাইরাস জরে ব্রেন আর শরীরের সাথে যেমন পেরে উঠছিলাম না সেরকম পারছিলাম না গল্প লিখতে আপনাদের জন্য। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে রোজা তারাবি চলছিলো।
যে গল্প জমা দিতে চাচ্ছিলাম তার কিছু লাইন

""" - আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে সমাজের যতটুকু না উপকার হবে তার চাইতে বেশি হবে ক্ষতি। মেরে ফেলেন আমায়।
- এই রোগের কি চিকিৎসা নেই?
- না ভাই চিকিৎসা নেই। মরতে ইচ্ছে করে না। তবে যেহুতু সুযোগ পেয়েছেন মেরে ফেলেন।
- থামুন তো ভাই। কত মানুষ আছে যাদের দিয়ে সমাজের কোনো উপকার হয় না। বরঞ্চ তারা না থাকলেই ভালো হতো।
- আমি ছাড়া কেউ নেয় এমন।
- আছে। ধরেন কোনো পাতা খোর। পাতার নেশায় টাকার জন্য কত অশান্তি করছে। ফ্যামিলির অশান্তি, সমাজের অশান্তি। তবে বাবা কি আর পারবে তাকে মেরে ফেলতে?
- হিরোয়েন খোর ভাড়াটে খুনি ওরা মানুষের পর্যায়েই আছে ভাই তবে আমি অমানুষের পর্যায়ে চলে গেছি।
সো মেরে ফেলেন অনেক গুন প্রাণ বেচে যাবে।
- শক্তির কোনো সৃষ্টি বা বিনাশ নেই ভাই।
- কিসের মধ্যে কি?
- আমি লাইনেই আছি। আপনার শক্তি আমার প্রয়োজন। সমাজের প্রয়োজন।
- আমার শক্তি। হা হা হা। পৈশাচিক শক্তি সামাজের প্রয়োজন নয় বরঞ্চ নিষ্প্রয়োজন।
- আপনি বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝতে চাচ্ছেন না আমি জানিনা। তবে আমি আপনাকে মরতে দেবো না।
- এই ভুল করবেন না ভাই। সুযোগ পেলে, সহ্য করতে না পারলে আপনাকেই শেষ করে দেবো।
- যদি আপনার খাদ্য হওয়া আমার কপালে থাকে হতেই হবে। তবে আমি খুব করে চাইবো বেঁচে থাকতে তবে তার চাইতেও বেশি চাইবো আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
- কেন ভাই কেন? আমার মতো অশুদ্ধ প্রাণ কে বাঁচিয়ে রাখতে কেনো প্রাণ বিসর্জন দেবেন? জানেন কি গত তিন মাসে কয়টা প্রাণ নিয়েছি?
- কয়টা?
- ১৭ টা।
- ফ্রিজে রেখে খেলে?
- লাস্ট মাস সোনিয়াকে খেয়ে শেষ করেছি। তবে টাটকা মাংসর লোভ খুব হচ্ছিল। তবে কি করার পায়ে ক্ষত ছিলো শিকারে যেতে পারিনি।
- একটা মানুষ কদিন লাগে শেষ করতে?
- মিনিমাম ৫ দিন। মেক্সিমাম এক মাস।
- ওকে সপ্তাহে দুটো দেবো।
- দুটো প্রাণ। নাহ তাদের জন্য কষ্ট হয়।
- আপনার মানুষত্ব এখনো বিদ্যমান। আপনি এখনো মানুষ আছেন। তবে?
- তবে কি?
- কিছুনা। খিদে পাচ্ছে?
- হুম। অপেক্ষা করুন। আর কি খান?
- অন্য কিছু খেলে হজম হয়না। বমি হয়ে যায়। শুধু মানুষ খাই। চা খাই। সিগারেট খাই। মাসে একবার হালকা গাজা ও খাই।
- মেয়ে না ছেলে?
- হলেই হয়। মেয়েদের বুকের অংশ ভালো লাগে। ছেলেদের পুরুষাঙ্গ ও জোস।
- থাকেন ব্যবস্থা করি খাবার। এই নেন এক প্যাকেট B&H। চা কফি কিচ্ছুক্ষণ পর দিয়ে যাবে রাজিব। ঘণ্টা বাজালেই সে হাজির হবে। বলতে পারেন আলাদিনের যেমন চেরাগের দৈত্ত আপনার জন্য ঘণ্টা রাজিব।"""

এই গল্প অন্য কখনো হবে। সুস্থ হলাম ৬ষ্ট রোজায়। এর পর প্যান করে নিলাম অষ্টম রোজায় যাবো খেতে। ৮ ম রোজা। আবহওয়া ভালোই শিতল আমি আরমান আর মিঠু উপজেলা মসজিদে নামাজ পরে ৩০ কিঃমি পথ পাড়ি দিয়ে কেশর গেলাম। কপাল মন্দ ইফতারের খাবার শেষ। মাগরীব পরে কালা ভুনার নামে নরমাল মাংস খেয়ে চলে এলাম।

১৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭:১৫ এর কাছাকাছি। খাবার শেষ করে বাইকে উঠলাম। চা খেয়ে যাবো না পরে খাবো এই নিয়ে তর্ক শেষ ঠিককরলাম সাবাই যেয়ে খাবো।

চালক মিঠু, মাঝে আরমান পিছে আমি। রাস্তা ফাকা থাকায় ভালো স্পিডেই টানছিল। ৮০-৮২ এর টান। সামনে যেয়ে বললাম স্লো যা। গাড়ি কিছুটা স্লো করলো। আলু সংগ্রহগার পার হয়ে কিছুদুর আগাতেই। আরো স্লো করতে বলবো ভাবছিলাম। মনে মনে ভাবলাম ১০০ পর্যন্ত টেনে আসি। এখন তো ৭০ এর নিচেই আছি। চৌদ্দমাইলের কাছাকাছি এসে একটা ভ্যান গাড়ি পাড় করে আরেকটি পার করতে যাবো। ভ্যান আলা কি মনে করে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেললো। ব্রেক ফেলতে ফেলতে লেগে গেলো গাড়িতে। গাড়ি পড়ে ছেছড়ে চলে গেলো অনেক দূর।
যতক্ষণ গাড়ি ছ্যাছড়াচ্ছিলো। হাত পা ছিলে যাচ্ছিলো এগুলো কোন বোধ তখন মাথায় বোধ হয় নি। কয়েক সেকেন্ড টাইমে শুধু মনে হচ্ছিলো অন্য এক জগৎ এর মাঝে আছি। হয় একটু পর মারা যাচ্ছি কিংবা গুরুতর আহত হবো। তবে ব্যাথা বা মৃত্যু ভয় বা দোয়া এগুলো কোনোটাই তখন মাথায় কাজ করছিলো না।
গাড়িতে ঘসা খেয়ে খেয়ে আগুন জ্বলতে ও দেখেছি। আমাদের বাইক TVS Apache RTR 160 4V থামলো গাড়ি থেকে কয়েক সেকেন্ডে পরে গেলাম। হুশ হতে ভাবতাম যখন তখন পিছন থেকে ট্রাক এসে পিসে দিতেই বললাম দৌড় মার সাইডে। মিঠুক

বা পায়ের ব্যাথায় বসে পড়লাম। আরমান কে কিছু লোক ধরে এনে আমার পাশে বসালো চোখ অন্ধকার দেখতে লাগলাম। ভাই আরেকজন কই ভাই। কিছুক্ষণের মাঝে খোঁজ পেলাম মিঠু রাস্তার ঐ পারে। পায়ের মাংস নাকি বেরিয়ে গেছে।

আরমান হাউমাউ করে কাঁদছে। শুনে বুঝলাম ও গুরুত্বর আহত। ব্যাথায় কাতড়াচ্ছে। পায়ের দিকে তাকালাম প্যান্ট ছিড়ে পায়ের ক্ষত দেখা যাচ্ছে। ডান হাটুর ও সেম অবস্থা। অন্য জায়গা গুলো জ্বলছিলো। তবে বা পায়ের ব্যাথা বেশি। তবে অন্য জনকে ধরে দাঁড়িয়ে আবার বসে পরলাম।

লোকজন জড়ো হয়েছে অনেক। ভ্যান চালক পালিয়েছে। কেউ বলছে। আরমানের অবস্থা গুরুত্বর বেশি। কেউ বলছে মিঠুকে ইমিডেটলি রাজশাহী নিতে হবে। আরো হাজারো কথা কি থুয়ে কি করবো বুঝতে পারলাম না। এর মাঝে সুপারম্যানের মতো মিঠু পায়ে বেল্ট বেধে চলে এসেছে এপাশে। নিজের খেয়াল না করে আমরা কেমন আছি জানার জন্য ব্যাকুর হয়ে আছে। ওর ভালবাসায় চোখে পানি চলে এলো বললাম ভাই আমি ফুল ওকে হালকা লেগেছে চল মেডিক্যাল। লোকজন বাইক উঠিয়ে এক সাইডে রেখেছে। কেউ কেউ আমাদের মাতাল ছিলাম। কেউ বলছে না ভালো ছেলেই মনে হয় নানা কথা। বাসায় টেনশন করবে তাই কিছু বললাম না। ধান্দাবাজরা বাইক আটকে দেবে। মিঠু ওর বাবাকে ফোন দিয়ে ফেলেছে। তবে দেরী না করে ঐ অবস্থায় বাইক চালাতে লাগলো আমাকে বললো ভ্যানে আসতে। আমি এসে দেখি।৮০ % ভ্যান দখল করে আরমান শুয়ে আছে। আমি কোন রকম পা ঝুলিয়ে বসলাম। ব্যাথা করছিলো। তবে টেনশন হচ্ছিলো আরমানের জন্য যে ভাবে কুকাচ্ছিলো। আর মিঠুর কথা কি বলবো ও তো সুপার ম্যান।


২৪ মার্চ রবিবার রাতঃ
শুয়ে শুয়ে লিখছি। মিঠুর ১৭ টা সেলাই লেগেছে পায়ে। সবচেয়ে বেশি কষ্টটা ওর ই হয়েছে। আমার অবস্থা নাকি সবচেয়ে ক্রিটিকাল। বা পায়ের হাটুর হাড়ে ঘসা খেয়েছে। আর ঘাড়ের তিননাম্বার হাড়েও লেগেছে। তবে সেরকম ব্যাথা অনুভব করছিনা।
আর আরমান সবচেয়ে কম আহত তার হালকা ডিপের ছিলে যাওয়া ছাড়া কিছুই হয়নি।

২৪ মার্চ রাতে পা নিয়ে সর্বোচ্চ ভুগেছি। চোখে প্রথম পানিও সেদিন এসেছে। রাতে পায়ের ভিতরে হাড্ডিতে কেউ মনে হয় হাতুরী পিটা করছিলো।


২৫ মার্চ সকালঃ

চৈত্রের সকাল আবহাওয়া আজ খুব শীতল। পাখির কিচির মিচি ভালোই লাগছে। রোজ হাটা হাটা করলেও আজ হাটতে খুব লাগছে। মেডিসিন খেলাম। শুয়ে শুয়ে লিখছি। জানিনা golpokobita.com এ এভাবে লেখা ঠিক হচ্ছে কিনা।


গাজীপুর থেকে বের হয়েছি প্রায় দের মাস। অভিমান রাগে বাবা মার সাথে কথা বার্তা বন্ধ ছিলো। তারা রেগে ছিলো। আমিও তাদের রাগ ভাঙ্গাইনি। দুর্ঘটনার পর তাদের বিশাল মন যেমন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আমিও হয়তোবা আমার অমানুষী ভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। বাবা মা সহ যাদের সাথে অভিমান ছিলো কাটিয়ে নিয়েছি। চিনেন অনেক বন্ধু ভাবা দুরের লোকদের। আবার এমন অনেকের ভালবাসা পেয়েছি। যাদের মন থেকে পছন্দ করতাম না।
শাস্তি আমার প্রাপ্য ছিলো। আমি ভুল শুধরে বাবা মার সু সন্তানের সাথে ভালো মানুষ হতে চাই। দোয়া করবেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শ্রেয়া চৌধুরী ভালো লাগলো গল্প।
ধন্যবাদ। সুস্থতার জন্য দোয়া চাচ্ছি
Hafiz Uddin আপনি সত্যি জিনিয়াস। ভোট অপশন অফ কেন??
মাহাবুব হাসান গল্প যতটুকু লিখতে পেরেছেন তাতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা ইন্টারেস্টিং হতে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতেও যে আপনি লিখতে ভোলেন নি তাতে লেখালেখির ব্যাপারে আপনার কমিটমেন্ট প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাপার না, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আগামী পর্বে আরো ভাল গল্প নিয়ে হাজির হবেন এই প্রত্যাশা রইল।
ভালবাসা রইলো ভাই
রবিউল ইসলাম আচ্ছা ভাইয়া, আপনি কি নরখাদকের বিষয়টি তুলে ধরেছেন? মাঝখানের টুকু পড়তেই ভয় করল। আর আপনি তারাতাড়ি সুস্থ হন এবং মিঠুও তারাতাড়ি সুস্থ হোক দোয়া করি। তবে আপনার কবিতার অপেক্ষায় আছি। ভেবেছিলাম এইবার আপনার কবিতা পাবো। গাজীপুর কোথায় আপনার বাসা?
শিমুলতলী ভায়া। এখনি পুরোপুরি সুস্থ হইনি। দোয়া করবেন।
Tiasa Kabir বাহ,সুন্দর লাগসে।শুভকামনা থাকল।
রুহুল আমীন রাজু বেশ লাগলো গল্প। লেখকের জন্য শুভকামনা।
Riya Lily লেখক এর সুস্থতা কামনা করছি।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মা বাবার সাথে কথা হয়না দেড় মাস। এবার গল্প নয় নিজের জীবনের ১৭-২৪ মার্চ ২০২৩ এর জীবনের গল্প মাত্র

১৯ এপ্রিল - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪