ভয়ে ক্ষয় আগ্রহে জয়

শরতের সকাল (আগষ্ট ২০২৩)

Faisal Bipu
মোট ভোট ৪৬ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.১৪
  • ১৬
  • ১২৫
শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ ভাদ্র আসতে কিছুদিন বাকি। ক্যালেন্ডারের পাতায় শরৎ আসবার কথা বিরাজ করলেও বর্ষা কাটতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। আহ কবে যে শরতের দেখা মিলবে। উলঙ্গ পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেটে যেতে কি যে একটা অনুভূতি যে হাটে নি তার জীবন টাই মিছে।
গ্রামের নাম পাঁজর ভাঙ্গা। গ্রামের মোটামুটি প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি আসলাম শেখের একমাত্র পুত্র নোমানের আজ মনটা প্রচণ্ড খারাপ।
এ বারো চার সাবজেক্ট এ ফেল করেছে নোমান। বাসায় যেতে ওর প্রচণ্ড ভয় লাগছে। বাবা আসলাম শেখ জানলে খুব মারবে।
৪র্থ শ্রেনীতে পরে নোমান। এবার মনে হয় আর ফাইবে ওঠা ওর হবে না। মাঝে মাঝে ওর ইচ্ছা করে পড়া লেখা ছেড়ে দিতে। কিন্তু উপায় যে নেই। বাবা মা কি আর বুঝবে? বাবা বলে পড়া লেখা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। কিন্তু নোমানের বোধগম্য হয়না ওতো স্কুলে ভর্তি র আগে থেকেই কতবার গাড়িতে উঠেছে, ওটা কিভাবে হলো?
ভাবতে ভাবতেই বাসায় চলে এলো নোমান। এসেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। আজ আর বাবা রেজাল্ট কার্ড দেখবে না। কি মজা!!!

ফুপা কে নোমান আজ প্রথম দেখল। একসাথে খেতে বসেছে সবাই। ফুপা বলল নোমান এবার তুই কোন ক্লাসে??
নোমান বলল, "ক্লাস ফোরে" । ফুপা বললো, "ওহ আসমাও তো ক্লাস ফোরে। ক্লাসের ফাস্ট গার্ল। তোর কি অবস্থা?"
নোমান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। ওর হয়ে উত্তর দিলো ওর বাবা। বলল নোমান ও ফাস্ট বয়। ক্লাস ওয়ান থেকে এই পর্যন্ত কোনদিনই সেকেন্ড হয় নি ও। ফুপা ফুপু দুজনেই প্রশংসা করতে লাগলো। নোমান ভাবলো যে বাবা ওকে মিথ্যা বলতে মানা করেছে সেই কিনা মিথ্যা বলছে এভাবে। তবে কি পড়া লেখা নিয়ে মিথ্যা বলতে পাপ নেই?? তবে কি ফেলের বিষয়টা বাসায় গোপন করে যাবো???

সারাদিন আসমা, ফুপু, ফুপা ওদের সাথে দিন টা খুব ভালো কাটলো নোমানের। পরদিন স্কুলে যেতে যেতে মনে পড়লো বাড়ির কাজ করা বাকি। অংক স্যার সাদেক আলী যে পরিমাণে পিটায়। খুব মারবে।
নোমানদের বাংলা স্যার বিশ্বরঞ্জন গুপ্ত। ওনার পড়ানোর স্টাইল প্রাইমারি লেভেলের স্যারদের সাথে যায় না। এসেই প্রফেসারদের মতো লেকচার দিতে শুরু করে। নোমান এর আগা মাথা কিছুই বোঝেনা। তবে ভালো এই স্যার সহজে ক্ষেপে যায় না। বিশ্বরঞ্জন বাবু বললেন, "আজ আমি তোমাদের পড়াবো বাংলাদেশের ষড়্‌ঋতু রচনা, যা বলবো মন দিয়ে শোনো।
স্যার কিছু বলার আগেই হেড স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। আসতেই ছাত্ররা সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। হেড স্যার ওয়াহিদ খন্দকারকে ছাত্ররা বাঘের মতো ভয় পান। স্যার বললেন " তোদের রেজাল্টের যেই অবস্থা মন চাচ্ছে সব কয়টার চামড়া তুলে ফেলি। আসল কথায় আসি। তোদের অংকের স্যার সাদেক আলী বদলী হয়ে গেছেন। এখন থেকে তোদের অংক শেখাবে নতুন স্যার। নতুন স্যার আজ এসে পৌঁছায়নি। কাল থেকে তোদের খবর আছে। উনি সাদেক স্যারের থেকে ১৮ গুণ বেশি কড়া। এবার বুঝবি ফেল করা কাকে বলে? কত প্রকার আর কি কি? আর একটা কথা আজ আর তোদের ক্লাস হবে না। যা সবাই হই হুল্লোড় ছাড়া বাড়িতে চলে যা। আর পরশু দিন সবার বাবা মাকে নিয়ে আসবি রেজাল্ট কার্ড দেবো তাদের হাতে।

নোমান আজ সাদেক স্যারের হাত থেকে বেঁচে গেলেও খুশি হতে পারলো না। কারণ হেড স্যার বলেছে নতুন স্যার আরো বেশি কড়া। একটা মানুষ কিভাবে সাদেক স্যারের থেকেও কড়া হতে পারে নোমানের বোধগম্য হলো না। তাছাড়া পরশু নাকি বাবা মা কে নিয়ে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে যেতে হবে। কি একটা পরিস্থিতিতে নোমানের যেতে হবে ভাবতেই সে কেঁপে কেঁপে উঠছে।

শুধু নোমান নয় নোমানের মতো কতশত ছেলে যে ফেল করার জন্য মনটা বিষঘ্ন করে বসে আছে হিসাব নেই। বর্ষার আকাশ যেমন অন্ধকার হয়ে যায় বারে বারে। ওদের মনের আঙিনায় বার বার সে ভাবে ভয় ফিরে আসে। বাবাদের স্যারদের বকা গুলো লাগে অনেকটা ঝড় বাতাসের মতো আর বেতের আঘাত গুলো তো আকাশের বিজলী চমকানোর মতো লাগে। নোমানের ভাষায় হায়রে পড়া লেখা নাহ আর ভালো লাগেনা। কেনো যে এই পড়ালেখাটা বানানো হল নোমানের বোধগম্য হয়না। সারারাত আবছা ঘুম টেনশনে ছটফট করতে করতে কখন যানো ভোর হলো । আজানের মধুর ধ্বনিতে নোমান তা বুঝতে পারল। বাবার ডাকে নামাজ পরে নিলো নোমান। মোনাজাতে দোয়া করলো, " হে আল্লাহ রক্ষা করো নতুন স্যার থেকে, রক্ষা করো বাসায় যখন জানবে ফেল করেছি সেই আজাব থেকে, আল্লাহ হয় পড়া লেখা থেকে রক্ষা করো নয়তো অলৌকিক ভাবে আমাকে পাস করিয়ে দাও।

শরতের সকাল এক কথায় মুগ্ধ করে দিলো নোমান কে। খালি পায়ে শিরির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাটতে অসম্ভব ভালো লাগছে ওর। সূর্যটাও আজ রক্তিম সাজে সেজেছে। আকাশে ভেসে যাচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। কি দারুণ! কি দারুণ! ওর মনে হচ্ছে আল্লাহ ওর ভোর বেলার দোয়া কবুল করে পৃথিবী নতুন ভাবে সাজিয়েছে। সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। ফেল থাকবে না, বকা থাকবে না থাকবে না কোন গ্যাঞ্জাম।

রুটিন নতুন ভাবে সেজেছে। প্রথম ক্লাস অংক ক্লাস। ২৮-৩০ বছর বয়সী একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে ব্ল্যাকবোর্ড এর সামনে। বলল," শরতের সকালের শুভেচ্ছা বাচ্চারা। শরৎ কি তোমরা জানো?
ফাস্ট বয় টাইপের একজন দাঁড়িয়ে মুখস্থ বিদ্যা প্রয়োগ করতে লাগলো। স্যার বললো বসো। শরৎ হল আজ যা দেখেছো তা। সাদা মেঘের ভেলা, শিরির ভেজা পথ ঘাট। আরো আছে। তবে এখন বলবো না তোমরা আমাকে খুঁজে বের করে বলবে কি কি দেখেছো। জীবন প্রথম নোমান স্যারদের কথায় কেমন কৌতূহলী হয়ে উঠছে। স্যার আবার বললেন শরৎ নিয়ে অনেক কথা হবে আগে পরিচয় হই তোমাদের সাথে। আমার নাম চমক। নোমান সত্যি চমক খেলো। ওর কিছুতেই মনে হচ্ছে না এই লোকটা কড়া হতে পারে। কিন্তু পরের কথাটা নোমান কে আবার দুলিয়ে দিলো। চমক স্যার বললেন যারা যার অংকে পাশ করেছো দাঁড়াও একে একে পাশ করা সবাই দাঁড়ালো। সবাইকে স্যার বেঞ্চ ছেড়ে বেরুতে বললো। সবাই তাই করলো। ওদের সবাইকে চকলেট দিলো স্যার। নোমানের মতো ফেল করা ছাত্ররা অপমানিত হল। নোমানের চোখে পানি ছলছল করছে। স্যার বললো তোমরা সবাই চলে যাও পেছনের বেঞ্চ। আর বাকিরা সামনে আসো। নোমানরা আটজন সামনে এলো। একে একে জিজ্ঞাসা করলো কে কত পেয়েছ? যে যার মার্ক্স বলতে লাগলো। ব্যাগ থেকে বের করে স্যার ওদের খাতাও দেখল। স্যার বললো বাবারা বুকে আসো। আমিও তোমাদের মতো ক্লাস ফোরে অংকে ফেল করেছিলাম। ঐ নাও তোমাদের জন্য দামি চকলেট এনেছি। নোমানরা অবাক হলো। অন্য ছাত্ররা আগ্রহ নিয়ে স্যারের কর্ম কাণ্ড দেখতে লাগলো। স্যার বাকি ক্লাসে কে কোন সাবজেক্ট এ ফেল কে কোন সাবজেক্ট এ পাস জেনে নিলো। সামনে পেছনে ডানে বামে সুন্দর ভাবে সব প্রকারের ছাত্রদের এমন ভাবে বসিয়ে দিলো যাতে চিনতে অসুবিধা না হয়।

ছুটির ঘণ্টা পরেছে। নোমান আসিব আর চমক স্যার দাঁড়িয়ে আছে পুকুর পাড়ে। স্যার বললো আসিব নোমান তোমাদের সাথে আমার কত মিল। তোমরাও ক্লাস ফোরে চার সাবজেক্ট এ ফেল আমিও। ওরা অবাক হলো। স্যার বললেন কে যে এই পড়া আবিষ্কার করলো মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়। আসিব বলল ঠিক কইছেন স্যার। আমার তো মন চায় মাটি কাটতে, মাটি কাটা পড়া লেখার থেকে সোজা। স্যার বললো আমারো তাই মনে হতো রে। কিন্তু মাটি কাটা তো আরো কঠিন। আসিব বললো স্যার কি কন? আমার মনে হয়না। স্যার বললেন এই গ্রামে কে মাটি কাটে। আসিব ভাবতে ভাবতে নোমান উত্তর দিলো আলী চাচা। স্যার বললেন তাকে কই পাবো? নোমান বললো এখন যাবেন স্যার? স্যার বললেন না এখন তোমরা বাসায় যাও। বিকেলে এই এখানে দেখা করবো। নোমান আর আসিব সালাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল স্যার দৌড়ে গিয়ে বললো শোনো বাংলা স্যার তোমাদের আজকে ষড়্‌‌ঋতু রচনা পড়াল ওখানে যেমন শরৎ এসে প্যাক পুক ক্যাদা কুদা বন্যা পানি কালো আকাশ সব সমস্যা দূর করে দিয়ে পৃথিবীকে সাজিয়ে দেয় আমি ও তোমাদের দুজনের সব সমস্যা দূর করে দিতে শরতের প্রথম সকালে শরৎ কাল হয়েই এলাম। আর এর প্রথম ফলাফল কি জানো? তা হলো কাল অভিভাবক আনা লাগবে না। আমি তোমাদের অভিভাবক এর দায়িত্ব নিয়েছি।।

স্যার একটা বই দিয়েছে বইয়ের নাম নীল হাতি। হাতি আবার নীল হয় নাকি এমন এক কৌতূহল নিয়ে বই টা পড়া শুরু করেছে নোমান। লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ। নোমান লোকটার চেহারা না চিনলেও নামের সাথে পরিচিত। এই লোকের নাটক প্রচণ্ড হাস্য রস ভরপুর হয়। চমক স্যার এই লোকটাকে স্যার বলে সম্বোধন করেছেন। উনি বলেছেন সম্মানিত ব্যক্তিদের স্যার বলে সম্বোধন করতে হয়।

নোমানের দিন গুলো কেনো না জানি দারুণ যাচ্ছে। ও প্রতি ফজরের নামাজে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করতে একটুও ভুলে না। এর পর শুরু হয় প্রকৃতি দেখা। কখনো কখনো স্যার ও থাকে ওর সাথে। স্যারের সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছে ও। অন্য স্যারদের আগের মতোই ভয় পায় নোমান। আর পড়ালেখা খুবই বিরক্ত। কিন্তু কাজ যে আরো বিরক্তিকর। সেদিন আলী চাচার কোদাল দিয়ে মাটি কেটে দেখে স্বাধ মিটেছে দু বন্ধুর। রিকশা ভ্যান টানা ও অনেক কষ্টের কাজ। লেখাপড়া না করলে সারা জীবন এগুলো করে খেতে হবে এটা আরো ভয়ংকর বিষয়।

বিশ্ব রঞ্জন স্যার বললেন নোমান দাড়া। নোমান চমকে উঠে দাঁড়ালো। স্যার বললেন এবার তুই বল শরৎ কাল নিয়ে কিছু। নোমান প্রতি বারের মতো মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। কিন্তু এবার কেনো জানো ওর বলতে মন চাচ্ছে। শরৎ তো এখন ওর কাছে চিরচেনা। নোমান সংকোচ দূর করে বললো।

সূর্য কিরণ যখন ঘাসের উপর পরে শিশির বিন্দু গুলোকে মনে হয় হিরার টুকরা। নদীর ধারে কাশবনে কাশফুল গুলো জানো বাতাসে দুলে দুলে নাচছে। ভরপুর পানিতে নদী কে যেমন লাগছে জীবন্ত, চারিদিকে পাখি বকের উড়ে যাওয়া আহ কি দারুণ!
ফাস্ট বয় রাসেল বলে উঠলো স্যার এগুলো বইয়ে নাই। স্যার ধমকের সুরে রাসেলকে বললো চুপ থাক। নোমান তুই বল। নোমান বলতে লাগলো চমক স্যারের কাজ থেকে যা শুনেছে তা। যা দেখেছে তা। স্যার শুনে খুব অবাক হলো নোমানের মুখে শরতের বর্ণনা। স্যার নোমানকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। দেখল ছেলেটা কাঁপছে। স্যার বলল এতো ভয় পাস কেনো রে। বোকা আমি কি বাঘ ভালুক। তুই অনেক সুন্দর বলেছিস বাপধন। তোর প্রতিভায় আমি মুগ্ধ।


নোমানের মাঝে কেমন জানো একটা পরিবর্তন ঘটছে নোমান বুঝতে পারছেনা। ওর বিশ্বাস আল্লাহ ওকে সাহায্য করছে সকালে দোয়ার জন্য। চমক স্যারের বাসায় ও আজ প্রথম এসেছে। অনেক গুলো গল্পের বই কবিতার বই একটা সেলফে সাজানো। ও গুনার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে ওর। স্যার নোমানকে বিস্কুট খেতে দিলো বললো নোমান শোন আজ নাকি বিশ্ব রঞ্জন স্যারকে তুই অবাক করে দিয়েছিস? নোমান চুপ থাকলো। স্যার বললো বোকা ছেলে আসলে পড়ালেখা হলো খুব মজার একটা জিনিস। যদি তুই মজা পেতে শুরু করিস তোর মনে হবে এই পড়া লেখাও মজার একটা খেলা। নোমান বলল স্যার ওদিনের মতো আর একটা বই দিন না প্লিজ। স্যার বললেন তোর কাছেই তো আছে। নোমান বললো নাই তো স্যার। স্যার বললেন তোর বাংলা বই টা খুলে দেখিস দারুণ দারুণ গল্প কবিতা আছে। পড়েছিস কখনো? পড়ি নি স্যার, শব্দার্থ মুখস্থ করেছি,বাক্য রচনা, শূন্যস্থান পূরণ এগুলো খুবই বিরক্তিকর। স্যার বললেন ভালো মতো গল্প গুলো পরবি সব অটোমেটিক হয়ে যাবে বোকা। যেই শব্দ গুলো বুঝবি না লিখে রাখবি। অর্থ খুঁজে দেবো। অর্থ খুঁজে শুধু তোর শব্দার্থ শেখা হবে না এই শব্দ গুলো তুই তোর জীবনেও প্রয়োগ করতে পারবি। নোমান কৌতূহল ভরা চোখে বললো কিভাবে স্যার, নোমান বলল এই ধর তুই রচনা লিখছিস পরীক্ষার খাতায়, রচনার নাম নৌকা ভ্রমণ। তুই যদি ঢেউ শব্দের প্রতিশব্দ গুলি জানিস মানে ঢেউ শব্দের অন্যান্য অর্থ গুলো তোর যা মন চায় সেভাবে লিখতে পারবি। নোমান বললো ঢেউ এর কিছু অর্থ বলুন না স্যার। স্যার বলতে লাগলেন ভেবে ভেবে
ঊর্মি
বীচি
তরঙ্গ
কল্লোল
উল্লোল
হিল্লোল
বীচিমালা
লহর
লহরী
মহাতরঙ্গ
মহোর্মি
জলকল্লোল
তরঙ্গ হিল্লোল
দোলা
জোয়ার
তরঙ্গভঙ্গ
ঊর্মি লহরী
তরঙ্গমালা
তরঙ্গ লহরী
এবং এর
ইংরেজী হলো
wave
crest
flood
influx
movement
outbreak
rash
rush
sign
stream
surge
swell
tide
upsurge
bending
billow
breaker
coil
comber
convolution
corkscrew
crush
curl
curlicue
drift
foam
gush
heave
loop
ridge
ripple
rippling
rocking
roll
roller
scroll
signal
sweep
tendency
tube
twirl
twist
undulation
unevenness
uprising
whitecap
winding
ground swell
নোমানের আগ্রহ জন্মায়, স্যারের ভাষায় পড়ালেখায় মজা পেতে শুরু করেছে নোমান। একই দিন নোমানের অংকের প্রতিও ভালবাসা জাগিয়ে দিয়েছিলো চমক স্যার। বলেছিল

-বই কয়টা আছে তুই সহজে গুনতে পারবি। একটা ম্যাজিক ট্রিকস আছে এর
- কিভাবে স্যার?
- বা থেকে ডান এক লাইনে কয়টা বই
- স্যার ১৯ টা
- উপর নিচে?
- স্যার ১০ টা।
- ১৯ কে ১০ দিয়ে গুণ করো।
- পারি না স্যার
- এটা খুব সোজা নোমান।
- যখন দেখবি কোন সংখ্যা কে ১০,১০০,১০০০ দিয়ে গুণ করতে হয়। তবে ঐ সংখ্যার পিছনে এই ১০,১০০ এদের কয়টা শূন্য বসিয়ে দিবি।
- ১৯০ হবে স্যার?
- হা গুড বয়। এবার বল ঐ বুকশেলফের টা।
- ৭ এবং ১৩
- ১৩ এক কে ১৩, ১৩ দু গুনে ২৬, তিন ১৩.....
- মুখস্থ করলে হুট করে বলতে পারবি। যাই হোক খাতা কলম দিলাম গুনে দেখ।
নোমান গুনলো। এরপর আবার একটা একটা করে গণে দেখলো অংক আসলেই ঠিক বলে কিনা। ওর আগ্রহ জন্মাল। ও বই গুনে ও শিওর হলো অংক সত্য কথা বলে।


২০২৩ সাল শরৎ কাল। শহরের শরৎ কাল কিংবা শরতের সকাল গ্রামের মতো নয়। ছাঁদে বসে আছেন বিখ্যাত পদার্থবিদ নোমান শেখ। উনি বললেন, মা ছোট বেলার অনেক স্মৃতি তোমাকে বললাম তবে একটা কথা বাদ পরে গেছে।
শ্রাবণী বললো
-কি স্যার
-একটা কথা আমি বারবার বলি, যা নিয়ে অনেক লিখেছি। তবে ঐ কথাটা আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের চমক স্যার।

আমাদের মেট্রিকের বিদায় অনুষ্ঠানে চমক স্যার বলেছিলেন

প্রিয় শিক্ষকগণ। আপনারা সবাই আমার গুরুজন। কোন বেয়াদবি হলে ক্ষমা করবেন। আমাদের দেশের একটু প্রধান সমস্যা কি জানেন? প্রাইমারী লেভেলে ছাত্র ঝড়ে যাওয়ার জন্য আমরাও অনেকটা দায়ী। আমি দেখেছি হাতেগণা কিছু শিক্ষকরা ভালো ছাত্রদের মাথায় তুলে রাখেন। যারা কম বুঝে কিংবা গরীব ঘরের তাদের সাথে তৈরি করে দুরুত্ব। এমন ও হয় কেউ কেউ পরিবার নিয়ে খোঁচা দেয়, ব্রেন নিয়ে খোঁচা দেয়। এভাবে পড়া লেখার প্রতি যেমন ওদের বিতৃষ্ণা জাগে, তেমন অসম্মান জাগে শিক্ষকদের প্রতি। এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের কারো কারো জিনে সৃষ্টি হয় একটা বেপরোয়া পর্যায়ের অসম্মান করার দক্ষতা।

যারা ভালো ছাত্র তারা এমনিতেই ভালো স্যার। তাদের যতটা কেয়ার দরকার তার চাইতে বেশি কেয়ার দরকার খারাপ ছাত্রদের। ওদের মন ভেঙ্গ দেবেন না। ওদের ভয় দেখাবেন না। ওদের ধরিয়ে দিন পড়া লেখা কোনো ভয়ের বিষয় নয়। পড়া লেখা আনন্দময়।

আর বাবারা তোমরা কখনোই শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করবে না। ওনাদের স্থান বাবা মার পরেই। ওনারা আছে বলেই জাতি অনেক অনেক সন্তান পেয়েছেন যার গর্বিত করেছেন দেশকে। তারাই তোমাদের প্রথম শিক্ষক। তবে মানুষ তো হয়তোবা কখনো কখনো কারো বা কারো ভুল হয়ে যায়। তবে তারা যা দিয়েছে তার তুলনায় ভুল খুব সামান্য। তাদের প্রকৃত সম্মান দাও তারাই পৃথিবী বদলে দেওয়ার প্রথম কারিগর।

শ্রাবণী চলে গেলো। নোমান সাহেব আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে। ওনার এই জীবনে কত বর্ষা শরৎ হেমন্ত গিয়েছে তবে চমক স্যার আসার পর ওনার মনের অন্তরে বেশি ভাগ সময় ই বিরাজ করেছে শরৎ কাল। শরতের সিগ্ধ সকাল। আজকের সকালেও মনে এবং প্রকৃতি তে একসাথে বিরাজ করছে শরৎ কাল। এই সকালে কাশফুল নেই। নদী ভর্তি পানি নেই। শিউলি ফুল কুড়ানোর মুহূর্ত নেই। নেই দূরে বকের উড়ে যাওয়া দৃশ্য । নেই উলঙ্গ পায়ে শিশির ভেজা পথে হাঁটাহাঁটি করার মধুর সময়, তবে মনের গহীনে সব আছে আর বাস্তবে আছে শরতের বাতাস আর আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘের ভেলা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুমানা নাসরীন কি দারুণ লেখা! আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আপনার এই অসামান্য লেখাটি আমার পেশাগত দক্ষতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে আশা করি। তাছাড়া, শরৎ আমারও প্রিয় ঋতু। পরপর দুবার পড়লাম। অসাধারণ। অসাধারণ।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপা
মোঃ মাইদুল সরকার অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ধন্যবাদ ভাই
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Syed Tarequee অতি অল্প কথায় এবং সহজ সাবলিল শব্দ চয়ণে লিখা শরৎ এর সুন্দর ছোট গল্প । অপূর্ব !
ধন্যবাদ স্যার
Md Sajib খুব ভালো লাগলো।
হাফিজ ভাই শিক্ষণীয় গল্প ????????
Pervez Chowdhory আপনার লেখা ওয়ান অফ দা বেস্ট ভাই
Bulu Hossen এভাবে ভেবে দেখিনি। তবে বাস্তবিক। ধন্যবাদ লেখক কে
মশিউর ইসলাম (বিব্রত কবি) বেশ ভালো লেখনী। অসাধারণ গতিময়তা লেখায়। দারুণ!!!
ওমর ফারক ভালো লেগেছে।
Sajjad Saddam যদি থাকতো আমার যোগ্যতা গল্পটা পাঠ্য বইয়ে এড করতাম। চালিনে যান ভাই।। অসাধারণ

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মনের গহীনে সর্বদা বিরাজ করুক শরতের সকাল

১৯ এপ্রিল - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.১৪

বিচারক স্কোরঃ ২.৩৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৭৬ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪