চৈত্রের ভর দুপুর। রৌদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে জিল্লুর। গরমে
মাথা ঘুরছে। ঘেমে চুপচুপ হয়ে গেছে পরণের শার্টটা। পত্রিকায় তবে ঠিকি লিখছে
গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গরম ঢেড় বেশি। অবশেষে একটা রিকশা দেখতে পেলে হাত উঁচিয়ে ডাক দিলো ঐ খালি। । রিকশা এল। জিল্লুর বলল
-চা বাগান যাবে?
-যে
স্যার গেটে না ভিতরে?
- বৃদ্ধাশ্রম টা আছে না? ওটার পাশে?
- ওঠেন স্যার।
- আগে বল কত নিবে?
- যা ভাড়া তাই দিয়েন স্যার। যদি রহম হয় দুইটা টাকা বাড়ায়ে দিয়েন।
জিল্লুর উঠে বসল। মনে মনে ভাবলো সব গুলো রিকশাওয়ালা যদি ওর মত হত
ভালো হত। বেশিভাগ ই বেশি ভাড়া চায়। ওর মত চাইলেই পারে। রিকশাওয়ালার নাম মবিন। ভাড়ায় রিকশা চালায়। কিছুদিন যাবৎ টাকা জমাচ্ছে নিজের রিকশা কেনার জন্য। বৌ
বাড়ি থেকে শিখিয়ে দেয় প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে এই কথা বলে বকশিশ চাইতে। তবে
মবিন এটা কখনো পারেনা। লজ্জা লাগে ওর। ও মনে মনে ভাবছে এই স্যারের কাছ থেকে চেয়ে নিবে। এক ভাবনা থেকে আরেক ভাবনায় চলে গেলো মবিন। ওর নতুন রিকশার প্রথম
প্যাসেঞ্জার হবে ওর বৌ। বিয়ের পর থেকে কাজ কাজ করে মেয়েটাকে নিয়ে একবার ও
ঘুরা হয়নি। এবার রিকশাটা কিনে সারাদিন ওকে নিয়ে ঘুরবে। জিল্লুরের কথায়
ভাবনা ভাঙ্গল মবিনের।
- আগুন হবে?
- না স্যার আমি খাই না।
- কি বল। আমি সত্যি
তোমায় দেখে অবাক হচ্ছি। অন্য রিকশাওয়ালাদের চেয়ে তুমি একটু আলাদা।
- কি যে
কন স্যার। ছোট লুক তো ছুট লুক ই। আর সিগারেট বিরি খোর ছুটলুক বড় লুকে হয় না। এইটা
যার যার নেশা।
- বাহ খুব সুন্দর কথা জানো দেখছি। নাম কি তোমার?
- - মবিন। আর
স্যার আপনে ও খুব ভালা। আমাগো মত লুকের লগে এমনে কেউ কথা কয়না।
- কি করে বলবে
বল। সবাই তো তোমার মত না। ভাড়া নিয়া ঝামেলা করে। আদব কায়দা নেই।
- স্যার
পেটের দায়ে এমন হয়া যায় স্যার। কি করবো কন? এই রোদের মধ্যে সারাদিন খাইটা। লোক
জনের ধমক খাইয়া মাথা কি ঠিক রাখা যায়? আর সারাদিন কামলা দিয়া দুইটা টাকা
বেশি চাওয়া কি খুব দুষ?
ভাবনায় পরে গেলো জিল্লুর। সত্যি ভুল বলে নি মবিন। বড়
বড় লোক দুর্নীতি করতে পারে। অফিসাররা ঘুষ খেতে পারে। শিক্ষকরা প্রাইভেট
পড়িয়ে কটা টাকার জন্য ছাত্রর হাতে প্রশ্ন তুলে দিতে পারে তাতে দোষ নেই। আর
রিকশাওয়ালা দুটা বেশি চাইলে পাপ? না হয় না। মবিনের কথায় হুশ ফিরল জিল্লুরের।
মুবিন বলল স্যার একটা কথা জিগাই? জিল্লুর বলল বল। মুবিন বলল বিরিদ্ধাশরম এ যান
ক্যান? জিল্লুর বলল মাকে দেখতে। মবিনের মন ভেঙ্গে গেলো। এতক্ষণ যেই মানুষ টাকে
এত ভালো মনে হচ্ছিল সে কিনা জন্মদাত্রীকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। শরীর জ্বলে
উঠল ওর। মনে মনে বলল বড় লুক মানেই খারাপ। এই লুক থাইকা বকশিশ আমি নিমু না। মবিন
কে চুপ থাকতে দেখে জিল্লুর বলল কি হল মবিন? মবিন কিছু বলতে যেয়ে বলল না। বলল
এমনে স্যার। জিল্লুর বলল কিছুতো অবশ্যই, বল। মুবিন আর চুপ থাকতে পারল না, বলল
কাজ টা ঠিক করেন নাই স্যার যে মা আপনারে দশমাস দশদিন পেটে ধরছে ছোট থাইকা
পাইলা পুইশা বড় করছে তারে জেলখানায় দিয়া দিলেন? জিল্লুরের হাঁসি মুখ ফেকাসে
হয়ে গেলো। একজন রিকশাওয়ালা তাকে এভাবে বলবে সে ভাবেও পাচ্ছেন না। মবিন কে
ধমক দিতে যেয়েও কেন জানি পারলো না। বলল কি করব বল উনি পাগোলের মত হয়ে গেছিলেন।
খালি বকবক করত। অফিস থেকে এসেই দেখতাম আমার স্ত্রী সাথে ঝগড়া করছে। তাই বাধ্য
হয়ে এখানে রেখে গেছি। মবিন বলল স্যার আপনে যখন ছোট ছিলেন তখন কি বেশি কথা
কইতেন না? জিল্লুর বলল করতাম। মুবিন বলল দুষ্টামি করতেন না? জিল্লুর হুম বলল। মুবিন
বলল তাই বইলা সে কি আপনারে দূরে রাইখা আসতো? জিল্লুর বলল না। মুবিন বলল সেই মা
বুইড়া হইয়া একটু পাগলা হইছে তারে ফেলায় দিলেন? মায়ের চেয়ে বৌ বড় হইলো?
জিল্লুর কিছু বলল না। জিল্লুর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেনা। মহা অন্যায় যে ও
করে ফেলেছে তা ও জনতো। তবে আজ যে পাপ বোধ হচ্ছে তা ওর কখনো হয়নি। না মায়ের
কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে।
মাকে যে ভাবে হোক, পায়ে পরে হোক বাড়িতে নিয়ে যেতে
হবে । বাড়িতে সবচেয়ে বেশি অধিকার একমাত্র তার। কেউ সে অধিকার কেড়ে নিতে
পারেনা। কেউ মায়ের মুখে কথা বললে, মায়ের অযত্ন নিলে বাড়িতে থাকতে পারবেনা। মবিন
বলল সোরি স্যার আমারে মাফ কইরা দিয়েন ছোট মুখে বড় কথা বইলা ফেলছি। আমার মা
আমার কাছে নাইতো তাই কোন মায়ের অবহেলা আমি সইতে পারিনা। জিল্লুর বলল মবিন
তুমি আমার ভায়ের কাজ করেছো আমার ভুল ধরে দিয়েছো। আমি মাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু
তোমার মা কই ভাই? মবিনের কথা আটকে যাচ্ছে।সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।সে অনেক
কষ্ট বলল জানিনা স্যার। জন্ম দিয়া আমারে রাস্তায় ফেইলা সে চইল্লা গেছে। জিল্লুর
অবাক হয়ে বলল তার পর ও তাকে এত ভালোবাসো? মবিন বলল কেন বাসুম না। হয়ত বিপদে
পইড়া আমায় ফেইলা দিছে তবে দশমাস দশদিন পেটে তো ধরছে। জন্ম তো দিসে। তার
জন্যই এই সুন্দর ভুবনে বসবাস করতাছি। তারে ভালো না বাসলে কারে বাসমু? এই বলে
মুবিন কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে লাগলো জিল্লুর। এই কান্নার চেয়ে পবিত্র কান্না
কিছু হয় না। এ কান্না মায়ের জন্য কান্না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মা জননী যাই বলি এই মানুষ টা জীবন সবচাইতে মূল্যবান। দুই শ্রেণীর দুজন মানুষের কাছে মা কি জিনিস সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি
১৯ এপ্রিল - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১৪ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.১
বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।