ভয়াল রাতের পদ্মপুকুর

ভয়াল রাত (সেপ্টেম্বর ২০২৩)

পার্থ সোম
  • ৬৭
"তোদের গ্রামের নাম কী অদ্ভুত রে ভাই!নিশিপাড়া! এ নাম রেখেছিল কে!"
আশফাকের প্রশ্নে বিব্রত হলো প্রশান্ত।
'শোন, সব গ্রামের নামকরণের পিছে কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয়ই থাকে।নিশির ডাকের কথা শুনিস নি?নিশির উৎপাত ছিল একসময় আমদের গ্রামে । শুনেছি এজন্যই এ গ্রামের নাম নিশিপাড়া।"
"নিশির ডাক মানে?সেটা কি?"
"যেমন ধর হঠাৎ গভীর রাতে তোর ঘুম ভেঙে গেল পরিচিত কারো ডাক শুনে।তুই উত্তর দিলি।আর এতেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলি।তোর পরিচিত কেউ তোকে ডাকেনি ডেকেছে নিশি।তাই তো বলে রাতে একবার কেউ ডাকলে উত্তর না নিতে।তবে নিশির ডাকের কথা এখন আর তেমন শোনা যায় না।
এখন শোনা যায় ভুলোর...

প্রশান্তকে থামিয়ে আসফাক বললে," ইন্টারেস্টিং কিন্তু আমি এসব গুল গল্প মানি না ব্রো।নিতান্ত কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয় এসব।আর তুইও বা ফিজিক্স এর ছাত্র হয়েও এসব গাঁইয়া কথায় কান দিস কেন।"
প্রশান্তর মনে হচ্ছিল আশফাককে একটা থাপ্পড় মারে কসে।কিন্তু সে তার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তার অতিথি সে।
উত্তরে প্রশান্ত বললে,"কান দেই কারণ আমি নিজেও গাঁইয়া ছেলে।তোর মত শহুরে স্মার্ট পোলা না।"
আশফাককে বাড়িতে আনার ইচ্ছা ছিল না প্রশান্তর।
কিন্তু হঠাৎ একদিন এমন জিদ করল তার বন্ধু, তাকে নিয়ে আসতে বাধ্য হলো।

নিশিপাড়া গ্রামটা সুন্দর। ভালো লাগে আশফাকের।প্রশান্তদের বাড়ির সামনেই বিশাল সরিষা ক্ষেত।সকালের মিষ্টি রোদে এ সরিষা ক্ষেত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আশফাক ভাবুক হয়ে পড়ে। যেন আফসোস হয় তার।কেন যে গ্রামে জন্ম হলো না।কী যেন অদ্ভুত শান্তি আছে গ্রামে।
সকালে খাওয়াটাও হয়েছে বেশ।গরম গরম ফুলকো লুচি সাথে ছোলার ডাল।প্রশান্তর মায়ের রান্নার সত্যিই তুলনা হয় না।

প্রশান্ত আশফাককে ঘুরিয়ে দেখাল তার গ্রামটা।ডাকাতিয়া কালীবাড়ি,কুমোরপাড়া,গ্রামের শ্মশান....

বড় বড় তিনটা পুকুর আছে এ গ্রামে।পদ্মপুকুর, ভগবানপুকুর,রায়বাড়ির পুকুর।পদ্মপুকুরটাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ হলো আশফাকের।কত পদ্ম ফুটে আছে!বেশ কিছু ছবি তোলে আশফাক।
গ্রামের মানুষ গুলোও বেশ।আশফাক আগে কখনো মাটির ঘর দেখেনি।মাটির বাড়ি দেখে মুগ্ধ হয় ও।পথে এক বুড়ো প্রশান্ত কে ডেকে বলে, "সাথে ছেলেটা কে রে?আগে তো দেখিনি।"
" ও আমার বন্ধু খুড়ো।আমার সাথে পড়ে।ঘুরতে এয়েচে আমার বাড়ি।"
"ওহ তা ভালো তা ভালো। তোমার নাম কি খোকন..."

বুড়ো মানুষটা এক রকম জোর করেই তার বাড়িতে নিয়ে যায় ওদের।
দাওয়ায় পিড়ি পেতে বসতে দেয়।অনেক গল্প করে ওদের সাথে।মানুষটা অমায়িক।বেশিভাগ দাঁত পড়ে গেছে।মানুষটাকে অনেক ভালো লাগে আসফাকের।

"কৈ বৌমা কোথায়? "বুড়ো হাক দেয়।
সম্ভবত নতুন বিয়ে হয়েছে।মেয়েটার সলজ্জ সংকোচ ভরা দৃষ্টি তাই বলে দেয়।পরনে হলুদ শাড়ি।শ্যামলা মেয়ে।
আশফাক মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল তার দিকে।
একটা থালায় অনেকগুলো নাড়ু আর মুড়ি দিয়ে চলে গেল তার সাপের মত বেনী দোলাতে দোলাতে।সুরের ঝংকার তুলল পায়ের নুপুর।

গ্রামের ছেলেমেয়ে গুলো স্কুলে যাচ্ছে তখন।কারো স্কুলব্যাগ আছে, কারো নেই।দুইহাত দিয়ে বইগুলো বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে চলেছে কেউ কেউ।স্কুলটাও দেখে আসল আশফাক।
স্কুলের সামনে একটা মাজার।মাজারে বেশ লোকজন।বিশাল এক বটগাছ সেখানে।আর সামনে একটা দিঘি।স্কুলের গা ঘেসে।
"কার মাজার এটা?"
"জালাল সাহেবের মাজার।"
"সে কে।জালালউদ্দিন রুমি নাকি রে!?"
"ওরে অত কিছু জানিনা ভাই। ছোট থেকে শুনে আসছি এই নাম।অনেক পুরনো এই মাজার। ঐ দিঘিকে বলে জালালতলা দিঘি।আর ঐ যে বটগাছ দেখছিস না।ওখানে দুটো অজগর সাপ ছিল।কালাপাহাড় আর ধলাপাহাড়।কারো কোনো ক্ষতি করত না।
" এখন নেই সাপদুটো?"
"না একটা মরে গেছে একটা আর একটা কোথায় চলে গেছে।খুঁজে পাওয়া যায় নি।"
নিশিপাড়া গ্রামের সবকিছুই সুন্দর। শুধু গ্রামের মানুষদের একটা কান্ডে বিরক্ত হয় আশফাক।নটার মধ্যে সবাই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে।
দুপুরে আজ ঘুমিয়েছে আশফাক।দুপুরে সে সচরাচর ঘুমায় না। রাত দশটা পর্যন্ত প্রশান্তর সাথে গল্প করার পর প্রশান্ত ঘুমে ঢুলতে লাগল।

"চলনা বাইরে থেকে ঘুরে আসি প্রশান্ত।রাতেই তো ঘুরে মজা।"
"না , না।রাত বিরেতে বিনা কারনে বার হওয়া যাবে না।সমস্যা আছে।"
আশফাক রেগে বলে" কি সমস্যা তোর? নিশির ডাক?"
প্রশান্ত কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।প্রসঙ্গ পাল্টায়।
প্রশান্তকে রাজি করা গেল না।কিছুক্ষণের মাঝে সে নাক ডাকতে শুরু করে।
প্রচন্ড বিরক্তিবোধ করে আশফাক।কিছুতেই ঘুম আসবে না এখন।প্রশান্তর টেবিলের ড্রয়ারে চাবি রাখা আছে।
প্রশান্তকে ডেকে তুললেও সে এখন বাইরে যেতে দেবে না। নিজেই তালা খুলে বাড়ি থেকে বের হলো আশফাক।
অদ্ভুত অনুভূতি হলো। গ্রামের সকালের রূপ আর রাতের রূপ পুরোপুরি আলাদা!ঘড়িতে এখন সাড়ে দশটা।এখন সে হয়তো ক্যাম্পাসে থাকলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত। এ গ্রাম যেন মরে গেছে।একেবারে নিশ্চুপ।
তবে অদ্ভুত নিশ্চুপতার মাঝেও কেমন যেন শান্তি আছে।একাকিত্বের মাঝেও মজা আছে।আশফাক যেন সেটা অনুভব করে।বাড়ি থেকে বেরিয়ে সরিষা খেত পার হয়।
পুর্ণিমার রাত।
কী অদ্ভুত সুন্দর এ পৃথিবী!সেই পদ্মপুকুরটা না জানি কত সুন্দর লাগছে এখন।প্রশান্ত কে মনে মনে গালি দেয় আশফাক।এই সৌন্দর্য কখনো সে দেখেছে?কী সব কুসংস্কার মেনে চলে।প্রশান্তর কথা ভেবে আশফাক বিরক্ত হয় আবার।
পদ্মপুকুর এখান থেকে প্রায় মিনিট পনেরর পথ।সেদিকেই যেতে থাকে আশফাক।ঘড়িতে মাত্র দশটা পচিশ।
রাতের পদ্মপুকুর দেখে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে আশফাক।পুকুর ঘাটে বসে কত কী আকাশ পাতাল ভাবে ।ঝিঁঝিঁ ডাকছে।কখনো বা ডাহুক ডেকে উঠছে।মনে মনে গুন গুন করে গান গায়,
"ঝলমল করিয়ো নাগো তোমার ঐ অত আলো
বেশি রূপ হলে পরে সাবধানে থাকায় ভালো "

হঠাৎ আশফাকের মনে পড়ে সেই হলুদ শাড়ি পড়া বৌ এর কথা। "টুকটুকে বৌ তুমি" বলে আপনমনে হাসে আশফাক।চাঁদের আলোয় পদ্মপুকুরকে মনে হয় পৃথিবীর অনন্য সুন্দর এক স্থান।প্রকৃতিকে কখনো এভাবে উপভোগ করেনি সে।
"আমার কথা ভাবছিলে বুঝি?”
চমকে পিছনে ফিরে তাকায় আশফাক।সেই সুন্দরী বৌ এখানে!
বিষ্ময়ে নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে আশফাক।
মিষ্টি স্বরে হাসে মেয়েটা।কী মাদকতা ওর কণ্ঠে!
মেয়েটার শরীরে ভালোকরে চোখ বুলিয়ে নিতেই যেন গলা শুকিয়ে গেল আশফাকের।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হওয়া মেয়েটার কোমরের ভাজগুলো যেন তৃষ্ণার্ত করে তুলছে তাকে।
কোনোমতে বলল," আপনি এখন এখানে..?"
"তোমার জন্যই তো এসেছি।তুমিই তো ভাবছিলে আমার কথা।বলো ভাবোনি?যদি বলো আমার কথা ভাবোনি আমি এখনি চলে যাব।"মেয়েটার চোখ ছলছল করে ওঠে অভিমানে।
" হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যিই ভাবছিলাম।সত্যিই ভাবছিলাম তোমার কথা।"
মেয়েটা এগিয়ে আসে আশফাকের দিকে। আবার সেই মিষ্টি হাসি হেসে বলে, "আমি জানি।"

তারপর ধীরে ধীরে পুকুরে নামে মেয়েটা।
তার ভিজে যাওয়া শরীরের দিকে আপলক চেয়ে থাকে আশফাক।অতগুলো পদ্মের মধ্যে সেই যেন সবচেয়ে সুন্দর পদ্ম। কী অপরূপ তার মোহ! মেয়েটা আশফাকের দিকে চেয়ে নিজের বুকের আচল ফেলে দিয়ে বললে,"অমন করে কি দেখছ? তুমিও এসো....."
চোখে যেন কামনার আগুন।

মন্ত্রমুগ্ধের মত তার দিকে এগিয়ে যায় আশফাক।

পরদিন সকালে পদ্মপুকুরে গ্রামের মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে।প্রশান্ত আর তার মা খুব কাঁদছে পদ্মপুকুরে ভেসে থাকা আশফাকের লাশের দিকে চেয়ে।
গ্রামের মানুষের আলোচনা থামছেই না।কেউ বলছে "ওকে নিশিতে ডেকেছিল। "
আবার কেউ বলছে, "নাহ।ওকে ভুলোতে ভুলিয়ে পুকুরে চুবিয়ে মেরেছে।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sajjad Saddam জাদু আছে লেখায়। তবে ভয়ংকর আসা করেছিলাম। শুভকামনা
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ফয়জুল মহী সুন্দর প্রানোচ্ছল ভাবনায় পরিপাটি লেখা।
ভালো লাগেনি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
বিষণ্ন সুমন এটা তো রোমান্টিক গল্প। তবে আপনি ভালো লিখেন।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Uday Hossen গল্পখানা দারুণ ছিলো দাদা তবে বিষয়বস্তুর সাথে যায় না কোনো ভাবেই
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এক ভয়াল রাতের গল্প।

০৯ ডিসেম্বর - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪