আমদের পরিচয়টা বর্ষার এক পড়ন্ত বিকেলে- গাঁয়ের পথ ধরে বাড়ি ফিরছি, হঠাত তুমুল বৃষ্টি। পেছনে রানুর কাছে ছাতা ছিল, সন্ধ্যা হয়ে আসছে- আর অপেক্ষা করা যায়না। রানু বেড়াতে এসেছে পাশের বাড়ি- শহর থেকে, সাহসি মেয়ে।
- আসুন, ভিজেন কেন?
- -না, সমস্যা নেই। তুমি যাও, মেয়ে মানুষ, লোকে কী বলবে। আমার ইতস্তত লাগে।
- ভিজলে টাইইয়েড- নিমোনিয়া হতে পারে। ছাতার ভিতরে আসুন।
আমি সাহস করিনি। ছাতাটা আমার মাথার উপরে ধরে পাশাপাশি হাঁটতে থাকি। ঠান্ডা থেকে বাঁচা গেল।
-পুরুষ মানুষ তো সাহসি হয়- আপনার সাহস বুঝি এই ?
গ্রাম আর শহরের পরিবেশ এক না। লোকে কানাকানি করবে, তাছাড়া তোমাকে ভাল চিনিওনা।
-এখন চিনবেন।আমি রানু, শহরে থাকি, কলেজে পড়ি, দেখতে সুন্দর, কোন সমস্যা তো দেখিনা।
-তুমি কথা আরেক দিকে নিয়ে যাচ্ছ।
-আমি আপনাকে চিনি। এখানের সব ছেলেদের খোঁজ নিয়েছি। তাতে আপনাকে বিশ্বাস করা যায়, এক ছাতার নিচে গেলেও আমার ভয় নেই।
-আসলে ব্যাপারটা তা না। লোকজন দেখলে কী ভাববে, আর তুমি চলে যাবার পর পরিচিতরা কত কথাই না বলবে।
-দেখলে বলবেন আমার বউ। আর চলে যাবার কথা বলছেন- না গেলাম। আপনার বউ হয়ে থেকে গেলাম।
-কী বলছ এসব তুমি, আমি তোমার সাথে যাবনা। আমি ঘুরতেই রানু আমার হাতটা ধরে ফেলে।
- যাচ্ছেন কেন ? আপনিতো বিয়ে করেননি, আমারও বিয়ে হয়নি।
-তুমি কখনো পাবনা হাসপাতালে ছিলে ?
- আমাকে পাগল ভাবছেন? আমি পাগল নই। আপনার মা আমাকে দেখে গতকাল পছন্দ করে এসেছে। আপনার সমস্যা থাকলে বলুন- সামনের গাছটার দিকে তাকান , দুটো শালিক পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভিজছে, তবু আলাদা হচ্ছে না।যদি কখনো বিয়ে না করেন, একা থাকতে চান, তবে হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। না হয় এই যে হাত ধরেছি- আর ছাড়তে চাইনা। এখান থেকে পথচলা শুরু,আরো কাছাকাছি---
বৃষ্টি কমে আসছে-রাস্তার দুপাশের গাছের পাতা থেকে টপটপ পানি পড়ছে। নারির শরীরের ঘ্রাণ, উষ্ণতা, হাসি, কাছে টানার আকর্ষণ- আমার যুবসত্তা না করতে পারেনি।
সে রাতে আমার ঘুম হয়নি- পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ মনে হয়েছে নিজেকে। বৃষ্টিটা কেন থেমে গেল আর পথটাই বা শেষ হল কেন ? যদি জনম জনম বৃষ্টিতে এক ছাতার নিচে চলতে পারতাম।মা এসে পাশে বসলেন-কি বলবে বুঝতে পারছি, না বোঝার ভান করলাম। মা বললেন-বাবলু, বয়স হয়েছে, বিয়ের কথা ভাবছিস? ও বাড়িতে একটা মেয়ে এসেছে- নাম রানু।
-কোন মেয়েটা ? অনেক কথার পর ইমুতে ছবি দেখে মা তো অবাক। খুশি হয়ে চলে গেলেন।
আরো একদিন ওরা ছিল। একত্রে কথা বলেছি- যে কথার শেষ নেই। পায়রা নদীর পাড়ের সরু রাস্তায় হাত ধরাধরি করে হেঁটেছি। কেউ কেউ তা দেখেছে, শীঘ্রই আমাদের বিয়ে হচ্ছে তা শুনেছে। বন্ধুরা মিষ্টি খেতে চেয়েছে- বলেছি এইতো কদিন।
যাবার দিন ভোরে রানুকে গাড়িতে তুলে দিলাম। পথের পাশে ফুটে থাকা কাঠালচাঁপাফুল ওর খোপায় গুজে দিই-ঘ্রাণে খুশি। গাড়ি ছাড়ার সময় হটাত আকাশে মেঘ ডাকে- পূবদিকে অন্ধকার হয়ে আসে। রানু সেই ছাতাটা আমার হাতে দেয়-গাড়িতে আমার সমস্যা নেই, যেতে পারবো। আপনি যেন না ভেজেন, আসুখ না করে। ছাতাটা নিয়ে যান—
আজ ত্রিশ বছর, ছাতাটা এখনো আছে- যত্ন করে রেখে দিয়েছি।শহরে যাবার কিছুদিন পরই অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে যায় রানু। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গেল , আর ফেরেনি কোনদিন বাংলার মাটিতে--
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
যে বৃষ্টিতে এক ছাতার নিচে প্রেমের শুরু এবং পরিনতি, সে নামেই গল্পেও নামকরণ।
১৭ সেপ্টেম্বর - ২০২২
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪